অতি চালাকের বেগুন ডাল

বিয়ের চতুর্থ দিনের মাথায় প্রতিবেশী চাচী শাশুড়ীদের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের এক ফাঁকে জানতে চাইলেন, ‘ শ্বশুর বাড়ির লোকজন দেখে ভয় পাচ্ছি কিনা। আমি কিছুটা উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে নিজের ব্যক্তিগত মনোভাবটা জানাতে বললাম,’ ভয় পাওয়ার কি আছে? শ্বশুর বাড়ির মানুষ কি মানুষ নয়?’
ভদ্র মহিলাদের আসরের কারোর আমার উত্তরটা পছন্দ হলো না। তারা হয়তো চেয়েছিল নতুন বউ তাদের ভয় পাক।
অথচ একি প্রশ্নের উত্তরে আমার খুব কাছের একজন বান্ধবী ভয় লাগছে বলায় তাকে বুঝানো হয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আর দশটা মানুষের মতোই সাধারণ। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
বুঝলাম শ্বশুর বাড়ি কারো কারোর জন্য এমন একটা জায়গা যেখানে পাঙ্গাশ মাছের পেটি যদি আপনার প্রিয় খাবারের একটি হয় তাহলে সেটি খেতে হবে নাক ছিটকতে ছিটকতে কেমনে খায় কেমনে খায় বলে!

শ্বশুর বাড়িতে বেহাল অবস্থায় পড়া আমার আরেকজন বান্ধবীর কথা বলি। রান্নার ‘র’ না জানা এই বান্ধবীটাকে বিয়ের সপ্তম দিনের মাথায় শাশুড়ী জিজ্ঞেস করলেন,’ বউমা, রান্না বান্না কি পারো?’ বেচারীর সহজ সরল উত্তর হ্যাঁবোধক না হওয়ায় শ্বাশুড়ি রেগে আগুন। শাশুড়ী হনহন করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। পুত্রবধূকে বললেন, ‘রান্না কোনোই কাজই না, করতে করতে শিখে যাবে। আজ থেকে রান্নাবান্না তুমিই করবে।’

নিজের আরেকটু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে গিয়ে ধরা খেলাম বিয়ের দশ দিনের মাথায়। শাশুড়ী রান্না করছিলেন আমি উনার আশেপাশে ঘুরছি আর একটু আধটু কথা বলছি। কথার একফাঁকে জানতে চাইলেন শুটকি দিয়ে বেগুন রাঁধতে পারি কিনা? বান্ধবীর বেহাল অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেঁচে যেতে বললাম,’ রান্না কোনো কাজই না। আমি সব পারি।’ শাশুড়ী এই বাক্যে খুশি হলেন কিনা বোঝা গেল না তবে শুটকি দিয়ে বেগুনগুলো আমাকে রাঁধতে দিয়ে নিজে সরে গেলেন। পাঁচ পিস শুটকি দ্বারা দুটো বেগুন রাঁধতে গিয়ে দেখি ডেকচি ভরতি পানি দিয়ে বেগুন ডুবানো গেল না। আমিও নাছোড়বান্দা বেগুন না ডুবিয়ে ছাড়ছি না। বেগুন ডুবাতে কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মাথায় চট করে বুদ্ধি এলো কাঁটা চামচে বেগুন গেঁথে ডুবিয়ে রাখলে কেমন হয়! যেই বুদ্ধি সেই কাজ!

খেতে বসে দেখি শাশুড়ী বাটিভর্তি বেগুনে অনেক খুঁজেও একটুকরো বেগুন পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঝোলই নিল। খাওয়ার এক পর্যায়ে নিজের আনাড়ি হাতের রান্নার সুনাম পাওয়ার লোভে বললাম,’ আম্মা, বেগুনের ডাল। এই রেসিপির জনক আমি নিজেই। বাড়িতে কত রাঁধতাম! আপনি নিশ্চয়ই আগে খাননি?’ শাশুড়ী মা কঠিন গলায় বললেন,’ পরেও খাব না।’

জিন্নাত রিমা

Send private message to author
What’s your Reaction?
0
0
1
0
0
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Zinnat Rima
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!