স্কুল। যে স্কুল সবার, সকলের। স্কুলের বারান্দার সামনে টাঙানো পতাকাটিও সবার। এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। নেই কোন হিংসা বিদ্বেষ, উষ্কানি।
স্কুলে সকল ধর্মের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। পাশাপাশি বসে। খুব কাছাকাছি বন্ধুত্ব হয়। খেলাধুলা করে, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে।
চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে মিঠু আর নিমাই। খুবইভালো বন্ধুত্ব ওদের। পাশাপাশি বসে, খেলাধূলা-দৌড়াদৌড়ি করে, ছবি আঁকে। দোকানের বিস্কুট, চানাচুর, লজেন্সও ভাগাভাগি করে খায়। আবার ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়াও করে। কিছুক্ষণ পরে মিলেও যায়। সত্যি! প্রকৃত ভালোবাসা ছেলেবেলার বন্ধুত্বে। যেখানে কোন দৈন্যদশার চিহ্নটুকুও নেই।
ঈদের মধ্যেও নিমাই মিঠুদের বাড়িতে গিয়ে আনন্দ মশকারি, খাওয়া দাওয়া করে। সারাদিন একসাথে গ্রামের এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করে।
পুজোতেওও মিঠুকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে। দু’জনে একসাথে ঠাকুর দেখে। নাচগান দেখে। পাঁপড় ভাজা কিনে খায়।
মিঠুর আব্বু সরকারি চাকুরিজীবী। শহরে থাকে। প্রতিমাসেই চকলেট বিস্কুট নিয়ে আসে। চকলেট নিয়েও ওদের দু’জনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
নিমাইয়ের বাবা খেটে-খাওয়া মানুষ। মাঝেমধ্যে বাজার থেকে জিলাপি আর মুড়ির মোয়া নিয়ে আসে। এখানেও চলে দুজনের ভাগাভাগি।
কিন্তু, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নিমাইয়ের বাবার কোন কাজকর্ম নেই। গোছানো যেটুকু টাকাপয়সা ছিলো সেটাও শেষ। খুবই কষ্টে দিনপাত করছে।
মিঠুর আব্বু বেতন পাচ্ছে। ঝুঁকি ভাতাও পাচ্ছে। শহর থেকে ছুটি না পেলেও খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছে ওদের।
মিঠুদের বাড়ির দশ বাড়ি পরে কেউ একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এনিয়ে জয়নব বেগম চিন্তায় অস্থির। ছেলে-মেয়েকে বাড়ির যেতে নিষেধ করেছে। কিন্তু মিঠুকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে।
জয়নব বেগম – মিঠু, তোমাকে না বারবার বলেছি বাড়ির বাইরে যাবে না। তবুও তুমি…।
মিঠু – কেন আম্মু? যাবো না কেন?
জয়নব বেগম – কেন আবার, তুমি শোন নাই যে আমাদের বাড়ির দশ বাড়ি পরে একজন আক্রান্ত হয়েছে।
মিঠু – শুনেছি আম্মু। তুমি দশ বাড়ি পরের বাড়ির খোঁজখবর ঠিকই রেখেছ। কিন্তু আমাদের বাড়ির সাথেই নিমাইদের বাড়ি তুমি একবারও খোঁজখবর নিলে না। নিমাই বলেছে ওরা নাকি না খেয়ে আছে।
মিঠুর চোখে অশ্রুজল। হাতের মুঠো থেকে লুকানো চকলেটগুলো পড়ে গেলো।
জয়নব বেগমের মুখটি চুপসে গেলো নিমেষেই। মুখউজ্জ্বল বর্ণের চাহনিটি নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে গেলো।
What’s your Reaction?




