পর্ব: ১
গোয়াল ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার !
এক কোনায় রাখা নিভু নিভু আগুনের ধোয়া আর চোখের পানি দৃষ্টি কে ঝাপসা করে দিলেও আয়েশা দুর থেকেই বিয়ে বাড়ির রঙিন ফানুস দেখতে পাচ্ছে।সমস্ত নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে ভেসে আসছে আত্মীয় স্বজনের হাসি আনন্দ ভরা হৈচৈ!
আয়েশা শক্ত করে চোখ বন্ধ করে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে!
মৃত্যু কি এত সহজ!
বেঁচে থেকেই তিল তিল করে মৃত্যু কে উপলব্ধি করতে হবে॥
অনেকটা আয়েশ করে চায়ের কাপে বার বার চুমুক দেয়ার মত!
আয়েশা মনে করার চেষ্টা করলো,প্রথম যেদিন এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিল সেই দিনটার কথা,কিছুই মনে পড়ছে না॥শুধু মনে পড়ল বাজান তাকে কাঁধের উপর বসিয়ে দ্রুত বাড়ির ভিতর নিয়ে গিয়েছিল ।
সাত বছরের আয়েশা সেদিন বিয়ের শাড়ি গয়নার মাঝে নিজেকে তলিয়ে যেতে দেখেছিল॥
নিজের বাড়ির উঠান পেরিয়ে আয়েশা কবে কখন কিভাবে আজকের এই সময়ের মুখোমুখি তা নিজেও জানে না।শুধু জানে কলিজায় তুষের আগুন,মন পোড়ানোর কষ্ট!
আজ ফিরোজ আলীর বিয়ে… এই শুভক্ষনে আয়েশার অনুপস্থিতিতে কারও কিছু যায় আসে না।
আজ আয়েশার আর কোন প্রয়োজন নেই… !
পর্ব: ২
বাড়ির পুরোনো গোমেস্তা মজনু উদ্বিগ্ন হয়ে ফিরোজ আলীর পিছন পিছন ঘুরছে,একটু পরপর ফিসফিস করে বলছে ” মামু ঘরের ভিতরে যাইন,কাইন্দা চোখ মুখ ফুলায়ালছুইন,নয়া মামী কি কইবো!!!”
ফিরোজ আলীর কোন কথাই কানে যাচ্ছে না, নিস্তব্ধ হয়ে সে আরাম কেদারায় বসে আছে, আষারের বাদলের মত অঢেল ধারার অশ্রুতে সব কষ্ট যেন দুরে কোথাও ভেসে যাচ্ছে,ভেসে যাচ্ছে প্রায় বিশ বছরে তিল তিল করে গড়া সম্পর্ক॥
পর্ব: ৩
ভুঁইয়া সাহেবের ছেলের চিন্তায় ঘুম আসে না।
ফিরোজ আলীর জন্যই দশালিয়া গ্রামের ভুঁইয়া বাড়ির এত সুনাম! কাছের বা দুরের গ্রামের সবাই তাকে এক নামে চিনে।যে ছেলের এন্ট্রেন্স পাশের খবর পুরো নান্দাইল জুড়ে খুশির জোয়াড় এনে দিয়েছিল,সেই ছেলে ওকালতি পরীক্ষায় বার বার ফেল করে।
ময়মনসিংহ থেকে ছেলে যখন বাড়ি আসে গ্রামের লোকজনের ভীড় জমে যায়।সেই ছেলে আবারও ফেল করে বাড়িতে মনমরা হয়ে বসে আছে ।
ছেলের ভবিষ্যত আর মান সম্মান হারানোর উৎকন্ঠায় ভূঁইয়া সাহেবের দুই ভ্রুর মাঝে চৈত্রের জমীনের মত ফাটল ধরেছে।তার উপর বড় বুজি তার পত্নি জয়নাব বিবির মাথায় অন্য চিন্তা ঢুকিয়ে বিরাট অশান্তিতে ফেলে দিয়েছেন।ছেলেকে নাকি তাড়াতাড়ি বিয়ে করাতে হবে,বউ এব ভাগ্যে ছেলে এইবার পাশ করবে।
জয়নাব বিবির প্যানপ্যানানিতেই তিনি কালকে বনাটি গ্রামের খাঁ বাড়িতে মেয়ে দেখতে যাবেন।
ভুঁইয়া সাহেব সমস্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে জয়নাবের মুখের দিকে তাকালেন..
