Exif_JPEG_420

উপলব্ধি।

বিয়ের বারো বছর পর আমার স্বামী আরও একটা বিয়ের কথা জানালো। আমি আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছিলাম৷ আমি তখন পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি একজন মহিলা। আমার চুলে অল্প পাক ধরা শুরু হয়েছে। মুখের চামড়ায় টান ধরা শুরু হয়েছে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ তৈরি হয়েছে। নয়টা পাঁচটা অফিসের পর নিজেকে দেখার সুযোগ হয়ে উঠে না আর।

অপরদিকে অনন্যার বয়স তেইশ কিংবা চব্বিশ অথবা তারচেয়ে কম বা বেশি। কিছু কিছু মানুষের বয়স ঠিক আন্দাজ করা যায় না বলে ওর বয়সটাও আমি বুঝি না। আমার মেয়ে নুহার জন্মদিনে প্রথম দেখলাম। মেয়েটা সুন্দরী। আমার স্বামীর অফিসের নতুন কলিগ। বেশ ভাব তাদের। সুন্দরী মেয়েদের সাথে সব পুরুষের সখ্যতা থাকাটা স্বাভাবিক। আমি ওসবে নজর না দিলেও অন্যরা কথাটা আমার কানে দিয়েছিল।
আমার মা এসে বললো, জামাইয়ের মতিগতি ভালো দেখি না, সময় থাকতে আটকা।
আমি হাসলাম। স্বামী কি গোরু ছাগল না-কি যে আটকে রাখব!
আমাদের দুই ছেলে মেয়ে। সাত বছরের ছেলে নিনাদ আর তিন বছরের মেয়ে নুহা।

আমি আমার স্বামীকে সন্দেহ করি না কখনও। তার উপর রাগ দেখিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাইনি। তার পাশে থেকে চেয়েছি তাকে বুঝাতে। তার নতুন বিয়ের কথা শুনেও চিৎকার চেচামেচি করিনি, স্বাভাবিকের মতোই দুজনে একই ঘরেই থেকেছি।

শুক্রবার সকাল সকাল ছেলেমেয়েদের মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমার স্বামীকে বললাম, তোমার সাথে একটু বাইরে বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করছে৷ সেও রাজি হলো যেতে। অনেক বছর পর দুজনে একটা রিকশায় চড়লাম, বাতাসে আমার চুল উড়ছিলো। আগের দিনগুলোর মতো আমার স্বামী আমার চুল সরিয়ে দিচ্ছে না, আমি লজ্জাও পাচ্ছি না আর। তবে ভালো লাগছিল।

আমরা শহরের একটা শিশু সদনে এসেছি। আমার স্বামী আমার হাত চেপে ধরে বললো, “এটা কি ঘুরতে আসার জায়গা না-কি? এখানে কেন?” আমি তার উত্তর না দিয়ে তাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। আমরা ভেতরে গেলাম। অফিস-রুমে অনুমতি নিয়ে ভেতরের সবগুলো বাচ্চাদের থাকার জায়গাগুলো দেখলাম। আমার স্বামীকে বললাম,” নিনাদ আর নুহার থাকার জন্য আজকেই ব্যবস্থা করে যাব না-কি পরে একদিন আসবো?”

” তুমি কি পাগল হয়েছ, ওরা এখানে কেন থাকবে? এখানে তো এতিম বাচ্চারা থাকে। আমাদের ছেলে মেয়েরা কি এতিম না-কি! “

“তুমি আরেকটা বিয়ে করলে আমি কি বিয়ে না করে বাচ্চাদের নিয়ে থাকবো? আমার বিয়ে হলে আমার স্বামী কিংবা তোমার বউ নিশ্চয়ই আমাদের বাচ্চাদের দেখবে না। তাই আগেই ব্যবস্থা করে যাওয়া ভালো। ভেতরের পরিবেশ তো দেখলেই, বাসায় গিয়ে জানাবে।”

” এইরকম পরিবেশে আমার ছেলে মেয়েরা থাকবে এটা আমি কখনও চাইনি, আর চাইবোও না। বাসায় চলো।”

” আমি আর একটু বাইরে ঘুরতে চাই। পার্কে যাব। আসো।”

