(১)
দিস ইজ মাই ফিফথ ব্রেকআপ, অ্যান্ড ইট ডাজেন্ট হার্ট অ্যানিমোর।
ব্যাপারটা কচু পাতার পানির মতো হয়ে গেছে। গা ঝাড়া দিলেই গায়ে কোন চিহ্ন থাকছে না। তবে এই ভাবনাটা নিজেকে প্রবোধ দেয়ার মতোই। আমাদের ভেতরের সারভাইভাল ইন্সটিঙ্কটটা খুব প্রবল। নিজেকে অস্বীকার করতে পারে না। চায় না। প্রকৃতি বা দৈব যেটাই হোক না কেন এই ডিজাইনটার ডিজাইনার ফ্ললেস কাজ করতে ভালোবাসেন। প্রতিদিন ভেতরের মনটার চারপাশে, এই তরল আর কোমল মনটা, অ্যাডামান্টিয়ামের একটা খোলস গড়ে উঠছে। হৃদয়ঘটিত দুর্ঘটনার দুর্বিপাক থেকে আগলে রাখছে। অ্যান্ড, আই অ্যাম অল ইন ফর ‘সেভিং’ মাইসেলফ!
মনটা একটা পাকা পলিটিশিয়ান। নতুন বছর। নতুন প্রতিশ্রুতি। ভাঙা। গড়া। নতুন উদ্যমে। অ্যান্ড, দ্য অ্যাবিলিটি টু প্রোজেক্ট এ মেন্টাল পিকচার হোয়েনেভার ইউ সি এ মিউজিক ভিডিও উইথ এ কাপল ইন ইট ডাজেন্ট হেল্প ইদার। চোখ বন্ধ করে হাঁটো। তোমার পাশে একজনকে এনে বসাবে এই বিদগ্ধ রাজনীতিক। এআর রাহমান বাজাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে। কি একটা যন্ত্রণা!
আমি অভিযোগ করছি না মোটেই। মন না থাকলে নাকি মানুষ হওয়া যায় না (এই বাক্যের শেষে LMAO দিয়ে দিচ্ছি – রেস্ট ইন পিস, ডিয়ার চাইল্ডহুড এডুকেশন)। মাঝে মাঝে খটকা লাগে। পরমুহূর্তেই মনে হয় আমার ইতোমধ্যেই কয়েকবার ব্রেকআপ হয়ে গেছে দেয়ারফোর আমার মন আছে হেন্স আমি একটা মানুষ। উফ, হোয়াট এ মনুমেন্টাল রিলিফ! আমার পুরো অস্তিত্বকে কিছু অনুভূতির নামে এবং মাধ্যমে প্রকাশ বা ব্যাখ্যা করার এই প্রক্রিয়াটায় আমি বেশ অভিভূতই বলা যায়। দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেট ছাড়াও আরও অনেকখানে এই মনের বদৌলতে রাজনীতি ঢুকিয়ে ফেলা যাচ্ছে। কি চমৎকার!
এই গল্পটাও মনের হিসাবনিকাশের রাশিমালা নিয়েই।
(২)
শেষবার যখন বেকআপ হলো এরপর (আবার) প্রতিজ্ঞা করলাম। আর যাই হোক মনের লেনাদেনায় আমি নাই। ন আ-কার হ্রস্ব ই। কিন্তু (আবার) গোলমালটা বাঁধলো এই মেট্রোপলিসের একটা মোড়ে একটা ফুড ট্রাক। ফুড ট্রাকটা সুন্দর, এর ভিতরে যে জন খাবার প্রস্তুত করছিলেন সে তারথেকেও।
আমার ততোদিনেও এই ধারণাটা খুব একটা জেঁকে বসেনি যে আমাদের ভেতরের মনটা সবসময় একটা আড়াল খোঁজে। এই আড়ালকে এই গল্পের খাতিরে নাম দেয়া যাক ডিসট্রাকশন। এবং, এই ডিসট্রাকশনের সবচেয়ে চমকপ্রদ রূপটা হলো একজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ (ইয়েস, আই অ্যাম স্পিকিং ফর মাইসেলফ এবং এই জায়গায় জেন্ডারতত্ত্বের কোন ছাঁকনি নিয়ে না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হলো)। আমার মনকে মানানো গেলো না। সে (আবার) ভাসতে চাইলো। ‘আরে ছাগল, ইউ আর ইমিউন টু হার্টব্রেক। প্লাস YOLO। মেয়েটা সুন্দর। গাইতে গাইতে গায়ক না হওয়া গেলেও খাইতে খাইতে প্রেমিক হলেও হওয়া যেতে পারে। টেক দ্যা প্লাঞ্জ’। অগত্যা।
