১.
মহাধুমধামে সুরঞ্জনার বিয়ে হয়ে গেল।আমার প্রিয়তমা সুরঞ্জনা।আমি এক চাকরিহীন মানুষ,এবং এক নিরীহ প্রেমিক।নিরীহ প্রেমিকরা অপদার্থ হয়।মুখে ভালোবাসার বুলি ফোটানো ছাড়া তাদের সম্ভবত আর কিছুই করার থাকে না।স্বাভাবিক ভাবেই আমি কাপুরুষতার পরিচয় দিলাম,পারলাম না কিছু করতে।তাছাড়া আমি তো এক বাস্তবতা থেকে পালানো যুবক,তাই প্রেম থেকেও পিঠটান দেওয়া কি অস্বাভাবিক আমার জন্যে?
আমার এই প্রেমিকা হারানোর গল্প আর দশজনের মতই হতে পারতো,কিন্তু কেনো যেনো হয়নি।
সুরঞ্জনা,তোমাকে কি আমি সত্যিই ভালোবেসেছিলাম?একবার মনে হয় তোমার মুখের মায়ায় পড়েছিলাম শুধু, আর দেহেরও,ভালোবাসা টাসা কিছু না।আবার মন বলে হয়ত বেসেছিলাম।
বিয়ের আগের দিন রাতে কল করে কত কান্নাকাটি, প্রেম বাষ্পের মত তোমার গলায় জমে জমে মেঘ হয়েছিলো,তুমি শেষ বারের মত বললে,”রিহান, আ আমি মরে যাবো,আমাকে তোমার কাছে নাও, আমি এই বিয়ে করবো না…”
ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম,সারা রাত নিশ্চুপ নিস্তব্ধতা আর অনেকগুলো সিগারেট পোড়ানোর ঘোর গ্রাস করেছিল আমাকে।
পরদিন রাতে ফারদিন কল করে বললো,”দোস্ত সুরের তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
আমার বুকে সহস্র তীর এসে বিদ্ধ করার মত ব্যাথা হল।তার মানে আসলেই ভালোবেসেছিলাম মেয়েটাকে!
সারাদিন কিছু খাইনি, প্রায় অচেতনের মত পড়ে ছিলাম,তার উপর আবার এই সংবাদ নিতে পারলাম না।কিন্তু এটা তো আমার অবাক হওয়ার মত বা না জানা সংবাদ না,তবু কেন কষ্ট পেলাম?এতদিনের ভালোবাসা হঠাৎ অন্য কারো হয়ে গেল,অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে,বোধ হয় মানতে কষ্ট হয়েছিল।আমি বরং ব্যাথা কম পেতাম বা আমার হৃদয় লক্ষ করে এতো তীর ছুঁড়তোও না প্রেমের দেবতা যদি শুনতাম ও বিষ খেয়েছে।নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।সুরঞ্জনা বলতো আমাকে না পেলে নাকি সে আত্মহত্যা করবে।আমি ভেবেছিলাম সুর এই বিয়ে কোনোমতেই করবে না,নিদেনপক্ষে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে অন্য কোথাও,অন্য কোনো খানে।যদি সত্যি তার কথা মত অসীম হয় আমাকে ভালোবাসার পরিমাণ।কিন্তু আদতে তা হয়নি।যা হয়েছে, তা হলো বিয়েটা সম্পন্ন হল মহাধুমধামে।
সুরঞ্জনাকে সংক্ষেপে আদর করে ডাকতাম সুর বলে।এই সুর ডাকার আরেকটা কারণ ছিল,চমৎকার রবীন্দ্র সংগীত গাইতো মেয়েটা।দেখতেও ছিল রক্ত গোলাপের রঙে রাঙা সদ্যোজাত পান পাতার মত।ওর মুখে ছিল প্রাচীন গ্রিসের কোনো অভিজাত শহরের কারুকাজ। ঘন কোঁকড়ানো চুল ছিলো মহাবিশ্বের অন্ধকার দ্বারা আবৃত।লম্বা আকর্ষক শরীরও ছিল তার।কত ছেলে শুধু শরীরের লোভে রোমাঞ্চিত হয়ে তাকে প্রেম নিবেদন করতো।
আমার সারাক্ষণ মন মরা থাকা,সারাদিনে কোনো রকম একবেলা খাওয়া আর একের পর এক সিগারেট উড়ানো দেখে মা বললেন, “তুই বরং কদিন আযানের মেস থেকে ঘুরে আয়।”
