১
সেরিন জাহান ইজ দ্যা এক্সাক্ট অপোজিট অফ হোয়াট দ্যা নেম সাজেস্টস।
সি ইজ নট ট্রাঙ্কুইল।
সি ইজ নেভার কা’ম।
সি ইজ অলওয়েজ ট্রাবল্ড।
অ্যান্ড সি ডাজেন্ট নো মি।
বাট… আই লাইক হার… লাইক… লাইক এ লট!
গল্পটার এখানেই সমাপ্তি হতে পারতো। মানে আমার পছন্দের লিস্টটা বেশ বড়… বেশ বড়। বিশ্বাস হচ্ছে না? ওকে। আমি অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে নিয়ে রেগুলার স্বপ্ন দেখি। মেগান ফক্সকে নিয়ে দুপুরে লাঞ্চে যাই মন খারাপ হলেই… দুপুরের ঘুমে আর কি। কেট উইন্সলেটের কণ্ঠে জেগে উঠি সকালে (ইয়েস, সি সিংস অ্যাজ ওয়েল!)। স্কারলেট জোহ্যান্সন… ‘ও’-‘মাই’-‘গড’। অ্যান্ড দ্যা লিস্ট গোজ অন। আই মিন আই লিটারেলি হ্যাভ ক্রাশ ইন এভ্রি সিঙ্গেল হলিউড মুভি আই হ্যাভ ওয়াচড। ‘ওয়াল ই’? ‘ঈঈ-ভা’! দেন সেরিন হ্যাপেন্ড।
সেরিনকে প্রথম দেখি ভার্সিটি বাসে। আমি বাদুড়ঝোলা হয়ে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছি। খুব বিরক্তি লাগছে, দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নয়, হেডফোনে গান শুনতে পারছি না জন্য। হঠাৎই কানের পাশে পটকা’র মতো বিকট বেকায়দা একটা শব্দে চমকে উঠলাম, আমি সহ আরও কয়েকজন। পাশ ফিরে দেখি সিটে বসা এক ছেলেকে ঘিরে তিন-চারটা মেয়ে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। এদের মাঝে একজন আবার এক কাঠি সরেস। উনি কাগজ দিয়ে পটকা বানাচ্ছেন আর ফটট…। একে তো সিট পান নি, তোর উপর গান শোনা হচ্ছে না। এটুকুতে যদি বিরক্তি না জাগে তবে পাশে তাকিয়ে দেখলেন একটা ছেলেকে নিয়ে কয়েকটা মেয়ে ‘কিছু একটা’ করছে। আর সেই ছেলেটা আপনি নন। এখনও বিরক্তি আসছে না? ওকে। আপনি ছেলেটার দিকে তাকালেন; মহাশয় চোখ বন্ধ করে দিব্বি গান শুনে চলেছেন। হেডফোনে। আমার বিরক্তি সূচকীয় হারে বাড়তে লাগলো। খেয়াল করলাম আশেপাশের কয়েকজনেরও। জীবনে এরকম কিছু অন্তিম মুহূর্তের জন্যই বোধহয় মনীষীরা অসামান্য এক উপদেশ দেন – ‘মুভ অন’। আই ওয়াজ অ্যাবাউট টু ডু সো। অ্যান্ড অ্যাট দ্যাট এক্সাক্ট মোমেন্ট সেরিন হ্যাপেন্ড, ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম। পটকার কাগজ হাতে নেয়া মেয়েটা মাথা ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের দিকে তাকিয়ে, মাথা আর নিচের ঠোঁট মৃদু বাঁকিয়ে, শব্দ না করে একটা শব্দ উচ্চারণ করলো; ‘সৌভাগ্যবশত’ যে কয়েকজন তাকিয়েছিল, ততোক্ষণে তারা সবাইই ‘মুভ অন’ করেছেন, আমি বাদে । নাউ আই অ্যাম নো লিপ-রিডিং এক্সপার্ট। কিন্তু শব্দটা বোঝার জন্য আপনার এক্সপার্ট হওয়ারও দরকার নেই। মেয়েটা ‘স্যরি’ বললো। ব্যাপারটা মামুলি কিছু একটা হয়তো। আই অবভিয়াসলি ওয়াজ সাম র্যান্ডম গাই টু হার। ব্যাপারটাকে আমার বন্ধুরা এভাবেই দেখেছিলো। কিন্তু আমি ব্যাপারটাকে নিয়েছিলাম একটু… অন্যভাবে। আপনি ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকজন অতি উৎসাহী ছেলে-মেয়ে শোরগোল শুরু করলো। একজন মেয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ‘স্যরি’ বললো। মেয়েটার কানে একজোড়া বিডেড হুপ ইয়ারিংস। নাকে দুরন্ত এক নাকফুল। কোমর বিস্তৃত চুল, খোঁপা ছাড়ানো। আসমানি দিয়ে গোটা শরীর মোড়ানো। মাথা বাঁকানো, সাথে ঠোঁটের কিঞ্চিৎ বক্রতা। আই মিন… হাউ কুড ইউ নট একসেপ্ট হার ‘স্যরি’… অর ইন মাই কেস, ক্রাশড অন হার?!
