“সেই চোখ”

সেই চোখ

আমেরিকার উইসকনসিন অংগ রাজ্যের এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ প্রতিদিন প্রত্যুষে পার্কে হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটাহাঁটি শেষে পাশের কফি শপে যান।

এক কাপ কড়া কফির অর্ডার দেন। ওয়েট্রেস মেয়েটি আসে।মিষ্টি করে হাসে-
-হাই মিঃস্টিফেন!
-হাই জেনিথ !
আমেরিকার এই অঞ্চলে সাধারনত কালো চুলের মেয়ে চোখে পড়েনা।

এই মেয়েটির চুল ঘন কৃষ্ণ বর্ণের। চোখ দুটো ব্রাউন,গায়ের রং দুধে আলতা! তার উপর মেয়েটির গায়ে কোন তিল নেই।
পুর্বপুরুষ এশীয় হবে হয়তো।

অতি সাবলীল চলাফেরা। আজ এক বৎসর যাবৎ মেয়েটি বৃদ্ধটিকে কফি সার্ভিস দিচ্ছে! ব্যাটা হাড়কিপটে একটা পেনি ও মেয়েটিকে ‘টিপ’ দেননা।মেয়েটির মিষ্টি হাসিখানি কিন্তু লেগেই থাকে।

বৃদ্ধটি ক্রমে মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেন!একদিন না দেখলে তার কেমন যেন লাগে!একি ভালবাসা না অন্যকিছু? ওর চোখ দুটো আর গভীর কুন্তলরাশি বৃদ্ধকে দুর অতীতে নিয়ে যায়।

বৃদ্ধ হাঁটেন,প্রতিদিনই হাঁটেন। প্রতিদিনই কফি শপে কফি খেতে যান। বৃদ্ধ এবং মেয়েটির মাঝে গভীর বন্ধুত্ব হয়।

এখন মেয়েটিও নির্দিষ্ট ওই সময়টাতে বৃদ্ধের জন্য অপেক্ষা করে!বৃদ্ধ অপলক চেয়ে থাকেন মেয়েটির চোখের পানে!প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগতো মেয়েটার;এখন আর লাগে না।

অনেক দিন পর!

বৃদ্ধটি হঠাৎ লাপাত্তা।মেয়েটি অপেক্ষায় থাকে!বুড়ো আর আসেন না।পার্কের ওপাড়েই বৃদ্ধের বাসা! আলাপচারিতায় একদিন জেনেছিল জেনিথ!

ভাবলো আজ একবার দেখে যাইনা কেন বুড়োটার কি হল!
বাড়ির চারপাশ কাউন্টি পুলিশে গিজগিজ করছে।আজ চারদিন ঘরের দর্জা ভেতর থেকে বন্ধ!

দর্জা ভেঙ্গে দেখা গেল বুড়ো মরে পড়ে আছেন!পঁচা গন্ধ বেরুচ্ছে ঘর থেকে।
পুলিশ সিজার লিষ্ট বানাতে গিয়ে দেখে একটা নীল রঙ্গের খাম-মুখবন্ধ। গোটাগোটা অক্ষরে লেখা”টু জেনিথ”!

-দেন হু ইজ জেনিথ? পুলিশ শুধায়।
-আই অ্যাম-কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দেয় জেনিথ।
-নাউ ওপেন দ্য ইনভেলাপ।
জেনিথ ইনভেলাপটি খুলল এবং পুলিশের উপস্থিতিতে পড়তে লাগলো।

জেনিথের মাথা ঘুরে পড়ে যাবার উপক্রম।ওটি একটি উইল!
সাথে ছোট্ট একটি চিঠিতে স্টিফেন লিখেছেন-

জেনিথ মাই সুইট হার্ট!

শরতের এক সুন্দর সকালে উইসকন্সিনের ছোট্ট সেই পার্কটিতে তোমার আমার দেখা!
কি এক মোহনীয় চাউনিতে তুমি আমায় অবশ করে দিলে!
এই চিঠি হয়তো তোমার হাতে পড়বে কিংবা পড়বে না!
তোমার হাতে পড়বে-এই ক্ষীন আশা নিয়েই আজ আলুথালু জোছনায় এই চিঠি লিখা।

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে-আমার তখন চব্বিশ ছুঁইছুঁই!
আমাদের পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টায় থাকত।

পাশের বাড়ির বিধবা আন্টি-আমার চেয়ে দশ বছরের বড়!আমরা একে অন্যের প্রেমে পড়ে যাই!রীতিমত কঠিন প্রেম।

আমার বাবা একজন গোঁড়া ক্যাথলিক খ্রিষ্টান।তিনি আমাদের এ সম্পর্ক মেনে নিলেন না।যদিও আমেরিকান সমাজে বিয়ে শাদীর ব্যাপারে পিতা মাতার সম্মতি অসম্মতিতে কিছু যায় আসেনা।

আমি আমার পিতার অসম্মতিকে ‘অনার’করলাম-পলিনের সাথে সম্পর্কছেদ করলাম!

এক প্রত্যুষে পলিন তার কিশোরী কন্যা এলিনকে নিয়ে চিরতরে স্যাক্রামেন্টা ছেড়ে চলে গেল!

সেদিন সারাটাদিন পাগল পাগল হয়ে পলিনকে খুঁজলাম-পেলাম না!

পিতার উপর একরাশ অভিমান নিয়ে আমিও একদিন অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম!ভুলতে,পারলাম না সেই দু’টি চোখ।একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম-
নাহ!আমি আর ঘরই বাঁধব না!উইসকন্সিনে এসে থিতু হলাম।

বেশ কাটছিল আমার উইসকন্সিনের দিনগুলো!তোমায় দেখার পর সব কেমনএলোমেলো হয়ে গেল।

প্রতি রাতে পলিনের কথা মনে হয়!বুকের ভিতরকার পুরোনো ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠে!

আমি বেশ বুঝতে পারি-রাতের পর রাত অনিদ্রায় আমার শরীর ভেঙ্গে যাচ্ছে!

এক রাতে এটর্নি ডেকে
আমার দেড় মিলিয়ন ডলারের সমুদয় সম্পত্তি জেনিথ তোমাকে লিখে দিলাম!

ঈশ্বর যদি দুনিয়াতে আবার মানুষ পাঠান তখন তোমার অপরুপ নয়ন দুটি চেয়ে নিয়ে আসতে ভুলোনা যেন!

আর আমি কি চেয়ে আনব তা তোমাকে নাইবা বললাম!
বিনয়াবনত-
মিঃস্টিফেন!

চিঠি পড়া শেষ হতেই জেনিথ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল!
-এনি থিং রং?পুলিশ শুধায়!
-নো নো! ইটস ওকে!ইটস ওকে!জেনিথ চোখ মুছতে মুছতে বলে-বুড়োটা আমার নানী পলিনের বয়ফ্রেন্ড ছিল!
আমি এলিনের কন্যা!রেষ্ট ইন পীস গ্র‍্যান্ড পা’!

              #শেষ# 
         -Saiful Alam
Send private message to author
What’s your Reaction?
0
1
0
0
0
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Saiful Alam
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!