মা ছোট একটা ব্যাক প্যাক গুছিয়ে দিয়ে প্রায় ঠেলে ঠুলে আমাকে বিদায় করলেন বাসা থেকে।আসলে উনি ভেবেছিলেন আমি আযানের কাছে কিছুদিন থাকলে,বিরহ ব্যাথা ভুলতে পারবো।আমার আর সুরের সম্পর্কটা মা জানতেন।আযান ছেলেটা উৎফুল্ল,ঝরঝরে আর রসিক খুব।আমার স্কুল এবং কলেজ ফ্রেন্ড।বন্ধু মহলে জনপ্রিয় ছিল ও,মহাগম্ভীর মানুষকেও হাসিয়ে ছাড়তো।ওর মধ্যে একটা সহজ বাচ্চামি ছিল,যেটা মা পছন্দ করত। আমার বাসায় থেকেই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল আযান।
ভর দুপুরে ওর মেসে গিয়ে দেখি আরো তিনজন অপরিচিত বান্দাকে নিয়ে ও মেঝেতে শীতল পাটির উপর বসে তাস খেলছে।আমাকে হঠাৎ দেখে অন্যরা অবাক হলেও আযানের মুখে কোনো ভাবান্তর হলো না।শুধু বলল,”বসে যা।”
আমিও বসে গেলাম।তাস খেলা,সস্তা রসিকতা খুব চললো। হঠাৎ কিছু মুহূর্ত যেন ভুলে গেলাম প্রেমিকা হারানোর শোক।খেলতে ভালো লাগছিলো অনেকদিন পর।জুয়া শুরু হলো।পর পর জিততে লাগলাম।পকেটে মাত্র তিন শ টাকা ছিল,সেটা কয়েক দান শেষে হলো নয় হাজার টাকা।পুরো নয় হাজার টাকাই লাগাবো,এমন সময় পাশের রুমে কেউ বাজিয়ে দিল রবীন্দ্রনাথের গান…আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,দেখতে আমি পাইনি তোমায়,দেখতে আমি পাইনি…
গানটা ঢের ভালো গাইতো সুরঞ্জনা তথাকথিত গায়িকাদের চাইতে। মনটা বিষন্ন হয়ে উঠলো আবার।
আযানকে বললাম,”মাথাটা ব্যাথা করছে।আজ এখানেই থাক দোস্ত।”
একবার জুয়া খেলায় জিততে থাকলে কেউ,তার থামা প্রায় অসম্ভব যতক্ষণ না পর্যন্ত আবার হারতে হারতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।কিন্তু আমার এই থেমে যাওয়ায় আযানের মুখের বিস্ময় ভাব দেখার মত হলো।আমি একটু করুন হাসলাম।
রুম খালি হলে আযানকে বললাম,”দোস্ত,তোর ভাবীর বিয়ে হয়ে গেছে।”
আযান হকচকিয়ে যায়,”মানে!”
“সুরঞ্জনা…” গলা বুঁজে আসলো,আমি আর বলতে পারলাম না।বুকে চেপে বসা জগদ্দল পাথর সরানোর জন্যই কিনা কে জানে অনেকদিন পর হু হু করে কেঁদে উঠলাম,”সব,সব দোষ আমার দোস্ত।”
আযান মারাত্মক ক্ষেপে উঠে,”মানে কি!তোর বউ,তোর বউয়ের আবার বিয়ে হয় কী করে আরেক জনের সাথে!এটা কি পুতুল খেলা নাকি? সুর এইটা কী করে পারলো?”
তারপর শার্ট গায়ে দিতে দিতে বললো,”চল ত,আজ ম্যাডামের প্রতারণার হিসাব চুকাবো।এরা পারে শুধু তোর মত ইনোসেন্ট ছেলেগুলার লাইফ হেল করতে।
আমি মাথা নিচু করে ক্ষয়ে যেতে যেতে মৃদু স্বরে বললাম,”ওর কিছু করার ছিল না।”
সব খুলে বললাম আযানকে;নিজের কাছে ছোট হয়ে গিয়েই।
“তো তোরে বললো যাইতে, পালায়ে বিয়ে করে নিতি।এমন না যে এটা নতুন।বিয়ের আসর থেকে বউ প্রেমিকের হাত ধরে পালায় এমন বহুত কেস আছে,আর ও তো তোরে আগের দিন রাতেই বলছিল।বেচারা সব ব্যবস্থাও করছিল বোধয়।আহারে!”
“আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাপুরুষ,ভীতু মানুষ।”
“ভীতু মানুষ কখনো এরকম ভাঙচুর প্রেম করতে পারে না।তোদের জুটি ছিল ইউনিক,সবাই বলাবলি করত।কম সাহসী কাজ তো করিস নাই তোরা।”
আযান আমার কাঁধে হাত রাখলো,তারপর কানের কাছে মুখ এনে কোমল গলায় বলল,”বন্ধু,সব খুলে বলো আমাকে।এই ভাবে পলাতক সেনাপতি কেন হইলা যুদ্ধ হারার আগেই?”
