খুঁজে ফিরি কবি নজরুলকে

বিদ্রোহ ও তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ধূমকেতুর মতই আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। চিরাচরিত পঁচনধরা সমাজকে ভেঙে সুনির্মল এক নব্য সমাজ গড়ে তোলাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। এজন্যই তিনি বিদ্রোহের দামামা বাজিয়েছেন সকল অন্যায়-অত্যাচার, অসত্য, শোষণ-বঞ্চনা আর দুঃখ-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। ভিনদেশীদের শোষণ ও পরাধীনতার গ্লানি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে তিনি হাতে তুলে নেন কলম। শুধু কাব্যের ঝংকার দিয়েই তিনি আপামর জনসাধারণের হৃদয়কে উন্মাদিত করতে সক্ষম হন। এ কারণে তাঁকে কারাবরণও করতে হয়। তবুও এই বিদ্রোহী কবিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি কেউ। অন্ধকার কারাগারের অভ্যন্তরে বসে রচনা করেছেন তিনি কবিতা। ঠিক এভাবে, অধ্যবসায়ী ও স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত এক যুগ প্রতিনিধি নজরুল, সাধারণ মানুষের হৃদয় কুঠরিতে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করে নিতে সক্ষম হন।

ভারতের আসানসোলের চুরুলিয়ায় ১৮৯৯ সালে চার চারটি ছেলের করুণ মৃত্যুর পর কাজী ফকির আহমদ ও জাহেদা খাতুনের ঘর আলো করে আসেন নজরুল। ছেলেবেলা কেটেছে তাঁর চরম দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট হতে হতে। এজন্য ছেলেবেলাতেই তাঁর নাম হয়ে যায় দুখুমিয়া। বেশিদূর লেখাপড়া করার সুযোগ তিনি পাননি। তবুও তাঁর ছিল দুর্দান্ত মেধা। সাংসারিক চাপে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকার তাগিদে অনেক কিছুই করেছেন। তিনি কিছুকাল শিক্ষাকতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর মসজিদের মুয়াজ্জিনও হয়েছেন। তাঁর কিশোর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে সুমধুর আযান। কখনো তিনি দু’পয়সা রোজগারের জন্য যোগ দিয়েছেন লেটো গানের দলে। তিনি রুটির দোকানেও কাজ করেছেন। ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগদান করে তিনি তাঁর জীবনে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯১৭ সালে ফিরে এসে তিনি কলম হাতে তুলে নেন।

যে বয়সে যৌবনের তাড়নায় জীবনকে আনন্দ উল্লাসে উজ্জীবিত করে তোলার কথা, সেই বয়সে তিনি এত কিছু করেছেন। এরমধ্যে তিনি কাব্য রচনা ও সাহিত্যচর্চাও অব্যাহত রেখেছিলেন। বন্ধু মুজাফফর আহমেদের কুঁড়েঘরে থেকেই তিনি কামানের গোলার মত দ্রুত গতিতে রচনা করেছিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী”, যা আজও বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এই কবিতায় তিনি নিয়ে এসেছেন ইতিহাস, ভূগোল, খোদা, ভগবান, রুদ্র, উচ্চৈঃশ্রবা, আর্ফিয়াস, শ্যাম, ভৃগু, জিবরাইল, প্রেম থেকে শুরু করে সবকিছু। এই কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি ‘বিজলী’ পত্রিকায়। এটি বাংলা সাহিত্য তো বটেই, বিশ্ব সাহিত্যেও বিরল দৃষ্টান্ত।

পরবর্তীতে “বিদ্রোহী” কবিতাটি কবি নজরুলের রচিত ও প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ “অগ্নিবীণা”তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কবির অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, সর্বহারা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তাঁর বিদ্রোহী সত্ত্বার ও বাস্তব জীবনমুখীতার পরিচয় বহন করে। তবে, অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে “বিদ্রোহী” ছাড়াও আরও কয়েকটি কবিতা আছে, যেগুলো ইসলাম ও হিন্দুয়ানি ভাবধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা, আধুনিক বাংলা কাব্যের ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামই একমাত্র কবি যিনি সমান দক্ষতার সাথে ইসলাম ও হিন্দুধর্মের উভয় ঐতিহ্যকে আপন কাব্যে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন। উভয় ঐতিহ্য থেকে অবলীলাক্রমে তিনি বিষয়, উপমা, রূপক, বাকভঙ্গি প্রভৃতি আহরণ করেছেন। তিনি একদিকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ইসলামী সংগীত ও গজল গানের প্রবর্তক। ইসলামী ভাবধারার বহু সাহিত্য তিনি রচনা করেছেন। তিনি পবিত্র কোরআনের সূরার (শ্লোক) কাব্যানুবাদ করেছেন এবং ইসলামের নবি মুহম্মদের সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত নিয়ে “মরু ভাস্কর” নামে একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর জনপ্রিয় একটি গজল সংগীতে আছে—
“তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে,
মধু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে।।
যেন ঊষার কোলে রাঙা রবি দোলে।।”