এরপর থেকে ফেসবুক গ্রুপে অকেশনালি ফুড রিভিউ করা আমার কাছে সেই ফুড ট্রাকের ফুড হয়ে গেলো সেকেন্ডারি। সপ্তাহে বার তিনেক আমি সেই ফুড ট্রাকের আশেপাশে ঘুরঘুর করি। একা অবশ্যই না। বন্ধুরা থাকে। খাবার অর্ডার করে উন্মুখ হয়ে চেয়ে থাকি শেফকে দেখার জন্য। খাবার পরিবেশন করে দুইজন ছেলে। অর্ডার করার সময় শেফকে মুখোমুখি কদাচিৎই দেখা যায় – এক কোণে সে দাঁড়িয়ে খাবার বানাতে থাকে। তাতে আমি হতোদ্যম না অবশ্যই। আজ বার্গার, কাল স্যান্ডউইচ, পরশু উইংস। চলবে।
এই রুটিনে চেঞ্জ নিয়ে আসতে হবে বুঝতে পারলাম। আমি তো আর অরডিনারি কোন কাস্টমার না; আই হ্যাভ টু গেট নোটিশড। কিছুদিন খেয়াল করে যেটা বোঝা গেলো সেটা হলো এই “ওসাকা’স ড্রিম” ফুড ট্রাকের শুরুটাই হয় বিকেলের পরে। এরপর খাবার বেচাকেনা চলে মধ্যরাত অবধি। এই শহরে মধ্যরাতের কাস্টোমার বেশি। তারমানে আমাকে বিকেলের শিডিউল ধরতে হবে যেটা আমি করছিলাম। এবং, তাতে যে খুব বেশি সফল হইনি সেটা বলাই বাহুল্য। তাহলে? খুব বেশি ভাবতে হলো না। শখের ফুড রিভিউয়ারের পরিচয়টা কাজে লেগে গেলো।
(৩)
ঝুম বৃষ্টির এক জোছনার রাতে শেফের সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়া গেলো।
আমি সন্ধ্যার পরে একবার দেখা করতে গিয়েছিলাম। কখন সময় দিতে পারবে সেটা জানার জন্য। গিয়ে দেখি সেই জন নেই! জিজ্ঞাসায় জানা গেলো ঘণ্টাখানেকের জন্য উনি থাকবেন না। তবে তাকে আমার কথা জানানো হলো ফোনে। উনি বললেন সেক্ষেত্রে মধ্যরাতের দিকে আসতে হবে। আমি একটা কোল্ড কফি অর্ডার করে নিজের ভেতরের উত্তেজনাকে স্তিমিত করার চেষ্টা করলাম।
ওসাকার স্বপ্নের কাছে পৌঁছলাম বারোটা বাজার মিনিট দশেক আগে। আমি পৌঁছানোর সাথে সাথেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামা শুরু করলো। আমি গিয়ে দেখি ফুড ট্রাকের আশেপাশে মানুষ সর্বসাকুল্যে তিন জন – সেই ছেলে দুইজন আর সে। আমাকে দেখেই সে ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে আমাকে একটা জিনিস দিলো। আমি হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম সেটা একটা ছাতা। সহাস্যে ধন্যবাদ দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। কথাও শুরু করলো সেই।
– তারপর, বলো, কি জানতে চাও?
আমি ওর তুমি সম্বোধনে কিছুটা চমকে গেলেও সহাস্যেই জবাব দিলাম, ‘প্রথম প্রশ্নটা বোধহয় জানেন কি হতে যাচ্ছে’।
– জানি না, তবে আন্দাজ করতে পারছি।
– জানেন না মানে? এর আগে কেউ জিজ্ঞাসা করে নাই? আমার কণ্ঠে বিস্ময়ের ছাপ সুস্পষ্ট।
– ওয়েল, ইউ আর দ্য ফার্স্ট ইন্টারভিউয়ার আই অ্যাম ফেসিং, সো আই উড হ্যাভ নো ক্লু।
– ড্যাম! “ওসাকা’স ড্রিমস” হ্যাজ বিন মেকিং দ্য রাউন্ডস ইন অনলাইন কমিউনিটি সিন্স ইউ হ্যাভ অ্যাপিয়ারড ইন দিস পার্ট অফ দ্য টাউন। হাউ লং হ্যাজ ইট বিন? টু মান্থস?