আমি ফাঁসির আসামির স্বীকারোক্তির মত বলতে লাগলাম,”জানিসই তো দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত আমার রেজাল্ট ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট। তৃতীয় বর্ষে কিছুটা খারাপ হলো।সুরের বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিল,একটার পর একটা পাত্র সে নানান অজুহাতে রিজেক্ট করছে। তো এইসব নিয়ে আমার খুব চিন্তা হতো।দুশ্চিন্তায় পড়াশুনার গতি গেল কমে।অথচ ইচ্ছা রেজাল্ট খুব ভালো করবো,দেশের বাইরে পড়াশুনা করতে যাবো।আসলে ইচ্ছাটা যে আমার তা না।ইচ্ছাটা মায়ের।খুব বেশি।আব্বু মারা যাওয়ার পর ওই পেনশনের অল্প কিছু টাকা আর বড় আপার মাঝে সাঝে দেওয়া টাকা দিয়েই সংসার চলতো।আমি একটার বেশি টিউশনি করতামও না পাছে রেজাল্ট খারাপ হয়। তো আমার একটা লাস্ট চান্স ছিল ফাইনাল ইয়ার,আগের ক্ষতি পুষিয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার। তো এইটাও মেইন কারণ না,আমি তবুও যেতাম সেদিন রাতে।মেইন কারণ ছিল আমার মা।সুরের বাপ মারে বাড়ি বয়ে এসে অপমান করে গেছিলো,হুমকি দিল মেরে ফেলার।আর জানিসই তো ঐ লোকটা ক্ষমতাসীন দলের উচু লেভেলে রাজনীতি করে বলে প্রচুর ক্ষমতা।ব্যাপারটা অনেকটা বাংলা সিনেমার মতো। তো আমি পারি নাই এইসব কারণে।”
আযান করুন হেসে বললো,”তুই আসলে সত্যিকারের ভালবাসিস নাই বন্ধু।সত্যিকারের ভালোবাসলে এতো বৈষয়িক চিন্তা মাথায় আসত না তোর।সত্যিকারের ভালোবাসা মানুষকে শুধু একটা ব্যাপারেই স্বার্থপর করে দেয়,তখন খালি ভালোবাসার মানুষটাকে জীবনে পাওয়াই একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হয়ে ওঠে।”
আমি কিছু বললাম না।বলার মত কিছু পাচ্ছিলাম না খুঁজে,মনে হচ্ছিল সত্যিই আমি সুরকে ভালোবাসিনি।কিন্তু সত্যিই যদি ভালো না বেসে থাকি তবে এমন পাহাড়ভাঙ্গা কষ্ট কেনো বুকের মধ্যে?
আমার চোখ মুখ কেমন অন্ধকার হয়ে এলো।মাথা নিচু করে বসে আছি।আযান পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,”চলো দেবদাস,তোমারে বেহেশত ঘুরাইয়া আনি।দুই তিন ঘণ্টার মধ্যে সুরঞ্জনা গন হয়ে অন্যজনা চলে আসবো তোমার ভালোবাসার মন্দিরে।”
পান্থপথের সুরাখানায় মদ খেলাম,বমি করে আযানের শার্ট নোংরা করলাম,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।রাতে বাসায় ফিরে আসলে মা কান্নাকাটি করল।আমার অবস্থা যে এত করুন হবে উনি আগে বুঝতে পারেননি।অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে আরো সুন্দরী,আরো ভালো চরিত্রের মেয়ে আসবে,আসবে ধার্মিক পতিব্রতা মেয়ে,উনি নিজে দেখে শুনে সবচাইতে উপযুক্ত নারীকেই আমার জন্য নির্বাচন করবেন।আমি পাগলের মত হাসলাম।ভালোবাসা না থাকলে আসলে এসব কিছুরই তো কোনো মূল্য নেই এখন আমার কাছে।ফ্ল্যাশব্যাকের মতো মনে পড়ছিল তার সাথে কাটানো দিনগুলি।তথাকথিত কোনো প্রেম ছিল না তো আমাদের মধ্যে!সে ছিল আমার সবচাইতে ভালো বন্ধু যার সাথে সব শেয়ার করা যেত।আমরা দুজনেই ভালবাসতাম সাহিত্য।সে বেশি পছন্দ করত পুরোনো দিনের গান রবীন্দ্রনাথের কবিতা,আর আমি কথাসাহিত্য।দুজনে কত সময় কাটাতাম সাহিত্য,দর্শন,রাজনীতি,নাটক সিনেমা নিয়ে গল্প করে।পরচর্চাও চলতো বেশ। তর্ক বিতর্ক আর ঝগড়াও তো কম হতো না আমাদের মধ্যে।এই রাতে সেসবও যে ভীষণ মায়াময় মনে হয়।মনে হয় সে যদি আমাকে ভালো নাও বাসে,শুধু রাগ করে,ঝগড়া করে, গোটা জীবন তবু আমার সুরকেই দরকার।বড্ড বেশি দরকার…
