শাইখ সিরাজ (০৭/০৯/১৯৫৪) একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক, কৃষি উন্নয়নকর্মী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভূগোল বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করলেও কৃষি উন্নয়ন ও সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। কৃষি সাংবাদিকতাসহ নানামুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনে জাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ” নামে কৃষি উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে নিজস্ব মালিকানাধীন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’-তে ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ নামে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করা শুরু করেন।
খোরপোষ কৃষি থেকে আধুনিক বাণিজ্যিক কৃষির রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণবিদ ও কৃষিনীতি প্রণেতাগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি কাজটি করে থাকেন দেশের অসংখ্য ছোট বড় কৃষি উদ্যোক্তা, যারা কষ্টার্জিত পুঁজি সংস্থান করে ও ঝুঁকি নিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির সমাহার ঘটিয়ে বিনিয়োগ করে থাকেন। এজন্য তাদের অভিজ্ঞতা, উৎসাহ ও সাহস সবই দরকার। তাত্ত্বিক জ্ঞান ও সৎ পরামর্শের সাথে সাথে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের আরও বেশি প্রয়োজন আধুনিক খামার ব্যবস্থার চাক্ষুষ উদাহরণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে এ সুযোগগুলো বেশ কম। শাইখ সিরাজ এ শূন্যতা অনেকাংশে পূরণ করে চলেছেন।
ঝিনাইদহের সাধুহাটি আহসাননগরের হরিপদ এক গোছা ধান ফলিয়ে পৃথিবীকে কী জানাতে চেয়েছিল? হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদীর বিস্তীর্ণ মাঠ কেন বলেছিল, এখানে জয়ী হবে ফল ফসলের অদ্ভুত আহ্বান? রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মাহফুজ কীভাবে ভেবেছিলেন হড়হড়ে শুকনো মাটিতে পুকুর কেটে ফলানো যাবে লাখ লাখ টাকার মাছ? টাঙ্গাইলের মীর্জা লিপি কেন জীবন সঙ্গী করলো ব্যাঙের ছাতাকে? একে একে শত সহস্র অযুত নিযুত হয়েছে গল্প।কৃষিজীবীদের আবিষ্কার করা এ ধরণের বিস্ময়কর কাহিনী চাপা পড়ে থাকে লোক চক্ষুর অন্তরালে। শাইখ সিরাজ কৃষকদের আবিষ্কার করা এসব বিস্ময়কর ঘটনাগুলো তথ্যসমৃদ্ধ ভাবে উপস্থাপন করেন তার “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ” অনুষ্ঠানে।
তাছাড়া একজন কৃষক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবুও, একজন গরীব কৃষক কত দুর্দিনের মধ্য দিয়েই জীবন অতিবাহিত করেন। তারা থাকেন স্বাস্থ্যহীন, উৎসাহহীন ও নিরন্ন। তাদের ঘরের চালে থাকে না খড়, পরণে থাকে না বস্ত্র, বৃষ্টির জলে তাদের সর্বস্ব যায় ভিজে। তাদের সংসার বলতে বোঝায় শতচ্ছিন্ন কয়েকখণ্ড কাঁথা, স্যাঁতসেঁতে ঘর, একখানা জীর্ণ পাটি ও অস্থিচর্মসার নগ্নদেহের দু-চারটি শিশু। ঠিক এমনই দুরবস্থার মধ্যে থাকেন আমাদের দেশের কৃষক। তাদের এ দুরবস্থা থেকে বের করে এনে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছেন শাইখ সিরাজ।
এছাড়া, চিরদুঃখী কৃষকদের মাঝে একবিন্দু আনন্দ দেওয়ার জন্য তিনি প্রতিবছর কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে থাকেন, যেটা টিভির পর্দায় বাংলাদেশের “চ্যানেল আই”তে দেখানো হয়। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যম কৃষকরা লাভ করেন নির্ভেজাল আনন্দ আর আমরাও মেটাতে পারি বিনোদনের খোরাক।
কৃষিতে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এএইচ বুর্মা অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকসহ দেশি বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
তিনি দেশে বিদেশে এত সম্মান কুড়িয়েছেন, এত অর্থ সম্পদ অর্জন করেছেন, তবুও তাঁর মধ্যে অহংকারের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। তিনি কৃষকশ্রেণির মানুষের সাথে মিশতে, কথা বলতে এবং তাদের নিয়ে কাজ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। ছবিতে দেখতে পাচ্ছি, তিনি একজন কৃষকের সাথে মাঠে বসে কিভাবে কথা বলছেন।
লেখা : শিবলী সাইক (Shibli Sayeek)
Send private message to author