জয়নাবের চেহারায় খুশির আভাস।
পানের বাটা সাজাতে সাজাতে সে বললো
“হুনসুইন… মেয়ের নাম আয়েশা,, নামের ফজিলতেই আমরার ফিরোজ আলী পাস অইবো কইলাম!
পর্ব: ৪
ফিরোজ আলী দেখতে সিনেমার নায়কের মত না হলেও হাজার লোকের ভীড়ে চোখে পড়ার মত।ফর্সা, লম্বা, সুঠাম দেহের অধিকারী ।
বাটার ফ্লাই গোফ চেহেরায় বাড়তি আভিজাত্য এনে দিয়েছে।
শেরওয়ানি আর পাগড়ি পড়ে বউ ঘরে আনার কথা ছিল, কিন্তু তার বিছানায় বসে আছে স্বর্ণ মিশ্রিত জড়ি সুতার লাল বেনারসি দিয়ে প্যাঁচানো ছোট এক পুতুল।ছোট ছোট হাত দিয়ে ক্রমাগত চোখের পানি মুছে যাচ্ছে আয়েশা।
আয়েশা কে ঘিরে ফিরোজ আলীর বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন।
নিজের অজান্তেই ফিরোজ আলী দীর্ঘশ্বাস ফেললো, আয়েশার জন্য অন্যরকম এক মমতায় মন ভরে গেল।
আয়েশার কান্না যখন কিছুতেই থামছেনা,হঠাৎ করে ভূঁইয়া সাহেব আয়েশা কে কোলে নিয়ে বাড়ির উঠানের দিকে দৌড়ে চলে গেলেন।আয়েশা এমন ঘটনার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলনা,চোখ ভরা পানি নিয়েই সে খিলখিল করে হেসে দিল।
পর্ব: ৫
সেই রাত থেকেই আয়েশা তার শ্বশুরের চোখের মণি হয়ে গেল,শ্বশুরের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ল সে।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আয়েশা ভূঁইয়া বাড়ির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হলো।
আয়েশা ঘুমের ভিতর বার বার চমকে উঠছিল । মনের গহীনে কি ভীষন শূণ্যতা!
মা হারা ছোট ভাই-বোন গুলোকে আগলে রেখেছিল সাত বছরের এই ছোট আয়েশা।
বনাটি গ্রামের সবাই তাকে জমিদারের মা বলে ডাকতো।কেন ডাকতো কেউ জানেনা,আয়েশা নিজেও জানেনা।
মোমিন মিঞা সবার ছোট, সারাক্ষন কোলে নিয়ে ঘুরতো আয়েশা।ছোট বোন আমেনা সারাদিন বুজি বুজি করতো।
বারিক মিঞার মেজাজ আয়েশাকেই সামলাতে হতো।মেজো বোন বাইসাব বাইসাব করে চুল উড়িয়ে সারা মাঠে বারিক মিঞার সাথে ঘুরে বেড়াতো।
সেজো বরাবরই শান্ত চুপচাপ, রেগে গেলে তোতলাতে থাকে,কিন্তু কথা থামাতে পারেনা।
সব ফেলে অচেনা এই চৌচালা দালান ঘরে বড্ড বেমানান সে।
পর্ব: ৬
ফিরোজ আলী ময়মনসিংহ গিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ।
সেই বছর দশালিয়া গ্রামে ধানের দ্বিগুণ ফলন হলো,গ্রামের নিরীহ সহজ সরল মানুষ ধরেই নিলো ভূঁইয়া বাড়িতে চাঁন কপালি বউ এসেছে।
আস্তে আস্তে গোয়াল ঘরের চেহারা বদলে গেল।ভূঁইয়া বাড়ির ষাড় দু চার গাঁয়ের ষাড় কে হারিয়ে দিল লড়াই করে।
গ্রামের চারিদিকে উৎসব উৎসব ভাব।শুধু আয়েশার মনে কোন আনন্দ নেই ।
একরাতে আয়েশার শ্বশুর কালিগন্জ থেকে বাল্য শিক্ষা বই নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। শুরু হলো আয়েশার শিক্ষা জীবনের।