মনে আছে আমাদের প্রথম চুমু খাওয়ার দিনটা।হাতিরঝিলের এক মিঠে বিকেলে বিশাল সাহসের এক অভাবনীয় দীর্ঘ চুম্বন।চুম্বনের অনুভূতি এখন ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে যে তা এক বিশাল কবিতা হয়ে যাবে।ইচ্ছে করছে না এখন কবিতা করতে।শুধু মনে আছে চুমু শেষ হওয়ার পরেই দেখি সামনে এক পুলিশ সার্জেন্ট।অশ্লীলতার অভিযোগ এনে আমাদের নিয়ে গেল থানায়।বাসার ফোন নাম্বার চায়,থানায় ডায়েরি করবে এসব হুমকি।আমি তো ভয় পেয়ে কেঁদে কেটে অস্থির। সুর কিন্তু সব সামলালো দৃঢ় প্রত্যয়ে।তার কথার জাদুতে পুলিশ অফিসার হকচকিয়ে গেল,ছেড়ে দিল আমাদের একটু সতর্ক করে।আমার তখন মনে হয়েছিল এই সাহসী মেয়েটাকে পাশে পেলে আমি হিংস্র বাঘ নিয়েও সার্কাস দেখাতে পারবো নিশ্চিন্তে…
রাতে অগোছালো খাটে ঘুমিয়ে গেছিলাম প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে।
সকালে আযান আসলো বাসায়।আমার পিঠে চাপড় মেরে বললো,”কীরে শালা,তোর প্রিয়তমা তো মহাসুখে আছে দেখলাম তার বরের লগে,সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতাছে,হাসতাছে আবির দেখছিল।তুই হুদাই কষ্ট পাইতেছিস যে সে তোরে কত না ভালোবাসে।”
আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।বিয়ের পর এতো তাড়াতাড়ি ও স্বাভাবিক হয়ে গেল!আচ্ছা ও যদি ভালো থাকে,সুখে থাকে,তাহলে তো ভালোই।ভালোবাসা ভালো আছে,এর চাইতে শুভ ব্যাপার আর কী হতে পারে একজন শুদ্ধ প্রেমিকের জন্য?
ইদানিং খুব রাত করে ঘুমাতাম।সিগারেট ফোঁকার মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছিল।দুপুর পর্যন্ত ঘুমাতাম মরার মতো। সুরের শূন্যতা মনে হচ্ছিল পৃথিবীর আর কিছুতেই পূরণ হবে না।
মাথার যন্ত্রণার মাত্রা ক্রমশঃ বেড়েই যাচ্ছে।যেন এক অদ্ভুত অতৃপ্তি,কঠিন নৈরাশ্যের সমুদ্রে হাবু ডুবু খাচ্ছি,নিজেকে মনে হচ্ছে বিরাট পাথর যার ডুবে যাওয়াই চিরন্তন সত্য।
আমার অবস্থা দেখতে আসতো আযান,মাঝে মাঝে।তারও তো ঢের কাজকর্ম আছে,কিন্তু তবু বন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার ফলে তাকেও কষ্ট পেতে হতো।
সে খালি বলতো,”দোস্ত তুই তো নির্ঘাত মারা যাবি এমন চলতে থাকলে।আর মারা যাবি এমন একটা ফাউল মেয়ের জন্য যে তোরে ভালোবাসে নাই।”
আমি এই কথার প্রতিবাদ করে উঠি সবসময়ই,”সুর আমাকে ভালবাসে।আজীবন বাসবে।”
“তোরে ভালোবাসে না।”
“বাসে।”
“আচ্ছা একদিন প্রমাণ পাবি সে তোরে ভালোবাসে নাই।”
আযান সম্ভবত প্রমাণ জড়ো করার জন্যই সুরের উপর গোয়েন্দাগিরি করতো।আরেকজনকে সার্বক্ষণিক খোঁজ নিতে লাগিয়ে রেখেছিল।এমন কি ওর বাসার কাজের লোককেও নাকি টাকা দিয়ে হাত করেছিল তথ্য পেতে।
এক সকালে আযানের টানা তিরিং বিড়িং ফোন কলে ঘুম ভাঙ্গলো আমার।প্রথমে মাথা কাজ করছিল না,কিন্তু শালার ব্যাটা শুরুই করলো এই বলে,”তোমার বউ তো হানিমুনে যাচ্ছে কক্সবাজার বরের লগে,তুমি এখন কী করবা মাম্মা।”
বলে হাসতে লাগলো।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,”আমি আর কী করবো?পেট ব্যাথা করতেছে,বাথরুমে গিয়ে হাগবো।”
“না মামা,তুমিও সাথে যাবা তোমার বউয়ের লগে।”
আমি অবাক গলায় বলি,”আমি?!আমি কেন যাবো?আর সুরঞ্জনা আমার স্ত্রী না,এখন সে আমার কেউ না।সে অন্য কারো।প্লিজ দোস্ত,আমার অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা কর,মজা করিস না রে।”
“আচ্ছা বুঝতে পারছি ওরে তোর বউ বললে তোর আরো বেশি করে কষ্ট হয়।”
ব্যাথিত গলায় আযান এটা বলেই গলা অন্যরকম করে বলেছিল,”এই শুন,তোর কষ্ট আমি ভুলিয়ে দিবো।তুই এখনও আশা নিয়ে আছিস সুর তোরে ভালোবাসে,কিন্তু এবার তুই নিজে চক্ষে প্রমাণ পাবি সে তোরে ভালোবাসে না।আর নিজে চক্ষে যখন দেখবি তোর প্রিয়তমা অন্য কারো সাথে ব্যাপক সুখেই আছে,তখন দেখবি তোর অবস্থার উন্নতি হবে,তাড়াতাড়ি ওরে ভুলে যেতে পারবি।”
“তোর কথা বার্তা বুঝছি না আমি।যা বলার খুলে বল।”
