টফুঃ ইতিহাস,প্রকারভেদ এবং ব্যবহার

কোরিয়ান চলচ্চিত্র অথবা সিরিজ যারা নিয়মিত দেখে থাকেন তারা হয়তো টফু (Tofu) নামক খাদ্যটির সাথে পরিচিত। আবার যারা নিরামিষাশী কিংবা ভিগান তারাও এই খাদ্যদ্রব্যটি সম্পর্কে বিলক্ষণ ধারনা রাখেন আশা করি।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশের খাদ্যপ্রণালীতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে টফু। ভাজা,রান্না বা বিভিন্ন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় এই টফু। মাংসের বিকল্প হিসেবেও আজকাল টফু এর ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজকাল শহরের অনেক রেস্তোরাঁতে কোরিয়ান খাবার রামেন বা স্যুপ জাতীয় খাবারে টফুর দেখা মেলে।

টফু কী?

টফু মূলত এক ধরনের উদ্ভিজ্জ প্রোটিনজাতীয় খাদ্য যার অপর নাম বিন-কার্ড। এটি তৈরী হয় curdled soya milk বা জমাটবদ্ধ সয়াদুধ থেকে। ইপসম লবণ বা লেবু সহযোগে ফুটন্ত সয়া দুধকে জমাটবদ্ধ করে তৈরী করা হয় টফু। আকার-আকৃতি এবং রং এর দিক থেকে এটি দেখতে অনেকটা পনিরের মতো কিন্তু পনিরের সাথে এর রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাত। Tofu একটি জাপানী শব্দ যেটি চীনা শব্দ Dofu থেকে এসেছে। চীনা ভাষায় ‘Dou’ অর্থ বিনস এবং ‘Fu’ অর্থ পঁচানো।

টফুর ইতিহাসঃ

টফুর উদ্ভব বা আবিষ্কার সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু এটি নিশ্চিতরুপে বলা যায় যে, টফু সর্বপ্রথম উদ্ভাবিত হয় চীনে। তবে বিশ্বাসযোগ্য তিনটি তত্ত্বের কথা জানা যায়।

তত্ত্বগুলোের মধ্যে সব থেকে বিখ্যাত যেটি তা হলো চীনা রাজকুমার লিউ আন সর্বপ্রথম টফু আবিষ্কার করেন। কেউ বলেন অমরত্বের ঔষুধ আবিষ্কার করতে গিয়ে তিনি টফু তৈরী করে ফেলেন আবার কারও কারও মতে, তিনি তার অসুস্থ্য দাদীর জন্য সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার তৈরীর উদ্দ্যেশ্যে টফু আবিষ্কার করেন।। লিউ আন ছিলেন, হান সাম্রাজ্যের রাজকুমার।

অপর একটি তত্ত্বে বলা হচ্ছে, চীনারা মঙ্গোলিয়ান উপজাতির কাছ থেকে পনির বানানোর কার্যপ্রণালী শিখে সেটি সোয়া-দুধের উপর প্রয়োগ করেছিলেন, যার মাধ্যমে জমাটবদ্ধ সয়াদুধ পরবর্তীতে টফু নামে পরিচিত হয়। ঐতিহাসিক William Shurtleff and Akiko Aoyagi এই তত্ত্বের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলেছেন, চীনারা সাধারণত দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে তেমন দক্ষ নয়। সুতরাং উত্তরে বসবাসকারী মঙ্গোলিয়ান উপজাতি দের কাছ থেকে তারা দুধ জাতীয় পণ্য উৎপাদনপ্রণালী শিখে থাকতে পারেন এবং এটাই স্বাভাবিক।

তৃতীয় তত্ত্বমতে, টফু আবিষ্কার করেছিলেন কিছু কিছু পেশাদার চীনা পাচক। তারা তাদের পরীক্ষা মূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সয়াদুধ হতে টফু তৈরি করেছিলেন। যুক্তি হিসেবে বলা যায়, টফু দুর্ঘটনাবশত তৈরি হয়ে থাকলে এর আকার আকৃতি এবং গঠন এতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো না। সুতরাং, টফু তৈরীতে অবশ্যই দক্ষ কারো হাত থেকে থাকবে।

টফুর প্রকারভেদঃ
টফু মূলত অনেক রকমের হয়ে থাকে। তবে প্রধাণত পাঁচ প্রকারঃ

১। Silken,
২। Regular,
৩। Firm,
৪। Extra-firm
৫। Super-firm.

