-আপনি হাজবেন্ড ছাড়া থাকেন কিভাবে? কষ্ট হয়না? আমি বাবা ওকে ছাড়া এক দিনও কল্পনা করতে পারিনা। টাকাই কি জীবনের সব?
- -না একদম না। টাকা ছাড়া কি জীবন চলে? ওতো জাহাজ ভরে টাকা নিয়ে আসে। হীরা,মণি,মুক্তা, এতো আনে যে, আমি ফিরেও দেখিনা। আমাদের তো ছয় মাস ভ্যাকেশন।আজ দুবাই, কাল সিংগাপুর, পরশু বালি,টাকা না হলে কি সম্ভব এসব?
ভাবি অবাক হলেন। ঠাট্টা করলাম,না সিরিয়াসলি বললাম, বুঝতে পারেননি।
-না টাকা তো লাগেই।তবুও একা একা।জীবনের অর্ধেক তো অপেক্ষা করেই কাটে।
-আরে ভাবি উল্টো দিক চিন্তা করছেন না কেন? যেই ছয় মাস থাকে তা হিসাব করলে বারো মাস থাকা স্বামীদের চেয়ে বেশি।
-কি জানি বাবা।যার যেমন জীবন। চলি,রান্না করতে হবে।আপনার ভাই আবার কয়েক পদ না হলে খেতেই পারে না। আপনিই ভালো আছেন। রান্নার চিন্তা নেই।তাড়াও নেই।
ভাবি চলে যাওয়ার পরেও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে নেহা। হ্যাঁ, আমরাতো ছয় মাস না খেয়ে থাকি।
বিয়ের পর প্রশ্নগুলো অনেক কষ্ট দিত।কত রাত যে কেঁদে ভাসিয়েছে। ইনিয়ে বিনিয়ে সবাই বুঝিয়ে দেয় ও টাকার লোভেই জাহাজি বিয়ে করেছে। এখন আর আগের মতো গায়ে লাগেনা। মেরিনাররাও মানুষ।কেউ না কেউ তো এই জীবন মেনে নিয়েই ওদের বিয়ে করবে।
বাসায় ফিরেই দম ফেলার সময় নেই । রান্নার ফাঁকে ফাঁকে ছোট বোনের সাথে কথা সেরে নিলো। ছোট মেয়েটার জন্মদিন।নিজের হাতেই কেক বানাতে হবে।মেয়েটা এবার খুব আশা করেছিল, বাবা থাকবে জন্মদিনে। মেয়েদের ষ্কুলের বেতন দিতে হবে।বাজারে যাওয়াও জরুরী।আজ না গেলেই নয়।
প্রতিদিন সকালে উঠে মনে হয়,আজ না হয় কাজ না করি।একটা দিন না হয় নিজের জন্য কাটাই। হয়না, সময়ই হয়না।
রাতে ছেলেটার কাশি বেড়ে গেল,শরীরও গরম। এই সময়টা খুব অসহায় লাগে। অভয় দেয়ার কেউ থাকেনা পাশে।
ছেলেকে কোলে নিয়ে নেহা হাঁটে আর এলোমেলো যতো ভাবনা ভর করে মনে। আসলেই তো,কি করে থাকি একা? প্রতিরাতে একবার হলেও মনে হয়, আজ তো দিন পার করলাম। কাল ঠিকঠাক সব সামলিয়ে পার করতে পারবো তো?ছোটখাটো কত ঝামেলা,কত সিদ্ধান্ত নেওয়া,শ্বশুরবাড়ি, সামাজিকতা , পারবোতো সব একা করতে।
প্রতিদিন অভ্র যখন ফোন করে,হেসে বলি “আমি ভালো আছি, সব ঠিক আছে,কোন চিন্তা নেই “।
আমার উপর ভরসা করেই, তিন সন্তান, সংসার সব ফেলে নিশ্চিন্তে সে জাহাজে যায় ।আমাকে তো চোখের পানি লুকিয়ে,হাসি দিয়েই তাকে নিশ্চিন্তে রাখতে হবে। আমাকে একাই সব পারতে হবে। ভাবিরা ঠাট্টা করে বলে, “সারেং বৌ”। হ্যাঁ,সোজা নয় এই সারেং বৌয়ের জীবন।
কাজী সুরাইয়া নাসরীন সুরভী
(Kazi Suriya Nasrin Surovi)
Send private message to author







জীবনের জলরং ছবি।
excellent Writing. As usual. You always have been a good writer since school time. Keep up the good work.
জীবন থেকে নেয়া