হামজা ম্যান

মনটা আজ খারাপ! না এইটা ডেইলি ই থাকে আজকে একটু বেশীই খারাপ ।।

ম্যানি ব্যাগ এর টাকা গুলাম ৪৭৫ টাকা হুম হয়ে যাবে..আজ আর বাসায় ফিরবো না, যেখানে রাত ওইখানেই কাইত নিয়ত এ বের হলাম…

ম্যানি ব্যাগের টাকা আগে কখনই গুনতামনা আজ গুনার কারন কিপটামি করে চলতে হবে…

ম্যানিব্যাগ আর মোবাইল ব্যালেন্স কখনোই চেক করি না..চেক করলেই দেখবেন আপনার মন খারাপ হবে কারন এখানে এমাউন্ট শুধু কমেই..

বাসা থেকে বের হতেই আমাদের এক্স দারোয়ান তোতা মিয়ার সাথে দেখা, নিলয় ভাই কই জান?

জানি না..আপনে কই জান??

আমার টয়লেট চাপসে গ্যারেজ এ যাই..

আপনে কই যান কইলেন না??

তোতা ভাই মনটা খুবই খারাপ কই যাই জানি না…আপনে চাইলে আপনার সাথে টয়লেট এও যাইতে পারি।

আপনের ভাই মনটা ভালো আছিলো কবে??

এইটা শুনার পরে মনের ডাবল মেজাজ খারাপ হয়ে গেল..

তার মানে কি আমি আসোলেই দিন দিন লেইম হয়ে যাচ্ছি?

আজ কাল তোতা মিয়াও আমার লেইমনেন্স ধরায় দিচ্ছে?

চিন্তা করতে করতে খামারবাড়ির চত্তর পার হচ্ছি..

চিন্তা করলাম বাসার সামনে সংসদ ভবন অথচ জীবনেও আজাইরা ওইখানে যাই নাই আজ যাই…

একা হাটা খুবই কষ্টকর গলায়ও কাশি তাও পনেরো টাকা খরচ করে একটা সঙ্গি নিলাম..।।

কত্ত মানুষ আহা সবাই এখানে দেখি খুশি কেও প্রেমিক-প্রেমিকা কেও স্বামী-স্ত্রী কেওবা তাদের  কানের কাছে বাদাম বাদাম করা ব্যক্তি..

এই বাদাম ওয়ালারাও না রোমান্টিক টাইমটাতেই কেমনে জানি আসে.. তারা আসোলে মিচকা শয়তান তারা জানে সঠিক সময় হানা দিতে পারলে

বাদাম না খাইতে চাইলেও ৫ টাকার বাদাম কিনে তারে বিদাই করে পূনরায় 

রোমান্টিকতায় মন দিবে কপোত কপোতীরা..।।

মজাই পাচ্ছিলাম, আমি যে এই তামশা দেখতেসি এইটা আবার বাদাম ওয়ালা খেয়াল করসে আগেই,

সে ৫ টাকার বিক্রি করে আমার দিকে চোখ টিপ মূলক একটা হাসি দিলো ব্যাপার টা এমন দাড়াইসে যে আমরা যৌথ মিচকামীতে ৫ টাকা ইনকাম করলাম… 

নীজেরে আরো নীম্নশ্রেনীর লেইম মনে হল সালা আজকাল বাদাম ওয়ালার চিটকারিও খাওয়া লাগে…

না এখানে আর থাকা যাবে না মতিঝিল টু নবিনগর বাস দেখেই ভাবলাম তাইলে আজ জাহাঙ্গীরনগর যাই গিয়া ভাইবেরাদর তোহ আছেই..

কনফার্ম হওয়ার জন্য দিলাম ফোন- 

রুশাম মামা কই তুই?

আস্তে কইরা জানি কি একটা জায়গার নাম বললো

কই তুই এই ব্যাট্টা জোরে ক.. 

ধানমন্ডি আছি(নরমাল সময়ের চেয়ে ভয়েজ লেগেল এই মূহূর্তে সাত গুন ডাউন) 

কেমন জানি সন্দেহ হলো সিওর কোন মেয়ে নিয়া ডেটিং এ আছে অন্য সময় অমিতাভ মার্কা গলা নিয়া যে কানের কাছে ঘে ঘে করে কথা বলে আজ সে এত্ত ভদ্র??