২
সেদিন বাসায় ফিরতেই রিহান, আমার রুমমেট, বলে উঠলো, মিস্টার হলিক্রাশড, তোমার জন্য একটা জিনিস খুঁজে রাখছি।
– কি রকম?
– এখনি দেখতে চাস?
– দেখতে চাস… লেট মি গেস… কোন নায়িকার ছবি নিশ্চয়?
– ধুরর! এমনে ঠিকঠাক বললে ক্যামনে চলবে ভায়া।
– আচ্ছা ভাই, দেখা। আই প্রমিজ আই উইল প্রিটেন্ড টু বি অ্যামাজড।
– হায়! রিহান হেসে বলে উঠলো।
– দেখি এবার।
– আই গিভ ইউ মার্গো রবি… ইন রেড! নাটকীয়তার সাথে রিহান বলে উঠলো।
আমি তাকালাম আমার ‘টপ ফিফটিন ক্রাশ’ তালিকায় এগারো নাম্বার ক্রাশের ছবিতে।
– সি ইজ এ বিউটি।
– আই নো, রাইট?! রিহানের সগতোক্তি।
– বাট…
– মানে? রুমমেট ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো।
– সি ইজ নট হার।
– এই ‘হার’টা আবার কে রে ভাই??
আমি আগাগোড়া রিহানকে বাসের ঘটনাটা বললাম।
– কিছু বলছিস না যে? আমি বললাম রিহানকে।
– তারপর কি হলো?
– তারপর মানে?
– তুই তাকিয়ে থাকতে থাকতে যখন আবিস্কার করলি যে তুই ক্রাশড?
– তারপর আর কিছু না। আমি সামনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। তাকিয়ে থাকাটা ঠিক সুবিধের মনে হয় নি।
– আচ্ছা। তারপর?
– তারপর বিশেষ কিছু না আর। আমি কতোক্ষণ ডুবে ছিলাম, তারপর পিছনে ফিরে দেখি মেয়েটা নেই।
– ডুবে ছিলি??
– তুই জানিস।
– ওহ হো… তারমানে…
– তারমানে কি? আমি রিহানের কথা কেড়ে নিয়ে বললাম।
– মেয়েটার নাম জানা হয় নি?
– নোপ।
– মাই কন্ডোলেন্স, ম্যান। অ্যান্ড বাই দ্যা ওয়ে, দিস ইজ এ ড্যাম গুড রোম্যান্টিক স্টোরি…এক্সসেপ্ট দ্যাট দ্যা হিরোইন টু বি ডাজেন্ট নো এ থিং অ্যাবাউট দ্যা হিরো।
– এপ্রিশিয়েটেড, ম্যান।
রিহান পরে সাজেস্ট করলো যে আমরা মেয়েটাকে গুগল করতে পারি (আমার ‘রেগুলার’ সব ক্রাশের ক্ষেত্রে যেটা করি!)।
আমি পুরো ব্যাপারটা ফের চিন্তা করে একরকম হেসে উঠলাম। মেয়েটার নামটা জানা গেলে মন্দ হতো না খুব একটা। যদি শুধু ডুবে না থেকে… রিহান বলে ‘অফলাইন মুডে’ চলে যাওয়া। আমি বলি ‘খুব ডুব’। খুব ডুব, খুব হয় আমার। কি চিন্তা করছিলাম তখন? আমি চিন্তা করছিলাম… সে উঠে দাঁড়ালো সিট থেকে, নেমে যাওয়ার জন্য। আমি তখনও দাঁড়িয়ে আছি। সে ওর বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেই না পা বাড়ালো তখনই বেরসিক ড্রাইভার খানিক রসিকতা করে বসলো – গাড়ি স্টার্ট করলো। পদার্থবিজ্ঞানের জড়তা ব্যাপারটা মূর্ত হয়ে গেলো তখনই। সে পড়ে যেতে লাগলো। লাগলো বলছি এইজন্যে যে আমি তাকে ধরে ফেললাম! অবশ্য না ধরে উপায়ও ছিল না, আমার দিকেই পড়ছিলো সে। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সে বললো, ‘স্যরি’। আমি মৃদু হেসে বললাম, ‘আপনি অলরেডি একবার স্যরি বলেছেন। আমার প্রতিদিনকার ‘স্যরি’র কোঠা তখনই পূরণ হয়ে গিয়েছে’। অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে কয়েক মুহূর্ত পরে সে বলে উঠলো, ‘স্যরি!’। আমি হেসে উঠলাম। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সেও হাসতে লাগলো। আমি বললাম, ‘আমি রাজিব’। সে বললো, ‘আমি …’।
দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ে টু ইন্টারেস্টিং ইনসাইড ইয়োর হেড!
৩
‘তাহারে দেখি না যে দেখি না, শুধু মনে মনে ক্ষণে ক্ষণে ঐ শোনা যায়’
সো, হোয়াট ইজ দ্যা থিং উইথ ইনফ্যাচুয়েশন?