– টেন ডেজ সর্ট অফ টু মান্থস।
– এতোদিনেও কেউ ইন্টারভিউ করে নি? ওয়াও!
– হ্যাঁ। দ্য বিজনেস ইজ ডুয়িং ফাইন, সো আই অ্যাম নট কমপ্লেইনিং অ্যাট অল! সে মৃদু হেসে জবাব দিলো।
– আচ্ছা। চমৎকার! এখন উত্তরটা দিয়ে দেন তাহলে।
– নামটা এরকম কেন?
– হুম।
– এটার পিছনে কোন বিশেষ কারণ নেই সত্যি বলতে। আমি যেদিন চিন্তা করলাম যে ফুড ট্রাক কিনে ফেলবো সেদিনই নামটা কিভাবে যেন চলে আসে মাথায়…
– মানে এই পুরো বিজনেসটা আপনার একার? আমি ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললাম।
– হ্যাঁ! সে স্মিতহাস্যে জবাব দিলো।
আমি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলাম। বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণ নেই। আমি ফুড ট্রাকের সামনের রাস্তার দিকে তাকালাম। বৃষ্টির পানি রাস্তার ঢালু বেয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আমি আবার ওর দিকে তাকালাম। ‘আমি ভাবিনি আপনি এই বিজনেসটা ওউন করেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি শেফ এতটুকুই। বাট, অ্যামেইজিং ব্যাপার পুরোপুরি!’ আমার কণ্ঠে আন্তরিকতা নিখাদ।
– থ্যাংক ইউ। সে হাসিমুখেই জবাব দিলো।
আমিও হাসির জবাবে হাসি দিয়ে দিলাম।
– আচ্ছা, তুমি আর কি জিজ্ঞেস করতে চাও? খুব বেশি প্রশ্ন হলে আজকে বরং থাক। আমাকে চলে যেতে হবে এখন। বৃষ্টি পড়ছে। কাল আবার আসতে পারো।
আমি হাসিজড়ানো কণ্ঠেই ওকে বললাম, ‘আপনাকে আমার ভালো লাগে’।
– হোয়াট? সে ভ্রু খানিকটা কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
– আই লাইক ইউ। আমি আমার মুখের হাসিকে অক্ষুণ্ণ রেখে কণ্ঠ খানিকটা বাড়িয়ে উত্তর দিলাম।
– ওয়েল, ওয়াজন্ট এক্সপেকটিং টু হিয়ার অ্যানিথিং লাইক দ্যাট। ওর মুখের কোণায় আবার হাসিটা ভেসে উঠলো।
– আমার পরিকল্পনায় ব্যাপারটা ছিলো না আসলে। আপনাকে প্রথম যেদিন দেখলাম এই মোড়ে সেদিন থেকেই ভালো লাগা শুরু। এরপর সুযোগ খুঁজছিলাম আর কি।
– আচ্ছা।
– হ্যাঁ।
– হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু ডু অ্যাবাউট ইট নাউ দেন?
– ডিপেন্ডস এনটায়ারলি অন ইউ।
– সেটা আমি জানি। বাট তুমি কি করতে চাও?
– আপনাকে ভালো লাগে। ওয়ান্ট টু গেট টু নো ইউ…
– ওহ, কাট দৌজ ক্র্যাপস। স্ট্রেট বলো। হোয়াট ডু ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট?
– বি মাই গার্লফ্রেন্ড মেবি?
– হোয়াট ডু ইউ অফার?
আমি এবার সিরিয়াস তব্দা খেয়ে গেলাম। হোয়াট ডু আই অফার? ওকে দেয়ার মতো ইয়ুথফুল এনথুজিয়্যাজম ছাড়া আমার আর কিছু নেই। আর ওর পাল্লায় এটার গুরুত্ব যে কতোখানি হবে সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান। আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকলাম।
– ওয়েল, বলো। এবং, কুইক!
– আই অফার… নাথিং। আপনাকে দেওয়ার মতো এই মুহূর্তে কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
– আই লাইক দ্য আন্সার।
– ওয়েট, হোয়াট? আমি সত্যি সত্যি অবাক হয়ে গিয়েছি।
– তোমার উত্তরটা আমার পছন্দ হয়েছে। এটাই।
– আচ্ছা।
– হ্যাঁ।
– তাহলে?