পার্কের বেঞ্চে কাপলদের ভীড়। শুক্রবারে মেলা বসেছে মানুষের। আমরা মাঝবয়েসী মানুষের জন্য পার্ক নয়। আমরা এখানে আগের বয়সের মতো বসতে পারি না। একটা খালি মতো জায়গা দেখে বসে পড়লাম।

” মহিমা, তুমি আরেকটা বিয়ের কথা ভাবছ, আমাকে জানাওনি তো।”

” তুমি যখন জানালে তারপরেই ভাবলাম। আমার বয়স তো বেশি না, সবেমাত্র পঁয়ত্রিশ। এখন বিয়ে করলে তাও সমাজ মানবে পরে আর মানবে না। বাকি জীবন একা থাকা যায় না-কি। তাই ভাবলাম।”

” তুমি সত্যিই চাও আমাদের ছেলে মেয়েরা শিশু সদনে থাকুক? ওরা আমার কাছে থাকবে। আমি অনন্যাকে সব বলব।”

” অন্যন্যা তার নতুন সংসারে আমাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আর ছেলে মেয়েরা আমাকেই মা হিসাবে চিনে। তারা অন্য কাউকে গ্রহণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। এতে ওদের মনের উপর চাপ পড়বে। তারচেয়ে ওদের কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে চলো দুজনে নতুন সংসার নিয়ে ভাবি।

” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? কীসব ভাবছ তুমি!'”

” ঐ যে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখো ফুল বিক্রি করছে, আমাদের ছেলে মেয়েরাও একদিন এসব করবে। বাবা নতুন বিয়ে করবে, মা নতুন বিয়ে করবে। ওরা এই রাস্তাঘাটে থেকেই মানুষ হবে৷ বাবা বিয়ে করে আলাদা সংসারে থাকলে মা একা ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে পারে তবে এই ছেলে মেয়েদের মানসিক কষ্ট তো কম হয় না। আমি এসব করতে পারব না। “

” তুমি তো মা, মায়েরা সব ত্যাগ করে।”

” কেন বাবারা করতে পারে না? “

আমার স্বামী সেদিন চুপ ছিল। আমি তাকে আর প্রশ্ন করিনি। শুধু বলেছিলাম সময় নাও, আমাকে জানাও। তারপর বিয়ের ত্রিশ বছর পাড় হল। আমার স্বামী আর দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলেনি। আমার বয়স বাড়ছে কিন্তু কোনো প্রসাধনী দিয়ে স্বামীকে আটকে রাখার চেষ্টা করিনি। তাকে শুধু বুঝিয়েছিলাম আমরা এখন চাইলেও অনেক কিছু পারি না বা পারবো না। আমরা বাবা, মা। আমাদের সন্তানেরা আল্লাহ্-র দেওয়া আমানত, তাদের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করে দুনিয়ার সুখ আমাদের জন্য না।

– Esrat Emu

Send private message to author
What’s your Reaction?
2
10
0
0
1
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Esrat Emu
3 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
9 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Shammee Akter
Guest
Shammee Akter
4 years ago

❤️❤️❤️

2
sanjida suma
Guest
sanjida suma
4 years ago

সত্যিই বাবা মায়েরা যদি বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করে, তাড়া যদি একটু ভাবে যে তাদের একটা খেয়ালী সিদ্ধান্ত তাদের সন্তানদের জীবনে কি ভয়াবহ ঝড় নিয়ে আসতে পারে। তাহলে হয়তো সমাজ থেকে এই ডিভোর্স নামক ভয়াবহ দুর্যোগ কিছু টা লাঘব হতে পারে।

লেখিকার ভিন্ন চিন্তা আমার অনেক ভালো লেগেছে। হয়তো আমার মতো অনেকেই ভাবেন নি যে, এমন করেও এমন বিশাল সমস্যার সমাধান হতে পারে। চিৎকার চেঁচামেচি না করেও ঠান্ডা মাথায় ভাবলে অনেক বড় সমস্যার সমাধান হয়তো পাওয়া যেতে পারে।
ধন্যবাদ লেখিকাকে এতো সুন্দর একটা গল্পের জন্য।

জীবনের খানিক খুশির থেকে দায়িত্ব কর্তব্য অনেক বড়। 👏

3
Nahid
Guest
Nahid
4 years ago

অল্প বাক্যে অসাধারণ ছিল।৪-৫মিনিট কাজে লেগেছে বলে মনে হচ্ছে😊।সত্যিই বুঝতে পারছিনা আর কি বলব😶।অনেক ভালো ছিলো।

