“আচ্ছা দিপু দা, এই যে তোমাকে সবাই পাগল বলে তোমার শুনতে খারাপ লাগে না? “
.
দিনুর প্রশ্নটা শুনে একটু হাসে দিপু। তারপর কানের ভাঁজে রাখা আধপোড়া বিড়িটা হাতে নিয়ে বুক পকেট থেকে দুইটা দেশলাইয়ের কাঠি বের করে একটার সাথে আরেকটা ঘষতে থাকে এক মনে। ঘষতে ঘষতে বলে,

  • লোকে যারে পাগল বলে সে পাগল নয়, বরং যে বলে সেই বড় পাগল।
    এই শেষের পাগল শব্দটা বলতে মুখের ভাবটা একটু কঠিন হয়ে উঠে দিপুর। আর তার সাথে সাথে একটা দেশলাইয়ের কাঠির উপর আরেকটা কাঠি বেশ কৌশল করেই একটা ঘষা দেয়। আর সাথে সাথে ফুস করে জ্বলে উঠে দুইটা কাঠিই। একটা কাঠি দিয়ে ঠোঁটের ফাঁকে রাখা আধ পোড়া বিড়িটা আবার ধরায় দিপু। বিড়িতে একটা টান দিতেই চোখটা বুঁজে আসে আয়েশে। ওর মুখে দেখে মনে হচ্ছে যেনো জগতে ওর মত সুখী মানুষ আর একটিও নেই। সে নিজেই রাজা আবার নিজেই মহারাজা। ফুস ফুস করে আরও দুইটা টান দিয়ে মুখ ভর্তি ধোঁয়াগুলো গোল গোল রিংয়ের মত ছাড়তে ছাড়তে আবার বলে,
  • এই আমি যে কাণ্ড করলাম, এইটা কোনো পাগলের কম্ম?
  • না তো।
  • তাহলে উত্তর তো পেলিই। এখন আমি উঠি। অনেক কাজ বাকি।
    .
    শেষের কথাগুলো বলতে বলতে দুই হাতে ভর করে উঠে দাঁড়ায় দিপু। তারপর হাঁটতে থাকে উত্তরের রাস্তাটা ধরে।
  • আরে দিপু দা, কোথায় চললে? তোমার আবার কাজ কিসের?
    ততক্ষনে দিপু বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলো। প্রশ্ন শুনেও পিছন ফিরে তাকালো না। হাঁটতে হাঁটতেই বললো,
  • সে তুই বুঝবি না। তুইও বাড়ি যা। দুপুরে পুকুর ঘাটে বসে থাকিস না। সন্ধ্যায় দেখা হবে।
    .
    গলা উঁচিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে মানিকদের আম বাগানের মাঝখান দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সেই রাস্তায় হাঁটা শুরু করে দিপু।
    .
    মানিকদের এই আম বাগানের পথটা চলে গেছে উত্তর পাড়ায়। বুঝতে কষ্ট হলো না যে দিপু এখন উত্তর পাড়ার বিনুর মায়ের কাছে যাচ্ছে। এখন তো দুপুর, দিপু প্রতিদিন দুপুরে বিনুর মায়ের কাছেই যায়। সেখানে গেলে হয়তো বিনুর মা একটু চেঁচামেচি করে বটে, কিন্তু তাতে কী পাতে তো ভাত ঠিকই বেড়ে দিবে। তাতে রসদ অবশ্য খুব বেশি থাকে না। পোড়া মরিচ আর পেঁয়াজ হলেই দিপু খুশি।
  • কী হে দিপু নাকি? তা কোথায় চললে এই বেলা?
    এতক্ষণ দিপু মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে কী যেন বলছিলো। হঠাৎ প্রশ্নটা শুনে সামনে তাকালো। গ্রামের গুপি মহাজন আসছে। দিপু বেশ বিরক্তই হলো লোকটাকে দেখে। তবুও হেসেই বললো,
  • আমি যাচ্ছি আমার কাজে।
  • দুপুর তো হলো, চল আজ তুই আমার বাড়িতে খাবি। কাল হাট থেকে একটা বড় রুই এনেছি।
  • তা তো আনবেনই, গ্রামের লোকজনের থেকে তো কম টাকা ঝাড়েন না। এত টাকা রাখার জায়গা কই মহাজন সাব। খরচ তো করতে হবে তাই না?