অন্যদিকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একজন শ্রেষ্ঠ শ্যামা সংগীত রচয়িতা। এছাড়া, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন থেকে শুরু করে তিনি অনেক হিন্দুয়ানি ভাবধারার সাহিত্যও রচনা করেছেন। তাঁর একটি বিখ্যাত শ্যামা সংগীতে আছে—
“আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায়
দেখে যা আলোর নাচন
মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব
যার হাতে মরণ বাঁচন।”

বস্তুত কবি নজরুলের চিন্তাধারা বিশ্লেষণে এর কোনোটির গুরুত্ব কম নয়। তাঁর চিন্তা চেতনায় হিন্দু ও মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতক না হয়ে পরিপূরক হতে পেরেছে তাঁর সাম্যবাদী চিন্তার ফলে।

ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সঙ্গীত, সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল অগাধ। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ সঞ্চিতায় সংকলিত ৭১টি কবিতার ৩০ টিতে মিথ পুরানের নানামাত্রিক ব্যবহার রয়েছে। মিথপুরান বলতে তিনি শুধু ভারতীয় মিথ রামায়ন-মহাভারত শুধু নয়, তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করেছেন, ইসলামিক মিথিক পরম্পরা। বাইবেলীর মিথলােজি গ্রীকিস মিথলােজি অর্থাৎ, সারাবিশ্বের মিথ শক্তি ব্যবহার করেছেন। সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে অবস্থান নিয়ে অসাম্প্রদায়িক নজরুল ইসলাম এগুলো রচনা করেছিলেন কুড়ি শতকের দুই দশকে। কিন্তু, স্বভাবতই একটি প্রশ্ন আসে, তিনি এতসব পড়লেন কখন? মাত্র কুড়ি একুশ বছর বয়সের এত চাঞ্চল্যময় জীবনে এই বিপুল পড়াশুনার কথা কি বিশ্বাস করা সম্ভব? অথচ অবিশ্বাস করার কোনো উপায় নেই। তিনি সত্যিই অসাধারণ।

তিনি বিদ্রোহী কবি বলে আখ্যায়িত হলেও তিনি তাঁর সাহিত্যে শুধুমাত্র দ্রোহের দাবানল প্রজ্বালন করেননি, অথবা তিনি শুধুমাত্র বিভিন্ন ধর্মের অমৃত তাঁর সাহিত্যে ঢেলে যাননি, তিনি ফুটন্ত ফুলের মত প্রেমের অমিয়ধারাও বর্ষণ করেছেন তাঁর সাহিত্যে। ১৯২১ সালে তরুণ কবি নজরুলের শরীরে তখন যৌবনের রাগ জ্বলজ্বল করছে। সেই সময় প্রেম আসে কবির জীবনে। কবির চোখে চোখ পড়ে অপূর্ব সুদর্শনা এক রমণী সৈয়দা খাতুনের কৃষ্ণ হরিণী চোখে। কবি নজরুল ভালোবেসে তাঁর নাম দেন নার্গিস। নার্গিস একটি ফুলের নাম। নার্গিস ফুলের মতোই তিনি ছিলেন সুন্দরী। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় কবি নজরুল তাঁকে সার্থক নামাঙ্কিত করেছিলেন। এখান থেকেই শুরু হয় নার্গিসের সাথে যৌবনদীপ্ত কবির প্রেম। তাঁকে নিয়ে কবি নজরুল রচনা করেন অসংখ্য প্রেমের গান।
কবির এই প্রেমকে পরিণতি দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয় নার্গিসের সাথে বিবাহ বন্ধনের। কিন্তু নিয়তির এক নিষ্ঠুর পরিহাসে কবি নজরুলের এ প্রেম পরিণতি লাভ করতে পারেনি। বিয়ের দিনেই বাসর ঘরে প্রবেশ না করে কবি নজরুল কোনো এক অজানা কারণে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসেন। এই নিয়ে নানারকম গালগল্প প্রচলিত থাকলেও, এই ঘটনার নেপথ্যের সঠিক কাহিনী ইতিহাসের পাতা থেকে রয়ে গেছে অজানা।
এই বিরহ বিধুর ঘটনায় কবি নজরুল দীর্ঘদিন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। কিছুতেই তিনি এই বেদনা ভুলতে পারছিলেন না আর ভিতরে ভিতরে এক অব্যক্ত হুতাশে তিনি দগ্ধিভূত হচ্ছিলেন। এরপর তিনি এই কষ্ট নিয়েই চলে আসেন বাংলাদেশের কুমিল্লায়। সেখানে পরিচয় হয় আশালতা দেবী নামে আরেক সুদর্শনা রমণীর সাথে। ভালোবেসে কবি নজরুল তাঁর নাম দেন প্রমীলা। প্রমীলা অর্থ নিদ্রাবেশ। তাঁর অপূর্ব সুন্দর ঘুমঘুম দুটি চেখের জন্যই হয়তোবা কবি নজরুল এত সুন্দর একটি নাম তাঁকে দিয়েছিলেন। তাঁর ভালোবাসা পেয়ে নার্গিসের সাথে প্রণয়ভাঙা বেদনাকাতর কবি নজরুলের হৃদয়ে নতুন করে প্রেমের অনুরণন আবির্ভূত হয়। তাঁর এই প্রেম বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সার্থকভাবে পরিণতি লাভ করে। এখানে পরিতৃপ্তির ব্যাপার এই যে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বিনী হওয়া সত্ত্বেও এই মানুষটির সান্নিধ্যেই কবি নজরুল সারাটি জীবন অতিবাহিত করেছেন।

