একজন রূপনগরের রাজকন্যা, যিনি ইরান-তুরান পার হয়ে এসে দর্শকদের হৃদয় কেড়ে নিয়েছেন। কখনো তাঁর আয়নাতে মুখ দেখে লজ্জায় কপালের কালো টিপ চোখে পড়ে যায়। আবার এই রাজকন্যাটিই কখনো সহধর্মিণী, আবার কখনো মাতৃরূপে দর্শকদের ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। তিনি হলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা শবনম।
বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ফুটবল রেফারি পিতার কনিষ্ঠ কন্যার পৈত্রিক নাম ঝর্ণা বসাক। এই নাম নিয়েই বাংলাদেশি পরিচালক এহতেশামের “এই দেশ তোমার আমার” সিনেমায় একটি নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেন তিনি। পরবর্তীতে “হারানো দিন” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর নাম হয়ে যায় শবনম। শবনম নামের অর্থ ফুলের উপর বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা ঝরে পড়া। এখানো পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তিনি শবনম নামেই সর্বাধিক জনপ্রিয়।
ষাটের দশকে “কখনো আসেনি”, “হারানো দিন”, “নাচের পুতুল”-এর মত বহু জনপ্রিয় বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করতে সক্ষম হন। এর মধ্যে অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ সিনেমায় নায়করাজ রাজ্জাকের লিপে মাহমুদুন্নবীর গাওয়া ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’ গানটি এখনো দারুণ জনপ্রিয়। এসবের মধ্যে ১৯৬৪ সালে সুরকার রবিন ঘোষকে বিয়ে করেন শবনম। বিয়ের পর তিনি আরও জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রে নয়, পাকিস্তানের উর্দু চলচ্চিত্রেও তিনি সমুজ্জ্বল। ষাটের দশকেই তিনি পাড়ি জমান পাকিস্তানে। সেখানে তিনি “আখেরি স্টেশন”, “আসরা”, “আনমল মোহাব্বত” এর মত বহু জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল উর্দু সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। সেখানেও তিনি তিন দশক ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন এবং সেখানে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১১ বার নিগার অ্যাওয়ার্ড। এজন্য পাকিস্তানের দর্শকদের কাছে এক মহান নাম নায়িকা শবনম।
এরপর নব্বই-এর দশকে তিনি মাটির টানে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এই সময় তিনি “আম্মাজান”-সহ বেশ কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমার পর পরবর্তীতে তিনি চাইলে অভিনয়ে নিয়মিত হতে পারতেন, কিন্তু তারপর তিনি সবরকম অভিনয় শিল্প থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিয়েছেন।
কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী পাকিস্তান থেকে আজীবন সম্মাননা,জাতীয় পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।আমাদের দেশ থেকে জাতীয় পুরস্কার না পেলেও,এই মূহুর্তে উনার আজীবন সম্মাননা প্রাপ্য।
বাস্তব জীবনে তিনি এক সন্তানের জননী এবং তাঁর প্রয়াত স্বামী রবিন ঘোষের সাথেই কাটিয়েছেন পুরো দাম্পত্যজীবন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের ঢাকার বারিধারায় থিতু হয়েছেন।
১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা জানাই।
Written by Shibli Sayeek (শিবলী সাইক)
Send private message to author