– তাহলে? তুমি আমাকে প্রশ্ন করবে না খাবার নিয়ে? আমার ইন্সপারেশন, অ্যাস্পারেশন নিয়ে জিজ্ঞেস করবে না?
– ওসব জিজ্ঞেস করবো ভাবিনি। মানে…
– কি মানে?
– মানে যা বলতে চেয়েছিলাম সেটা বলা হয়ে গেছে। এরপরে কি বলবো সেটা প্ল্যান করে আসা উচিত ছিলো। সেটা করিনি। তাই বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
– ওকে। লেট’স টক ফুড নাউ, শ্যাল উই?
(৪)
হোয়াট ওয়াজ আই থিঙ্কিং অ্যাকচুয়ালি?
আমার লাস্ট ব্রেকআপটা তেমন আগলি ছিলো না। সম্পর্কটা যতোটা মায়ায় জড়াবে ভেবেছিলাম ততোটা জড়ায় নি। রিলেশনশিপে যাওয়ার আগে, কমিটেড হওয়ার আগে নিজের কমফোর্ট জোনটাকে ভাঙতে হয়। এরপর কমিটেড হয়ে গেলে যে জায়গায় দাঁড়ানো যায় সেটাই নতুন কমফোর্ট জোন হয়ে যায়। কিন্তু এই জায়গায় আসার আগে নিজের ভেতরের কমফোর্ট জোনটাকে ভাঙতে যাওয়ার জন্য সম্পর্কে থাকা মানুষ দু’টোর মাঝের কম্পাটেবিলিটি রেশিওটায় সমতার ভাবটা বেশি থাকতে হয়। লেট’স গেট রিয়েল। কেউ যখন কোন সম্পর্কে যায় বা থাকে তাকে প্রতিনিয়ত, সম্পর্কের হানিমুন পিরিয়ডটা পার হয়ে গেলে, কিছু জিনিস মেনে নিতে হয়। এই মেনে নেওয়াটাকে ‘কমপ্রোমাইজ’ বলে লেবেল করার কোন অপচেষ্টা করবো না। বরং, এটা আসলে দরকারি। ভালোবাসার শুরুর দিকে পার্টনারদের মাঝে একে অপরকে আইডোলাইজেশনের একটা প্রচেষ্টা দেখা যায়। এই সময়টা কেটে যায়। কেটে গেলে তখন পার্টনারের কিছু দিক সামনে চলে আসে যেটা আসলে আমাদের চোখের সামনে বেখেয়াল হয়ে ছিলো। মেনে নাও। মুভ অন ফ্রম দেয়ার। অ্যান্ড, গেট টু ইয়োর কমফোর্ট জোন। দিস রিলেশনশিপ উইল লাস্ট। লাস্ট পার্টনারের সাথে আমার নিজের কমফোর্ট জোনটা ভাঙতে গিয়ে আর ভাঙা হয়নি। সম্পর্কের তাই আর কোন গতি হয়নি।
এরপরে বেশ কিছুদিন সিঙ্গেল ছিলাম। অই যে। ন আ-কার হ্রস্ব ই। নাই। কিন্তু মনের ডিসট্র্যাকশন খোঁজার ব্যাপারটার সিংহভাগই অনৈচ্ছিক। ইউ অলমোস্ট হ্যাভ জিরো চয়েস ইন ইট। অ্যান্ড, ওসাকা’স ড্রিমস হ্যাপেন্ড টু বি অ্যাট দ্যাট এক্স্যাক্ট প্লেস অ্যান্ড টাইম।
ত্রিনা মজুমদার ছিলো ওর নাম। ওর সাথে আমার বয়সে পার্থক্য ছিলো পাঁচ, ধর্মে কয়েকশো গড, আর কর্মে একটা ট্র্যাক। প্রথম দিনের পরে সপ্তাহ খানেক আর ওসাকার স্বপ্নের মুখোমুখি হইনি। দ্য ইগো কিকড ইন। লাভ মেকস আস ডু সিলি থিংস। নাহ, কথাটা বলা ঠিক হলো না। দ্য আইডিয়া অফ বিয়িং ইন লাভ মেকস আস ডু এ লট অফ সিলি থিংস। ত্রিনার সাথে প্রথম কথা হওয়ার পরে আমার ভেতরে ভেতরে ধারণা হয়ে গিয়েছিলো যে সে আসলে সব কিছু শুনে বুঝে কেন আমার সাথে এরকম করলো? বেশ খানিকটা তাচ্ছিল্যই করলো বোধহয়? ঘটনা তো সেটা ছিলো না। আমি ওকে বলেছি আমার তাকে ভালো লাগে। এটা বলার সাথে সাথেই যে ওর সাথে আমার আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়ে যাবে এই ধারণা করাটা সেই অনেকগুলো সিলি কাজের মাঝে একটা ছিল। সি অ্যাক্টেড ন্যাচারালি। আমার আচরণটাই স্বাভাবিক ছিলো না।
