ডাইনি মা


বাড়িতে একদম সুনসান নিরবতা,আমার রুমের দরজা বন্ধ।রুমে আছেন তিনটা প্রাণী, সবিতার মা,সবিতা এবং আমার মা।
আমি দরজার পাশে কান লাগিয়ে শুনতে চেষ্টা করলাম ভেতরের কথাগুলো।সবিতার মায়ের উদ্দেশ্য,আম্মাকে বলতে শুনলাম,পায়লা এনেছো,তোমাকে যে আনতে বলেছিলাম”জ্বি বুবু এনেছি।পায়লা হচ্ছে মাটির একধরণের পাতিল।
পায়লা দিয়ে কি করবেন আম্মা,আমি বুঝতে পারছি না।আমার বুঝার কথাও না।
আমাদের বাড়ি থেকে আধা কিলো দূরেই সবিতাদের ঘর।সবিতা এবং তার মা,এ নিয়েই তাদের সংসার।সবিতার মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন,আর সবিতা বাড়িতে বসেই বেতের ঝুড়ি বানায়।এ থেকে যা আয় হয়,তাদের দুজনের চলে যায় ভালো ভাবেই।আচমকাই বিপত্তিটা দেখা গেল,সবিতার পেট ফুলতে থাকে,বমি হয়।খবরটা খুব দ্রুতই এ পাড়া ও পাড়ায় ছড়িয়ে যায়।মাতব্বর সালিশ বসালো,সবিতা এবং সবিতার মাকে এক ঘরে করে রাখা হলো।মা,মেয়ে পড়লো খুবই বিপদে।সালিশে রায় হলো,কাল ভোরে সবিতা এবং সবিতার মাকে লেংটা করে,দুইশো করে বেতের বাড়ি দেওয়া হবে।আমি সেই সালিশে গ্রামের অন্যদের মতো ছিলাম,সবিতার মুখটা দেখে মায়া হলো খুব।কার জন্যে সবিতার আজ এই দশা, একটা বার ও কেউ এই প্রশ্নটি তুললো না,কেউ না।

রাত তখন আনুমানিক বারোটা,সবিতার মা এবং আমার মা মিলে ঠিক করলো আজ রাতেই কিছু করতে হবে,ভোর হলেই শাস্তি।
এতো বড় অপমান আমার মা হতে দিবে না,কিন্তু আমার মায়ের এতো সাহস নেই যে,গ্রামের মাতব্বরের সাথে নড়ে জিতে আসা।
মা দরজা খুলতেই দেখে,আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে।মা আমাকে বললো,বাবা আবির, ঘরের পেছনে একটা গর্ত করে আয়,যতটুকু নিঃশব্দে করতে পারিস ততই মঙ্গল,আলো জ্বালাবি না।আমি চুপিচুপি মায়ের কথা মতো কাজ করে আসলাম।মা আবারো ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন,আর আমি বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম,ভেতরে কি হচ্ছে।আমার দেবদূতের মতো মা,সবিতাকে কি যেন খাওয়ালেন, সবিতা ব্যথায় কুকড়িয়ে গেল,সবিতার মা মুখে চাপ দিয়ে রাখলো,যেন আওয়াজ বাড়ির বাইরে না যায়।
প্রচুর রক্ত,আমার বিছানা লাল রক্তে সমুদ্র হয়ে গেল।সবিতার পেট থেকে যে মাংসপিণ্ড টা আম্মা বের করে আনলেন,সেইটা পায়লায় রাখা হলো।তারপর পায়লার মুখ বন্ধ করে আমার হাতে দিয়ে বললো,একটু আগে যে গর্তটা করেছিস,সেখানে পায়লাটা পুতে আয়।
আমার চোখে জল,আম্মার চোখেও জল।আমি ভয়ে ভয়ে নিয়ে গেলাম,পুতে রেখে আসলাম মাটির নিচে।মা আমার কাছে এগিয়ে আসলেন,বললেন”আবির তোর এখন অনেক দায়িত্ব, সবিতা এবং সবিতার মাকে ঢাকার ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবি,গ্রামের কেউ যেন না দেখে।এখন তুই ই তাদের রক্ষক,তাদের সুরক্ষা তোর দায়িত্বে।
আবির,আমি কি অনেক খারাপ মা,ডাইনি মা?
আমি একটু আগে,বুঝেশুনে খুন করে এসেছি।আমি জানি তুই সব দেখেছিস,জানিস সবটুকুই,তুই কি আমাকে ক্ষমা করতে পারবি?
আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না,মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলাম হাউমাউ করে।আমার ভেতরটায় এখন শান্তি লাগছে,মনে হচ্ছে বরফ শীতল বাতাস লাগলো গায়ে।
আম্মা,তুমি ডাইনি মা না,তুমি আমার ভালো মা,আমার দেবদূত মা।

সবিতা এবং তার মাকে বোরকা পড়ানো হলো,যাওয়ার সময় সবিতা আওয়াজ ছাড়া অনেক কান্না করলো।সবিতার মায়ের হাতে দুই হাজার টাকা আম্মা দিয়ে দিলেন,সাথে কিছু শুকনা খাবার।

স্ট্রেশনে ট্রেন চলে এসেছে,সবিতা এবং তার মা উঠে বসলেন,একটুপরই হুইসেল দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটে চললো ট্রেন।

আমি গায়ের পথে ফিরছি,আজকের ভোরটা অনেক সুন্দর।
কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজে একজন পুরুষ হিসেবে নিজের উপর খুব ঘেন্না হচ্ছিলো।
ছিঃ

Sadi Ayat

Send private message to author
What’s your Reaction?
3
3
0
0
4
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Sadi Ayat
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!