    গুপি মহাজন দিপুর কথায় খানিকটা হাসে। তারপর বলে,
  • বাহ্ তুই দেখি সব খবরই রাখিস হে। তা যাবি নাকি মাছের মাথাটাই না হয় তুই খাবি, চল চল।
    কথাগুলো বলতে বলতে বেশ জোরে জোরেই হেসে উঠে গুপি মহাজন।
  • উঁহু আজ আর তা হচ্ছে। ওর খাবার আপনার মত লোকের পেটেই সইবে। আমার মত ভালো মানুষের পেটে সইবে না। বমি হয়ে বেরিয়ে যাবে সব।
    .
    এই কথা শুনে মহাজনের মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে খানিকটা। আশেপাশে একবার তাকায়, নাহ্ কেউ নেই আশপাশ। কেউ শুনে ফেললে ভারী অসম্মান হয়ে যেতো। চার গ্রামের লোক যার সামনে দাঁড়াতে ভয়ে কাঁপে, আজ কিনা একটা পাগল ছাগল এত বড় কথা বললো? এ ভারী অসম্মানের। এর একটা বিহিত করতেই হবে।
    .
    গুপি মহাজন আর কোনো কথা বলে না।হনহন করে হেঁটে যায়। দিপুর বেশ ফুর্তিই হলো। আজকে মহাজনকে বেশ জব্দ করা গেছে। খিল খিল করে একবার হাসে দিপু। তারপর হাঁক ছেড়ে বলে,
  • কী হলো মহাজন সাব, আমাকে সাথে নিবেন না? হা হা হা
    আবারও হো হো করে হেসে উঠে দিপু। মহাজন যেতে যেতে একবার তাকালো দিপুর দিকে। তারপর আবার হাঁটতে লাগলো। দিপুও আর দাঁড়ালো না, আবারও মাথা নিচু করে বিড়বিড় করতে করতে হাঁটতে থাকে।
    .
    উত্তর পাড়ার একেবারে শেষ দিকটাই বিনুদের বাড়ি। বাড়ির সামনে এসেই গলা ছেড়ে হাঁক ছাড়ে দিপু,
  • কই রে বিনুর মা। বাড়ি আছিস নাকি?
    একটু পরই বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসে একটা ঝাঁঝালো কণ্ঠ।
  • হুম আছি তো, এবার আয় খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর তো।
    দিপু অবশ্য উত্তরের অপেক্ষা করেনি। তার আগেই ঢুকে যায় বেড়ার বাড়িটাতে। তারপর উঠানে বসতে বসতে বলে,
  • কী মন মেজাজ খুব খারাপ মনে হচ্ছে। তা কী হলো শুনি তো।
    বিনুর মা ততক্ষনে এক থালা ভাত আর তরকারি নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে উঠানের সামনে। দিপুকে দেখেই আবারও গজগজ করে উঠে বিনুর মা। তারপর বলে,
  • তোর মুখ দেখলে ভালো মানুষেরও মেজাজ বিগড়ে যাবে।
    .
    দিপু হাত ধুয়ে মুখে এক লোকমা ভাত দিয়ে চিবুতে চিবুতে বলে,
  • এই যে আমি আসলেই তুই রাগ করিস, আবার একদিন না আসলেও রাগ করিস। এর পিছনে ঘটনা কী বল তো?
    এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য বিনুর মা দেয় না। আঁচলে মুখ লুকিয়ে হাসে। কেবল বলে,
  • এত জেনে তোর কাজ নেই। খাওয়া হলে চলে যাবি।
    .
    দিপু হাসে। সে জানে বিনুর মা তাকে কতটা ভালোবাসে। দিপুর মা নেই বটে, কিন্তু বিনু মারা যাওয়ার পর দিপুকেই নিজের ছেলের মত দেখে আসছে মহিলা। দিপু বোঝে, এই যে রাগ রাগ ভাব করে তা কেবলই লোক দেখানো, অন্তরে তার ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ। আর তাই তো এই যে এত কথা বলে বিনুর মা, সবই যেনো খুব ভালো লাগে দিপুর।
    .