“শুন,আজকে রাতের গাড়িতে যাবে ওরা।সাথে তুইও যাবি।ছদ্মবেশে যাবি, দেড় বছর যে থিয়েটার করছিলি,নাটক করছিলি সেই জ্ঞান কাজে লাগাবি।আমি ওই একই গাড়িতে টিকিট কাটছি তোর জন্য।”
কিছুটা দোনামোনা করেও ভেবে দেখলাম যাওয়াই উচিত আমার।আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।ওকে একেবারের জন্য ভুলে যেতে চাই।ভুলে যাওয়ার আগে একটা কথা জানাতে চাই ওকে,যে কথাটাই হবে আমার শেষ কথা।
সুরঞ্জনা কি আমাকে সত্যি ভালোবাসে,নাকি সব ছিল তার অভিনয়?অবশ্য আমাদের সবারই কম বেশি অভিনয় করতে হয় এই পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে।এখানে কেউ ভালো অভিনেতা,কেউ খারাপ, কেউ কেউ আবার তুখোড়।কিন্তু আমি তো ভালোবাসা নিয়ে অভিনয় করিনি!সত্যিকারের ভালবাসা নাকি মেয়েরা বুঝতে পারে,আর ও তো বুদ্ধিমান মেয়ে,তবু কি বুঝেছে?
বাসে আমি যে সিটে বসেছি তার পাশের সারিতেই আমার থেকে দুই রো সামনে বসেছে সুরঞ্জনা আর তার স্বামী।স্বামীর বাহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা দিয়ে বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে সে। বাসের মৃদু আলোয় যতটুক দেখলাম তাতে মনে হলো বেশ সুখী সুখী চেহারা আমার ভালোবাসার মানুষটির।আমার দিকে একবার সম্ভবত তাকিয়ে থাকবে আলতো চোখে কিন্তু চিনতে পারেনি,যা তার মুখ দেখেই বুঝেছি।আমাকে চিনবে কি আমিই নিজেকে চিনতে পারিনি ছদ্মবেশ নেওয়ার পর।
বাস যখন ছাড়লো তখন মনে হলো পাগলের মতো চিৎকার দিয়ে উঠে দাড়াই।চালককে বলি গাড়ি থামাতে,তারপর একরাশ ঘৃণার থুথু সুরঞ্জনার ছায়ায় ফেলে নেমে যাই।নেমে গিয়ে আরেকটা বাসের সামনে পড়ি,এই সিনেমার একটা ট্র্যাজিক সমাপ্তি দিই।সমাপ্তি ট্র্যাজিক দিলেও তো আমার মতো অপদার্থের জন্য কেউ মনে হয় না হৃদয়টা একটু আর্দ্র করবে,দুফোঁটা পানি চোখের উপত্যকা থেকে বের হতে দিবে।মনে হচ্ছিল সুরঞ্জনা আমায় কখনো ভালোবাসেনি,সব ছিল তার অভিনয়।
কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলাম।
বাসের আলো খুবই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।রাতের বাস ছুটে চলেছে অন্ধকারের পর্দা ছিড়ে নির্মম ভাবে।যাত্রীরা প্রায় সবাই ঘুমাচ্ছে।এই ফাঁকে দেখলাম ওরা চুমু খাচ্ছে আশে পাশের ঘুমন্ত মানুষদের নীরবতার সুযোগ নিয়ে যা নতুন দম্পতিদের জন্য অস্বাভাবিক কিছু না।আমিও ঘুমের ভঙ্গিতে আছি তবে মাথার মধ্যে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।নিজেকে বুঝ দিচ্ছি,এমন তো না মানুষ সারাজীবন শুধু একজনকেই ভালোবাসে,একজনের পর আরেকজনকে ভালোবাসতেই পারে।আর মেয়েটা তো আমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় অন্য কাউকে ভালোবাসেনি।তখনকার সুরঞ্জনার কথা ভাবলে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে।নিজের হাত পুড়িয়ে আমার জন্য রান্না করে নিয়ে আসতো মেয়েটা।এতো অপূর্ব ওর রান্নার হাত যে আমাকে কখনো মিথ্যে প্রশংসা করতে হয়নি।আমার প্রিয় শোল মাছের ঝোল নারকেলের দুধ দিয়ে,চিতল মাছের পেটি ভুনা,গরুর মাংস এতো ভালো রান্না করতো যে একবার খাবার পর আমার পক্ষে সারাজীবনেও ভুলে যাওয়া সম্ভব না সেই স্বাদ।এমনকি সাধারণ ফার্মের মুরগী ভুনাও সুরের হাতের জাদুতে অমৃত হয়ে উঠতো।কতদিন আমার জন্য পায়েস রেঁধে আনতো ক্যাম্পাসে,যে পায়েস খেলে ভুলে যেতে হয় আগেকার খাওয়া সমস্ত ডেজার্টের স্বাদ।
বাসের ঝাঁকুনিতে সম্বিৎ ফিরে পেলাম।কল্পনার স্মৃতিচারণা থেকে নিখাদ বাস্তবতায় চোখ পিটপিট করে তাকালাম।সব বাতি বন্ধ করে দিয়েছে।আমার প্রিয়তমা কী করছে তার প্রাণপ্রিয় বরের সাথে এই সুবর্ণ অন্ধকারে!
