আমার কাছে মনে হয় প্রতিটা মানুষের জীবনের কঠিন একটা সময় তার মধ্য বয়স৷ সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর, কোনো গবেষণায় ৪৫ থেকে ৬৪ বছরকেও ধরা হয়।
ভিক্টোর হুগোর মতে, ” Forty is the old age of youth, and fifty the youth of old age.
মধ্যবয়সে পৌছানোর পরে একটা বেহেমিয়ান মানসিকতা তৈরি হয় অনেক পুরুষের। তাই পরকিয়া থেকে শুরু করে দুঃসাহসিক ভ্রমণ অনেকেরই মাথায় ঘোরে। যৌবন চলে যাচ্ছে বলেই নারীরা অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। সাথে যুক্ত হয় মেনোপজের মতোন শারীরিক নানান অনুষঙ্গ। এর ফলে তাদের মধ্যেও নতুন কিছু করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন অনেকে।
ইংরেজিতে এই সমস্যার নাম, মিড এজ ক্রাইসিস। উন্নত দেশের মানুষজন এই সমস্যা এবং সমাধান সম্পর্কে সচেতন। আমাদের দেশে এই অলিখিত সমস্যার নাম হলো বুড়ো বয়সের ভীমরতি!
মাঝবয়সে এসে মানুষের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়৷ কিছু হরমোনাল পরিবর্তনও হয়৷ মানুষ এই সময়টাতে এসে পারিপার্শ্বিকতায় কিছুটা চাপের মুখে থাকেন। অনেকে বিষন্নতায় ভুগেন, অনেকেই আবার বিধ্বংসী হয়ে উঠেন।
সংসার, সন্তান, ক্যারিয়ার সবমিলিয়ে একটা স্টেবল এবং রুটিনবাঁধা জীবন। অনেক সময় এটা একঘেয়েমি লাগে। আবার অনেকেরই ক্যারিয়ারে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌছাতে না পারার হতাশা৷ জীবনে যা চেয়েছি, যাকে চেয়েছি, যেভাবে চেয়েছি তার কতটা পেয়েছি? আরেকটু বেশি হলে ক্ষতি কী ছিল? এসব বিতৃষ্ণা, একঘেয়েমি দূর করতে মনে তখন নানা ফ্যান্টাসি কাজ করে। মিশ্র অনুভূতির ফলে বিভিন্ন ভুল কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়।
পুরুষেরা এই বয়সে একটা মানসিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিবস্থায় পৌছায় ফলে তাঁদের ব্যক্তিত্ব এবং আচরণের মধ্যে একটা সংযম থাকে। যা আকৃষ্ট করে অনেক তরুণীদেরকে। অনেকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রেম মানেই গোপন ব্যাপার আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে। সেখানে এই মাঝবয়েসী প্রেম তো আরো গভীর গোপন! প্রেম জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। কে, কখন, কেন, কীভাবে কার প্রেমে পড়ে তাতো বলা যায় না। তবে মাঝবয়েসী প্রেমে পড়ার নির্দিষ্ট কারণ থাকলেও থাকতে পারে৷ কারণ এবং নৈতিকতার ভিত্তি কী বা উত্তরণের উপায় নিয়ে সময় এসেছে ভাববার।
ফ্যান্টাসির চাইতে যারা বাস্তববাদী মিড এজ একটা ভালো সময় তাদের জন্য৷ নিজেকে দেবার জন্য এই সময়ে তার নিজের সৃজনশীল করতে পারেন। কেউ হয়তো মনেপ্রাণে আঁকতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। এই সময়ে কিন্তু সেটা শুরু করা যায়। বিদেশে অনেককেই দেখা যায় বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনে যুক্ত হয়ে যান। কোনো কাজ শুরু করার জন্য বয়স কোনো বড়ো বাধা নয়। ইতিহাসে সফল ব্যক্তির উদাহরণ আছে যারা প্রথম জীবনে সম্পূর্ণ ব্যার্থতায় আকুণ্ঠ ডুবে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়েছেন।
ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে চরম অসফল মানুষটি ৬৫ বছর বয়সে অবসরে গেলেন।অবসরে যাবার দিন সরকারের সরকারের কাছ থেকে ১০৫ ডলার চেক পেয়েছিলেন। তার কাছে মনে হয়েছিল জীবন মূল্যহীন। আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এরপর একটা গাছের নিচে বসে জীবনে কী কী অর্জন করেছেন তার একটা লিস্ট বানাতে শুরু করলেন।
হটাৎ তার কাছে মনে হলো জীবনে এখনও অনেক কিছু করবার বাকি আছে৷ তিনি একমাত্র যে কাজটা ভালো পারেন এবং আনন্দ নিয়ে করেন সেটা হচ্ছে রান্না। তিনি ৮৭ ডলার ধার করেলেন সেই চেকের বিপরীতে আর কিছু মুরগী কিনে এনে নিজের রেসিপি দিয়ে সেগুলো ফ্রাই করেন। এরপর প্রতিবেশীদের দ্বারে দ্বারে সেই ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করা শুরু করলেন। জন্ম নিলো KENTUCY FRIED CHiCkEN তথা KFC-র..।
৬৫ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন আর ৮৮ বছর বয়সে এসে Colonel Sanders বিলিওনার বনে গিয়েছিলেন। স্মরণীয় হয়ে আছেন KFC এর প্রতিষ্ঠাতা হয়ে।
যেহেতু এ বয়সে মানুষের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, স্বভাবতই তার মনস্তাত্ত্বিক জগতেরও পরিবর্তন হয়। ব্যক্তির আবেগীয় জগতের একধরনের দোলাচলের তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে কেউ নিজের প্রতিভা বিকশিত করে সফল হোন, কেউ বা ভুল পথে জড়িয়ে হারিয়ে যেতে থাকেন। শরীরের মতো মনের স্বাস্থ্যের খবর রাখাও প্রয়োজন। প্রয়োজন মনের যত্ন এবং পরামর্শ তথা সচেতনতা।
লেখা: Esrat Emu.
Send private message to author






