প্রথম পক্ষ: “তোমাকেই শুধু এই কথাটি বললাম। আর কাউকেই বলিনি। তুমি আমার খুবই আপন জন। বিশ্বস্ত। তাই শুধু তোমাকে জানালাম বিষয়টি। আমি জানি তুমি এটি কারো সাথে শেয়ার করবে না। আমি এও জানি এটি সম্পূর্ণ গোপন থাকবে তোমার কাছে। তোমার উপর সেই বিশ্বাস আমার আছে”।
দ্বিতীয় পক্ষ : “মাথা খারাপ? তুমি কি কখনো দেখেছো আমাকে এমন করতে? পেটে বোমা মারলে ও আমার কাছ থেকে একটি শব্দ ও বের হবে না। তুমি তো এর আগেও এই রকম অনেক গোপন কথা আমাকে বলেছো। আমি কি তা কখনো বাইরের কাউকে বলেছি? তুমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত থাকতে পারো পৃথিবীর কোন মানুষ এমন কি কোন কাক পক্ষী ও জানতে পারবে না তোমার আমার মধ্যে হওয়া এই কথা গুলো।”
অতঃপর প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষের হাতের উপর হাত রেখে উচ্চারণ করে “প্রমিস”, দ্বিতীয় পক্ষ তাৎক্ষণিক তাতে সায় দিয়ে বলে উঠে “প্রমিস”। ব্যাস হয়ে গেলো অলিখিত একটি শপথ বাক্য উচ্চারণ। প্রথম পক্ষ নিশ্চিত আর আশ্বস্ত হলেন এতে।
দুই পক্ষের মধ্যে এই ধরনের কথা বিনিময় আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। আমাদের চারপাশে আমরা হর হামেশাই এটা দেখি। আমাদের সবারই কোন না কোন সময়ে এই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি ও হতে হয়েছে হয়তো বা।
কোন ব্যক্তি যখন খুব মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হয় বা এমন কোন কাজ করে বসে যা বাইরের কেউ শুনলে বা জানলে তাঁর মারাত্মক বিপদ আর ঝুঁকির সম্ভাবনা আছে, সেই ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে বিষয়টি খুব কাছের দু এক ছাড়া বাকী সবার কাছে গোপন রাখে। শুধুমাত্র অতি বিশ্বাসী দুই এক জনের সাথে তা শেয়ার করে বিষয়টির কঠোর গোপনীয়তা রক্ষার শর্তে।
তার কিছু দিন পর কোন কারণে দুই জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে, সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বা অন্য কোন স্বার্থের বিষয় সামনে চলে আসলে পরিস্থিতি ৩৬০ ডিগ্রী উল্টো হয়ে যায়। সেই পক্ষ সম্পূর্ণ আর বেমালুম ভুলে যান গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়া সেই কথাগুলো। ভুলে যান হাতের উপর হাত রেখে “প্রমিস” বলে শপথ নেয়ার মুহূর্তটি ও। ফলত প্রকাশ হয়ে পড়ে সব গোপন কথা। মাঝে মাঝে আবার এমন ও হয় সেই পক্ষ এর সাথে “আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে” আরো কিছু কিছু নতুন নতুন কল্প কাহিনী যোগ করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন।
আবার এমনটি ও ঘটে কখনো কখনো। সম্পর্ক হয়তো আগের মতই আছে। কিন্তু এত বড় একটা গোপন কথা (যা অনেকেই জানে না, শুধু আমিই জানি) পেটে ধরে রাখা আসলেই খুব কষ্টের। মন শুধু সারাক্ষণ নিশপিশ করে এটা কারো কারো সাথে শেয়ার করতে। অতঃপর একদিন প্রতিশ্রুতি দেয়া ব্যক্তি তাঁর কাছের আরেক জনকে ডেকে বলেন,
“তোমাকে আমি আজকে খুবই গোপন একটি কথা বলব। কিন্তু তোমাকে কসম করে বলতে হবে তুমি মরে গেলে ও এটি কারো সাথে শেয়ার করবে না। তুমি আমার অত্যন্ত কাছের আর বিশ্বাসের একজন। তাই তোমাকেই বললাম এই কথাটা। সাবধান ভুলে ও কখনো কাউকে এটি বলবেনা। সেই পক্ষ ও তাৎক্ষণিক এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করলো যে ঘুণাক্ষরে ও তিনি এই কথা আর অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
অতঃপর,
“**”
স্টার মার্ক দেয়া লাইন গুলোর (প্রতিকী) ক্রম বিস্তৃতির মাধ্যমে একই প্রক্রিয়ায় গোপনীয়তা প্রকাশের ও ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকে।
সময় পেরিয়ে যায়। আর এর সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে গাণিতিক হারে (১,২,৩,৪,৫,৬) গোপন কথাটা ও প্রকাশ হতে থাকে ধীরে ধীরে। ফলে চরম গোপনীয় এই কথাটি জনে জনে রাষ্ট্র হতে হতে এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় প্রায় সবার কাছে।
আমরা মাঝে মাঝেই বহুল প্রচলিত এই কথাটা বলি।
“এই আরো আস্তে বল।
দেয়ালের ও কান আছে,
সাবধানের মার নাই।”
তবে অনেক খুঁজে ও দেয়ালের কানের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আবার এও প্রমাণিত হয়নি যে দেয়ালের ও প্রান আছে।
তাহলে কাকে দুষবো এখন?
কে দোষী?
দেয়াল, আমি, আমরা,
অন্য কেউ,
না কোন অশরীরী আত্মা?
২৫ জুলাই ২০২১।
Send private message to author