১। সিল্কেনঃ

এর অপর নাম জাপানী স্টাইল টফু। এটির মধ্যে পানির পরিমাণ সব থেকে বেশি। এটি সিল্কের মতোই মসৃণ। খানিকটা পনিরের মতো এটি। কখনো কখনো এটিকে ভারি ক্রিমের মতো স্মুদি, চিজকেক ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।

২। রেগুলার বা নিয়মিতঃ
সাধারনত এ ধরনের টফু ব্যবহৃত হয়ে থাকে বেশি। এটি সিল্কেন টফুর তুলনায় কম নরম এবং পানির পরিমাণও কম। সস বা ঝোলের স্বাদের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে বিধায় নুডুলস সুপ বা স্টুতে ব্যবহার করা যায়। তবে এটি ভাজার উপযোগী নয়।

৩। ফার্ম
সুপারশপ গুলোতে যে ধরনের টফু পাওয়া যায় তারা সচরাচর এ শ্রেণির। ফার্ম টফু তরলের মধ্যে ভরে প্যাকেটজাত করা হয়। এধরনের টফু সবথেকে জনপ্রিয়। ভাজা, রান্না, স্যুপে বা নুডুলসে টপিং হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়।

৪। এক্সট্রাফার্মঃ

পানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। এ ধরনের টুফো ভাজা, রান্না, ডুবো তেলে ভাজা ইত্যাদি করা যায়। তবে এ ধরনের টুফো ম্যারিনেডের উপযোগী নয়।

৫। সুপারফার্মঃ

যারা নিরামিষাশী বা ভিগান তারা মাংসের বিকল্প হিসেবে এ জাতের টফু ব্যবহার করে থাকেন। মাংসের মতোই এটি রান্না, ভাজা, সেদ্ধ সবই করা যায়। কারন এটির গঠন এবং ঘনত্ব কিছুটা মাংসের মতো। তবে এটি সহজ প্রাপ্য নয়।

টফু সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

সুপার মার্কেট থেকে কেনা টফুগুলো প্যাকেট করার সময় তা পানিতে ভাসমান থাকে। ব্যবহারের পর বেঁচে যাওয়া টফু তাই পরিষ্কার পাত্রে ঠান্ডা পানিসমেত ফ্রিজে রেখে দিয়ে দুই-তিনদিন সংরক্ষণ করা যায়।

রুপচর্চায় টফুঃ

টফুর মূল উপাদান সয়া দুধ বা সয়াবিন যার অন্যতম একটি উপাদানের নাম স্যাপোনিন। স্যাপোনিন ত্বকের মরা কোষ দূর করে, জমে থাকা ময়লা বের করে দেয়। এছাড়া টফুতে রয়েছে অ্যামিনো এসিড গ্লাইসিন, আইসোফ্ল্যাভন এবং অন্যান্য প্রোটিন যা ত্বক টানটান করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে ব্যবহারের আগে এটি আপনার ত্বকের সাথে মানানসই কি না জেনে নিতে হবে। ত্বকে দিলে যদি জ্বালা করে তবে না দেয়াই ভালো। সিল্কেন টফু এবং খানিকটা টকদই মিশিয়ে নিলে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়।

আমাদের দেশে টফু খুব একটা প্রচলিত নয়, তবে পুষ্টিগুনের কথা মাথায় রেখে এবং স্বাদ বদলের জন্য প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় এটি সংযুক্ত করাই যায়।

Maliha Tabassum Momo

Send private message to author
What’s your Reaction?
2
5
0
0
0
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Maliha Tabassum Momo
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Swapnil Barua
Guest
Swapnil Barua
4 years ago

Nice

1

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!