মেরিয়াম-ওয়েবস্টার ইনফ্যাচুয়েশনকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলছে, (I) ল্যাকিং সাউন্ড জাজমেন্ট, ফুলিস (II) কমপ্লিটলি ক্যারিড অ্যাওয়ে বাই ফুলিস অর শ্যালো লাভ অর অ্যাফেকশন (III) এক্সট্রাপোলেটিং ফ্রম ইনসাফিসিয়েন্ট ইনফরমেশন।
বোঝা গেছে ব্যাপারটা?!
ইনফ্যাচুয়েটেড? এখনি সাবধান হয়ে যান, আপনার ‘ব্রেইন’ অপহৃত হয়ে গেছে। ইউ আর নাউ আন্ডার দ্যা ইনফ্লুয়েন্স অফ স্ট্রং কেমিক্যাল ফোর্সেস (অ্যান্ড দ্যা ফোর্স ইজ রিয়েলি স্ট্রং দেয়ার!)। আপনি অ্যাডিক্ট হন কিংবা না হন, এই মুহূর্তে আপনি প্রাকৃতিক অ্যাম্ফেটামিনের উপর আছেন।
চলুন, একটু… গভীরে যাওয়া যাক।
কিভাবে আরম্ভ হয় এই পুরো প্রক্রিয়াটা? আমাদের দুই জোড়া চোখ একত্রে মিলিত হয় (চোখাচুখি আর কি!), হৃৎস্পন্দন তরান্বিত হয়, গাল রক্তিমাভ হয়ে যায়। অ্যাট্রাকশন, ইনফ্যাচুয়েশন, লাভ। এবং যখন আপনি এই ব্যাপারটার মধ্য দিয়ে আসছেন, আপনার অজান্তেই আপনার শরীরের কিছু শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়া পুরো ব্যাপারটাকেই নিয়ন্ত্রণ করছে। যখন দু’জন মানুষের চোখ ‘মিউচুয়াল অ্যাট্রাকশন’জনিত কারণে ‘মিলে’ যায়, ব্রেইনের একটা অংশ জ্বলে ওঠে। এই অংশটার নাম অরবিটোফ্রনটাল কর্টেক্স, চোখের ঠিক উপরের অংশটুকু। সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আবেগিক প্রক্রিয়াগুলোর নিয়ন্ত্রক এই অংশটুকু। এসময় ব্রেইনে তিন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটারের প্রবল আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। নিউরোট্রান্সমিটার হল একরকমের কেমিক্যাল যা দিয়ে নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে একটা হল ডোপামিন যেটা কিনা আনন্দের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রন করে। আরেকটা হল এপিনেফ্রিন বা অ্যাড্রেনালিন। এই মহোদয় ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ রেসপন্স নিয়ে মাথা ঘামান। সহজ কথায়, ইনি আমাদের স্বয়ংক্রিয় ডিফেন্স সিস্টেম (পালাবেন নাকি বিনা-যুদ্ধে-নাহি-দিব-সুচাগ্র-মেদিনী?)। প্রেমিক-প্রেমিকার হাত ঘামছে? হৃৎস্পন্দন বেড়েই চলছে? এসবের কারন এই এপিনেফ্রিন। তৃতীয় নিউরোট্রান্সমিটারটি হল সেরোটোনিন। মেজাজ, কামনা, ক্ষুধা, ঘুম, স্মৃতির সাথে জড়িত এইজন। মজার ব্যাপার হল, প্রেমরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সেরোটোনিন লেভেল আর অবসেসিভ-কম্পালসিভ-ডিসঅর্ডারে ভোগা কারো সেরোটোনিন লেভেল একই। একারনেই ইনফ্যাচুয়েটেড হয়ে গেলেই উদ্বিগ্নতা আর নার্ভাসনেস জেঁকে বসে। একটা পর্যায়ে গিয়ে এই নিউরোট্রান্সমিটারের লেভেলে পরিবর্তন আসে কারন ‘নাথিং ইজ স্ট্যাটিক, এভ্রিথিং ইজ ইভল্ভিং, এভ্রিথিং ইজ ফলিং অ্যাপার্ট’ (ও আচ্ছা, ‘ফাইট ক্লাব’ থেকে একটা ডায়ালগ মেরে দিলাম আর কি!)। অর্থাৎ এরইমাঝে হয়তো ‘ঘটনা’ ঘটে যায়, একটা ডিসিশনে আসতে হয়ঃ ব্রেক আপ অর বি কমিটেড। এবং আপনি যখন কারো সাথে রিলেশনশিপে থাকেন, তখন হরমোন তাদের ক্রিয়া আরম্ভ করে। ইঁদুরের বর্গভুক্ত এক ধরনের প্রাণী, প্রেইরি ভোল (প্রেইরি তৃণভূমি অঞ্চলে দেখা যায়), সারাজীবন এক সঙ্গীর সাথেই কাটায় যেটা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিরল। এদের কথা আসছে একটা বিশেষ কারণে – হরমোন। এদের অক্সিটোসিন আর ভেসোপ্রেসিন হরমোনদ্বয়ের লেভেল, লিটরেলি, হাই। মানুষের জৈবিক ব্যাপারগুলোতে এই হরমোন দু’টোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। ইন ফ্যাক্ট, অক্সিটোসিনকে সম্যক কারণেই আলাদাভাবে একটা নামে ডাকা হয় – লাভ হরমোন। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, মানুষের ক্ষেত্রে যাদের প্রোটিনে এক বিশেষ ধরনের জেনেটিক সিকুয়েন্স থাকে যা ভেসোপ্রেসিনের সংস্পর্শে চরিত্রে একটা আলাদা বৈশিষ্ট্যের সমাগম ঘটায়। এই দলভুক্ত মানুষের কমিটেড রিলেশনশিপে আসতে সমস্যা দেখা যায়। অন্যকথায়, দিস পার্টিকুলার গ্রুপ অফ পিপল উইল লাইকলি চিট অন ইউ। তাই… ব্রেকআপ হয়ে গেলে পরে, কাউকে দোষ না দিয়ে, ‘জিন’কে দোষ দেয়া যেতে পারে! অন্যদিকে, এই হরমোনের ছোটাছুটি কমিয়ে দিতে চাইলে, বিশ্বস্ত কাউকে জুটিয়ে নিন; নিউরোট্রান্সমিটারের আতশবাজিতে আপনাকে অন্তত ভুগতে হবে না। কোথাও কেউ নেই? আচ্ছা, দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। ডোপামিন লেভেল হাই করার আরও উপায় আছে – আনন্দদায়ক কিছু করুন। চকলেট খেয়ে… ওয়েট…!
আমি একটা গল্প বলছিলাম!
৪
নেভার ক্লোজ ইয়োর লিপস্ টু দোজ হুম ইউ হ্যাভ অলরেডি ওপেনড ইয়োর হার্ট। চার্লস ডিকেন্স-এর উক্তিটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছিলো। পরে খেয়াল করে দেখলাম পুরো ব্যাপারটা ঠিকই আছে। আই হ্যাভ নেভার ক্লোজড মাই লিপস টু দ্যা পারসন হুম আই হ্যাভ ওপেন্ড মাই হার্ট। কারণ, আমি এখনও চান্সই পাই নি কথা বলার! কথা বললে না কথা না বলার ব্যাপারটা আসে।
মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম তাই। তখনই বুঝতে পারলাম নাম না জানা কোন মানুষকে খোঁজাটা মোটেই সুবিধের কোন ব্যাপার না। ভার্সিটির বাসে উঠে বসে থাকলাম বেশ কয়েকদিন। না, তাঁর দেখা নেই। অবশ্য আমি বিরক্ত বা হতাশ হচ্ছিলাম না একদমই। ঐ যে, অফলাইন মুডে চলে যাওয়া! আমি অলরেডি তাঁকে জাপানের কিয়েটোতে চেরি ফুল হাতে প্রপোজ করেছি। গড’স ওন কান্ট্রি কেরালাতে সেলিব্রেট করেছি তাঁর হ্যাঁ বলা। নেক্সট ভ্যাকেশনে স্যান্তোরিনি না ইস্তানবুল এটা নিয়ে সামান্য সমস্যায় পড়ে গিয়েছি অবশ্য। আজও ভার্সিটি বাসে উঠতে যাওয়ার আগে খুব সম্ভবত এটা নিয়েই ডুবে ছিলাম, না থাকলে হয়তো হঠাৎ বৃষ্টির দুয়েক ফোটা অনাকাঙ্ক্ষিত আর অবাঞ্চিত থাকতো না। বৃষ্টি আসলেই ভেজা হয় আর ক্যাম্পাসে বৃষ্টি আসলে তো কথাই নেই। আমার একটা লিস্ট আছে, সেটাতে আমি ক্যাম্পাসের কোথায় কোথায় ভিজেছি আর কোথায় ভিজিনি তা লেখা আছে। নেক্সট বৃষ্টি আসলে কোথায় ভিজবো সেটা ঠিক করে রেখেছিলাম, ক্যাফেটেরিয়ার ছাদে। সেটা মাথায় রেখেই আমি বাসের দিকে না গিয়ে রাস্তা বদলিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়ানো অবস্থাতেই খেয়াল করলাম রাশেদ, আমার বন্ধু, কল করেছে। আমি একটু থেমে কল রিসিভ করলাম।
– কোথায় তুই? রাশেদের প্রশ্ন।
– ক্যাফেটেরিয়া যাচ্ছিলাম।
– ও আচ্ছা, ক্যাফেটেরিয়া লিস্টে ছিল নাকি?
– হ্যাঁ, ক্যাফেটেরিয়ার ছাদ।
– আজকে আর ওখানে যাওয়ার দরকার নেই। সেন্ট্রাল ফিল্ডে আয়। ফুটবল খেলবো।
– ক্যান রে ভাই? না গেলে হয় না?