মন ভালো না থাক আজ আর তারে প্যাচাইলাম না এমনেও ও আমার কাছে বলবে না…

জাবিতে পড়া আরো ২জনরে নকাইলাম কেওই ক্যাম্পাসে নাই..

শালার কপাল কই যাই কই যাই ভাবতে ভাবতে আরেকবার পনেরো টাকা নষ্ট করিলাম ঠিক তখন থেকেই আসোল ঘটনা শুরু..

আমার সামনেই এক সিনজি থামায় মামা নামতে নামতে নীজেরেই বলতেসে শালার এই উইনিফরম পইড়া সিএনজি চালাইলে মনে হয় ইস্কুলে যাইতেসি দল বাইধা.. না আছে স্মাটনেস না আরাম…ধুর

তার প্রথম কথাটাই  ভালো লেগে গেলো, এটাকে কি ভালোলাগা এট ফ্যাষ্ট সাইড বলা যায় না?

যাইহোক সেও আমার পাশে এসে লেটকি দিয়াই বসছে… 

আপন মনে বিড়ি খাইতেসে..  একটা বিড়ি খাইতে খাইতেই তার কাছে ৮-১০ জন আইসা জিজ্ঞেস করসে কিন্তু সে কোথাও  যাবে না.. 

গার্লফ্রেন্ড পাশে থাকলে সব ছেলেদেরই একটা ইমপ্রেস করার ব্যাপার থাকবে সেটা যেকোন কিছুতেই, এই মনে করেন গার্ল ফ্রেন্ডের সামনে তাড়াতাড়ি রিক্সা করার মধ্যেও ।।

এই মূহুর্তে সেই কাপল আমাদের সামনে দাড়ায় আছে যার জন্য একটু আগে বাদামওয়ালার কাছে টিটকারি খেয়েছি.. 

মামা চলেন মিরপুর ৩০০ দিবো.. সিএনজি ওয়ালা তাও যাবে না…।।

সংসদ ভবন থেকে মিরপুর ৩০০ তাও গেলো না??

আমি ভাব নিয়া জিজ্ঞেস করলাম কাহিনি কি মামা যাও না ক্যান?? 

মামার উওর আই এম টেকিং রেষ্ট,

আমি কই খাইসে কাকায় তোহ সেই মাল

সিএনজির জমা উঠায় লাইসো আজ না??

না নীজের গাড়ি সো প্যারা নাই টেকা পয়সার…আর এত্ত টেকা দিয়া কি হইবো??

আমি মনে মনে এইতোহ পাইসি ভবের লোক…

সে আমারে জিজ্ঞেস করলো আপনে কি করেন ?

আমি অনার্স করি

হুইচ ক্লাস??

দেয়ার ইজ ইয়ার সিষ্টেম (সিএনজি ওয়ালার চেয়ে বেশী ইংলিং পারি এটা বুঝানো উচিত)

আমি যা বুঝাতে চেয়েছি তুমি বুঝেছো না?স্পোকেন ইংলিশে কোন ভুল নাই.।।

খাইসে ইংলিশ এ অনার্স করা বন্ধু হাসানের 

এর সেইম ডায়লগ মামা দিলো.. আগ্রহ বাড়তেই আছে..

কতটুকু পড়সেন? 

বেশী না মাত্র ক্লাস ৮ কিন্তু কয়বছর বিদেশ ছিলাম ওইখানে ইংলিশে টকিং করা লাগতো তাই আমার ইংলিশ জানা আছে একটু আধটু 

ও আচ্ছা..।।

তার সাথে আড্ডা আরো জমে গেল.. পরে অবশ্য 

যত কথাই হচ্ছে সবই অদ্ভুত টাইপ..

আমি মনে মনে একটা ডিসিশন নিয়ে নিসি মামায় যখন আশুলিয়া থাকে কোন মত পটায় ওইদিক যাবো দেন একটা বড় ভাই আছে ৬ বছর ধরে বলতেসে তার বাসায় যেতে কিন্তু যাওয়া হয় নাই আজ সারপ্রাইজ দিবো , চামে আমার ভিয়াইপি ভাবে ফ্রি থাকাও হইলো… 

মামা-পরিবারে কে কে আছে?

আমি-কেও নাই এতিম.. 

বাপ মা ২জনই রাইক্ষা গেসে গা?

হুম।।

চল কেমনে?

