১৯৮১ , ১৮ এপ্রিল,শনিবার।
চৈতালি রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশনটির সব প্ল্যাটফর্ম তখনও শুন্য ছিলো।কোনো ট্রেনের অস্তিত্ব চোখে পড়েনি।মায়সারা বসে আছে।একটা ভেজা বেঞ্চের উপর।গুটিসুটি মেরে।বেঞ্চটি একটা টং দোকানের সামনে পাতা ছিলো।সাধারণত যেমনটা স্টেশন গুলোতে থাকে ঠিক তেমনি একটা টং। টং দোকানটির উপর সাইনবোর্ড ঝোলানো।বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘ভাই বোন টি স্টোল’।দোকানটি এখন বন্ধ।কাঠের ডালা দিয়ে ছোট্ট দোকানটিকে অনায়াসে বন্ধ করা হয়েছে।
অনেক্ষণ হলো মায়সারা একা বসে আছে।অদ্ভুত বিষয়টি মায়সারা সেই প্রথম থেকেই লক্ষ করছে।স্টেশনটিতে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ তার চোখে পড়ে নি।কোনো কুকুর পর্যন্ত তার নজরে আসে নি।নিয়ম মত স্টেশন গুলোতে সব সময় তিন চারটা কুকুর ঘোরাঘুরি করবে।দু একটা আচমকা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিবে।একটু পর পর স্টেশনের মাইকে ঘোষনা শোনা যাওয়ার কথা।কোন ট্রেন কখন আসবে সেই খবর।কিন্তু এসবের কিছুই তার চোখে পড়ছে না।তার মানে কি আজ স্টেশন বন্ধ? কিন্তু তা কি করে সম্ভব? আজ তো শনিবার।আর তাছাড়া স্টেশন গেট তো খোলা ছিলো। বন্ধ-ই যদি হতো তাহলে স্টেশনে ঢোকার রাস্তাতো খোলা থাকার কথা নয়।মায়সারা মেয়ে হিসেবে বেশ সাহসী বটে।তবে আজ নিজেকে খানিকটা ভীত মনে হচ্ছে।ভয় যেমনটা পাচ্ছে ঠিক বিরক্তিটাও প্রবল ভাবে আটকে ধরেছে তাকে।
ঘড়িতে এখন কয়টা বাজে,খুব জানতে ইচ্ছে করছে মায়সারার।তার সঙ্গে কোনো হাত ঘড়ি নেই।ঠিক কতক্ষন ধরে সে এখানে বসে আছে বুঝতে পারছে না।স্টেশনের কোথাও সময় দেখার ব্যবস্থা নেই।মায়সারা উঠে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিলো,লাভ হলো না।আচমকা কোনো এক বৃদ্ধ নারীর কন্ঠ শোনা গেলো।সে পেছন ফিরে তাকায়।জুবুথুবু হয়ে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধ মহিলা।মায়সারা হঠাৎ মহিলাকে দেখবে ভাবে নি।শিরদাঁড়া দিয়ে যেনো শীতল একটা স্রোত বয়ে যায় মায়সারার।’ মা,এইখানে কি করতাসো? বাসায় যাও,জায়গাটা ভালা না।’কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথাটি বললো মহিলাটি।মায়সারা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।অনেক ভেবে চিন্তে ক্ষীন কন্ঠে বললো, ‘ আমার তো ঢাকা যেতে হবে,তাই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। ” মা গো কি বলতেসো এই সব।এই স্টেশন তো আইজ বছরখানেক ধইরা অচল।এইখানে কোনো ট্রেন আসে না।’ কথাটি বলেই বৃদ্ধ মহিলাটি কুজো হয়ে হাঁটা শুরু করলো।
মায়সারা স্থির হয়ে আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুই যেনো বিশ্বাস হতে চায় না তার।এই মহিলাটা যা বলে গেলো তা কি করে সম্ভব! হঠাৎ মায়সারার চোখে একটা সরু আলো পড়তে লাগলো।একটা ট্রেন।ধীরগতিতে কোনো হুইসেল না দিয়ে এগিয়ে আসছে…
সমাপ্ত
– সৌরভ আহমেদ
Send private message to author






