#দুই মেরু

রাত বারোটা, হাতিরঝিল বিজ্রের সামনে গাড়ি থামিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ের কন্ঠস্বর আসলো, আপামনি একটা সিগারেট দিবেন ??পিছনে তাকিয়ে দেখি বিশ- একুশ বছরের উজ্জ্বল শ্যামলা হালকাপাতলা গড়নের একটা যুবতি মেয়ে। পরনে খুব ঝকমকে জরির শাড়ি, ব্লাউজের উপরের দিকের একটা হুক ছিঁড়া ,ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক, গা দিয়ে সস্তা পারফিউম এর গন্ধ ‌। দেখেই বুঝলাম মেয়েটা প্রস্টিটিউট। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট মেয়েটাকে বের করে দিলাম।

“থ্যাংকু আপামনি।” এই বলে সে আমার পাশে বসে গেল।সে খুব আয়েস করে বসে খাচ্ছে। আমি ও বসে বসে তার খাওয়া দেখছি। অনেকক্ষণ পর মেয়েটা আমাকে জিজ্ঞেস করল ,”আপামনি , কিছু মনে না করলে একটা কথা ক‌ই ?”

“হ্যাঁ, বল “।

“এত রাত একা একা এখানে খাড়ানো ঠিক না। জায়গাডা ভালা না। এতো রাতে এহনে আমাগো মতো মাইয়ারা থাহে। আপনার মতো মাইয়া এহনে মানায় না‌।” মেয়েটা কে কেন জানি না আমার ভালো লাগছে। হয়তো আমার একাকীত্বে সঙ্গ দিচ্ছে তাই। “তোমার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি?? তুমি ও মেয়ে আমিও মেয়ে । তুমি থাকলে আমি কেন থাকতে পারব না?” মেয়েটা উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। “আপা কি নেশা টেশা ও করছেন নাকি।‌আমি হ‍ইলাম পতিতা। আরও বাজেভাবে বললে হল গিয়ে বেইশ্যা ,মাগী।এবার কন আমরা এক কেমনে হ‍ইলাম ?” মেয়েটার কথার জবাব না দিয়ে বললাম, “নাম কি তোমার?” “কুলসুম। জানেন আপা বাপজান আমারে আদর ক‍ইরা ফূলবানু ক‌ইতো। ” “এই লাইনে কিভাবে আসলে , তিন নাম্বার সিগারেট টা ধরাতে ধরাতে বললাম।”। “বহুত লম্বা হিস্টিরি। বাপজান মরনের পর সৎ মা আমারে দুই হাজার টাকার লাইগা পতিতালয় এ বেইচ্চা দেয়। বুঝলেন আপামনি , মাততর দুই হাজার টাকার লাইগা বেইচ্চা দিছে।”কথাটা বলে সে মাটিতে থুথু ফেললো। আমার কাছে মনে হল সে তার সৎমাকেই থুথুটা দিল। সে আবার বলতে শুরু করল, ” জানেন, আপামনি ।আমি মাসে এহন দশ হাজার আয় করি। এই এলাকায় সবচেয়ে রেট বেশি আমার। আর দুই হাজার টাকার লাই আমারে বেইচ্চা দিল।আমার বয়স আছিল তহন তেরো বছর। ” “আজ কোনো খদ্দের পাও নি?” ” আইজ আমার বিশেষ দিন। কাম করতাম না। আপামনি আমার জন্মদিন আইজ। ওই রিকশাওয়ালা য় আইসা মেজাজ টা খারাপ ক‌ইরা দিছে। হাত ধুইরা টানাটানি লাগায় দিছে। হারামজাদা ক‌ইতাছি যামু না। ব্লাউজ ধ‌ইরা টান দিছে। দেহেন আপামনি,একখান বোতাম ছিঁড়া গেছে। কুত্তার বাচ্চা।” এই বলে সে আবার থুথু দিল। মেয়েটার থুথু দেয়ার অভ্যাস আছে। “এইজন্য তুমি আমার কাছে এসে সিগারেট চাইলে মুড ভালো করতে , বুঝলাম।”। ” হয় , আপামনি।”। ” আচ্ছা শুভ জন্মদিন , কুলসুম।” আমার হাতের দেড় লাখ টাকার ব্রেসলেট টা কুলসুম র হাতে পড়ায় দিলাম। কুলসুম আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকায় আছে। “জানো, কুলসুম। আমি একটু আগে আমার বসের সাথে শুয়ে আসছি। এর জন্য সে আমাকে প্রোমোশন দিবে। যখন এই কাজ আমি প্রথম করি তখন আমার খুব দরকার ছিল প্রমোশন এর ।আমি যে বেতন পেতাম তাতে আমার কিছু হতো না। বাড়িতে প্যারালাজ‌ইড বাবা, বড় আপার যৌতুক এর মোটরসাইকেল, মার হার্টের অসুখ, ছোট ভাইটার স্কুলে র খরচ সবকিছু মিলিয়ে আমার হাতে কোনো অপশন ছিল না। এখন আমার সব আছে। এখন আমি চাহিদা য় করি না।এখন আমি লোভে করি । আরও উপরে উঠার জন্য করি। আমায় নেশায় পেয়েছে। একধরনের শান্তি ‌লাগে, মজা পাই। মাত্র কয়টা টাকার জন্য সেদিন আমি বাধ্য হয়েছি। তোমার আর আমার মধ্যে পার্থক্য নেই, কুলসুম। আমরা এক‌ই কাজ করি ।তফাত কোথায় জানো, তুমি রাস্তার বেশ্যা। আমি হলাম হাই- সোসাইটির ।কুলসুম এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে হয়তো বুঝছে না কি বলবে। কুলসুম কিছু বলার আগে আমি উঠে পড়লাম।

“শোনো কুলসুম। নিজেকে এত বাজেভাবে বলতে নেই। তুমি হলে নিশিকন্যা। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবা, নিশি কন্যা নাকি বেশ্যা। আসি , ভালো থেকো।

Writer -Orthy Akhter

Send private message to author
What’s your Reaction?
0
1
0
0
0
0
1
Share:FacebookX
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
নুরুল আলম
Guest
নুরুল আলম
4 years ago

ভাগ্য বিড়ম্বিত

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!