— মা, সবগুলো পেয়ালা কি নিয়ে আসবো?
—-আনো বৌমা।
—-মা, এবার প্লেটগুলো মুছে রাখি?
—- রাখো।
—–মা, টেবিলটা কি এখনই রেডি করে দিবো?
—–বেশতো দাও।
—— মা, বারান্দার কাপড়গুলো তুলে নিয়ে আসি?
শাশুড়ি মা রান্নাঘরের বারান্দায় বসে ব্যস্ত দু’ হাতে আঁচারে মসলা মাখাচ্ছিলেন। খানিক বিরক্তি নিয়ে মুখ না তুলেই বললেন,
—— তোমার মত করে তুমি করোতো বৌমা। একটু পর পর শুধু মা, মা আর মা।
—– আপনি বিরক্ত হলে আর ডাকবো না মা।
ধরা গলায় নাজুর কথা ক’টি কানে পৌঁছুবার সংগে সংগে চোখ তুললেন শাশুড়ি মা।
—- বৌমা আমার কাছে এসোতো।
নিরবে সামনে এসে দাঁড়ালো নাজু।
—– তাকাওতো আমার চোখের দিকে।
শাশুড়ির নির্দেশমত চোখ তুললো নাজু। ওর জল টলমল দু’ চোখে চোখ রাখলেন শাশুড়ি মা।
—— ঠিক ধরেছি ভেজা কন্ঠ শুনে, কি হলো বলবেতো?
নাজু আঙুলে আঁচল জড়াতে জড়াতে মুখ নীচু করেই বললো,
—– মা, আপনি যেদিন বাবার বাড়িতে আমাকে প্রথম দেখতে গিয়েছিলেন, সেদিন আংটি পরানোর সময় বলেছিলেন, ” মা হারা মেয়ে, এটাই আমার নির্বাচনের প্লাস পয়েন্ট।”
আমিও যে তারপর থেকে অপেক্ষার প্রতিটি প্রহর পার করেছি ” মা” ডাক ডাকবার আকুলতায়।
আটটি বছর হয়ে গেল মাকে হারিয়েছি। আমি যে আট বছর ধরে মাকে ডাকতে পারিনি।
শাশুড়ি মা হাতের কাজ ঠেলে দু’ হাত বাড়িয়ে নাজুকে বুকে টেনে নিতে নিতে বললেন,
——-আর কিচ্ছু বলতে হবে না। ডাকবি, ” মা” ডাকবি। যখন তখন, যত খুশি ততবার ডাকবি মা মা মা।
মেয়েতো মাকে ডাকবেই। মন ভরে ডাকবি, প্রান উজাড় করে ডাকবি।
গর্ভধারিনী মাকে হারানোর পর অনেক বছরের জমানো কষ্টের বরফগুলো আর এক মমতাময়ী মায়ের স্নেহের স্পর্শের ওমে গলে গলে ঝরতে লাগলো নাজুর দু’ চোখ বেয়ে।
মায়ের মস্ত বিশাল হৃদয়ে পাতা আসনটায় সদ্য আসা পুত্রবধূটি পাকাপোক্ত ঠাঁই করে নিলো কন্যার দাবীতে অবলীলায়।
আর লোনা পানির এই সংক্রমনে সংক্রমিত হলেন মমতাময়ী মা। স্নেহ আর শ্রদ্ধার বন্যায় হাবুডুবু খেলা, মা মেয়ের যুগপৎ ইচ্ছেপুরণের এক অসম্ভব সুন্দর অসাধারণ চিত্র।
এতটুকুও মলিন হয় নি অনেকগুলো বছরেও।
Fahmida Reea
Send private message to author




এমন একজন শাশুড়ি মা পাওয়া মেয়েদের জন্য সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।