আব্বা,
সালাম নিবেন। দুইটি বিশেষ প্রয়োজনে আপনাকে লিখছি। প্রথমত আপনার মেয়ে বলেছে আপনাকে পত্র মারফত মনে করিয়ে দিতে পাগড়ির বিষয়টা। গাড়ি নিয়ে বের হবার সময় সে কালাম কে বলে দিয়েছে। আম্মাকে ও ফোনে বলতে শুনেছি। তবুও আপনার অতি সাবধানী মেয়ে আমাকে বলেছে আমি যেন আপনাকে লিখে কালামের হাতে চিঠি দিয়ে দেই। আম্মার স্টিলের আলমারির উপরের তাকে আমার বিয়ের পাগড়ি টি আছে। মা যেন অনুষ্ঠানে আসার সময় অবশ্যই অবশ্যই সাথে করে নিয়ে আসেন।
টুকুনের জামাইকে নাকি ওটা পড়েই বিয়ে করতে হবে। এইসব পাগলামির মানে হয়! এখনকার ছেলে কেন পয়ত্রিশ বছরের পুরোনো পাগড়ি বিয়েতে পড়বে। তা ও আবার শশুরের পাগড়ি। কি যে একটা তুলকালাম হবে ভাবতেই পারছি না। আর আমাকেও এক হাত দেখে নিলো, কেন ও পাগড়ি আমি বাসায় রাখিনি। আপনি বলেন, চোখের সামনে নিজের ফাসির দড়ি সারাক্ষন দেখতে ভাল লাগে? এ কথা আবার আপনার মেয়েকে বলতে যাবেন না যেন। আমার আর শেষরক্ষা হবেনা। আর যেদিন জানলাম তার এই পরিকল্পনার কথা, সেদিন থেকে তো ওই পাগড়ি আমি সহ্যই করতে পারতামনা। দেখলেই মনে হতো টুকুন একদিন অনেকদূরে চলে যাবে।
দ্বিতীয় কথা হলো,আপনি আর আম্মা অবশ্যই সপ্তাহ খানেক থাকার মত ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আসবেন।অনুষ্ঠান শেষে আপনারা সরাসরি তাহলে আমাদের বাসায় চলে আসতে পারবেন। যদি না আসেন তো মাঝরাতে আমাকেই আসতে হবে। আমাদের বিয়ের রাতেই আপনার মেয়ের কান্না আমি সামলাতে পারিনি। ভোরবেলায় আপনার বাসায় হাজির হতে হয়েছিল। আর আমাদের মেয়ের বিয়েতে তাকে আমি সামলানোর সাহস ও করছি না। এখন বয়স হয়েছে। আমি মাঝরাতে তিন চার ঘন্টা গাড়ি চালাতে পারবো না আর আপনারও এই বয়সে চমকে ঘুম থেকে ওঠা ঠিক হবে না। তারচেয়ে একটু কষ্ট করে এবেলা চলে এলে অন্তত এই ঝক্কি থেকে আমরা দুজনেই বেচে যাই।
আপনার মেয়েকে তো জানেন। একটা বিয়ের আয়োজন বই তো নয়। তাতে তার লাইট, ডেকরেটর, সাউন্ড সিস্টেম, আলপনা স-ব লাগবে। কোত্থেকে এক ডি জে ও নিয়ে এসেছে। একেবারে সব রকম আয়োজন তার চাই ই চাই। আর এত রকম ব্যবস্থা পত্র করতে গিয়ে দৌড়-ঝাপ – চিৎকারে বাড়ি মাথায় তুলে রেখেছে। মাঝে মাঝে যে বাথরুমে গিয়ে একটু চোখের পানি ফেলছে, সেটা সবার কাছে আড়াল করতে পারলেও আমার চোখ এড়ায়নি। আজ রাতে টুকুন চলে যাবার পর যখন হঠাতৎ বাড়িটা একদম নিস্তব্ধ হয়ে যাবে, তখন আপনি ছাড়া আর কেউ ওকে মানাতে পারবে না। আপনাকে যেভাবেই হোক কয়েকটা দিন থেকে যেতে হবে। ফিরে যাবার সময় টুকুনের মা কে সাথে নিয়ে যাবেন। কিছুদিন আপনাদের কাছে গিয়ে থাকলে ওর ভাল লাগবে। আমি বললে যেতে চাইবে না, আপনি জোর করে নিয়ে যাবেন।
টুকুনটা বেশ আনন্দে আছে। ওর চোখ নতুন জীবন, ঘর কন্যা খেলার স্বপ্নে বিভোর, ভালবাসার মানুষকে পাবার ঘোর। ওর মুখের দিকে তাকালে খুব ভাল লাগছে আবার বুকের ভেতরটা কেমন খালি হয়ে যাচ্ছে। এইতো সেদিন ওকে কাধে নিয়ে ঘুরেছি। এই সেদিন মাঝরাতে ভয় পেয়ে আমার পাশে এসে ঘুমালো। টুকুন আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে? টুকুন পারবে, তাইনা আব্বা? আমিই হয়তো পারবো না।আজকে টুকুন বা ওর মা র থেকে আমার বেশী প্রয়োজন আপনাকে। সন্তান কে নিজের সংসারে পাঠিয়ে কিভাবে ভাল থাকতে হয়, সেই যাদুমন্ত্র তো আপনার থেকেই শিখতে হবে।
আজকের এইদিন আমার জীবনে একদিন আসবে সেটা নিজের বিয়ের দিন ই বুঝেছিলাম। বিয়ের দিন টুকুনের মা কে বলেছিলাম, যে বাবার বাড়ির আদর ছেড়ে এসেছ সেটার সমান তো কোনদিন দিতে পারবোনা, কেউ পারে না। কথা দিচ্ছি, আমার সবটুকু চেষ্টায় আমার সাধ্যের সবটুকু সুখ এনে দিব। এতদিন সেই চেষ্টাই করেছি, পেরেছি কতটা জানিনা। টুকুন আনন্দে থাকলে জেনে যাব আমি পেরেছি।
দোয়া করবেন আমার সেই চেষ্টার পুরস্কার হিসেবে করুনাময় যেন টুকুন কে সুখী করেন। বিশেষ করে আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আপনার মত জামাই ভাগ্য যেন আমারও হয়। অবশ্য আমার জামাতার যে আমার মত শশুরভাগ্য হবেনা এটা আমি নিশ্চিত। সাবধানে আসবেন আব্বা। রওনা দেবার আগে অবশ্যই ফোন দিবেন।
আপনাদের অপেক্ষায়।
আপনার পুত্রাধিক প্রিয় জামাতা।”
– Sayeda Akhter Akhi
Send private message to author



