আজকে ইউনিভার্সিটিতে কনসার্ট! যেনতেন কনসার্ট না কিন্তু! র্যাগ কনসার্ট আজকে। কি! হাসছেন? হাসি থামিয়ে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট কে জিজ্ঞেস করুন, তাহলেই বুঝবেন এই এক কনসার্ট নিয়ে এত উত্তেজনার হেতু!
ঘড়ির কাটাতে বাজে ৪ টা, এতক্ষনে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেপেলে গিয়ে লাইন ধরেছে। তা ধরুক, শুরু হতে হতে সেই সন্ধে। তাছাড়া এখন গিয়ে একটা হারামজাদা কেও পাবোনা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই গরম চায়ে চুমুক দিয়ে ঠোট পোড়ালাম। যাহ! পুড়লেও কি, না পুড়লেও কি! এই পোড়া ঠোটে চুমু খাবার জন্য কোনো ললনা বসে নেই। চায়ের বিল মিটিয়ে ফাকা অটোতে উঠে পড়লাম। টিউশনী নেই আজকে, তার উপর মাসের প্রথম সপ্তাহ। যাই একটু টি বাধের হাওয়া খেয়ে আসি।
সন্ধ্যার দিকে সিএসইর নিচে এসে হারামজাদা গুলোকে ফোন দিলাম। একটাকে পেলাম, বাকিগুলোর খবর নাই। সেই হারামজাদাও আসতে লাগালো পাক্কা ২০ মিনিট! আমারই ভুল, টি বাধ থেকে ফেরার সময় কল দিয়েই বলা দরকার ছিলো, “তাড়াতাড়ি আয়, আমি সিএসইর নিচে!”
স্টেজে আর্বোভাইরাস পারফর্ম করছে এখন। পছন্দের ব্যান্ড, তবুও খুব একটা মনোযোগ নেই। পরেরটা স্লটটা ব্যাকস্টেজ এর। হারামজাদা গুলো সবাই আসতে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে পরিবেশ গরম হচ্ছে। এই গরম হওয়া মানে কনসার্ট মাতানো না। একটু পর যখন ঠিক মাঝখানে ১০-১২ ছেলেকে হেডব্যাং দিয়ে নাচানাচি করতে দেখবেন, তখন এমনিই বুঝে যাবেন।
ঘড়ির কাটায় রাত সাড়ে ১২ টা। প্রতিদিন এ সময় ক্যাম্পাসের গোরস্থানের নীরবতা থাকে। শুধু হল গুলো অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকে। ছেলে পেলের আড্ডায়, ফুল ভলিউমে মেটাল গানে, কিংবা টুয়েন্টি নাইনের চড়া গলার কলে। সব কিছু এখন সিএসই বিল্ডিং এ এসে জড়ো হয়েছে৷ আর্টসেল উঠেছে স্টেজে। আজকে রাতের লীড ব্যান্ড। এখনো গিটারের জ্যামিং শুরু হয়নি, তাতেই সিএসই বিল্ডিং “আর্টসেএএএএএল, আর্টসেল “ধ্বনিতে। পেছনের বড় পর্দায় লিংকনের মুখে মুচকি হাসি দেখা যাচ্ছে। এনভায়রনমেন্টটা যে ওরা নিজেরাও উপভোগ করছে, বলা বাহুল্য।
গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছেনা। পথচলা দিয়ে শুরু, মাঝে ধূসর সময়, কান্ডারী হুশিয়ার। পূ্র্নিমার আলোতে গলা ধরাধরি করে ” ও আমায় ভালো বাসেনি ” টানের মাহাত্ম্য কজন বুঝবে! তবু সবকিছু শেষে এখন সবার দাবী মেটাতে অনিকেত প্রান্তরের সলো চলছে। লিংকন গাচ্ছেনা, ওর গলায় আর অনিকেত প্রান্তর হয়ে উঠেনা। আমরা গাচ্ছি, আমরা কয়েক হাজার ছেলে মেয়ে গাচ্ছি! এইযে, এখন আসবে সেই বিখ্যাত টান, “অনিকেএএএএত প্রান্তঅঅঅঅঅররর” বলে আত্মা খাচা ছাড়া করা সেই টান!
-দামড়া পোলা, বাসায় সারাদিন ঘুমাস। পড়াশোনা নাই, ওঠ এক্ষনি! এই তোর বাবারে ডাকলাম কিন্তু, ওঠ!
চোখ কচলে কচলে উঠলাম। পশ্চিমের জানালা দিয়ে সুন্দর সোনালী আলো আসছে। উপরের তালায় করোনা রোগী আছে। তাই পুরো বিল্ডিং ই লকডাউন। টুক করে হলের মেসেঞ্জার গ্রুপটায় উকি দিলাম, নাহ কোনো মেসেজ নেই। করোনা এসে এখন ভার্চুয়ালিও পঙ্গু করে দিচ্ছে। কে জানে! হারামজাদা গুলো কেমন আছে! হয়তো ভালোই।
বাসায় বন্দীদশার ১ বছর হয়ে গেলো৷ কিন্তু হলের স্বভাব ছাড়তে পারলাম না৷ দুপুরে ল্যাপটপে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেই থেকে টানা গান চলছে..
হুট করে যেন ল্যাপটপের ভেতর থেকে লিংকন চেচিয়ে উঠলো,
“এখানেইইইইইইই নির্জন…
অনিকেএএএএএএএএত প্রান্তঅঅঅঅঅঅর”……
( Muhtasim Bashir Kawshik)
Send private message to author