আবার চোখ বন্ধ করলাম।যে যা ইচ্ছা করুক,দুনিয়া রসাতলে যাক,আমার কিছু যাবে আসবে না।
আযান বলেছিল,”দেখ সুরের সোয়ামি কত কিপ্টা,এতো টাকা কামায় কিন্তু হানিমুন করতে যাচ্ছে কক্সবাজারে!তাও প্লেনে না যেয়ে বাসে।কোথায় তোর সুরকে একটু সুখ শান্তি দিবে,তা না, খাটায় মারার ধান্দা যোগাইছে – হা হা।”
আমি টিকে থাকতে পারছিলাম না এই বাসে।গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছিল।আমার প্রিয়তমা কেন অন্যের বাহুডোরে?তার তো আমার বুকের মধ্যে থাকার কথা এখন।
নেমেই যেতাম;মনে পড়লো সুরঞ্জনাকে একটা কথা বলার আছে।একটা কথা তাকে জানাতে পারলেই আমার চিরমুক্তি।
২.
মধ্যরাতের নির্জন সমুদ্র সৈকত তার চরিত্র পাল্টে ফেলেছে।রহস্যময় কালোয় বিশাল ঢেউয়ে ঝরে পড়া আলোর কনা মিশে অদ্ভুত আনন্দ বেদনার কাব্য তৈরি করেছে।বালিয়াড়িতে পুরো শরীর লেপ্টে শুয়ে আছি।বুকের ভেতরে একরাশ শূন্যতা,ভয়াবহ নৈঃশব্দ্য।সামুদ্রিক ঢেউয়ের ক্রমাগত শব্দেও যে নৈঃশব্দ্যের দেওয়ালে আঁচড় লাগে না।
ওরা যে হোটেলে উঠেছে সেই হোটেলে আযান আমার থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল।যদিও আমার মনে হয়েছিল আর কিছুই দেখার,উপলব্ধি করার দরকার নাই।যা দেখার বাসেই দেখে নিয়েছি এই দুই চর্মচক্ষে।তারপরও সুরের সাথে যে আমার অন্তিম দেখা হওয়াটা জরুরি,কথাটা জানাবো,তার চোখ মুখের ভঙ্গি লক্ষ্য করবো,যদিও জানি কথাটা শোনার পর ওর চেহারা কী রকম পাল্টে যাবে!
আজ সারাদিনে যা যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে সুর সৌভাগ্যবতী নারী যে এরকম একজন মানুষ পেয়েছে তার জীবনে;যে স্ত্রীকে ভালোবাসে খুব, স্ত্রীও স্বামীকে ভালোবাসায় কোনো কমতি রাখে না।সকালে ব্রেকফাস্টে কী রকম উচ্ছল আনন্দে গল্প করতে করতে খাচ্ছিল তারা,দুপুরে খাবার সময় সুর বরকে খাইয়ে দিয়েছিল নিজ হাতে,কোনো কথাই শুনবে না সে,সবার সামনেই ওই ধামড়া লোকটাকে খাওয়ালো।মনে পড়ছিল সুর একদা ভরা রেস্টুরেন্টে আমাকে খাইয়ে দিয়েছিল।ওর হাতে খেতে অন্যরকম সুখ হতো আমার।আমার প্রাণপ্রিয় সুর।আমি বলেছিলাম,”এই হাতে শুধু আমাকেই খাইয়ে দিবা।আর কাউকে খাওয়াবে না কখনো।মনে থাকবে?”
সুর হেসে বলেছিল,”অবশ্যই শুধু তোমাকে খাইয়ে দিবো সোনা।”
“সত্যি তো?”