কয়েকটা বিষয় লক্ষনীয়।”গোরু” বানান ভুল ছিলো।না-কি এর মাঝে “-” ব্যাবহারের প্রচলন আছে বলে আমার মনে হয় না।ও যুগল উদ্ধৃতি চিহ্নে কয়েক জায়গায় ভুল ছিল।বাদ বাকি সব ঠিক-ঠাক লেগেছে।

১০ এ ৯ দিয়া যেতেই পারে।🙌🙌❤️❤️❤️।

Best wish to Esrat Emu.

নাহিদ।

2
Ananna aktar onu
Guest
Ananna aktar onu
4 years ago

পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন ও কাছের মানুষ হলো বাবা মা।দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ মানুষের কাতারে এরা হলো সবচেয়ে দামি সম্পদ।তাদের অনুকরণ ও ছত্রছায়াতেই আমরা বেড়ে উঠি।যাদের বাবা মা নেই তাদের মতো অভাগা হয়তো আর দুনিয়াতে কেউ নেই।কিন্তু সেই বাবা মার ই যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায় তবে তার প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি সন্তানদের উপর।”উপলব্ধি”গল্পে মূলত সেই বিচ্ছেদের নেতিবাচক প্রভাব কিরুপ হতে পারে সেই দিক টি তুলে ধরেছে।দীর্ঘ বারো বছরের সংসার জীবনে কেউ ই হয়তো বিচ্ছেদ আশা করে না।সময় সময়ের গতিতে অতিবাহিত হয়।সেই সাথে অতিবাহিত হয় মানুষের বয়স।আর এই বয়সের প্রবাহের ফলে একজন মেয়ে হয়ে ওঠে যুবতী,মহিলা ও একজন মা।যৌবন ধরে রাখা যায় না।সময়ের সাথে সাথে এটা পরিবর্তন হয়।গল্পের নিনাদ ও নুহার মা মহিমা একজন পঁয়ত্রিশ এর কাছাকাছি মহিলা।চুলে হাল্কা পাক ও চামড়ায় টান ধরাটা স্বাভাবিক এই বয়সে।তাই বলে এই বয়সে বারো বছরের সংসার ফেলে স্বামী অফিসের তেইশ চব্বিশ বছরের সুন্দরী কলিগ অনন্যা কে বিয়ে করবে এটা তিনি কল্পনাও করতে পারে নি।এসব শোনার পর ও তিনি স্বাভাবিক ছিলেন।কারণ কাউকে জোর করে আটকে রাখা যায় না।একদিন সন্তান্দের তার নানাবাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মহিমা তার স্বামী কে নিয়ে বাইরে বের হতে চায়।তার স্বামী ও কোন সংকোচ না করে তার সাথে রিকসায় বের হন।কিন্তু শিশু সনদে গিয়ে নিনাদ এর বাবা খুব বিচলিত হয়ে পড়ে।মহিমার কাছ থেকে শোনা কথায় তিনি খুব অবাক হয়ে যান কারণ তিনি কখনোই চান না তার সন্তান শিশু সনদে একা একা বাবা মা ছাড়া বড় হোক।তিনি আরো বেশি অবাক হন যখন তিনি শুনেন তার স্ত্রী আরেকটি বিয়ে করবেন।সন্তান্দের বড় করা মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা শুধু মায়ের একার ই দায়িত্ব নয়।এতে বাবা মায়ের উভয়ের ই ভূমিকা প্রয়োজন।পার্কে ছোট মেয়েটার ফুল বিক্রি করা দেখে মহিমার স্বামী কখনোই চান নি তার সন্তান এভাবে জীবন কাটাক।অতপর তিনি তার ভুল বুঝতে পারে।বিয়ের ত্রিশ বছর পার হলেও তিনি আর কখনো দ্বিতীয় বিয়ের কথা তোলেন নি।এটাই ওনার জীবনের সবচেয়ে বড় উপলব্ধি।