ওসাকার স্বপ্নের সাথে আবার দেখা করার দরকার পড়ে গেলো তাই। কিন্তু সেই বিকেল বেলা গিয়ে দেখি ত্রিনার ওসাকা আর অই জায়গায় নেই। তারপরের দিনও একই ঘটনা। আমি খুঁজতে লাগলাম ওকে। বেশি পরিশ্রম করতে হলো না। ফেসবুকের একটা পোস্টেই কাজ হয়েও গেলো। ওসাকার স্বপ্ন একই জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে খুঁটি গেড়ে থাকে না। সময়ের সাথে সাথে ওসাকার স্বপ্ন জায়গা বদল করে।
ত্রিনার সাথে এরপর নিয়মিত বিরতিতে আমার দেখা হতে লাগলো। আমি নিজেই দেখা করছিলাম ওর সাথে। ত্রিনার সাথে দেখা হওয়াটা একটা পোটেন্ট ড্রাগের মতো কাজ করছিলো। ত্রিনা নিজেকে নিয়ে, নিজের চয়েস আর এইম নিয়ে বেশ সচেতন। সে জানে সে কি করছে আর কি করতে চায়। সে আমাকে বলছিলো, ‘সানি, তোমাকে সেদিন যখন বললাম কি অফার করার মতো আছে তোমার। আমি ধারণা করছিলাম তুমি বেশ প্রিটেনশাস কোন একটা আন্সার করবে। সেটা করোনি। ব্যাপারটা আমার ভালো লেগেছিলো। এখন এই উত্তরটার গুণে তোমার প্রপোজালও উতরে যাবে এমনটা ভেবে নিও না। আমি যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি সেই জায়গাটায় কিছুদিন পড়ে তুমি এসে দাঁড়াবে। তখন ইউ উইল আস্ক এ সিমিলার কোয়েশ্চেন’।
ত্রিনার সাথে আমার কিছু হবে কিনা এই চিন্তা আর করিনি। ত্রিনার কথা ছিলো খুব… রিয়েল। ‘তুমি একটা বাবলের মাঝে আছো, সানি। এই বাবলটা তোমাকে একটা প্রেম অ্যাফোর্ড করাবে। আমার সাথে সেই বাবলটার প্রোটেকশন নেই। আই অ্যাম নো লংগার কোকুনড ইন দেয়ার। তুমি যে প্রেম চাও সেই প্রেম আমার কাছে লাক্সারি। সামথিং আই ক্যান্ট অ্যাফোর্ড। ইউ আর নট দ্য পারসন উইথ এ ফুড ট্র্যাক’।
আমি ওকে বলেছিলাম, ‘লেট’স ডু সামথিং দ্যাট ইউ ক্যান অ্যাফোর্ড’। সে বলেছিলো, ‘আই অ্যাম। এই যে কথা বলছি তোমার সাথে। ইট ইজ নট লাক্সারি। ইট ইজ… ওয়েল, ওয়ার্ক!’
(৫)
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা কচু পাতার পানির মতো হয়ে যাওয়াটা বোধহয় পুরোটা ঠিক না। প্রতিটা ব্রেকআপই কিছু না কিছু দাগ রেখে যায়। এই দাগ আসলে চরিত্রে কলঙ্কের মতো কিছু না। ব্যাপারটা অনেকটা নিজেকে রিডিসকভার করার মতোন। ডানে যাবো না বামে নাকি উত্তরে না দক্ষিণে। উদ্দাম নদীতে শান্ত ভাব চলে আসে। ঝিনুক নীরবে সহে যাওয়া শিখে নেয় কিন্তু সহে যাওয়াটাকে সে আর স্বভাবে পরিণত করতে চায় না। কথাটাকে একটু অন্যভাবে বলার চেষ্টা করা যাক। ভালোবাসার ভাঙা আর গড়া ব্যক্তিমানুষকে অনুদার করে ফেলে ক্রমান্বয়ে। ইউ নো হোয়াট ইউ ওয়ান্ট অ্যান্ড হোয়াট ইউ ডোন্ট। ইউ বিকাম এ লট মোর সেলফিস দ্যান ইউ অ্যাকচুয়ালি আর। ডাজ দ্যাট মেক অ্যানি সেন্স?
