শাস্তি দেয়ার অনেক নিষ্ঠুর পদ্ধতি আছে। হরেক নাম, হরেক রূপ তাদের। সবগুলোতেই যে রক্ত ঝরে সেটা না। ওয়াটার বোর্ডিং বা ডিম থেরাপিতে রক্ত না ঝরলেও কষ্ট বেশি।
চেয়ারম্যান আনোয়ার সাহেব ওসবের ধারে কাছেও গেলেন না। শাস্তি দেয়ার আদিম পন্থাই মানে রক্তারক্তিতেই বিশ্বাসী তিনি।
নিষ্ঠুর হিসেবে তার খ্যাতি আছে সেটা বলবো না, গ্রামের লোকজন তাকে বাঘের মতো ভয় করে সেটাও বলবো না, তবে তার গোপন টর্চার সেলগুলো কিরকম ভয়ংকর সেটা তার এলাকার থানার ওসি মাত্রই জানেন। গোপনতম, ভয়ংকরতম নির্যাতনগুলো তিনি ওসি সাহেবদের সামনেই করেন, গ্রামের জনসাধারণের অন্তরালে। আজ যেমন করছেন এবং আবার করবেন।
যাকে টর্চার করা হচ্ছে সেই অধমের অপরাধ সে চেয়ারম্যান আনোয়ার সাহেবের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে! বিরাট অপরাধ সন্দেহ নেই। ধর্ষণ মানেই যেখানে অপরাধ সেখানে একজন জনপ্রতিনিধির মেয়েকে ধর্ষণ করা কতবড় অপরাধ সেটা আপনারাই ভালো জানেন।
মেয়েটা যখন ধর্ষিত হয় আনোয়ার সাহেব তখন বাড়িতে ছিলেন না। ত্রাণের চাল আসার কথা, সেটা বুঝে নিতে থানার ওসিসহ গেছেন।
না না তিনি চাল চোর নন। সরকারি চালের পুরোটাই তিনি দান করে দেন। পারলে নিজের পকেট থেকেও দেন।
একেবারেই যে চুরি করেন না সেটা না। তবে এমনভাবে চুরি করেন যে কেউ বুঝতেই পারে না।
যেমন ধরুন সরকার থেকে মাথা প্রতি পাঁচ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। আনোয়ার সাহেব প্রতি পাঁচ কেজি থেকে তিনশগ্রাম করে চাল মেরে দেন। মেরে নিজের পকেটে না ঢুকিয়ে সেটার সাথে আরও সামান্য কিছু যোগ করে আলু কিনে সেটা ওই চার কেজি সাতশ গ্রাম চালের ব্যাগে ঢুকিয়ে গরীব মানুষদের দান করেন। সবাই ভাবে আহা কী দিলদরিয়া শাসক আমাদের মজলুম জননেতা!
এলাকায় তিনি উন্নয়নকামী চেয়ারম্যান হিসেবেই পরিচিত। এলাকার লোক তাকে সম্মান করে। সেই জনপ্রিয় চেয়ারম্যানের মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। ভাবা যায় জনগণ কতটা ক্ষেপেছে ধর্ষকের উপর!
রাত তখন আনুমানিক নয়টা।
এমন নয় যে চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে না থাকায় তার বাড়ি একেবারেই ফাঁকা ছিল। মেয়ের মা ছিল। এছাড়াও মেয়ের চাচা চাচি দাদি ফুপুরা ছাড়াও বেশুমার কাজের লোকজন তো ছিলই। তারপরও কি করে যেন ছেলেটা বাড়ি ঢুকে পড়ে এবং তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। সাহস বটে যুবকের!
অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়ের চিৎকারে সবাই ছুটে আসে আর ধর্ষককে হাতেনাতে ধরে ফেলে। চেয়ারম্যান সাহেব আসার আগেই জনগণ এক দফা পিটুনি দিয়েছে ধর্ষককে, দিয়ে আটকে রেখেছে।
খবরটা শোনামাত্রই আনোয়ার সাহেব ছুটে এসেছেন সেটা বলবো না। কাজগুলো শেষ করে, সবাইকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে তবেই এসেছেন। সাথে করে ওসি সাহেবকে নিয়ে এসেছেন বিষয়টা মিনিমাইজ করতে। খুন হবে তো আরও একটা তাই আরকি! পুলিশ অফিসার পরেরদিন প্রতিবেদন দেবেন বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষক নিহত! ধর্ষকের শাস্তি তো মৃত্যুদণ্ডই।
আনোয়ার সাহেব দিলদরিয়া জনপ্রতিনিধি হলেও একেবারে ধোয়া তুলসীপাতা নন। আড়ালে আবডালে দূর্নীতি করেন, তবে এলাকার উন্নয়ন করার পরে। খুব বেশী দুর্নীতি যে করতে পারেননি সেটা তার সাদামাটা তিনতলা বাড়ি দেখলেই বোঝা যায়। একেবারেই হরিলুট করা খাদক নন তিনি। হরিলুট করলে তো প্রাসাদ ফেঁদে বসতেন।
ফলাফল তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
তবে ওই সামান্য দূর্নীতি করার জন্য সামান্য এক টর্চার সেলও বানিয়েছেন।
টর্চার সেলটায় একটা রড লাইট জ্বালানো। ঘরটায় দুটো চেয়ার, একটা হাতিয়ার রাখার টেবিল ছাড়া আর কিছুই নেই। দেয়ালে আর ছাদে দড়ি বাঁধার জন্য আংটা লাগানো আছে অবশ্য।
দেয়ালের আংটার সাথে দড়ি লাগিয়ে বেঁধে রেখেছেন ধর্ষককে। প্রথম দফার টর্চার গতরাতেই শেষ করেছেন আনোয়ার সাহেব। শাস্তিটা অভিনব তবে রোমহর্ষক সন্দেহ নেই।
ধর্ষকের দুই হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝখানে সুপারগ্লু লাগিয়ে দিয়েছেন। এরপর ব্লেড দিয়ে সেগুলো আলাদা করেছেন। মানে আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলেছেন সেটা বলছি না। দুই আঙ্গুলের মাঝের চামড়া আলাদা করে দিয়েছেন ব্লেড দিয়ে। তাতে প্রচুর রক্ত ঝরেছে । দুই হাতের আটটা আঙ্গুলের মাঝের চামড়া বলতে আর অবশিষ্ট কিছু নেই। ধর্ষক ভয়ংকর কষ্ট পেয়েছে সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয় দফায় পায়ের আঙ্গুলে সুপারগ্লু লাগিয়ে চামড়া আলাদা করার আগে খানিকটা জেরা করছেন চেয়ারম্যান আনোয়ার সাহেব।
“তোর বীর্যবান বাপের ইয়েটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রে! সাহস বটে তোর!” বললেন আনোয়ার সাহেব। ছাত্র বয়সে ছাত্ররাজনীতি করেছেন, প্রতিপক্ষকে কষে গালি দিতে পারতেন চরমতম অশ্লীল ভাষায়। সেই স্বভাবটা এখনো হারিয়ে ফেলেননি বোঝাই যাচ্ছে।
“খুউব সাহসী ছিলেন আমার বাবা! ম-ম-মা বলেছিলেন!” ব্যাথায় কঁকাতে কঁকাতে বলল ধর্ষক ছেলেটা। মাঝারি গড়নের যুবক সে। গায়ে শার্ট আর প্যান্ট। নির্মাণ শ্রমিকদের পোশাক যেমন হয় অমনই আরকি।
“সাথে তোর খানকি মাগি মা টা কেও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে রে! এমন ছেলে পেটে ধরলো কী করে!?” আনোয়ার সাহেব একটা ধারালো ছুরি তুলে নিয়ে বললেন ।