2
Nafisha
Guest
Nafisha
4 years ago

আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত একটি দিক প্রকাশ পেয়েছে এই গল্পে। নিজের স্বার্থের জন্য মানুষ সব করতে পারে সেই জিনিসগুলো সম্মুখীন হতে হয় কিছু অসহায় নিষ্পাপ মুখ। বাবা-মা সকল সন্তানদের আগলে রাখে ছায়ার মত সেই ছায়া সরে গেলে সেই সন্তানদের জীবন বাস্তবতার ছোবলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, যার কিছুটা উদাহরণ লেখিকা এই গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
আরেকটু ভুলে গেলে ভালো লাগতো।
ধন্যবাদ লেখিকাকে এত সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।

2
Tanzila Sultana
Guest
Tanzila Sultana
4 years ago

“উপলব্ধি” গল্পটি চমৎকার একটি সাংসারিক গল্প।এই গল্পে সমাজের কিছু সত্য দৃশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। এই সমাজের একটি বদ্ধমূল ধারণার মুখে আঘাত করা হয়েছে।ত্যাগ শব্দটির সাথে সবসময় নারী কেই তথা মা দের কেই জড়ানো হয়।যা একেবারেই ঠিক নয়।
গল্পটিতে মহিমা নামক এক মধবয়সী নারী এই সমাজের প্রায় সকল চাকুরীজীবি নারীর প্রতিনিধিত্ব করে।মা হওয়ার পর আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি মহিলাই শারীরিক ভাবে আগে থেকে হয় অসুন্দর কিন্তু মানসিকভাবে হয় পরিপক্ব ও সুন্দর মনের অধিকারী। যেমন মহিমা,তিনি চাকরী সংসার সামলাতে গিয়ে নিজের শারীরিক সৌন্দর্যের দিকে হয়ত নজর দিতে পারেন না,কিন্তু তাঁর এই ত্যাগ কে তার স্বামী উপেক্ষা করেন এবং স্ত্রীর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অফিসের সুন্দরী কলিগের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।বারো বছরের সংসার,ছেলেমেয়ের তোয়াক্কা না করে সে অনায়াসেে দ্বিতীয় সংসার গড়তে চায়। তবে একই কাজ মহিমা করতে চাইলে সে ত্যাগের দোহাই দেয়।তার মতে মায়েরাই ত্যাগ করে। মহিমার স্বামীর মাধ্যমে লেখিকা সমাজের নিম্ন মন মানসিকতার মানুষকে তুলে ধরেছেন।
এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে মহিমা বুদ্ধিমান ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছে। ঝগড়া, চেঁচামেচি করে যে কোনো লাভ নেই তা তিনি ভালোই বুঝেছেন। তাই যুক্তি ও উদাহরণের মাধ্যমে তিনি স্বামীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সংসার ও সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য মা বাবা উভয়কেই ত্যাগ করতে হয়।
সর্বপরি লেখিকার বর্ণনাশৈলী ছিল খুব সাবলীল।পাঠকের পড়তে ও বুঝতে কোনো অসুবিধা হবেনা।
ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৫/৫

2
শিবলী সাইক
Guest
শিবলী সাইক
4 years ago

গল্পটি পড়ে দীর্ঘনিশ্বাস পড়লো। একজন নারীকে কতটা পহাড় সমান ধৈর্য ধরতে হয়, তার একটি দৃষ্টান্ত এই গল্পটি।

একজন নারী সারাটা জীবন ধরে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে। চেনা পরিবেশ চির জীবনের মতো পর করে চলে আসে শ্বশুরবাড়িতে। এখানে এসে একজন নারী চায় সামান্য একটু সুখ। কিন্তু তাও যদি না জোটে কপালে, তাহলে কিভাবে হয়।

স্বামীকে ভাগাভাগি করার মতো শোচনীয় পরিস্থিতি নারীদের জীবনে আর কখনো আসে না। এসবের জন্য স্বামী কিংবা স্ত্রী কারোরই জীবনে সুফল আসে না, বরং দুজনের জীবনই হয়ে যায় অগোছালো। মাঝখান থেকে বলি হয় তাদের নিষ্পাপ শিশু সন্তানেরা। তারা নানারকম মানসিক সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে।

তাই, বিবাহবিচ্ছেদ অথবা বিবাহিত থাকা অবস্থায় দাম্পত্য ভাঙন, কোনোটাই কাম্য নয়। এসবের কতটা ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি হতে পারে, লেখিকা সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

5

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!