    খাওয়া শেষ হলো হাত মুখ ধুয়ে উঠে দাঁড়ায় দিপু। বলে,
  • বিনুর মা, আমি আজ যাই রে।
  • শুধু আজ না, তোকে যেনো বাড়ির ত্রি-সীমানায় না দেখি। যদি দেখতে পাই রে ঝাঁটা পিটা খাবি এই বলে দিলাম।
    কথাগুলো বলতে বলতে এটো বাসন নিয়ে কল তলায় দিকে যায় বিনুর মা। দিপু হাসে, সে জানে মুখে কথাগুলো বললো ঠিকই কিন্তু দিপু যদি একদিনও যদি না আসে তাহলে বিনুর মা খুঁজে বেড়াবে। হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় দিপু। ভাবে, একবার পূর্ব পাড়ার হালচালটা দেখে আসা উচিত। সুখীর বাবা এবার ভালো ফলন করেছে। সেখানে যদি দিপুর কোনো কাজ থাকে? একা মানুষ সবটা সামলাতে পারে না।
    .
    পূর্ব পাড়ায় যেতে যেতে পকেট থেকে আরও একটা বিড়ি ধরায় দিপু। খাওয়ার পর একটা বিড়ি না ধরালে তার চলে না। বিড়ি টানতে টানতে যাচ্ছে হঠাৎ-ই একটা ডাকে পিছন ফিরে তাকালো দিপু। ইমাম সাব আসছে। দিপুর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
  • কে দিপু মিয়া নাকি?
  • না, আমার গুষ্টিতে কেউ মিয়া ছিলো না। আমি মণ্ডল গুষ্টির ছেলে। বলতে হয় দিপু মণ্ডল বলবেন।
  • হা হা বেশ তাই হলো। তা বলি কী বিড়ি টানা ছাইড়া দেও। ধর্মে বারণ আছে তো। এইসব গুনাহের কাজ।
  • এই যে একটা খাঁটি সত্যি কথা বললেন। খুবই খুশি হলাম। কিন্তু কথা সেটা না, কথা হইলো গিয়ে ধর্মে খালি বিড়ি খাওয়াই যে পাপের কাম সেইটা তো নাই। সুদ খাওয়াও পাপের কাম আর আপনি যে সুদখোরের বাড়িতে খুব যাওয়া আসা করেন, খানা পিনা করেন সেটাও পাপের কাম। এই যে আপনি যে আমারে যেমন বললেন বিড়ি খাওয়া ছাইড়া দিতে, কই একদিনও তো দেখলাম না মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে যে সুদ ঘুষ এইসব খাওয়া পাপের কাম। বলেন তো নাই আবার আপনার উঠা বসা ওদের সাথেই।
    .
    কথাগুলো হাসতে হাসতেই বললো দিপু, কিন্তু ইমাম সাহেবের মুখটা কালো হয়ে গেলো। আর কোনো কথা বললো না। সোজা হাঁটা শুরু করলো। হো হো করে হেসে উঠে দিপু। তারপর হাঁক ছেড়ে বলে,
  • কি হলো ইমাম সাব কই চললেন? মহাজনের বাড়ির দিকে নাকি? দেখা হইলে ফতোয়া খান দিয়েন। হা হা হা।
    .
    ইমাম সাব কিন্তু দিপুর কথা কানে নিলো না। সোজা হাঁটা দিলো। দিপু খানিক ক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে হাসলো। তারপর ইমাম সাহেব যখন চোখের আড়ালে চলে গেলো তখন সেও হাঁটা শুরু করলো।
    .
    পূর্ব পাড়ায় আসতেই দিপু দেখলো সুখীর বাবা বাড়িতে নেই। কোনো এক কাজে শহরে গেছে। ভালো ফলন হয়েছে এবার। দামও নিশ্চয় ভালোই পেয়েছে। সুখী লেখাপড়া করে শহরের একটা নামি কলেজে। দিপু ভাবলো সুখীর বাবা হয়তো সেখানেই গেছে। পাড়ার এর ওর খোঁজ খবর নিয়ে আবার নিজের গ্রামে হাঁটা শুরু করে দিপু।
    .
