সকালের মিষ্টি রোদ নাকি বয়স্কদের কাছে অনেক আরামের এবং পছন্দের হয় ,কিন্তু সাত্তার সাহেবের তার পায়ের কাছে পড়া এই মিষ্টি রোদ মোটেই ভালো লাগছে না। তবে এর কারণ ,নাতির জন্যে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার জন্যও হতে পারে ।সাত্তার সাহেবের নাতি রোহান শহরে এক নামিদামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রোহানকে ভাষা আন্দোলন উপলক্ষে একটি আর্টিকেল জমা দিতে হবে। তাই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে ভালোমতো জানতে সাত্তার সাহেবের সাথে কথা বলতেই সকাল-সকাল সাত্তার সাহেব কে ঘুম থেকে উঠিয়েছে রোহান। যদিও দাদুকে ডেকে নিজেই কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গিয়েছে রোহান ,তাই অপেক্ষা করতে হচ্ছে সাত্তার সাহেবকে। দশ মিনিট পর শুরু হলো তাদের কথোপকথন, রোহান: দাদু ,আমি ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সব কিছুই জানি তারপরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই মিটিং। সাত্তার সাহেব: ঠিক আছে, তুই যা জানিস সিরিয়ালে বলা শুরু কর। রোহান: তার আগে আর্টিকেল এর একটা ভালো নাম বল? সাত্তার সাহেব: ৮ই ফাগুন রাখ। রোহান: ৮ই ফাল্গুন আবার কি? সাত্তার সাহেব: ১৯৫২ এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ৮ই ফাল্গুন,১৩৫৮ ছিল। রোহান:ওকে,কুল।ভাষাটা সমস্যা প্রথম শুরু হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের এক বক্তৃতার পরে। সাত্তার সাহেব: না, ঢাকা পল্টন ময়দানের ওই বক্তৃতার আরো কয়েক বছর আগে, ডক্টর. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর “পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা” লেখনীর পর থেকেই ভাষার এই সমস্যা ধীরে ধীরে শুরু হয়। রোহান :বক্তৃতার পরে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত হয়। সাত্তার সাহেব: হরতালের পরিকল্পনা পুরো মাস জুড়েই ছিল, কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ফজলুল হক হলের এক কামরায় বসে কিছু ছাত্র যখন শুনতে পেল “হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে” তখনই সিদ্ধান্ত হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে হরতাল করার। রোহান: এই হরতালে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়। সাত্তার সাহেব: না ,একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই ঢাকার শহরতলী থেকে স্কুলের ছাত্র জমায়েত হতে শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১ টায় যার সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ হাজারের মতো। রোহান: এই হরতালে পুলিশের গুলি চালায়। সাত্তার সাহেব: (রোহানের কথা থামিয়ে) প্রথমে নানাভাবেই হরতাল ছত্রভঙ্গ করে। এরপর কাঁদানো গ্যাস ছোড়ে। এরপর ঠিক বিকাল ৩ টা ১০ মিনিটে গুলি ছোড়ে আর ওদের গুলি ছোড়া এমন ছিল যে, মর্গে যখন শহীদ বরকতের লাশ আসে তখন দেখা যায় ,লাশটির মাথায় অর্ধেকটাই নেই ।ঘাড়ের পাশের মগজটুকু আলাদা করে রাখা। রোহান: আর এই গুলিতে মারা যায় সর্ব মোট ৫ জন। সাত্তার সাহেব: না ,রাত আড়াইটার দিকে সশস্ত্র পুলিশ আর সেনাবাহিনীর এসে জোর করে মর্গ থেকে ছাত্রদের লাশ নিয়ে যায়। আর গুলিতে আহত অবস্থায় অনেকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায় যাদের পরবর্তীতে কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রোহান: (বিরক্তির স্বরে)you talk too much and give too unnecessary information.I don’t need these.I went. সাত্তার সাহেব তার নাতির ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে “সবকিছু জানি”এই কথাটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন,হঠাৎ করে তার পায়ে আবার সেই মিষ্টি রোদ এসে লাগলো কিন্তু এবারও তার এই মিষ্টি রোদ ভালো লাগছেনা। তাহলে কি সাত্তার সাহেব এখনো বুড়ো হয়ে যাননি??
-Rafid Hossain
Send private message to author