“আমার মা-মাকে গালি দেবেন না স্যার। অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন আমাকে।”
“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি–
আনোয়ার সাহেবের গলা ছাপিয়ে ছেলেটা বলতে থাকে,
“আমার জন্মের আগেই মাকে ছেড়ে চলে গেছে বাবা। আমি তখন মায়ের পেটে। বিয়ের আগেই অবৈধ সন্তান পেটে আসায় নিজের বাবার বাড়ির লোকেরাও বের করে দেন আমার মাকে। তারপর পথে পথে ঘুরতে থাকেন আমার মা। খেয়ে না খেয়ে পার করেছেন গর্ভকালীন সময়টা।
একসময় এলাকার লোকের কটূ কথা সহ্য না করতে পেরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে পাশের গ্রামে আসেন আমার মা। সেখানে এর ওর বাড়িতে কাজ করে সামান্য কিছু খাবার পেতেন মা। নিজের জন্য না হলেও আমাকে বাঁচিয়ে রাখতেই আপ্রাণ চেষ্টা করতেন তিনি। তবে বেশীদিন কাজ করতে পারলেন না এভাবে। গর্ভকালীন সাতমাস হতেই অকেজো হয়ে গেলেন তিনি। তখন ভিক্ষা করে খাবার জোগাড় করতেন।
এরপর একদিন রাস্তাতেই জন্ম হয় আমার। প্রচন্ড প্রসববেদনা সহ্য করে আামকে জন্ম দেন মা। খেতে দিতে পারতেন না আমাকে, তারপরও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কি করে আমাকে বড় করেছেন জানি না। একসময় আমাকে একটা এতিমখানায় দিয়ে আসেন। বড় হয়ে মায়ের কাছে ফিরে আসি আমি।
একসময় জানতে পারি ধর্ষিত হয়েছিলেন আমার মা! আমার বাপ একজন ধর্ষক। মাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় সেই পাষন্ড।
বিচার পাননি আমার মা। এলাকার মাতব্বররা মাকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। পালিয়ে যাননি আমার মা, গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছিল তারা আমার মাকে। নষ্টা পতিতা বলে কলঙ্কিত করেছিল তারা আমার মাকে। ধর্ষিতা হয়েও সারাজীবন পতিতার কলঙ্ক নিয়ে ঘুরেছেন তিনি। গতকাল মরে গেছেন আমার মা!” অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে ছেলেটা।
সেটা দেখে আনোয়ার সাহেবের কোনো বিকার না হওয়ারই কথা। এমন বহু অপরাধী দেখেছেন জীবনে যারা এমন নাটক করে নিজেদের অসহায় প্রমাণ করে সাজা মওকুফ করিয়ে নিতে চায়।
আনোয়ার সাহেব খোঁচা মারতেও ছাড়েন না।
“তা ধর্ষকের ছেলে তো ধর্ষকই হবে!”
তার কথায় যোগ দিয়ে ঘরের সবাই হাসতে থাকে। ছেলেটা ততক্ষণে কান্না থামিয়ে ধাতস্থ হয়েছে খানিকটা। চোখ মুছে চমৎকার একটা হাসি ঝোলায় মুখে। বলে,
“ঠিকই বলেছেন স্যার। আপনার ছেলে তো আপনার মতোই হবে!”
দুমম!! কড়ড়াৎ!! কড়াক পিঙ!
ঘরটায় যেন বজ্রপাত পড়লো ছেলেটার কথায়! মুখ থেকে ঝট করে হাসি মুছে গেল চেয়ারম্যান আনোয়ার সাহেবের।
“আমিই আপনার ছেলে স্যার। আজ থেকে ২৫ বছর আগে করা আপনার ধর্ষণের ফলাফল আমি।” ছেলেটা বেশ সন্তুষ্ট গলায় বলে।
আনোয়ার সাহেবের মুখে কথা নেই। তিন মেয়ে ওনার। সারাজীবন একটা ছেলের জন্য হাপিত্যেশ করে গেছেন তিনি। অথচ ২৫ বছর আগে যাকে ধর্ষণ করেছিলেন তাকে বিয়ে করলেই একটা ছেলে সন্তানের মুখ দেখতে পারতেন। তার ছেলে আজ তারই মেয়েকে ধর্ষণ করলো!