“সত্যি সত্যি সত্যি কথা সোনা।”
“আমার দিব্যি দাও।আমাকে ছুঁয়ে বলো।”
আমার কপাল ছুঁয়ে সে বলেছিল,”এই তো তোমাকে ছুঁয়ে বলছি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনো নিজ হাতে খাওয়াবো না,তোমার দিব্যি সোনা।”
তারপর হঠাৎ ফিক করে হেসে দিয়ে বলেছিল,”এই পাগলা,তোমার আমার বাচ্চা হলে ওকে খাওয়ানো লাগবে না?! ইস বোকার মতো দিব্যি দিয়ে দিলাম!”
আমি আশ্বস্ত করার ভঙ্গি করে বললাম,”আরে বোকা বালিকা আমাদের বাচ্চা ত তোমার আমারই অংশ।সে অন্য কেউ হবে না,তাকে খাওয়াতে পারবা।”
স্মৃতিটুকু মনে পড়তেই চোখ ভিজে উঠলো।সুর কথা রাখেনি।ইচ্ছে করলো খুব এই বিশাল জলরাশিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে;আমাকে উন্মত্ত সমুদ্রকন্যা আপনা গহ্বরে টেনে নিক।
উঠে বসেছিলাম পা ছড়িয়ে দিয়ে। হঠাৎ ঘাড়ে কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে হকচকিয়ে উঠে পিছন ফিরে তাকালাম।চমকে উঠলাম ভূতগ্রস্তের মতন – সুরঞ্জনা!
পৃথিবী যেন একদিকে হেলে পড়লো আমার।সুরঞ্জনা বললো,”ছদ্মবেশটা খুবই বাজে হইছে। বাসের এতো কম আলোতেও চিনতে একমিনিটের বেশি লাগে নাই।”
বেশ অনেকক্ষণ ধরে মেঘের আড়ালে থাকা চাঁদ নতুন করে উন্মোচন করছে নিজের রূপ লাবণ্য।চাঁদের আলো সুরের মায়া মুখে সোহাগ চুম্বন দিচ্ছে।ফুটে উঠছে তার নকশাদার থালার মতো অভিজাত মুখ,জেগে উঠেছে রাজার সরোবর থেকে দুই নীলপদ্ম চোখ।সুরের ঘন কালো পাপড়ি, গাঢ় বাদামী চোখের উপর নান্দনিক বনানীর মতো ছায়া ফেলছে। বড্ড ছুঁতে ইচ্ছে করছিল সুরঞ্জনাকে,আবার এতো সৌন্দর্য দেখে সহ্য হচ্ছিল না ঠিক,আরো বেশি করে মনে পড়ছিল সে তো আমার না;সে পরস্ত্রী।এতো সামনে থেকেও দূরবর্তী কোনো নক্ষত্র থেকে যেন সুরঞ্জনা বলছে,”তুমি আমাকে কেন এতো ভালোবাসলে? এতোই যদি ভালোবাসলে কেন রাখলে না জোর করে নিজের কাছে?”
আমি বিকট অভিমানভরে বললাম,”তুমি আমাকে ভালোবাসো না।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।”
নরম আর্দ্র কণ্ঠে অজস্র আক্ষেপ নিয়ে সুর বলে,”শেষবারের মতন আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবা রিহান?প্লিজ!I need a tight hug from you.”
সুরের চোখের সরোবর উপচে শারাবান তাহুরা পড়ছে।আমি সুরকে কখনো কাঁদতে দিতাম না,ওর চোখে পানি এলেই চুষে নিতাম পরম যত্নে।সুরের চোখের জলে আমার নেশা হতো।
সুর কাদঁছে কিন্তু আমি নির্বিকার।যদিও ভেতরে ভেতরে বুক ফেটে যাচ্ছে।নিষ্ঠুরের মতো বললাম,”আমি তোমাকে ছোঁবো না।তুমি চলে যাও।”
সুর চোখ নামিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো,”আচ্ছা।”
ওড়না দিয়ে চোখ মুছলো।তারপর একটু হেসে আমার মুখোমুখি বসে বললো,”তোমাকে একটু দেখি বুঝলে।এই ইহ জনমে তো আর ছুঁতে পারবো না।পরজনমে পাবো কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নাই।”
আমি কোনো মতেই ভুলতে পারছিলাম না সুর অন্য পুরুষকে ভালোবাসে।অথচ সে প্রতিজ্ঞা করেছিল যদি আমার না হয় তো অন্য কারুর হবে না।
আমি চুপ করে আছি।সেও চুপ করে আছে।আমাদের মাঝে ঝুপ করে নেমে আসে সহস্র মৃত তারকার বিষাদ বিরহ এবং নিস্তব্ধতা।
কয়েক শতাব্দী যেন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়।সুর হঠাৎ বলে ওঠে,”আজ না বড্ড গরম পড়ছে। যাই একটু শরীর ভিজিয়ে আসি।”
আমি কোনো কথা বলি না।আমি বোধহয় কোনো মহাজাগতিক ভাবনায় আটকে আছি।উদাস হয়ে দেহ এলিয়ে দেই বালুদের শরীরে।
সুর মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে থাকে সমুদ্রের দিকে।
বেশ খানিকক্ষণ পরে যেন চেতনা হয় আমার।শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠে সামনে তাকিয়ে দেখি সুর নাই।বড়ো বড়ো ঢেউয়ের ফাঁকে হারিয়ে গেছে সুর।আমার সুর সাঁতার জানে না।আকাশ কাপিয়ে চিৎকার দেই,”সুরঞ্জনা!”