– প্লেয়ার নাই, কথা না বলে চলে আয়।
– শোন…
আমি আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। কারণ, হতচ্ছাড়া বন্ধু আমার ততোক্ষণে কল কেটে দিয়েছে। আমি অগত্যা হাঁটতে লাগলাম, ভিজতে ভিজতেই। মাঠের এক কিনারায় এসে পৌঁছেছি, চোখ বাড়িয়ে খুঁজছি রাশেদদের। তখনই একটা ফুটবল আমার পায়ের কাছে এসে লাগলো। অ্যান্ড অ্যাট দ্যাট ভেরি মোমেন্ট আই এক্সপেরিয়েন্সড হার সেরিন হাইনেস! একটা মেয়ে একটু দূর থেকে হেঁটে আসছে বলটার দিকে। আসমানি টি আর কালো ঢিলেঢালা পাজামা ভিজে একশা। আমি তাকিয়ে আছি তাঁর দিকে, একরকম অবিশ্বাস নিয়ে। বৃষ্টি পড়ছে। আমি বিস্ময় নিয়ে খেয়াল করলাম আমার কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে! হয়তো সেই দমবন্ধ অনুভূতি থেকে উঠে আসার জন্যই কিনা, আমি আলতো করে বলটাকে লাথি মারলাম। বলটা যেতে লাগলো তাঁর দিকে। আই রুইন্ড ইট, ডিডন্ট আই? আই কুড হ্যাভ অ্যাট লিস্ট আস্কড হার নেম… আচ্ছা, আমি এখনও তো পারি। যখন বলটা তাঁর দিকে আমি লাথি মারলাম, সে বোধহয় কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলো। বলটা নেয়ার সময় আমার দিকে জাস্ট একবার তাকালো সে, এতটুকুই। তারপর উলটো দিকে এগুতে শুরু করলো। আমি তাঁর পিছু হাঁটা শুরু করলাম। নাম-নাম-নাম। আমার মাথায় তখন শুধু এই কয়েকটা শব্দই ঘুরছিল। আমি হাঁটছি, একটা সম্মানসূচক দূরত্ব রেখে। বৃষ্টি পড়ছে। আমার ঠোঁটে কেন জানি একটু হাসি খেলে গেলো। আই মিন, দিস ইজ এ পারফেক্ট মোমেন্ট। আমি যাকে খুঁজছি তাকে পেয়ে গিয়েছি। শুধু তা নয়, তাঁর পিছু হাঁটছিও। এবং আমাদেরকে ঘিরে বৃষ্টি পড়ছে, ঝুম বৃষ্টি। আমি চাইলেও এই মুহূর্তটাকে নষ্ট করা সম্ভব না। কিন্তু মোমেন্টের আবার মোমেন্টারি হতেও সময় লাগে না। আমার ‘মুহূর্ত নষ্ট না হওয়া’ সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা জেনে বোধহয় স্রষ্টার খানিকটা রসিকতা করার ইচ্ছে হল। আমি খেয়াল করলাম সে একটা গাড়িতে উঠে পড়ছে! নাম-নাম-নাম। এখন কি করি? আমি হাঁটছিলাম, গাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছি। খেয়াল করলাম, গাড়ি থেকে একটা মেয়ে চিৎকার করছে, ‘সেরিন, তাড়াতাড়ি আয়। আন্টি কল করতে করতে শেষ হয়ে গেলো’। সে, মানে মেয়েটা, মানে সেরিন, বলটা হাতে নিয়ে গাড়িতে ঢুকে গেলে গাড়ি ছেড়ে দিলো। আর আমি? আমি সেরিন আর সেরিন সংক্রান্ত সেরেনডিপিটি নিয়ে বৃষ্টিকে সঙ্গ দিতে লাগলাম।
৫
‘ইউ অ্যাকচুয়ালি হ্যাভ এ বেটার শট অ্যাট সেরিনা গ্রান্ডি দ্যান দিস সেরিন ইউ আর টকিং অ্যাবাউট’
‘দ্যাট ইজ… গ্রস ম্যান’
রিহানের সাথে কথা বলছিলাম আমি। প্রসঙ্গ সেরিন জাহান। মেয়েটার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের খুবই বাজে অবস্থা; সি প্রবাব্লি ডাজেন্ট ওন অ্যান অ্যাকাউন্ট অন ফেসবুক অর অন অ্যানি সোশ্যাল মিডিয়া ফর দ্যাট ম্যাটার। বাট সি ডাজেন্ট সিম টু বি এ প্রাইভেট পারসন। অ্যাট লিস্ট, তাঁকে যে কয়বার দেখেছি তাতে তো মনে হয় নি। ইন ফ্যাক্ট, লাস্ট যে ভাবে তাঁকে দেখলাম তাতে তো প্রাইভেট পারসন ভাবার প্রশ্নই আসে না; দ্যা ওয়ান হয়্যার আই অলমোস্ট হ্যাড এ কনভারসেশন উইথ হার। সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম আমার রুমমেটের সাথে। সেটা শুনেই আমার রুমমেটের উপর্যুক্ত বক্রোক্তি। কি ঘটেছিলো তাহলে?
