পিপাসা নিবৃত্তি

দৃষ্টি দিগন্তে যতদূর যায় মরুভূমি ধূ ধূ করে,
সাহারা বানুর মাসুম শিশুটি যায় বুঝি আজ মরে।
পানির অভাবে নাশ হোক প্রাণ তাহাতেও নেই দুখ,
শিশুর মুখের চাহনি দেখিয়া ফেটে যাইতেছে বুক।
উপায় না দেখে বানু বলিলেন “পিপাসায় চাই পানি”,
সন্তান মোর মরে যাইতেছে দেখিতেছ মুখখানি”,
হোসেন বলিল “পানি পাব কোথা, তুমি করিতেছ ভুল,
এজিদ সৈন্য ঘিরিয়া রাখিছে ফোরাত নদীর কূল।
শত্রুর কাছে যাচনা করিতে কেমনে সেথায় যাই,
সেখান হইতে সলিল আনার আমার সাধ্য নাই”।
বানু বলিলেন “সলিল পাইলে বাঁচিবে একটি প্রাণ,
তাই শিশুটির প্রাণটি বাঁচাতে হোক তাতে অপমান,
মোর প্রাণ নিয়ে ভাবছিনা আমি শিশুর প্রাণটি আগে,
শিশুর এমন মুখটি দেখিতে বড়ই কষ্ট লাগে”।
আর কোনো কথা না বলে হোসেন রওনা হইল পথে,
যাইবার কালে বানুর হৃদয় ক্ষয় হয় কষাঘাতে।
শিশুটিকে নিয়ে চলিল হোসেন সাহারা রহিল একা,
না জানি কতো যে বিষাদ বনুর অদৃষ্টেতে লেখা।
দুলদুল যোগে যাইতেছে শিশু হোসেন পিছনে বসে,
এজিদ সৈন্য এতক্ষণেতে রহিয়াছে বুঝি রোষে।
অবশেষে তারা পৌঁছিয়া গেলো ফোরাত নদীর তীরে,
দেখিল তাহারা শত্রুরা মিলে নদীটি রাখিছে ঘিরে।
হোসেন এজিদকে লক্ষ করিয়া বলিল “ওরে ও ভাই,
আক্রোশ আছে আমার সহিত শিশুর সহিত নাই।
শিশু মোর আহা মরে যাইতেছে দেখ মুখটির পানে,
শিশুর প্রাণটি বাঁচাতে তোমার দয়া কি হয় না জানে?”
হোসেনের কথা শুনিয়া এজিদ বলিল “ওরে ও বাছা,
সন্তানটির প্রাণ নয় ওরে তোর প্রাণ আগে বাঁচা।
কিছুটা সময় পরেই যে তোর আসিবে মরণক্ষণ,
নিজের জন্য তুই আগে কর এতটুকু ক্রন্দন।”
তারপর যেন সব থমথম সব্বাই নির্বাক,
এজিদ করিল রক্তিম শর হোসেনের দিকে তাক।
ধনুক হইতে তীর ছুটে এসে শিশুর বুকেতে বিধে,
অব্যক্ত ব্যথা হোসেনের যেন আসিয়া ভিড়িল হৃদে।
“হায় হায় হায়! কি করলি তুই ওরে নিষ্ঠুর প্রাণ,
নিষ্পাপ এই শিশুটির বুকে কি করে মারলি বাণ।
তোদের প্রাণে কি বিচার মালিক আল্লাকে নেই ভয়,
হাশরের মাঠে কি দিবি জবাব” হোসেন কাদিয়া কয়?
শিশুর দেহটি রক্তে ভাসিছে মর্মান্তিক ছবি,
সেদিন আকাশে লজ্জায় যেন আলো দিতেছিল রবি!
কি দিব জবাব বানুর নিকটে, কি দিয়া দেখাইব মুখ?
এই সব কথা ভাবিয়া হোসেন কেঁদে ভাসাইছে বুক।
শিশুর লাশটি বক্ষে লইয়া হোসেন চলিল ফিরে,
সাহারার কাছে যাইতে যেন সে হাটিতেছে ধীরে ধীরে।
তোমার শিশুটি বেহেস্তে গেছে হোসেন যখন কন,
সাহারা শিশুর শোণিত দেখিয়া ভূতলে পতিত হন।
হয়ত সেদিন কাদিল আকাশ, কাঁদিল ভুবনময়,
হোসেনের এই মহা বলিদান রবে চির অক্ষয়।’

লেখা : Shibli Sayeek (শিবলী সাইক)

Send private message to author
What’s your Reaction?
0
4
0
0
0
0
0
Share:FacebookX
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!