ঝুলন্ত পাটের রশি

এক দেশে এক রাজা ছিলো মোটাসোটা, বোকাসোকা।
রাজা হবুচন্দ্রের মত, আর তার মন্ত্রী ছিলো গবুচন্দ্রের মত….!
কিন্তু রাজার রানী ছিলেন খুব বুদ্ধিমতি-বিচক্ষণ, রাজা তার রানীকে খুব ভালবাসতেন।

রাজার শখ হলো রানীকে নিয়ে সমুদ্র ভ্রমনে যাবেন।
রাজা তো আর আমাদের মতো আমজনতা না, যে কোন জাহাজে উঠেই, “মাঝি বাইয়া যাওরে, গান গাইতে গাইতে ভ্রমন করবেন।”
রাজা বলে কথা, মন্ত্রীকে খবর দিয়ে বলা হলো, “রাজ কোষাগার থেকে যত মোহর লাগে নিয়ে সোনা-রুপা, মনিমুক্তা খচিত জাহাজ তৈরি করতে..।”
যেই কথা সেই কাজ, চোখ ধাঁধানো সেই জাহাজ তৈরি হতে ছয় মাস ছয় দিন সময় লাগলো।
প্রতিদিন রাজ্যের প্রজারা সেই চোখ ধাঁধানো জাহাজটা দেখতে যায়, ঝলমলে জাহাজটা দেখে আর অবাক হয়..!
শুভ দিনক্ষণ দেখে রাজা তার রানীকে নিয়ে জাহাজে চড়লেন।
আগে তো বডিগার্ড ছিলো না তাই নিজেদের সেফটির জন্য প্রধান সেনাপতিকে নিলেন, মন্ত্রীকেও সাথে নিলেন।
রানী যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাই রাজ বৈদ্যকেও নিলেন।
আর নিলেন জল্লাদকে, যদি মাঝ সমুদ্রে কারও গর্দান নিতে হয়..!
রাজা জাহাজ দেখে খুব খুশি হলেন, তবে টেনশনে আছেন রানীর পছন্দ হবে কি না।
রানীরও জাহাজ পছন্দ হলো, যাক রাজা এবার মহাখুশি..।

রাজা তার রানীকে ঘুরে ঘুরে জাহাজ দেখাচ্ছেন, হঠাৎ জাহাজ থেকে সমুদ্রের দু’হাত উপরে ঝুলে থাকা একটা রশি দেখে রাজা চিৎকার করে উঠলেন, “এত সুন্দর মনিমুক্তা খচিত জাহাজে পাটের রশি ঝুলে আছে কেন, কেন, কেন..?”
মন্ত্রীকে ডাকা হলো, মন্ত্রী নিজেও জানে না এই রশি কিভাবে এখানে এলো? হয়তো জাহাজ নির্মাণের সময় কোন শ্রমিক এটাতে ঝুলে কাজ করে পরে খুলতে ভুলে গেছে।
এখন রাজাকে একথা বলে রেহাই পাওয়া যাবে না, গর্দান যাবে।
বোকা মন্ত্রীর মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো, সে বললো “মহারাজ আপনি বা রানী যদি পড়ে যেতে নেন, তাহলে যেন এই রশি ধরে ঝুলে থাকেন তাই এটা ঝুলানো হয়েছে..!”
বোকা রাজা তার বোকা মন্ত্রীর কথায় খুব খুশি হলেন, “যাক মন্ত্রী আমার আর রানীর সেফটির কথা ভেবেছে।
রাজা খুশি হয়ে বাংলা সিনেমার রাজাদের মতো, তার গলার মুক্তার মালা মন্ত্রীর দিকে ছুড়ে মারলেন।”
মন্ত্রী তার সব গুলো দাত বের করে হাসি দিয়ে মালাটা ক্যাচ নিলেন।
রাজা-রানী সমুদ্র দেখছেন আর মুগ্ধ হচ্ছেন, “আহা কি সুন্দর, কি সুন্দর..!”

হঠাৎ রানীর গা গুলিয়ে, মাথাটা কেমন করে উঠলো।
আরে না না, অন্য কিছু না। একে বলে ‘মোশান সিকনেস’, জার্নি করলে দুলুনিতে অনেকসময় এমন হয়, আমাদের অনেকের বাস জার্নি করলেও এমনটা হয়।
রানীর হচ্ছে জাহাজ জার্নিতে, তখন তো বমির ট্যাবলেট , মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট ছিলো না।
বৈদিককে ডাকা হলো, “উনি এসে গাছ গাছড়ার শিকড় দিয়ে ঔষধ বানিয়ে রানিকে খাইয়ে দিলেন। এবং রানীকে শুয়ে বিশ্রাম নিতে বললেন..। “

রানী বিশ্রাম নিচ্ছেন, রাজা একা একা সমুদ্র দেখছেন আর ভাবছেন,” এভাবেই যদি মুক্ত বাতাসে জীবন কাটানো যেতো, কেনো রাজপ্রাসাদের বন্দী জীবন..?
প্রতিদিন গৎবাধা রাজসভা, রাজকার্য আর ভাল লাগে না।”
হঠাৎ রাজার চোখ গেলো ঝুলন্ত রশিটার দিকে, চিৎকার করে মন্ত্রীকে ডাকলেন।
মন্ত্রী ভাবলো হয়তো আরেকটা মুক্তার মালা পাবে, তাই আহ্লাদে গদ গদ হয়ে এসে বললো,”কি হুকুম জাঁহাপনা..?”
রাজা অগ্নিঝড়া চোখে বললেন,” মন্ত্রী, আমাদের বাঁচার জন্য আপনি যে রশিটা ঝুলিয়েছেন, সমুদ্রে জোয়ার আসলে জোয়ারের পানি বাড়লে রশি তো ডুবে যাবে..!
রশি ডুবে গেলে আমি আর রানী কি ভাবে ঝুলে থাকবো..?”
এবার বোকা রাজার বোকা মন্ত্রী আর কোন উত্তর খুজে পেলেন না।
রাজা সেনাপতিকে বললেন, “সেনাপতি এখনি জল্লাদকে খবর দাও, মন্ত্রীর এত বড় স্পর্ধা আমাদের সেফটির ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে করেনি..!”
জল্লাদ এসে মন্ত্রীকে হাত পিছনে বেঁধে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসালো, মন্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলছে, ” মহারাজ আমাকে মাফ করে দিন, বাড়িতে আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে।”
জল্লাদ তলোয়ার শান দিচ্ছে, তলোয়ার শান দেওয়ার আওয়াজে আর মন্ত্রীর কান্নায় রানীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
রানী কেবিন থেকে দৌড়ে বের হয়ে সিনেমার নায়িকার ষ্টাইলে বললেন,” না আ আ আ আ, এ হতে পারে না..!
অথচ তিনি যানেন না কি হয়েছে..!
সিনেমার নায়িকারাও ঘটনা কি হয়েছে না জেনেই, না আ আ আ এ হতে পারে না বলে দৌড়ে আসে।

রানী এসে রাজার মুখে সব শুনে কিছুক্ষণ হাসলেন। তারপর বললেন, “মহারাজ, জোয়ারে পানি যতই বাড়ুক, জাহাজ তো পানির উপরেই থাকবে আর রশিও ঝুলবে আগের মতই..!”
রাজা তার টেকো মাথা চুলকে ব্যাপারটা চিন্তা করে বললেন,
“মন্ত্রীকে ছেড়ে দাও।”

মন্ত্রী মনে মনে বললেন,” বাপরে, বুদ্ধিমতি রানীর জন্য আজ বড় বাঁচা বেঁচে গেছি, নয়তো আজ রাজার বোকামির জন্য গর্দানটা গিয়েছিলো..!
এদিকে রাজা মনে মনে ভাবছে,” হায় আল্লাহ, মন্ত্রীর বোকামির জন্য কত নিরীহ মানুষের গর্দান কাটা পড়েছে।
এবার রাজ্যে ফিরে, বিচক্ষণা-বুদ্ধিমতী রানীকে রাজসভার উপদেষ্টা বানাবেন।
রাজ্য পরিচালনার যে কোন কাজে বুদ্ধিমানের পরামর্শ নিবেন, বোকার পরামর্শ আর না..!

নটে গাছটি মুড়ালো, আমার রুপকাথার গল্প ফুরালো…

– Anjum Ruhi

Send private message to author
What’s your Reaction?
1
1
0
0
0
0
0
Share:FacebookX
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
সাইদুল ইসলাম
Member

লেখাটি পছন্দ হয়েছে

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!