সেদিনের বৃষ্টিবিলাসের পর বেশ খানিকটা তৃপ্ত হয়েই বাসা ফিরছিলাম। অবশেষে… আমি পাইলাম… আমি তাহার নাম পাইলাম। সে-রি-ন। বেশ তো! কৌতূহলবশত ফেসবুকে খুঁজলাম তাঁকে। পেলাম না। বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে, যতভাবে বিন্যাস-সমাবেশ করে দেখা সম্ভব, করলাম। ফলাফল আগের মতই। সেরিন নামটি খুঁজে পাওয়া গেলো না ফেসবুকে। বেশ, সে তাহলে ফেসবুক বাসিন্দা নয়। হাউ অ্যাবাউট অ্যাওয়ে ফ্রম কি-বোর্ড?
সেরিনকে কিভাবে খুঁজে পাবো এর পরের বার সেটা নিয়েই ভাবছিলাম খুব করে। কাছের বন্ধুদের কাউকে এই ব্যাপারটা না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আমি, দোজ গাইজ আর জার্কস্। এতে করে সেরিনকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটাকে আমি নিজেই আরও কঠিন করে তুললাম। এখন পর্যন্ত যেটা জানি সেটা হল মেয়েটা বাসে গিয়েছে একদিন। হয়তো আরও একদিন বাসে যাবে। হায়! হোয়াট এ হোপলেস রোম্যান্টিক আই অ্যাম! কিন্তু এটা ছাড়া আমার কিছু করারও ছিল না। এদিকে গোবেচারা বৃষ্টিও বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকদিন থেকে। অগত্যা আমি বাসে আর একটা এনকাউন্টারের আসায় আরও কয়েকটাদিন বাস অনুগামী হওয়া ঠিক করলাম। সিদ্ধান্তটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছিলো তা ঠিক বলতে পারবো না, কিন্তু… ঠিক এই সিদ্ধান্তের জন্যই (কিংবা না!) সেরিনের সাথে আমার আবার দেখা হয়ে গেলো।
সেদিন ক্লাশ দেরিতে শেষ হওয়ায় আমি তাড়াহুড়া করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে ছুটছিলাম। ঘড়িতে দেখলাম সময় খুব বেশি নেই, বাসটা মনে হয় ধরতে পারবো না। কিন্তু আমি নাচার। রিক্সা খুঁজতে লাগলাম। রিক্সায় যখন উঠতে যাবো তখন দেখি পেছন থেকে একটা ছেলের চিৎকার করছে, ‘মামা, একটু দাঁড়ান’! আমার রিক্সাওয়ালা একবার আমার দিকে আর একবার পেছনে তাকিয়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। আমি কেবল বলতে যাবো, তখন দেখি একটা ছেলে এসে রিক্সাওয়ালাকে ‘একটু এদিকে আসেন’ বলে পাশে নিয়ে গেলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, বেশ বিরক্ত হয়ে গেলাম। বাসটা বোধহয় আর ধরা হল না। রিক্সা থেকে নেমে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলাম। নামবো তখনি দেখলাম সেই ছেলেটা আবার হাজির। রিক্সাওয়ালা নেই। সাথে যাকে দেখলাম তাঁকে কোন দিক থেকেই রিক্সাওয়ালার সাথে মেলাতে পারলাম না। ছেলেটার সাথে সেরিন! আমি রীতিমত তব্দা খেয়ে বসে আছি। ‘তাহলে… সেরিন ইজ নট সিঙ্গেল?’ আমার মাথায় তৎক্ষণাৎ এই চিন্তা খেলে গেলো। আমি হয়তো আরও কিছু চিন্তা করা শুরু করতাম যদি না ছেলেটার কথায় ‘সেরিন’ নামক শব্দটা না থাকতো। ছেলেটা বললো, ‘তো, সেরিন জাহান, এই যে আপনার রিক্সা। বেশ বকর বকর করছিলেন। এবার করে দেখান’। উত্তরে সেরিনের জবাব ছিল, ‘ঠিক আছে ভাইসাহেব… আমি দেখাচ্ছি যে রাঁধে সে তো চুল বাঁধেই সাথে রিক্সাও চালাতে পারে’। আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হোয়াট অন আর্থ ইজ গোয়িং অন হিয়ার?