পর্ব: ৭
ধীরে ধীরে সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে আয়েশা।
বছরে দুই একবার বাবার বাড়ি ঘুরে আসতে পারে সে।
ছোট ভাই আর সংসারের অনেক কাজ মেজো আর সেজো বোন সামলাচ্ছে এখন।
কিছু দিনের ভিতর আয়েশার বাল্যশিক্ষার প্রতিটি পৃষ্ঠা মুখস্থ হয়ে গেল।হারিকেনের ঢিমি আলোতে সে নিয়ম করে বইয়ের পাতায় পাতায় লিখা ছড়া কিংবা ছোট গল্প শ্বশুরকে পড়ে শোনায়। সে এখন যুক্ত অক্ষরের প্যাচ থেকে নিজে নিজে বের হতে পারে।
ফিরোজ আলী এবার ময়মনসিংহ থেকে আয়েশার জন্য অনেক গুলো বই নিয়ে এসেছ। নতুন বই পেয়ে আয়েশার মন ভরে গেল।
যদিও আয়েশার সমস্ত আগ্রহ মোহাম্মদ নজিবর রহমানের লেখা “আনোয়ারা” উপন্যাসের উপর, যেটা ফিরোজ আলী মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।
ফিরোজ আলী ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল। তাই সে ময়মনসিংহ যাওয়ার আগে আয়েশা কে দেখিয়ে দেখিয়ে উপন্যাস টা উঁচু মাঁচায় তুলে রেখে বললো…”যেদিন তুমি এই বইয়ের নাগাল পাবে,সেই দিন আর তোমার কোন বাঁধা থাকবেনা এই বই পড়ার।
আয়েশা খুশি মনে সেই দিনের অপেক্ষা করতে লাগলো ।
পর্ব: ৮
আয়েশার হাতে যেকোন গাছের ফলন ভাল হতো বলে জয়নাব বিবির অনেক গর্ব ছিল।আশেপাশের বউ ঝিদের সাথে তিনি ছেলের বউয়ের বড়াই করে বেড়াতেন।
বাড়ির সামনে আয়েশার ছোট বাগান চারিদিকে পাতা বাহারের দেয়াল দিয়ে ঘেরা।
হাঁস মুরগীর দেখা শোনা, ফল সব্জীর বাগান সবকিছুর দায়িত্ব এখন আয়েশার উপর।
সুখে শান্তিতে দিন কেটে যাচ্ছিল।এর মধ্যে ফিরোজ আলীর ওকালতি পাশের খবর এলো।সবাই আয়েশাকে অনেক ভাগ্যবতী ভাবতে শুরু করলো।
গ্রামের কেউ কেউ যে কোন শুভ কাজ করার আগে আয়েশার সাথে দেখা করে যেত।
মানুষ বরই বিচিত্র স্বভাবের।তারা কখন কাকে দেবী রুপে দেখে আর কখন সেই দেবীকে বিসর্জন দিয়ে দেয় নিজেরাই জানে না ।
পর্ব: ৯
ধীরে ধীরে সময় বদলে গেল,আয়েশা এখন শৈশব পেড়িয়ে কৈশরে।এখনও আনোয়ারা বইটা মাঁচার উপর রাখা।মাঝে মাঝে আয়েশা টুলের উপর দাঁড়িয়ে আঁচল দিয়ে ধুলো সরিয়ে আবার জায়গা মত রেখে দেয়।
ফিরোজ আলীর ব্যস্ত জীবন,ওকালতি চর্চাতেই সময় কেটে যায়,রমরমা ব্যবসা।
একটার পর একটা কেস সফলতা নিয়ে আসছে জীবনে।টাকা পয়সা,জমিজমার ভীড়ে হঠাৎ হঠাৎ আয়েশার শান্ত স্নিগ্ধ চেহারাটা ভেসে আসে।
সব ব্যস্ততা ফেলে কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই সে বাড়ী চলে এলো।
ঘরে ঢুকে দেখে আয়েশা টুলের উপর দাঁড়ানো,মনোযোগ দিয়ে বইয়ের ধুলো ঝাড়ছে।ফিরোজ আলী চুপচাপ সামনে এসে দাড়ালো। এই রকম পরিস্থিতির জন্য আয়েশা মোটেও প্রস্তুত ছিলনা, চমকে গিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ফিরোজ আলী তাকে শক্ত হাতে ধরে ফেলল।