১৯৪১ সালের পর মাত্র ৪২ বছর বয়সে কবি নজরুলের জীবনের সব আনন্দ নিভে যায়। কঠিন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তিনি। চিরদিনের মত থেমে যায় তাঁর হাতের লেখনী। এই অসুস্থতা তাঁকে সবরকম সাহিত্য চর্চা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
যৌবনে যখন কবি নজরুলের শরীরে তেজ ছিল, কলম ধরলেই যখন লিখে ফেলতেন মর্মস্পর্শী কবিতা, অসংখ্য বন্ধুবান্ধব ঘিরে থাকতো কবি নজরুলকে। কিন্তু তিনি যখন অসুস্থার জন্য নির্বাক হয়ে যান, আস্তে আস্তে সব বন্ধুবান্ধব তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করতে শুরু করে। শোকে দুঃখে, রোগযন্ত্রণায় তিনি হতে থাকেন একেবারে একা। কিন্তু তাঁর প্রিয়তম সহধর্মিণী তাঁকে ছেড়ে যাননি কোনোদিন তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত অসুস্থ কবি নজরুলকে সেবা-শুশ্রূষা করেন।
কিন্তু ১৯৬২ সালে কবিপত্নী প্রমীলা দেবী পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অমৃতলোকে প্রস্থান করেন। তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে কবি নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ার শরপুকুরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু কবি নজরুল অসুস্থ, নির্বাক ও চেতনাহীন থাকার কারণে তাঁর পরম প্রিয়জন হারানোর শোক তিনি অনুভব করতে পারেননি।
প্রমীলা দেবী গত হওয়ার পর কবি নজরুলের সেবা-শুশ্রূষা সঠিকভাবে করা হচ্ছিল না। সেবা-শুশ্রূষা থেকে তিনি অবহেলিত হচ্ছিলেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাঁর মত একজন প্রতিভাবান কবিকে সেবা-শুশ্রূষা বা চিকিৎসা সেবার মত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সপরিবারে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে আনেন এবং তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। এরপর তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেবা-শুশ্রূষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মারা যাবার পর বাংলাদেশ শাসনের ক্ষমতা হাতে পান মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং ঐ বছরের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে কবিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

কবি নজরুলকে ঢাকার ধানমন্ডির একটি খোলামেলা বাড়ির ২য় তলায় রাখা হয়। কবির বাকশক্তি না থাকলেও তাঁর অভিব্যক্তি দেখলেই বোঝা যেত ঐ বাড়িটির প্রতি কবির মায়া কতখানি।
১৯৭৬ সালে মৃত্যুর কয়েকমাস আগে কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এজন্য তাঁকে হসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তিনি ২য় তলা থেকে নিচে নামতে চাননি। সিঁড়ি দিয়ে নামানোর সময় সিঁড়ির রেলিং হাত দিয়ে এটে ধরেন। কিন্তু কিছুটা জোর করেই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঐ বছরের আজকের এই দিনে কবি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান না ফেরার দেশে।

খেয়ালের বশে তিনি একদিন একটি গান লিখেছিলেন। গানের প্রথম লাইন ছিল “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই”। তাঁর এ গানের কথাকে সম্মান দেওয়ার জন্য কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

তিনি তাঁর গানে বলেছেন, “আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে”।
মহাকালের চিরাচরিত নিয়মে তিনি আমাদের থেকে চিরতরে দূরে চলে গেছেন সত্য, কিন্তু তাঁর গানের এ কথার মত তাঁকে কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। যতকাল বাংলা ভাষা থাকবে, ততকাল নজরুলকে বাঙালি খুঁজে ফিরবে তাঁর সাহিত্যের মধ্যে।

Written by Shibli Sayeek (শিবলী সাইক)

Send private message to author
What’s your Reaction?
0
11
0
0
1
0
2
Share:FacebookX
3 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!