আমি ‘ভাই’ কথাটাকে শুধু কর্ণপাত করলাম। আমার কাছে তখন পৃথিবীর সবথেকে পছন্দের শব্দ ভাই। আমার ভাই বিষয়ক বাতুলতায় ছেদ ঘটাল স্বয়ং সেরিন।
– আপনি কোথায় যাবেন? সহাস্যে সেরিন, দ্যা কুইন অফ মাই হার্ট, জানতে চাইলো।
– বা…আসস্ট্যান্ড। আমি অপ্রস্তুত স্বরে বলে উঠলাম।
সেরিন এরপর… রিক্সা চালাতে শুরু করলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা রিক্সাওয়ালা সহ আরও কয়েকজন ছেলে-মেয়ে কিছুটা অবিশ্বাস মাখা চাহনি নিয়ে আমাদের দিকে… মানে সেরিনের রিক্সা চালানোর দিকে সহাস্যে তাকিয়ে আছে। ‘দিস ইজ গোল্ড!’ আমি মনে মনে চিন্তা করতে থাকলাম। যে ছিল আমার স্বপ্নচারিণী… সে আমাকে রিক্সা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! আমার হয়তো কিছু বলা উচিৎ ছিল সেরিনকে কিংবা আমি চাইলেই তাঁর সাথে কিছু কথা চালাচালি করতেই পারতাম। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার মাথার ভেতর চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো। আশেপাশের অনেকেরই। ইট’স নট এভ্রিডে ইউ সি এ গার্ল ড্রাইভিং এ রিক্সা উইথ এ বয় অন ইট। সেরিনের কি অবস্থা? কালো রঙের কুঁচি সালোয়ার আর আসমানি কামিজ পরা মেয়েটির চেহারা দেখতে পাচ্ছিলাম না আমি। ওর মাথার ভেতর কি চলছে? অবশ্য আমার মাথায় কি চলছিলো এটা আমি জানি। আমি ওর চুল… কোমর বিস্তৃত চুল… কৃষ্ণের প্রতীক ধারণকারী ঐ চুলগুলোকে একবার ছুয়ে দিতে চাচ্ছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম…
– বাসস্ট্যান্ড চলে এসেছি। সেরিনের কথায় আমার চিন্তাস্রোতে বাঁধা পড়লো।
– ওহ!… হ্যাঁ… আচ্ছা…। আমি বৃথা সামলানোর চেষ্টা করলাম নিজেকে।
আমি নেমে গেলাম। নামতেই সেরিন সুনিপুণভাবে রিক্সা ঘুরিয়ে, আমার দিকে একবার মৃদুহাস্যে তাকিয়ে, চলে যেতে লাগলো।
লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান, দিস ইজ সেরিন জাহান ফর ইউ!
৬
অনেকে কথায় কথায় প্রায় সময় বলেঃ কাকতালীয়। শব্দটির অর্থ – আকস্মিক যোগাযোগজাত কোনও বিষয় বা ঘটনা, হঠাৎ ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনা বা বিষয়, কার্যকরণহীন দুটি ঘটনা। কাক ও তাল থেকে কাকতালীয় কথাটার উৎপত্তি। একটি কাক তাল গাছে বসলো এবং বসামাত্র টুপ করে একটা তাল মাটিতে পড়ে গেল। কাকটি না বসলেও তালটি পড়তো, হয়তো তালটি না পড়লেও কাকটি বসতো। কাকের মতো ছোট একটা পাখির তাল গাছে বসার সঙ্গে তাল পড়ার কোনও যোগসূত্র ছিল না। কিন্তু ঘটনাচক্রে তালের পতন ও কাকের বসা দুটো একসঙ্গে ঘটে গেল। এটাই কাকতালীয়।
কাকতালীয় নিয়ে এতগুলো বাক্যব্যয় করার সঙ্গত কারণ আছে। সেরিনের সাথে আমার দেখা হওয়া ব্যাপারগুলো কি নিতান্তই কাকতালীয়? অর ইজ ইট ইউনিভার্স’স টুইস্টেড সাবলিমিনাল ওয়ে অফ সেয়িং ইউ গট টু গো ফর দ্যাট গার্ল?!
রিহান ছাড়া কারো সাথেই সেরিনের কথা শেয়ার করিনি। আমার ‘সেরিনদশা’র দুর্দশা দেখে সে আমাকে উপদেশ দিতে লাগলো। কি উপদেশ?
– ম্যান, সেরিন তো তোর ক্ষেত্রে সারিন গ্যাসের মতো প্রলয়ঙ্কারি প্রভাব ফেলে দিয়েছে।
– প্রভাব তো ফেলেছেই। কিন্তু সে সারিন গ্যাস না।
– আচ্ছা, কিভাবে বুঝলি? ক্রুর ভঙ্গিতে হেসে রিহান বলে ওঠে।
– সারিনের কোন রং নেই। সেরিনের আছে। আমি মৃদু হেসে জবাব দেই।
– উরিব্বাস! তাই নাকি? কি সেই রং?
– আসমানি।
– হা হা হা! রোমান্স তো উপচে উপচে পড়ছে দেখি।
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, হাসো তুমি।
– শোন ভাই, দেখা কর একদিন। এখন তো সেরিনের ডিপার্টমেন্ট জানিস। দেখা করে ফেল।
– আই অ্যাম স্টিল আনডিসাইডেড।
– অ্যাবাউট?
– অ্যাবাউট… এভ্রিথিং।
– ভাই, ইউ আর টেকিং ওভারথিঙ্কিং টু এ হোল নিউ লেভেল।
– কি জানি…
– একটা কথা বলবো?