তান্ডবমূর্তি থেকে এতক্ষণে প্রায় মাটির মানুষের পর্যায়ে নেমে এসেছেন চেয়ারম্যান আনোয়ার সাহেব। মিনমিনে গলায় বললেন,
“তোর মা-ই তোকে পাঠিয়েছে ধর্ষণ করতে?”
“না স্যার”
“আমি নাহয় ধর্ষণ করেছিলাম, ভুল করেছিলাম। তাই বলে নিজের বোনকে ধর্ষণ করলি তুই!”
“ধর্ষণ করিনি তো স্যার!”
আরেকবার বোমা পটকা ফোটালো ছেলেটা!
“আপনার মেয়ের ঘরে ঢুকেছিলাম ঠিকই, তার ঠোঁট ফাটিয়েছি, জামাকাপড় ছিঁড়েছি ঠিকই, কিন্তু তার গায়ে হাত দেইনি স্যার। ভয় পেয়ে চিৎকার করছিল আপনার মেয়ে। তাতেই সবাই ধরে নিয়েছে আমি ধর্ষণ করেছি আপনার মেয়েকে!”
“তবে?” আনোয়ার সাহেবের হাত থেকে ধারালো ছুড়িটা খসে পড়েছে, হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ থেকে পানি ফেলছেন তিনি। “তবে এসব কেন করলি?”
“কলঙ্ক স্যার, কলঙ্ক লাগাতে চেয়েছিলাম আপনার মেয়েকে। লাগিয়েছি স্যার।
আমার মা ধর্ষিত হয়েও সারাজীবন পতিতার কলঙ্ক বয়ে বেড়িয়েছেন। বিচার পাননি।
আর আপনার মেয়ে ধর্ষিতা না হয়েও সারাজীবন এই কলঙ্ক বয়ে বেড়াবে বাবা। কাউকে “বাবা” বললাম জীবনে প্রথমবারের মতো কিছু মনে করবেন না।
আপনার মেয়েকে কোথাও বিয়ে দিতে পারবেন না স্যার। কারণ এতক্ষণে সবাই জেনে গেছে জোর করে কারও সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য হয়েছিল আপনার মেয়ে। সোজা বাংলায় ধর্ষিত হয়েছে।”
ছেলেটা এতক্ষণ এক নাগাড়ে মেশিনগান চালাচ্ছিল যেন সবার উপরে। কেউ একটা জবাবও ঠিকঠাক দিতে পারেনি তাকে। ওসি সাহেব পর্যন্ত তব্দা মেরে গেছেন। বুঝতে পারছেন না কি করবেন।
আর আনোয়ার সাহেব? তিনি বোধয় স্ট্রোক করবেন খানিক পর। মাটিতে বসে পড়েছিলেন আগেই, মাথা নিচে নেমে গেছে এবারে।
ছেলেটা হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে এসে ধারালো ছুরিটা তুলে নেয় কোনোমতে। সোজা চালিয়ে দেয় আনোয়ার সাহেবের হৃৎপিণ্ড বরাবর। হুঁক করে একটা শব্দ বেরিয়ে আসে আনোয়ার সাহেবের মুখ থেকে। বুক চেপে ধরে মাটিতে শুয়ে পড়েন তিনি। গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে তার শরীরের নিচে থেকে।
বাঁচার আশা নেই। ধর্ষণের শাস্তি পেলেন তিনি। “ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”
আনোয়ার সাহেবের কাতরানি শুনে সংবিৎ ফিরে পান ওসি সাহেব। দ্রুত হাতে পিস্তল বের করে গুলি চালিয়ে দেন ছেলেটার উপর। পরদিন প্রতিবেদন দেবেন তিনি,
“বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষক নিহত”
Zabir Fersoush
Send private message to author







সুন্দর কনসেপ্ট। টুইস্টও ভালো লেগেছে। প্রথমদিক থেকে শেষের আগে অবধি সবই ভালো। শেষটা খুব বেশি মন ছোঁয় নি,অন্যভাবে করা যেত।সব মিলিয়ে লেখনী সুন্দর!! চালিয়ে যান ভাইয়া♥