অনুভূতি,
তোমার কি নাম?
মোহ,স্মৃতি,প্রেম নাকি শুধু কাম?
ফসিলের বুক হতে খুলে রেখে প্যালিওথিলিক প্রান
আমিও তাকিয়ে ছিলাম নীহারিকায়,
দেখেছিলাম অগনন নক্ষত্রের আলো
আমার রেটিনায় এক সাথে গেয়ে উঠেছিলো
কী এক মহাজাগতিক গান!
অনুভূতি তোমার কি নাম?
চলিষ্ণু মেঘের পেগাসাসের মতন মন আমার,
তুমি ভীষন শম্পা, গগন কাঁপা প্রমিথিউস,
ক্ষ্যাপা ঘোড়সাওয়ার,
ফিনিক্স পাখির মত বারংবার পুড়ে
তবু ভেদ করে মৃত্যুর অগ্নিদুয়ার
অজস্র শরীরের সেতু করে পার
অবশেষে স্পর্শ করলে তুমি আকাশ আমার সত্বার।
বিস্মৃতির তিমির হতে জ্বলে ওঠে হঠাত লাল আগুন
নিয়ানডার্থাল হাতে অরিনিয়াসিন পাথরে,
ঘুমন্ত রিপুর ড্রাগন জেগে ওঠাও তুমি মধ্যরাতে
অবচেতন আঁধারে,আমার স্নায়ুতে স্নায়ুতে
আমাকেই করছো তুমি নির্মান অবিরাম,
অনুভূতি,তোমার কি নাম?
নক্ষত্র হতে নির্গত লাভায়
গলন্ত আকাশ হতে পড়ে গিয়ে
আমার রক্তের হিমগ্লোবিন,
মরুভুর সাইমুমে বাজানো মরিচীকা মাতানো স্যাক্সোফোনে,
প্রেমিকার নির্জন চোখের সম্মোহনে
তুমি রেখে এসো তোমার নাম।
অনুভূতি,তুমি কি সময়যান?
আমার অন্তরে নিরন্তর অনন্ত প্রবাহের গতি,
সময়ের গ্রেনেডে তুমি খসে পড়া স্প্রিন্টার
বিস্ফোরিত আগুন, বাতাস আর জলের স্মৃতি?
অনেক সোনালী সূর্যের পালক দিয়েছো যেতে খসে
নীল পৃথিবীপাখি ক্রমাগত হয় ক্লান্ত বৃদ্ধ মহাকাশে
আমারে দেখিয়েছো তুমি কত আলো আর অন্ধকার
দেখিয়েছো বিদ্যাপতির চিতাগ্নি থেকে
কি করে সমস্ত ঘ্রান মুছে দিতে হয় মিথিলার।
আমার দেহেকে দিয়েছিলে তুমি নগ্ন চাঁদে সঙ্গমের আস্বাদ,
পাহাড়ের সানুদেশে বিমোহিত আমার আবেশে জমানো জোছনার বারুদ
জ্বালিয়েছিল নিষাদের বিষাদ,
আবার কুচক্রী আমাবস্যায় পাহাড়ের চুড়ায়
তোমার প্রতারক ছোঁয়ায় অনন্ত শূন্যতায় আমার নির্ভার পতন,
প্রতিনিয়ত নিশ্বাসের নিশানায় ছোরা বাতাসের বিরুদ্ধ ত্রিশুল
ভেঙে ভেঙে পড়ছি আমি কক্ষচ্যুত কোন স্যাটেলাইট এর মতন।
আমি তো জানিনা তোমার মত নোঙর বিদ্বেষী কোন সাংযাত্রীকের নাম,
মনের সমুদ্রে অবচেতনের গভীর খাদে অপসৃয়মান তুমি সাবমেরিন
আমার গহনে তোমার নিষিদ্ধ ডুব সাতার,
পূর্নগ্রাস গ্রহনে সূর্যের কিরীট দেখে আমি বিস্মিত যেদিন
সূর্য থেকে চেটে নিয়েছি জিভে নোনা অন্ধকার
সেদিনো অধরা তোমার ইসারা
তবু সাবমেরিন আর সূর্যের কিরীটচিহ্ন আনে
আমার রক্তের টানে, নিউরনে নিউরনেলিখে রাখে তোমার নাম।
তোমায় নিয়ে গিয়েছিলাম আমি যুদ্ধের ময়দানে
শরণার্থী শিবিরের কান্নায় গড়া সুরঙ্গের ভেতর দিয়ে আমি দুঃখ ও আতঙ্ক নামে দুইজনের সাথেকিছুক্ষণ বসে ছিলাম,
হিমঘরে রাখা ধর্ষিত নারীর লাশের বিক্ষত যোনীকে সার্চলাইটের মত জ্বালিয়ে
আমি লালসার বেগুনী শরীরকে দেখিছিলাম,
বহু হাতের ব্যবহারে পতিতার ঝুলে থাকা স্তনের ছায়ায়,
লুকিয়ে থাকা ক্ষুধাকে হঠাত চিৎকার করতে দেখেছি,
ফ্লাইওভারে একজন ভিক্ষুকের বিকৃত অঙ্গে
ল্যামপোষ্টের আলোয় ধীরে ধীরে জেগে উঠতে দেখিছি আমি ঈশ্বরের নাম,
মাঘের শীতে বস্ত্রহীন শিশুর লাশ
আমার চোখে ঠেকেছিল নরম শুভ্র তুষারের মত
এই সব দৃশ্যপট আমার করোটির দুই প্রিজমে তুমি রেখেছো সংরক্ষিত।
তোমার হাত ধরে দেখেছি আমি নালার জলে হলুদ পাতার নিদ্রা,
আমার বাতাসে বৃক্ষের আদর ভুমিতে শিকড়ের প্রহরা,
নীল আকাশের বেদিতে বাষ্পীয় গ্রানাইটে গড়া মেঘের দেবী,
লাল চুনির মত সূর্যের মুখ,ঠোঁটের মধ্যে ধরে আছে সন্ধ্যার ছবি,
এই সব কিছুর ভেতর ছড়িয়ে আছে তোমার নাম
তোমার ভেতর দিয়ে তাই মহাবিশ্বের দিকে তাকালাম।
রাজিবুর রহমান
Send private message to author