– কি?
– আই মে বি রং বাট… সি মাইট জাস্ট বি এ মেস।
– ইফ সি ইজ এ মেস, আই অ্যাম উয়িলিং টু বি এ ডিজাস্টার ফর হার।
– ইন দ্যাট কেস, গুডলাক।
‘কাকতালীয় যোগসূত্রতা’ বা ‘ভিকটিম অফ সারিন গ্যাস’ যে কারণেই হোক না কেন, এই আলোচনার পরদিনই আমি আমাকে আবিস্কার করলাম সেরিন জাহানের ডিপার্টমেন্টের সামনে। আমি বসে আছি বেশ কিছুক্ষণ থেকে। বারান্দায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও ছিলাম, কিন্তু হাঁটু ব্যথার কারণে বেশিক্ষণ পারিনি। আমি নিজের দিকে তাকিয়ে বেশ করুনা অনুভব করলাম। আমার হাতে বকুল ফুলের মালা, হাঁটুর কাছের জায়গাটাতে প্যান্টটা বেশ খানিকটা ছেঁড়া; বকুলের মালা নিয়ে ফেরার পথে কুকুরের দাবড়ানি খাওয়ার ফল। মুখটা শুকনা লাগছে খুব, পানির পিপাসাও পেয়েছে বেশ কিন্তু পানি খেতে যাচ্ছি না। যদি সেরিনের সাথে দেখাটা মিস হয়ে যায়! ওহ গড, আই অ্যাম অলরেডি এ ডিজাস্টার, এ গ্লোরিয়াস ওয়ান। নিজের জন্য একটু করুনা বোধহয় করা যেতেই পারে!
আমি সেরিনের শিডিউল জেনেই এসেছি… একঘণ্টা আগে। অপেক্ষার পালা শেষ হবে কিছুক্ষণ পরেই। আমি হাতঘড়ির দিকে তাকালাম আরেকবার। অল্প ক’টা মুহূর্ত বাকি কেবল। আমি কি বসেই থাকবো? নাকি উঠে দাঁড়ানো ভালো দেখাবে? বসে থাকা আর দাঁড়ানোর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যখন আমি প্রায় দিশেহারা… অ্যাট দ্যাট এক্সাক্ট মোমেন্ট, সেরিন হ্যাপেন্ড! অ্যান্ড দিস টাইম, সি শাউটেড টু মি… বাই ডেস্ক্রাইবিং মাই শার্ট!
– এই যে, নীল-কালো শার্ট!
আমি চমকে উঠলাম কণ্ঠটা শুনে। আমি মাথা নিচু করে চিন্তা করছিলাম, বসে থাকবো নাকি দাঁড়াবো। খেয়াল ছিলো না গেটের দিকে। আমি ফিরে তাকালাম ওদিকে। সেরিন দাঁড়িয়ে আছে, কয়েকজন বন্ধু সহ। আমিও দাঁড়িয়ে আছি, নীল-কালো চেক শার্ট পরে।
সেরিন তাঁর বন্ধুদের কি যেন বলে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমি তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে। সি মাইট নট বি কা’ম অর ট্রাঙ্কুইল বাট সি হ্যাজ এ ট্রাঙ্কুইল গেজ। ডুব দিতে ইচ্ছে হল, খুব…হাই! আমি কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে উঠলাম।
– অকওয়ার্ড হাই। সেরিন হেসে বলে উঠলো, চোখ ছোট করে, ঠোঁটজোড়া খানিকটা বাঁকিয়ে।
আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার বা বলার খুঁজে পেলাম না।
– আপনি সেই বাসের ‘স্যরি গাই’ না? সেরিন উৎসুক দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
– আপনি খেয়াল করেছিলেন? আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।
– জ্বী। মিস্টার ফুটবল গাই… মিস্টার গোবেচারা রিক্সাযাত্রী।
আমি মাথা নাড়ালাম কিছুটা, উইথ দ্যা অ্যাডেড বোনাস অফ এ ‘সলজ্জ হাসি’!
‘আচ্ছা, আই ডু হ্যাভ এ কোশ্চেন ফর ইউ’। আমার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে সেরিন আবার বলে উঠলো, ‘অ্যাকচুয়ালি… এ ফিউ’।
– করুন। আমি উত্তর দিলাম। সেরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে। তখনই বুঝতে পারলাম একটা ব্যাপার।
দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ে টু বিউটিফুল হোয়েন ইউ হ্যাভ ইয়োর ‘সেরিন’ বিসাইড ইউ!
[এই লেখাটা এখানেই শেষ। তাহলে পরিণতি কি হল গল্পের? আপনি একটা বিষয় ভুলে যাচ্ছেন। প্রেমের গল্পের কোন পরিণতি হয়না। পরিণতি হয় প্রেমের। প্রেমের গল্পগুলো চলতে থাকে, বলতে থাকে আমার মতন কিছু হোপলেস রোম্যান্টিকের কথা।]Send private message to author






