চন্দ্রাবতী,
তুই আমায় দাদা বলেই সম্বোধন করতিস। তবে আমি কিন্তু তোকে শুধু বোনের চোখে দেখতে পারিনি। বাবার দিকে তাকিয়ে সমীর কাকা আমায় যেদিন ভালো কলেজে পড়ানোর উদ্দেশ্যে কলকাতায় আনলেন সেদিনই তোর সাথে আমার প্রথম দেখা। তুই তখন সপ্তম শ্রেণি। তখনই তুই কেমন বড়োসড়ো হয়ে গেছিস। তোর রূপের ছটা বন্ধুমহল আর পাড়ার ছেলেদের মত আমার চোখেও আটকেছিলো। আটকেছিলো কিরে খুব যে আটকেছিলো! জানলা ধরে তুই কেমন ড্যাব ড্যাব করে দেখছিলি আমায়। সেই প্রথম দিনই ধপাস করে পড়লাম তোর প্রেমে তুই নিশ্চয়ই টের পেয়েছিলি তাইনা? মেয়ে মানুষরা এই সমস্ত বিষয় আগেভাগেই টের পায়। এক সপ্তাহ পরে তোকে পড়ানোর দায়িত্ব চাপলো আমার ঘাড়ে। তুইও কেমন বাধ্য মেয়ের মত বই-খাতা সমেত রোজ আসতি আমার ঘরে। এ সুযোগ আমি কি আর হেলায় হারাই বল? তোকে পড়ানোর ফাঁকে কত বাসোনাই হতো মনে! তোর চুলগুলো সরিয়ে পিঠে হাত বুলাই, তোর হাতটা চেপে ধরি, তোর শান্ত ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেও আমার কিন্তু বেশ সাধ হতো। সেসবতো তুই আর জানলিনা।
আমার বেশ মনে আছে সেদিন ছিল ২৫শে বৈশাখ, রবি ঠাকুরের জন্মদিন। রবি ঠাকুর তোর পছন্দের। সেদিন দুপুরবেলা স্কুল থেকে ফিরে দৌড়ে দোতালার সিঁড়ি ভেঙ্গে হাঁপাতে হাঁপাতে এলি আমার ঘরে। তোর পায়ের আওয়াজ এখনো স্পষ্ট আমার কানে আসে। দড়জায় ঝুঁকে পড়ে রবীঠাকুরসহ দাড়ি কমা সব বাদ রেখে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলি- বিপিনদা তোমার বন্ধু রামশেখরের কি কাল বিয়ে হয়েছে?
আমিও উত্তর দিয়েছিলাম- হ্যাঁ রে রামশেখরেরতো বিয়ে হলো কাল। মেয়ে ভালোই। পড়াশোনা জানা। দেখতেও সুন্দরী। আমাকে অবশ্য অনেকবার যাবার জন্য বলেছিলো।
যাওনি কেনো বিপিন দা? কি জানি ভালো লাগলো না তাই আর যাইনি।
আর কোন কথা না বলে দৌড়ে গিয়ে ঘরের দরজা আটকালি। সেই যে গেলি আর বের হলি না। আমিও কেমন বোকা দেখ একবারও ভাবলাম না হঠাৎ
রামশেখরের কথা কেনো জানতে চাইলি আর কেনইবা আর দোড় খুলছিস না।
পরের দিন যখন তোদের বাড়ির হরি চাচা লোকলস্কর সমেত ঘরের দরজা ভাঙলো তখন দুর থেকে দেখলাম তোর মা এক চিৎকার দিয়ে দরজার বাইরেই জ্ঞান হারালো। সমীর কাকাও বসে পড়ল ধড়াস করে। বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তোর ঘরের খোলা দরজা দিয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে তোর ঝুলন্ত শরীরের দিকে তাকাতেই জমে কাঠ হয়ে গেলাম।
চন্দ্রাবতী, আমি যে তোর প্রেমে পড়েছিলাম তুই কি বুঝতে পারিসনি সত্যিই? আর যদি বুঝেই থাকিস তবে আমারই বন্ধু রামশেখরকে কি করে ভালোবেসে ছিলি?
আর ভালো যখন বেসেছিলি অন্তত আমার কাছে একবার বলতে পারতি আমি সব ব্যবস্থা করে দিতাম। পাগলিরে কেনো বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধে রইলি? ১২বছর পার হলো আজও যে আমি সেই ক্ষততেই আটকে আছি। আমি জানি তুই আমার আশেপাশেই থাকিস সবসময়।আমায় দেখিস। আমার কষ্ট দেখে তোর হাসি পায় না? আমায় বুঝি উপহাস করিস? সময় করে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিস কেমন? বই-খাতা হাতে তুই আসবি বলে আর কত দুপুর তোর অপেক্ষায় বসে থাকবো?
বলে দিস আমায় চন্দ্রাবতী।
ইতি,
তোর বিপিনদালিখা: ফারজানা মিশু
Send private message to author






