একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকুরীর সুবাদে আমি তখন রাশিয়ায়।বেশিদিন হয়নি বলে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিলো বেশ। বিশেষ করে কনকনে শীত আর রুশ ভাষ নিয়ে। বরফ গলতে শুরু করা শীতের শেষ সময়ের কোন এক ছুটির দিনে এক বাঙালি বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য চড়েছি ট্রেনে। যে সিটে বসেছি তার সামনের সিটে আমার মুখোমুখি বসেছে অপূর্ব সুন্দর এক রাশিয়ান তরুনী। ধবধবে তুষারে লাল রক্ত যেমন সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, লাল টকটকে ওভারকোটে তেমন লাগছিলো তাকে। অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে সেই সৌন্দর্য গিলছিলাম। খানিকবাদে সে একখানা ডায়েরী বের করে কি যেন লিখতে লাগল। আবার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিতে লাগল। ভেবেছিলাম, দেশে যা হয় নি, পরদেশে বুঝি তা হয়ে গেল। রুশ রমণী বুঝি আমার প্রেমে পড়ে গেছে। মনে হল, ইস্ সে কোন এক বিপদে পড়ে না কেন? উদ্ধার করে বলতাম, আমি বাঙালি বীর; আমাকে দেবে তোমার প্রেম মাল্য। খানিকবাদে এক স্টেশনে নেমে যাওয়ার জন্য সে উঠে গেল দরজার দিকে। তার ডায়েরীর ফাঁক থেকে বেরিয়ে গেল একটা চিরকুট। সেদিকে খেয়াল না করেই সে হেঁটে চলেছে দরজার দিকে। আমিই তুলে নিলাম চিরকুটটা। এগিয়ে গেলাম দেওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে সে নেমে হাঁটা ধরেছে। নাম জানি না আর রুশ ভাষায় অতীব জঘন্য জ্ঞানের জন্য পেছন থেকে ডাকও দিতে পারলাম না। ততোক্ষণে ট্রেন আবার চলা শুরু করে দিয়েছে। দরজার কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখছি লাল ওভারকোট ওয়ালা রুশ রমনীর হেঁটে যাওয়া। হাতে আমার তার ফেলে যাওয়া চিরকুট। পরক্ষণেই ভাবলাম, এ চিরকুট বুঝি আমায় তার প্রেম নিবেদন।চিরকুটে বুঝি তার সাথে যোগাযোগ মাধ্যম আর যোগাযোগের আহ্বান লেখা। এতো রাশিয়ান তরুনী, বাঙালি নয়, যে বুক ফাটবে তবু মুখ ফুটবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, চিরকুটটা যে রুশ ভাষায় লেখা।
বন্ধুর বাসা থেকে ফেরত আসার পর, চিরকুটের অর্থ উদ্ধারে অভিযানে নামলাম। পরিচিত লোকদের কাছে গেলাম না, যদি রোমান্টিক কিছু লেখা থাকে। এক প্রোফেশনাল দোভাষীকে দিয়ে চিরকুটের ইংরেজী অনুবাদ করালাম। অনুবাদ পড়ে আমার জল্পনা কল্পনার ফুলে ফেঁপে ওঠা বেলুন চুপসিয়ে গেল। ওটাতে নাকি একটা রাশিয়ান খাবরের প্রস্তুত প্রণালী লেখা। হতাশ হলেও চিরকুটটা রেখে দিলাম। এরপর যত বার বাইরে যেতাম চিরকুটটা সাথে নিতাম। যদি কখনো সেই লাল ওভার কোট ওয়ালা রাশিয়ান রমনীর দেখা পাই তাহলে টিরকুটটা ফিরিয়ে দিয়ে বলবো, “চিরকুটটার মত হৃদয়টাও ফেলে যেয়ো কোন একদিন, সযত্নে কুড়িয়ে নেব। আমি বাঙালি পুরুষ, হয়তবা রুশ ভাষাটা জানা নাই, তবে ভালোবাসার ভাষাটা যে ষোল আনাই বুঝি।”
Send private message to author