সুরকে যে কথা বলার ছিল,সে কথা আর বলা গেল না।
– Ruhi Nasrullah
Send private message to author







ভালো লিখছিস বন্ধু❤️
এভাবে এগিয়ে যা, শুভ কামনা রইলো🌼
একটা সময় আসে যখন মানুষ নিজের পরিবারের বাইরে কারো উষ্ণতা চায়। নিজেকে তার জন্য উজার করে দিতে চায়। সাহসী না হয়েও লড়ে যায়। ক্যারিয়ারের দিকে চেয়ে প্রিয় মানুষ টাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভুলতে পারে না। সেই মানুষরটার সাথে কাটানো জীবনের প্রিয় সময় গুলো। ভুলে থাকতে পারে না প্রিয় মানুষটার শীতল স্পর্শ। সহ্য করতে পারে না প্রিয় মানুষটাকে কেউ দেখুক, স্পর্শ করুক। কিন্তু সেই প্রিয় মানুষটাকে যখন বাস্তবতার নির্মম পরিহাসের জন্য বেধে রাখতে পারে না, তখন বুকে জমা বরফ নিয়ে মানুষটাকে হৃদয় থেকে মুছে ফেলার কত ব্যর্থ প্রয়াসই না করে থাকে।
ভালোবাসা এমন যা হঠাৎ করেই আসে কেউ বেধে রাখতে পারে কেউ পারে না।
প্রিয় মানুষের সাথে জীবন টা পরিপূর্ণতা লাভ করুক এটা সবাই চায়,কিন্তু আসলে কয়জন বা লাভ করতে পারে প্রিয় মানুষটাকে।কখনো কখনো ভালবাসা হার মানে আমাদের এ সমাজ ব্যাবস্থার কাছে।হারিয়ে ফেলি আমরা কাছের মানুষটিকে ।
মানুষ সামাজিক জীব ,সময়ের সাথে তার পরিবর্তন, তাই হয়ত একটা সময় না চাইতেও কারো প্রেমে পরতে বাধ্য হয়।পরিবার ছাড়াও একটা সুখের আশ্রয়, ছায়া, একটু উষ্ণতার খোজে ।কখন আমরা এ ভালোবাসা নামক যুদ্ধে জয়ী কখনো বা পরাজয়ী ।
কখনো প্রিয় মানুষটা আমাদের ছেঁড়ে চলে যাচ্ছে, আবার আমরাও হয়ত তাকে ছেরে যাচ্ছি । শত শত প্রতিজ্ঞা হয়ত আমরা করছি , কিন্তু কতটা মূল্যায়ন করতে পারছি ।
লেখকের “প্রতিজ্ঞা” গল্পে রিহান নামক চরিত্রে বিরহের ছায়া থাকলেও তার মাঝে পরিলক্ষিত হয় শরৎচন্দ্রের “দেবদাস ” উপন্যাস।যা আর অনুপ্রাণিত করবে পাঠকদের ।
ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ার জন্যে।
গল্প পড়ে যা বুঝতে পারলাম দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝা যায় না। যাকে গল্পের মূল কথা বলা যায়।
গল্পটি রিহান ও সুরঞ্জনার ভালোবাসার কাহিনী। গল্পটিতে ভালোবাসার কাহিনীটা অন্যান্য ভালোবাসার কাহিনীর মতোই মনে হলো। গল্পটা আরো সুন্দর এবং নতুনত্ব দিয়ে লেখা যেত।
কিন্তু ভালোবাসার গল্প হিসেবে অন্যান্য গল্পের মতো মোটামুটি ভালোই।
আমার যে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি রয়েছে তা হলো রিহান ও সুরঞ্জনার, সুরঞ্জনা ও তার স্বামীর কিস করাটা দেওয়া আমার মতে ঠিক হয় নি। বিয়ের আহে এসব সমাজের হিসেবে তেমন মানানসই না।
সবশেষে ভালোবাসার গল্প হিসেবে এভারেজ মানের গল্প লেগেছে। তবে গল্পে গল্প বলার ধরনটা ভালো লাগলো। আশা করি লেখক তার লেখনী দিয়ে আরো ভালো গল্প উপহার দিবেন।