    বিকেল প্রায় হয়েই এসেছে। এখন বাড়ি যাওয়া দরকার। আজকের গোসলটা এখনো করা হয়নি, তাতে অবশ্য কোনোই সমস্যা নেই ওর। একটানা দুই তিন দিন গোসল না করলেও কিছু হয় না। কিন্তু আজ করতেই হবে। এইদিকে তিন দিন হয়ে গেছে। নাহ্ আজ গোসল করে একবার হাটে যাওয়া দরকার। কাজের কাজ কিছুই নেই। বিঞ্চু নাপিতের সাথে ওর একটু বোঝাপড়া করার অাছে। সেই কাজ সেরে একবার মমতা বইনের বাড়িতে যেতে হবে। কত দিন যাওয়া হয় না। নিশ্চয় বোনটা খুব রাগ আর অভিমান পুষিয়ে রেখেছে। হাজার হলেও মমতা দিপুর নিজের বোন। কিন্তু যাবেই বা কখন? দিপুর কী আর সময় আছে। পুরো গ্রামটাকেই তার একাই দেখে শুনে রাখতে হয়। এর মাঝে একটু সময় পেলেই ছুটে যায় বোনের বাড়িতে। ভাইকে অনেক দিন পর দেখে চোখের পানি ফেলে মমতা। বোনের এই চোখের পানি একেবারেই সহ্য হয় না দিপুর। তাই খুব একটা যায় না সে। গেলেই তো কান্নাকাটি শুরু করে দিবে। কিন্তু বেশি দিন না গিয়েও থাকতে পারে না দিপু, বোনের জন্য মনটা কেমন করে।
    .
    সন্ধ্যা হয় হয়, আজকে দিপু খুব খুশি। বিঞ্চু নাপিতকে বেশ একখানি জব্দ করা গেছে। অসৎ মানুষ একেবারেই সহ্য করতে পারে না দিপু। মাথাটা গরম হয়ে যায়। বোনের বাড়িতেও একবার গিয়েছিলো সে। বোনটার শরীর দিন দিন শুকিয়েই যাচ্ছে। স্বামীটা ভালো হয়নি, দিপু শুনেছে মাঝে মাঝে মারধর করে বোনকে। মনে মনে তাকে শায়েস্তা করার ফন্দি এঁটেছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু বোনটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারেনি। বোন আর দুইটা বাচ্চার মুখটা ভেসে উঠে চোখের সামনে। চোখ দুটো ভিজে উঠে দিপুর। মনে মনে ভাবে, মানুষ এমন কেন হয়? উত্তর খুঁজে পায় না সে।
    .
    দিনুর সাথে আজ আর দেখা করা হলো না। এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে গ্রামে ফিরতে ফিরতে। এতক্ষণ নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে দিনু। বাচ্চা মানুষ, সন্ধ্যা রাতেই ঘুম পায়। নিজের চালা ঘরে ফিরে আসে দিপু। বোনের বাড়িতে পেট পুরে খেয়ে এসেছে। রাতের চিন্তা আর করতে হবে না। আর তাছাড়াও একবার চোখ বুঁজলেই তো সকাল। এত চিন্তা কিসের?
    .
    সকাল বেলা যখন ঘুম ভাঙলো তখন সূর্য পূর্ব আকাশে ঝলমল করছে। ধড়মড়িয়ে উঠে বসে বিছানায়। ইশ রে দেরি হলো নাকি? মনে মনে ভাবতে ভাবতে বাইরে বেরিয়ে আসে দিপু। হুমমম, বেশ দেরি হয়ে গেছে। বোনের বাড়িতে একটু বেশিই খেয়েছিলো। আর বেশি খেলে ঘুম বেশি হয়। তাড়াতাড়ি পুকুর পাড়ের দিকে হাঁটা দেয়। তারপর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কালকে সকালে করিম চাচা বার বার বলে দিয়েছে দিপুকে সকাল সকাল যেতে। শহর থেকে মেয়ে জামাই আসবে গ্রামে। গাছের কিছু ডাব নামাতে হবে। হাজার হলেও এটা তো ওর নিজেরই গ্রাম। শহর থেকে কেউ আসলে তার আদর যত্ন করাও ওরই কাজ।
    .
    করিম চাচা বাড়ির দিকে যেতে যেতে পথেই দেখা হলো গ্রামের মোড়েলের সাথে। লোকটার এমনিতে বয়স বেশি হয়নি, কিন্তু শরীর দেখলে মনে হয় কতই না বয়স। তার সাথে সাথে হাঁটলে যেনো পায়ের আগে পেটই চলে। এ নিয়ে মোড়লকে দুই একটা কথা শুনাতে দ্বিধাবোধ করে না দিপু। দিপু বললো,
  • মোড়ল সাব, কয় মাস?
