পিয়াসের ভালোবাসার রাত্রি।

সকাল থেকেই পিয়াসের মনটা খুব খুশী। আজ বিসিএস এর রেজাল্ট বেড়িয়েছে।
চাকরীটা শেষ পর্যন্ত হয়েই গেলো।নেটে রেজাল্টটা দেখে সবাইকেই জানানো হয়েছে।
শুধু রাত্রিকে জানানো যায়নি।গতকাল থেকেই ওর মোবাইল বন্ধ। কোন প্রবলেম হয়নি তো? পিয়াস এই নিয়ে সাত- পাঁচ ভাবতে থাকে।এমন সময় গাড়ী থেকে নামে রাত্রি,বলে,” পিয়াস,তুমি এখানে? আর আমি তোমাকে গরু খোঁজা খুঁজছি”।

  • আমি গরু?
  • গরুর চেয়েও বড়।গাধা।
  • কেন,কি হয়েছে?
  • আমার কপাল পুড়েছে
  • কই,কপাল তো ঠিকই আছে দেখছি
  • হেয়ালী করছো?করো।একদিন বুঝবে
  • কি বুঝবো?
  • যেদিন আমি থাকবোনা সেদিন ঠিকই
    বুঝবে
    -কেন,কোথাও চলে যাচ্ছো নাকি তুমি?
    রাত্রি কোন কথা বলেনা।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।পিয়াস কোন বাঁধা দেয়না।বাঁধা দিলে ও ডিস্টার্ব ফিল করে।ঝামেলা আরো বাড়ে।
    এমনিতে ও শান্ত স্বভাবের।কিন্তু একবার আউটবার্স্ট করলে শান্ত হতে সময় নেয়।
    হঠাৎই রাত্রি গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে,”পিয়াস, চলো।আমার সাথে যাবে।
    -কোথায়?
    -আমি যেখানে নিয়ে যাবো,কোন প্রবলেম?
    -না,তা নেই।কিন্তু বলা তো যায়।
    -কাজী অফিস।
    -কেন?কাজী অফিস কেন?
    -আমরা বিয়ে করবো।আজই।এখনই।
    -রাত্রি, মাথা ঠান্ডা করো।তুমি কি বুঝছো
    তুমি কি করতে যাচ্ছো?
    -হ্যা।আমি জেনে বুঝেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
    তুমি যাবে কিনা?
    -মাথা গরম করোনা।শান্ত হও।আগে শুনি
    কি হয়েছে।
    -লাগবেনা।আমি বুঝে গেছি।ওকে ফাইন।
    আই’ম গোয়িং।পিয়াসকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাত্রি হন হন করে গাড়ীতে চলে গেল।পিয়াস বাঁধা দেয়না।দিয়ে লাভ নেই জানে।পিয়াস ভাবতে থাকে অন্য কথা।
    রাত্রির বাসায় কোন ঝামেলা হয়নিতো?বেশ ক’দিন যাবত ওর বিয়ের ব্যাপারে চাপাচাপি হচ্ছে।পাত্র সম্পর্কীয় আত্মীয়।কানাডা প্রবাসী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।রাত্রি প্রবল আপত্তি জানিয়েছে।বলেছে,আপাতত: পড়াশোনা করা ছাড়া তার অন্য কোন চিন্তা নেই।তারপর চাকরী।তারপর নাহয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।কিন্তু ফ্যামিলির কেউ এ কথা শুনতে চায়না।তাহলে কি বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে? পিয়াস এতসব ভাবতে থাকে।আর থেকে থেকে অসহায় রাত্রির মায়াবী মুখটা স্মরণ করতে থাকে।
    রাত্রিরা এক ভাই,দু’বোন।রাত্রিই বড়।বাবা রিটায়ার্ড আমলা।বর্তমানে এক বিদেশী এনজিওর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।ওদের অবস্থা ভাল।অন্যদিকে পিয়াসরা নিতান্তই মধ্যবিত্ত
    ঘরের।মফস্বল শহরে থাকে।নিজেদের বাড়ী আছে তবে অনেকদিনের পুরোনো।রাত্রির ফ্যামিলি কি তাদের এ সম্পর্ক মেনে নেবে? হঠাৎই কলিজা কাঁপিয়ে গাড়ীর দরোজা সজোরে ধাক্কা দিয়ে নেমে আসে রাত্রি।পিয়াস কিছু বলার আগেই তেড়ে আসে, এসবের মানে কি? এগুলো কোন ধরণের অসভ্যতা?
    -কোনটা? কিসের অসভ্যতার কথা বলছো?
    -আজ বিসিএস এর রেজাল্ট বেড়িয়েছে?
    -হ্যা
    -তোমার চাকরী হয়েছে?
    -হ্যা।
    -কই, আমাকে তো বললেনা
    -বলার সুযোগ কি দিয়েছো?
    রাত্রি কোন কথা না বলে সিঁড়িতে বসে পড়ে। আর অঝোরে কাঁদতে থাকে।পিয়াস বাঁধা দেয়না।এ কান্না আনন্দের,এ কান্না প্রায় ফসকে যাওয়া ভালোবাসাকে আবার হাতের মুঠোয় পাওয়ার।এই একটা দিনের জন্যই অপেক্ষায় ছিলো সে এতকাল।তার কান্নার তীব্রতা বাড়তে থাকে।এরকম ‘রাত্রি’ পিয়াসের অচেনা।খুব বেশী দু:খ পেলে ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে,কিন্তু শব্দ করেনা কখনো।ওর ভালবাসা নিয়ে কোন কালেই পিয়াসের মনে কোন সংশয় ছিলনা।তবে এর তীব্রতা যে কত তা আজ উপলব্ধি করে।সে রাত্রির আরো ঘনিষ্ঠ হয়।আলতো করে তাকে আরো কাছে টেনে নেয়।আর নিজেও ভেতরে ভেতরে ভিজতে থাকে।#

– আনোয়ার হাকিম।

Send private message to author
What’s your Reaction?
3
2
0
0
0
0
0
Share:FacebookX
3 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
তোহিদ কিবরিয়া
Guest
তোহিদ কিবরিয়া
4 years ago

গল্পটি পড়ে রাত্রিকে খুব অনুভব করলাম। তার দুই দিক সমস্যা। পিয়াস তার ভালবাসা। তাকে নিয়ে তার জীবন। অন্যদিকে তার বাবা মার ঠিক করা প্রাত্রের কাছে বিয়ে বসা। অবশেষে সে ফিরে পায় পিয়াসকে।
রাত্রি আর পিয়াসের মিলনে গল্পটা খুব ভাল লেগেছে। লেখকের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!