গ্রীষ্মের কড়া রোদ। উত্তপ্ত, নগরীর প্রতিটা কনক্রিট। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে বাসের মধ্যে ঝুলে থাকা। ব্রেক কষলেই নতুন ভারে নুয়ে পড়া বাসের পরিবেশ। যান্ত্রিক এই শহরের প্রতিটা পদচিহ্ন যেনো এক ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটছে।সবার এত কিসের তাড়া? মানুষ গুলো কি নির্দিষ্ট কোনো কিছুর প্রতি আচ্ছন্ন? নাকি সবার মধ্যেই একই ভয়? সেটা কি? দারিদ্র?
মহেষ বাবু হাঁটছেন। সেই সকাল থেকে একটানা হাঁটছেন তিনি। বাম হাঁতের উপর বেশ কিছু পত্রিকা এখনো বাঁকি আছে। কেউ পত্রিকা পড়তে আগ্রহী নয়।ভ্যাপসা গরমে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া পাঞ্জাবী। পুরো কপাল ঘামের দাপটে জায়গা করে নেয়া। সস্তা ফ্রেমের আড়ালে একটু পর পর কপাল থেকে দু এক ফোঁটা গড়িয়ে পড়া ঘাম বিন্দু। এসব কিছু নিয়েও বেশ চলছেন তিনি। ভয়ংকর ভিড় ডিঙ্গিয়ে বাসের পর বাস ঝুলে থাকা। এসব কিছুই হয়তো মহেষ বাবুর কষ্টকে লাঘব করবে না।পত্রিকা এখন আর তেমন কেউ পড়তে চায় না।
দিন শেষে রাত হয়। মহেষ বাবুর হাতে তখনো বেশ কিছু পত্রিকা রয়ে যায়। ক্রেতার স্পর্শ এখন আর সহজে হয়ে ওঠে না। অন্ধকার রাতের আড়ালে দারিদ্রতা গভীরতা লাভ করে। কখনো বা চোখের পানি আবার কখনো কখনো শত চিন্তা মাথায় নিয়ে।
এই শহর নিষ্ঠুর। এই শহরের মানুষগুলো নিষ্ঠুরভাবে বেঁচে থাকে। তাদের একটাই চাওয়া ।নিষ্ঠুরতম কোনো গল্প। যে গল্পের হ্যাডলাইন বড় বড় করে পত্রিকার প্রথম পাতায় ভেসে বেড়াবে। রাস্তার কোণে কোণে ধর্ষণ, ময়লার ডাস্টবিনে নবজাতক শিশুর লাশ কিংবা কোনো ভয়ংকর খুনের ছায়া।মহেষ বাবু বিছানায় এপাশ ওপাশ করেন। রাত গভীর হয় আর তিনি ভাবেন, আজ রাতে কি কোনো লমহর্ষক ঘটনা ঘটবে? যদি ঘটে তবে নিশ্চয়ই কাল বাড়ি ফেরার পথে হাতে কোনো পত্রিকা অবশিষ্ট থাকবে না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মহেশ বাবু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন টের পান না….
সমাপ্ত
– সৌরভ আহমেদ
Send private message to author