    মোড়ল দিপুর কথায় ভ্রু কুঁচকে বললো,
  • কিসের রে?
  • এই যে এটার।
    মোড়লের ভুরিওয়ালা পেটের দিকে ইশারা করে কথাটা বলে দিপু। কথাটা শুনে কটমট করে তাকায় মোড়ল। তারপর আর কোনো কথা না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যায়। দিপু বলে,
  • বলি, লোকের মেরে আর খাইয়েন না। কোনদিন দেখবেন ঐ ভুরি নিয়ে ভেটকি মাছের মতো ভেটকাই চিৎ মেরে পড়ে থাকবেন। লোকের কথাও তো ভাবেন একটু, খাটিয়াতে তো মনে হয় না এ শরীর আঁটবে।
    .
    কথাগুলো বলতে বলতে হাঁটতে থাকে দিপু। মোড়ল পিছন ফিরে বেশ কয়েকবার তাকালো দিপুর চলে যাওয়ার দিকে।
    .
    ইশার নামাজের পর মহাজনের বাড়িতে একটা গোপন বৈঠক বসেছে। উপস্থিত খুব বেশি লোক নয়। চার পাঁচ জন। মহাজনই প্রথম বললো,
  • দিপুটা বড্ড বাড় বেড়েছে। আজকে আমাকে বলে কিনা আমার বাড়ির খাবার নাকি ওর পেটে সইবে না।
  • শুধু আপনাকে? আমাকেও বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলো।
    কথাটা বলেই দুপুরের সব ঘটনা স্ববিস্তারে বর্ণনা করলো ইমাম সাহেব।
  • আরে শুধু কী তাই আজকে সকালে আমাকে দেখে বলে আমার কয় মাস চলে, আবার বলে এই শরীর নাকি খাটিয়াতে আটবে না। এটা সহ্য করা যায়?
    .
    আরও বেশকিছুক্ষণ ধরেই নিজেদের মধ্যে আলাপ আলাোচনা চললো। সব কথায় অবশ্য দিপুকে নিয়েই। সবারই ক্ষোভ যেনো বেড়ে চলছে একে অপরের কথা শুনে। সব শেষে মহাজন বললো,
  • এর একটা বিহিত করতেই হবে।
  • কী করতে চান?
    আরও কিছুক্ষণ শলা পরার্মশ চললো নিজেদের মধ্যে। চেহারা দেখে বুঝতে দেরি হলো না যে সবাই খুবই খুশি। কিন্তু কী যে সেই গোপন সিদ্ধান্ত সেটা বোঝা গেলো না।
    .
    বেশ কয়েকদিন হলো গ্রামে দিপুকে দেখা যাচ্ছে না। বিনুর মা রোজ দুপুরে ভাত নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু দিপু আর আসে না। মহিলা আঁচলে মুখ লুকায়। মাঝে মাঝে এ পাড়া ও পাড়া খুঁজে বেড়ায়। দিনুও খুঁজে গেছে অনেকবার, দিপু দাদার খোঁজ সে পায় না। প্রতিবারই দিপুর বাড়িতে এসে তাকে না পেয়ে মুখটা ভার করে চলে যায়। দিপু দাদা সে দিন বলেছিলো খুব সুন্দর একটা জিনিস বানিয়ে দিবে দিনুকে। কী সে জিনিস সেটা জানতে চাইলে দিপু বলেছে, সে যখন দিবো তখন দেখিস। এখন শুনে কাজ নেই। কিন্তু কোথায় দিপু দাদা? এই প্রশ্নের উত্তর বিনুর মাও পায় না। প্রতিদিনই ভাত বেড়ে আবার পাতিলে ঢেলে রাখে। কেউ ডাকলেই ভাবে, এই বুঝি দিপু এসে ডাকছে। ছুটে যায় বাইরে, কত লোকই তো আসে, কিন্তু দিপু? সে আসে না। আসবে কী আর? আসবে, হ্যাঁ আসবেই, কারণ এটা তো ওর নিজেরই গ্রাম। আর এই গ্রামের সব কিছু তো তাকেই দেখে রাখতে হবে। না এলে চলবে কেনো?
    .
    __ সমাপ্ত
    .
    গল্পের নামঃ নিরুদ্দেশ
    .
    লিখেছেনঃ Sajib Mahmud Neel
Send private message to author
What’s your Reaction?
2
0
0
0
1
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Sajib Mahmud Neel
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!