ত্রিনা হ্যাজ ফলেন ইন অ্যান্ড আউট অফ লাভ মাল্টিপল টাইমস। সে এক্স্যাক্ট নাম্বারটা বলে নি। আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওর উত্তর ছিলো, ‘ওয়ার্ড অফ অ্যাডভাইসঃ নতুন সম্পর্কে গেলে পুরাতন কোন কিছুকে সামনের গল্পে নিয়ে এসো না। দেয়ার অয়্যার রিজনস হোয়াই দে ডিডন্ট ওয়ার্ক আউট। পিছনের গল্প অহেতুক তুলনার জন্ম দেয়। ইনসিকিউরিটিজ তৈরি হয়। তোমার আর পার্টনারের মাঝে। কেন তুমি এসব নিয়ে আসবে?’ আমার প্রত্যুত্তর ছিলো, ‘এগুলা তো একে অপরকে জানার ক্ষেত্রেও দরকার আছে, তাই না?’ সে বলেছিলো, ‘ইউ টু উইল হ্যাভ অল দ্যা টাইম ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড টু নো ইচ আদার। তুমি আমাকে বলো তোমার পুরাতন মানুষটাকে তুমি চাও নাকি এখন তুমি আছো সেই মানুষটাই তোমার ‘বেস্ট’ ভার্সন? এখনকার তুমি তোমাকে ডিফাইন করো নাকি আগে যা ছিলে সেটা তোমাকে ডিফাইন করে?’ আমার কাছে কোন উত্তর ছিলো না। সে আরও বলছিলো, ‘পূর্বের সবকিছু বলে দেওয়াটাই অনেস্টি এভাবে চিন্তা করো না। তোমার ভেতরের মানুষটা কি করতে চায় সেটা বস্তুনিষ্ঠভাবে ওপাশের মানুষটাকে জানানোই অনেস্টি’। আমি বলেছিলাম, ‘ধরো, আমার বা ওর কোন বন্ধুর কাছে থেকে সে অনেক কিছু তো শুনতে পারে। তখন তো প্রশ্ন আসতে পারে সে কেন আমার কাছ থেকে এসব শুনলো না। সেক্ষেত্রে?’ ত্রিনা হেসেছিলো। সে ওর মুখের হাসি ধরে রেখেই বলেছিলো, ‘সানি, ইউ ক্যান প্রিটেন্ড বাট ইউ আর নট এ টিনেজার অ্যানিমোর। ডেট করবে তুমি আর তোমার পার্টনার। তোমার বা ওর বন্ধু না। তুমি যদি এই বিষয়টা চিন্তা করতে না পারো অথবা তোমার পার্টনারকে বোঝাতে না পারো তাহলে ইউ টোটালি সাক অ্যাট কমিউনিকেটিং। ইউ টু শুড ডাম্প ইচ আদার’স অ্যাস’।
ত্রিনার এরকম ‘পরিষ্কার’ কথাবার্তা আমার ভালো লাগতো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আর যাই হোক আমার সাথে ওর কিছু হবে না। সে আমার থেকে পাঁচ বসন্ত বেশি দেখেছে এজন্য না। অথবা, হয়তো এজন্যই! সি হ্যাজ এ জব, এ বিজনেস। আই হ্যাভ নান। ওর জগতটা ওর মাথার মাঝে না। আমার জগতের অনেকটাই আমার মাথায়। আই থিঙ্ক বাট সি ডাজ। সি ইজ… মোর রিয়েল দ্যান আই অ্যাম।
(৬)
ত্রিনার সাথে দেখা হওয়া আমার কমে যাওয়া শুরু করলো। ওর সঙ্গ আমি উপভোগ করতাম কিন্তু মোটিভেশনটা ছিলো না ঠিকমতন আর। কেন যাবো? নাথিং রোম্যান্টিক উইল এভার হ্যাপেন বিটুইন আস। আমি তো এটাই চাচ্ছিলাম, তাই না? এটাই যখন হবে না তখন গিয়ে কি লাভ? আমি যখন এটা বুঝে গেলাম তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার প্রোটেকটিভ বাবলটা কেটে যাচ্ছে। আমার ব্রেকআপ ইমিউনিটি হ্রাস পাচ্ছে। আমার নিজেকে নিয়ে দুঃখবোধের জায়গায় তৃপ্তি কাজ করা শুরু করলো।
ত্রিনার পরিবার নিয়ে খুব বেশি জানা হয়নি আমার। ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে কর্পোরেট কামলা ছিলো কিছুদিন। ভালো লাগেনি। ঘরে ওর রান্না ওর বন্ধুরা পছন্দ করতো। এটা থেকে আয় করার চিন্তা আসতে দেরি হয়নি। ফলাফল, ওসাকা’স ড্রিম।
ও আমাকে এই নামের নেপথ্যের গল্পের পুরোটা বলে নি। ও এক রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছিলো। সেই স্বপ্নে সে একটা রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলো। মেন্যুতে একটা খাবারের নাম ছিলো ‘ওসাকা’স ড্রিম’। সে সেই খাবারটা অর্ডার করেছিলো। একটা স্বচ্ছ প্রায় পানির বর্ণের খাবার। সে সেই খাবারের স্বাদে রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সে পরে শেফকে ডেকে সেই রেসিপিটা জানার চেষ্টা করতে যাবে সেই মুহূর্তেই ওর স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছিলো। আমি এই গল্প শুনে ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে সেই খাবারটা বানানোর কোন আইডিয়া খুঁজে পেয়েছে কিনা। সে আমাকে জানিয়েছিলো সে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে চেষ্টা করে সেই খাবারটা রিক্রিয়েট করতে। এবং, মনেপ্রাণে চায় যাতে সে সেই স্বপ্নটা আবার দেখে।
ত্রিনা মজুমদারের সাথে এভাবে আমার দেখা করা কমে যেতে যেতে একসময় বন্ধই হয়ে যায়। ওর সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো প্রায় মাস চারেক। পরে আমি ওর খোঁজ পেতাম ফেসবুকের গ্রুপে। আমার পরেও অনেকেই ওর ইন্টারভিউ নিয়েছে। ওর খাবারের অনেক প্রশংসা। বেস্ট বার্গার ইন টাউন। আমার ভালো লেগেছিলো অনেক। ত্রিনা ওসাকার স্বপ্ন নিয়ে গোটা শহর ঘুরে বেড়াতো। মাঝে মাঝে মনে হতো ওর সাথে গিয়ে গল্প করে আসি। সেও দুয়েকবার ডেকেছিলো। আমিই যাইনি। মিছেমিছি বলিনি যে আসবো কোন একদিন। সরাসরিই বলেছি যে আর বোধহয় আসবো না। তবে যদি কোনদিন সে আমাকে ‘ওসাকা’স ড্রিম’ খাওয়াতে পারে তো আমি আসবো এটা জানিয়েছিলাম। সে হেসে বলেছিলো সে আমাকে জানাবে।
– শ এ-কার ষ –
Send private message to author







গল্পটা একটু গোছালো হলে ভালো হতো। ইংরেজি শব্দগুলো ইংরেজিতে ব্যবহার করলে দেখতে সুন্দর লাগতো । গল্পে কোন টুইস্ট ছিলনা, যার ফলে পড়ার আগ্রহটা অনেক কমে গিয়েছিল। পরবর্তীতে এর চেয়ে ভালো কিছু দিবেন লেখক আশা করি।
ধন্যবাদ।
মন নিয়ে থিওরি ভালো ছিলো।
বতর্মানের ব্রেকআপ ট্রেন্ড তুলে ধরেছেন। আসলে ম্যাচিউরিটি না আসা পযর্ন্ত হোচট খাওয়া টা স্বাভাবিক। যেমন সানি দিন শেষে যখন মনের সমীকরণ বুঝতে পারল তার মনের অবস্থারও উন্নতি ঘটলো।
মোটামুটি সাধারণ একটা গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
এটুকুই বলার যে ইংরেজি শব্দ গুলো ইংরেজি ফন্টে হলে লেখাটা আরও প্রাণচঞ্চল হতো। আর পরবর্তী লেখায় আরও কিছু ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে এই আশা রাখছি।
সব মিলিয়ে ভালো ছিলো।
“অতঃপর,অরিন্দম কহিলা বিষাদে” গল্পের লেখক সানি চরিত্রটির মধ্য দিয়ে মন নিয়ে কিছু সত্য তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। সেই সাথে বর্তমান যুগের ব্রেকাপ ট্রেন্ডটিও প্রকাশ পায়।সানির ৫ম ব্রেকাপ হওয়ার পরেও আবারও প্রেমে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আমাদের বর্তমান সমাজের টিনএজারদের অস্থির ও অপরিপক্ক মনের প্রতিনিধিত্ব করে।
এ গল্পে দেখা যায়,কিভাবে সানি ফুড ট্রাকের একজন শেফের প্রেমে পড়ে। তার কাছে মেয়েটির বয়স,পেশা কিছুই ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু অপরদিকে মেয়েটি যথেষ্ট বাস্তব চিন্তার অধিকারী। সে জানে সে কি চায়, সে কি করছে।ত্রিনা নামক মেয়েটির সংস্পর্শে এসে যেন সানির মনেরও উন্নতি ঘটল। সেও বুঝতে পারল, এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নেই।
গল্পের নামের মতই গল্পের ভাষা ছিল জটিল ও দুর্বোধ্য। বর্তমান ট্রেন্ডের কিছু শব্দ যেমন LMAO,Suck at এ ধরণের শব্দ গল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে লেখক গল্পে নতুন ধাচ তৈরী করেছেন।এছাড়া গল্পে বাংলা ইংরেজির মিশ্রণ গল্পকে কিছুটা দুর্বোধ্য বানিয়ে দিলেও এ থেকে লেখকের গল্পের হাত যে খুব মজবুত সেটা বুঝা যায়।তবে বর্ণনশৈলী আরও একটু সাবলীল হলে ভালো হত।
লেখকের জীবন তত্ত্ব নিয়ে বলা কথাগুলা খুবই বাস্তব।পাঠক হয়ত নিজের সাথেও এর মিল খুঁজে পাবেন।
সাধারণ একটা গল্প কে জটিল ভাষার বাঁধনে বেঁধে লেখক গল্পের ইতি টেনেছেন চমৎকারভাবেই।গল্পের শেষে এসে লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন সানি নামক ছেলেটির প্রেম ভালোলাগা নিয়ে মানসিক উন্নত।
ব্যক্তিগত রেটিং ৩/৫
“অতঃপর অরিন্দম কহিলা বিষাদে”লাইন টি পড়েই মাইকেল মধূসুদন দত্তের সেই চতুর্দশপদী সনেটের কথাই প্রথমে মাথায় আসলো।সেটি ছিল যেমন গভীর অর্থবহ আবার জটিল ঠিক এই ছোট গল্পটিও তেমনি গভীর অর্থবহ আর জটিল।
যদিও এটিকে ছোট গল্প বলা যায়না আবার উপন্যাস ও বলা যায়না।
তবে ইংরেজির অবাধ ব্যাবহার খানিকটা বিরক্ত ই লেগেছে।নাহ আমি ইংরেজি ব্যাবহার করায় বিরক্ত হচ্ছিনা বাংলায় ইংরেজি এতো বেশি ব্যবহার করায় পড়ায় খুব বিরক্ত লেগেছে।শিরোনাম টা পড়েই কিছু বুঝে উঠতে পাচ্ছিলাম না যাই হোক অনেক ধৈর্য নিয়ে পুরো গল্প টা শেষ করলাম।গল্পের নায়ক নায়িকা সানি আর তৃনার সাময়িক সম্পর্ক আবার বিচ্ছেদ সব মিলিয়েই মোটামুটি এক সুন্দর লেখনী ফুটে উঠেছে গল্পটিতে।
In many ways, the work of a critic is easy. We risk very little, yet enjoy a position over those who offer up their work and their selves to our judgment. We thrive on negative criticism, which is fun to write and to read. But the bitter truth we critics must face is that in the grand scheme of things, the average piece of junk is probably more meaningful than our criticism designating it so. But there are times when a critic truly risks something, and that is in the discovery and defense of the *new*. The world is often unkind to new talent, new creations. The new needs friends.
I hope, you will write better in the upcoming future.