আয়েশার অন্য এক জীবনে পদার্পন হলো।
জীবন কি নাটক সিনেমার চেয়ে কোন অংশে কম বৈচিত্রময়।সময়ের যাতাকলে পিষে যেতে যেতে আমরাই সবকিছু ভুলে যাই,কষ্টের মুহূর্ত গুলোকে আকড়ে ধরে সুন্দর মুহুর্ত গুলোকে বঞ্চিত করি।
পর্ব: ১০
ভালবাসা খুবই অদ্ভুত।
একে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করার ব্যর্থ চেষ্টা না করাই শ্রেয়।তা নাহলে বয়সের আকাশ-পাতাল পার্থক্য নিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংসার চলতো কিভাবে!
জীবনের শুরুতে হয়তো বাধ্য হয়েই সংসারে মনোযোগী হতো সে যুগের মেয়েরা।কৃত্রিমতা ঘেরা সম্পর্কের সূচনা হলেও একসময় তা ভালবাসায় রুপান্তরিত হয়।
আমি চরিত্রহীন কিংবা পাগল স্বামিকেও পাগলের মত ভালবাসতে দেখেছি ,আবার বিছানায় বছরের পর বছর পড়ে থাকা স্ত্রীর সেবা করে যাওয়া পুরুষও আমার চোখে পড়েছে।
আয়েশা কিংবা ফিরোজ আলীর ভালবাসার কোথাও কোন কমতি ছিলনা।বরং সমাজ সংসারের চাহিদাই দুই জনকে আজ দুই জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! দুই জনই আজ নিয়তির কাছে জিম্মি।
পর্ব: ১১
দিন কেটে যাচ্ছিল,৫..৬…১০..১২..১৫…২০ বছর কেটে গেল।পরিস্থিতি একদম বদলে গেছে।
আয়েশার এখন দিনের শুরু এবং শেষ হয় বাচ্চা হচ্ছে না কেন তার ব্যাখ্যা দিতে দিতে।
যে মেয়ের হাতে দ্বিগুণ ফসল ফলে,যার যত্নে গোয়ালের চেহারা বদলে যায়,যার নম্র স্বভাব আর মমতার কাহিনী মানুষের মুখে মুখে, যে আয়েশা নামের অধিকারী হলেও জন্মের পর থেকে জমিদারের মা বলে পরিচিত সেই মেয়ের মা না হওয়ার অপরাধের শাস্তি কবে কোথায় কত ভাবে দেয়া যায় তার যেন প্রতিযোগিতা চলছিল।
পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে করতে আয়েশা-ফিরোজ আলী দুই জনই এখন ক্লান্ত।
অসুস্থ বাবার মন রক্ষায় তথা বংশরক্ষার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ফিরোজ আলীর নতুন করে সানাই এর বাশীর সুরে তাল মিলাতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সে নিজেকে সামলাতে পারেনি।
আমরা সবাই যেকোন সম্পর্ককে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী বিচার বিশ্লেষণ করতে পছন্দ করি । ভেঙে যাওয়া সম্পর্কেও যে সম্মান কিংবা ভালবাসা থাকতে পারে তা কখনও আমাদের মনে হয়না।আমরা ভাবি জগতের সকল ভালবাসা জুড়ে থাকা সম্পর্কগুলোর মধ্যেই বিরাজমান।
আয়েশা যদি গোয়াল ঘর থেকে দু পা এগিয়ে বারান্দার দিকে তাকাতো, তাহলে সে দেখতে পারতো ফিরোজ আলীও তারই মত অশ্রুভেজা চোখে নিদ্রাহীন রাতের প্রহর গুনছে…
সমাপ্তি
১৯-০২-২০২১








ভাল লাগলো
Thank you so much 😊
Nice comment
A little twist in the flow of this story has made this creation a lot more relatable as well as emotional…..
