ইদানীং কালের বহুল ব্যবহৃত একটি বাক্য। এই বাক্যটি ব্যবহৃত হচ্ছে বহুকাল থেকেই। তবে হাল আমলে এটার ব্যবহার, ব্যবহারের পরিধি আর প্রেক্ষিত বেড়ে গেছে বহুগুণ। আরো কিছু কিছু বাক্যাবলী ও ইদানিং বেশ ব্যবহার হয়। যেমন,
“হু-কেয়ারস,” “আই ডোন্ট নো’।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে “আই ডোন্ট কেয়ার” বাক্যটিই অধিক হারে আর সবচাইতে বেশী ব্যবহৃত হয়। আর এটার সবচাইতে বড় ব্যবহারকারী হলো হাল আমলের তরুণ প্রজন্ম আর কিশোর কিশোরী।
একটা সময় স্কুল গুলোতে ইংরেজী দ্বিতীয় পত্রে ট্রানসলেশন অনুশীলনে এই বাক্যগুলি বেশী ব্যবহৃত হতো। কিন্তু আজকাল এর ব্যবহারের ধরন পাল্টেছে। আজকাল তরুণ প্রজন্ম এমন কি কম বয়সী কিশোর কিশোরীরা কথায় কথায় এই বাক্য গুলো ব্যবহার করে। যে পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে আজকাল কার তরুণ প্রজন্ম আর কিশোর কিশোরীরা এই বাক্য গুলো ব্যবহার করে সেটা নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যেতে পারে।
আপনি, ওদের বাবা মা, ভাই বোন, কোন অগ্রজ, অফিসের সিনিয়র সহকর্মী, কোন মুরুব্বী প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষকরা ও যখন এদেরকে এই জাতীয় উপদেশ মূলক কথা গুলো বলে,
“বেশী রাত করে ঘুমাতে যাবে না, করোনার সময় মাক্স ছাড়া বাইরে যাবে না, দিনের কাজ দিনে শেষ করবে, সঠিক সময় অফিসে আসবে, বেশী করে শাক সবজি খাবে, এত রাত করে বাড়ী ফেরা ঠিক না, বড়দের সম্মান করবে, বেশী রাত জাগবে না, সিগারেট বা নেশা জাতীয় জিনিস খাবেনা, খারাপ বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিশবে না, ইন্টারনেটে আর মোবাইলে অযথা সময় নষ্ট করবে না” এই জাতীয় আরো কিছু প্রয়োজনীয় আর উপকারী উপদেশ জাতীয় অনুরোধ।
(এগুলো শুধুমাত্র কয়েকটা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করলাম)।
এই সমস্ত প্রয়োজনীয় উপদেশ আর অনুরোধ করার পর অনেক ক্ষেত্রেই তরুণ প্রজন্ম আর কিশোর কিশোরীদের একটা কমন উত্তর শোনা যায় এই রকম,
“আই ডোন্ট কেয়ার”।
অনেক সময় এদের অনেককেই এই উত্তর দেয়ার ঘাড় কিছুটা উপরে তুলতে ও দেখা যায়।
একটা সময় ঠাট্টা বা দুষ্টুমি করে পরিচিত আর বন্ধু মহলে এই বাক্যটি মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হতো। কখনোই এটা বয়স্ক মুরুব্বী, বাবা-মা, ভাই বোন বা শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো না। এই আচরনকে একটি অত্যন্ত মারাত্মক বেয়াদবী আর উদ্ধত আচরণ হিসেবেই গণ্য করা হতো।
সম্প্রতি গ্রাম ও শহর অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় আর যোগাযোগের প্রভূত উন্নতি হওয়ায় শহর আর গ্রামের মধ্যে জনগণের চলাচল আগের চাইতে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেড়ে গেছে। ফলত কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই “আই ডোন্ট কেয়ার” জাতীয় সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃতি লাভ করছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এটা হাল আমলে আমাদের সমাজে ভাইরাসের মতই দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।
কিন্তু বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর ব্যবহার যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে বা ব্যবহারের ধরনে যে ধরনের পরিবর্তন আসছে, সেটা নিঃসন্দেহে একটা আগামী দিনগুলোতে একটি অশনি সংকেতের আগাম বার্তা দিচ্ছে বলেই মনে হয়।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হলে ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে আজকাল এমন কি কোন কোন কিশোর কিশোরীরা ও পরিবারে নিজেদের বাবা মা বা বড় ভাই বোনদের সাথে ও এই ধরনের অপ্রত্যাশিত বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ধত আচরণ করতে বিন্দুমাত্র ও দ্বিধা বোধ করে না।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয় এর বিস্তার ঘটছে অনেক দ্রুত গতিতে। এটা আগামী দিনগুলোতে পারিবারিক বন্ধন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর মূল্যবোধের ক্ষেত্রে এক মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে বলেই নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায়।
(এটি একেবারেই আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ)।
মোঃ আওরঙ্গজেব চৌধুরী।
১১ আগষ্ট ২০২১।






