বাসস্ট্যান্ডে বসে আছি। বাস ছাড়তে আরও কিছু সময় বাঁকি আছে। কাউন্টার থেকে বেরিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে এক কাপ লাল চা খেতে ইচ্ছে করলো। কোনো-কোনো সময় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে লাল চা খেতে অমৃত লাগে। অমৃত ফুটপাতের লাল চা, নাকি সময়, সেটা নিয়ে বেশি ভাবা হয়নি। চায়ের দোকানের সামনে হঠাৎ চোখে পড়লো, একটি লোক, আমরা যাদের ছিন্নমুল বলি, পাগলও হতে পারে, একদম উদোম গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখেও বুঝা যায়, বহুদিনের বহুবার অনাহারী পুুষ্টিহীন শরীর। শরীরের কালশে রঙ, মুখে খোঁচা-খোঁচা দাঁড়ি। বাম হাত দিয়ে পেছনে একটি পলিথিন ব্যাগ ঝোলানো। ব্যাগের ভেতরে কয়েকটি প্লাস্টিকের খালি পানির বোতল। অন্য হাতে একটি মশার কয়েলে আগুন জ্বালিয়ে নাক বরাবর ধরে আছে। অথচ, তেমন মশার প্রকোপ বুঝতে পারিনি আমি অনেক্ক্ষণ যাবত এখানে বোসে থেকেও। কৌতুহল নিবৃত করতে পারলামনা। লোকটির সামনে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে লাল চায়ের চিন্তা মাথায় ঘুমিয়ে পড়েছে!
–এই যে, একটু শুনবেন!
আমি স্বগোতক্তির মতো করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলাম। সে আমার দিকে একবার তাকালো। আমার কথা বুঝতে পারলো বলে মনে হলোনা। সে নির্লিপ্ত। মাঝে-মাঝে কয়েলের আগুনে ফুঁ দিয়ে তা দগদগে করে নিচ্ছে আর জোর শ্বাসে ধোঁয়া নাকে টানছে। একবার মনে হলো, নেশার এটা একটা নতুন সংযোজন না তো!
–শুনুন, আপনি যেভাবে কয়েলের ধোঁয়া নাকে নিচ্ছেন, আপনার তো ক্ষতি হবে, এটা বিষ। আপনাকে কি মশা কামড়াচ্ছে? আমি এবার একেবারে তার সামনে এসে তাকে সরাসরি জিগ্যেস করলাম।
–না, মশা নাই তো! সে এমনভাবে কথাগুলো বললো, যেনো আমি খুব বোকা একজন মানুষ, এমন প্রশ্ন কি কোনো বুদ্ধিমান মানুষ করে!
–তাহলে কয়েল ধরিয়ে রেখেছেন যে! আমাদের কথোপকথন শুরু হলো।
–গন্ধ! বিশ্রী গন্ধ!
–গন্ধ? কয়েলের? তাহলে নাকে টানছেন কেন?
–না-না, মানুষের! মানুষের গন্ধ! বিশ্রী! কয়েল জ্বালিয়ে গন্ধ দূর করছি৷ তারপর একটু থেমে, নাকে কয়েলের ধোঁয়ার একটা লম্বা দম নিয়ে, সরাসরি আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
–আপনার শরীরেও গন্ধ! ওয়াক থু! বলেই বোমনের ভঙ্গিতে হনহন করে হেঁটে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। অদূরে একটি ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার সে কয়েলে ফুঁ দিয়ে ধোঁয়া বের করে নাকে টানতে আরম্ভ করলো। কাউন্টার থেকে ঘোষণা এলো,
‘রাত ১১.৪৫ এর এসি বাসের যাত্রীরা গাড়িতে উঠুন।’
আমার লাল চা খাওয়া হলোনা আর। আজ রাতে আর ঘুমও হবেনা বোধহয়! মগজের ভেতরে কি এক অদ্ভুত ধরনের বিশ্রী একটা দুর্গন্ধ অনুভব করলাম আমিও। আমারও পুরো শরীর ঘিনঘিন করতে আরম্ভ করলো।
কিন্তু, আমার কাছে মশার কয়েল নেই।
– Md. Mosiur Rahman
Send private message to author