Thank you so much 😊
ভালোবাসার শক্তি এমনই। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর পড়ালেখার আগ্রহ স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে গেছে আয়েশা। মানুষের জীবন পরিপূর্ণ নয়। কিছু পাওয়া না পাওয়া নিয়েই জীবন। আয়েশা আর ফিরোজ আলীরও জীবনেও অপূর্ণতা রয়ে গেছে। কী সেই অপূর্ণতা জানতে হলে গল্পটুকু পড়ুন।
সমাজ আমাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে ।কখনো আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও হয়ত অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় বা বাধ্য করা হয় ।নারীর জীবনে এই প্রভাবটা অনেক জোরালো ভাবেই লক্ষ করা যায় ।
কিন্তু নারীর সমস্ত উৎসর্গ ,ত্যাগ নিয়ে কজন বা ভাবে ।আমাদের সমাজে সকলেই সহানুভূতি দেখাতে পারি কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা একদমই লক্ষণীয় নয় । একজন নারী তার নিজ পরিবার ছেড়ে অপর একটি পরিবারকে আপন করে নেয় ,নিজের সমস্তটুকু উজার করে দেয় সেই পরিবার এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে ।
সকল বাধা -বিপত্তি পেরিয়ে হয়ত মেয়েরা সফল হতে পারেও,কিন্তু তাদের সফলতা কতটুকু বহমান ।যদি সেই মেয়ের মা হওয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে হাজার ভালবাসা উপেক্ষা করেও একজন পুরুষকে পরিবার এর ইচ্ছা পুরন করতে পুনরায় বিয়ে করতে হয় ।এক্ষেত্রে একজন পুরুষ ও নিরুপায় তার ভালবাসার মানুষটির কাছে ।
আমাদের সমাজ হয়ত নারীদের সম্মান প্রদর্শন অপেক্ষা নিজেদের পরিবার ,বংশ, জাতির সমালোচনায় খুব বেশিই বিভোর ।খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নেয়া সংসার বিচ্ছিন্ন করতে দ্বিধাবোধ অনেকের হবেই না ।
আমাদের এই সমাজ এর প্রাচীন বা বর্তমান হোক এক বাস্তবিক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা ,যা থেকে এই সমাজ কিছু ট হলেও উপলদ্ধি করতে শিখবে …………।।
গল্পটি পড়তে পড়তে যে কখন শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। গল্পটিতে যে ভালোবাসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তা সত্যিই অসাধারণ। বর্তমাসে যেমন ভালোবাসার নামে লুতুপুতু প্রেম কাহিনী পড়তে হয়, এ গল্পটি একদমই সেরকম নয়।
গল্পের আয়েশা বিয়ে হয় ফিরোজ আরীর সাথে। কারণ ছিল ফিরোজ ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করলেও সে ওকালতি পাশ করতে পারছিলো না। যার জন্য ফিরোজের মা পাশ করার জন্য ছেলের বিয়ে দেন। আয়েশা যখন বউ হয়ে আসে তখন পুরো গ্রাম জুড়ে উন্নতির বন্না বয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো আয়েশার বাচ্চা হয় না। তাই ফিরোজের ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সবার চাপে তার নতুন করে বিয়ের আসরে বসতে হয়। এ গল্পের মাধ্যমে খুব সুন্দর করে লেখক আয়েশা ও ফিরোজের ভালোবাসার কাহিনী তুলে ধরেছেন।
এক কথায় আসাধারণ একটি ভালোবাসার গল্প এটি। কিন্তু একই সাথে সমাজের একটি বাস্তব চিত্রও ফুটে উঠেছে যে বাচ্চা না হওয়া মেয়ের দায়, তাই ছেলেকে নতুন বিয়ে দিতে হবে।
বলা যায় ভালোবাসার পাশাপাশি সামাজিক সমস্যা নিয়ে লেখক সুন্দর করে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন।