কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই এক ধাক্কায় রাহেলা বেগমকে মেঝেতে ফেলে দিলেন বোরখা পরা এক যুবতী। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাতে থাকা ব্যাগ থেকে কেরোসিনের বোতল বের করে তার থেকে কিছুটা কেরোসিন রাহেলা বেগমের শরীরে আর আশেপাশের আসবাব, পর্দা, দরজা এমনকি নিজের শরীরেও ছিটিয়ে দিয়েছে। মেইন দরজার ছিটকিনিও আটকানো শেষ।
রাহেলা বেগমের চিৎকারে তার ছেলে মেয়ে সবাই ছুটে আসে ড্রইং রুমের দিকে। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা ব্যাগ থেকে একটা দিয়াশলাই বের করে মেইন দরজা ব্লক করে রেখেছে।
বাকিদের দেখে তাদের দিকেও তাক করে অপর হাত দিয়ে কেরোসিন ছিটাতে থাকে মেয়েটা। কোরবানির ঈদ হওয়ায় ছেলে-মেয়ে, ছেলের বৌ সবাই আজ বাড়িতে রয়েছে। ঈদের মাংস রাহেলা বেগম নিজ হাতে ভিক্ষুকদের দান করেন, আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে মেয়েটা।
বাকিরা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই মুখের নেকাব সরালো মেয়েটা।
আরে, এ তো রাহেলা বেগমের বড় ছেলের প্রথম স্ত্রী শিলা! যে কিনা তিন বছর আগে বাড়ির সব গহনা নিয়ে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। থানায় জিডি ও করেছিল সেই সময়ে রাহেলা বেগমের পরিবার।
এর প্রায় ছয় মাস পর আবারও সেই ছেলেকে বিয়ে করিয়ে নতুন বৌ আনেন রাহেলা। সেই ঘরে এখন তিন মাসের ছোট একটা বাচ্চাও আছে।
রাহেলাঃ কিরে তোর এত্ত বড় সাহস! এই বাড়ির দরজা আবার পার করলি কোন সাহসে?
শিলাঃ এতদিন তো ভয়ে ভয়ে অনেকবার মরেছি, আজ সত্যিকারের মরা মরবো, তবে আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে। নিজেরাই মেরে বাড়ি থেকে বের করলেন, মিথ্যা অপবাদ ও দিলেন। কি অপরাধ ছিল আমার?
রাহেলাঃ দশ লাখ টাকা যৌতুক কি তোর বাপ জোগাড় করতে পারছিলো? আমার ছেলে কি এতই সস্তা?
শিলাঃ না, আপনার ছেলে, আপনার পরিবার অনেক দামী। কতটা দামী, তা এতক্ষণে নিজ মুখেই স্বীকার করলেন। আর সবাই জানতেও পারলো আপনার ছেলের দাম দশ লাখ টাকা। থানায় মামলা করে আমি কখনোই জিততে পারতাম না জানি। আমার বাবার সেই টাকা ও নেই কেস চালানোর। তাই আজ জনতার আদালতে বিচার দিলাম। ওই যে আজকাল ফেসবুক লাইভ বলে একটা খুব জনপ্রিয় জিনিস আছে না? এতক্ষণ লাইভেই ছিলাম। এই দেখেন, আমার ফ্রেন্ডলিস্টের সবাই এতক্ষণে কয়েক হাজার শেয়ার ও দিয়ে ফেলছে। সবাই অন্তত আপনাদের মত যৌতুক লোভী পরিবারকে তো চিনলো।
-সমাপ্ত।