বাপ কিছু রাইক্ষা গেসে আর মিডিয়ায় টুকটাক কাজ করি..

ও অভিনয় তোহ আর করো না মিডিয়ায় কি করো? 

অভিনয় যে করি না এইটা তুমি সিওর দিলা কেমনে? 

ওমা টিভিতে যারা আহে তারা কি এমনে মাটিতে লেটকি দিয়া বইয়া থাকবো? এইটা তাহ কমনসেন্স ।।

হুম আমি এসিষ্ট করি ডিরেক্টরদের…

এই দুনিয়ায় আমারও কেও নাই.. আমিও টুকটাক কাজ করি পেট ভরার জন্য.. আমার তেমন চাহিদা নাই তাই মুডের উপর ড্রাইভ করি বুঝলা…।।

বউ পোলাপাইন কই?

রোড এক্সিডেন্ট এ মইরা গেসে..শশুর বাড়ি থেকে আসতেসিল তারা, ২ বছরের কন্যা ছিল আমার তখন আমি বিদেশ থাকি তাগো দাফন করতে আইসি আর যাই নাই.. তারাই নাই টেকা দিয়া কি আর করুম ??

হুম খারাপ লাগলো

খারাপ লাগার কিছু নাই এটাই বাস্তব.. 

এই লাইন শুনার পরে সাকিব খানের এটাই সাইন্স লাইনটা মনে পড়লো…

সিএনজি মামা কড়া ভাবে জিজ্ঞেস করলো কই যাইবেন আপনে?

সত্যি কথা বলি?? আমি মনে মনে আপনের সাথে যাওয়ার প্লেন করতেসি আমার আজ মনটা অনেক খারাপ

বাসার বাইরে কোথাও থাকবো যেখানে চুপচাপ অন্ধকারে হাটা যাবে…

হাটলে মন ভালো হবে??

না ডাক্তার বলসে কয়দিন পরে আর হাটতে পারবো না,হাটূর অবস্থা ভালো না,অপারেশন একটা করসিলাম আরেকটা করা লাগবে

 তাই আমি সব ধরনের ফিনিংস নিতে চাই যখন যেটা মাথায় আসে..

তাইলে চলেন আমার বাসায় থাকবেন একসাথে খাওয়া দাওয়া কইরা সুখ দুখের আলাপ পারবো..

আমার মনে কেন জানি আমাকে ক্ষতি করবে এমন কোন চিন্তাই কাজ করে নাই.. 

আমার কেও নাই বলার কারন ও এটা,যেহেতু তার সাথে যাবো সে খারাপ হলে কিডনাপ করতে পারে কেওই নাই আমার কিডন্যাপ কইরাই টাকা চাবে কার কাছে? 

বড়জোর ফোন ২টা রাইক্ষা দিতে পারে আর গে হইলে…আল্লাহ ভরসা 

চললাম এক অপরিচিত লোকের সাথে রাত্রি যাপনে..  লাষ্ট ২বছর ধরে জীবন অনেক সারপ্রাইজ দিচ্ছে তাই আজকাল সারপ্রাইজ ও আর অবাক লাগে না..  ।।

খারাপ কিছু হলে সেটারও একটা অভিজ্ঞা হলো কি বলেন?

বলাই হয় নাই মামার নাম হামজা। আমির হামজা…

হামজা নাম শুনলেই দানব দানব মনে হয়।।

অবশ্য তার একটা কারনও আছে।

দেশে কোন লঞ্চ ডুবলে তাকে উদ্ধার করার জন্য হামজা আর রুস্তম নামের দুইটা লঞ্চ আছে।এটা নিয়ে একটা মজার ঘটনাও আছে খুব ছোট বেলায় একবার খবরে শুনলাম এমন লঞ্চ ডুবে গেছে তাকে উদ্ধার করতে হামজাকে ঢাকা থেকে পাঠানো হচ্ছে তখন আবার টিভিতে শক্তিমান হইতো  সবমিলায় আমি খুশি যাক ইন্ডিয়াতে শক্তিমান আর দেশে হামজাম্যান..কোন বিপদ নাই তাইলে।

বাবাকে জিজ্ঞেস ও করসিলাম একবার

বাবা হামজার যে এত্ত শক্তি খায় কি?

বাবাও উওর দিয়েছিল  ভাত খায় শাক সবজি দিয়া গোশত কম খায়।(বাবা সেদিন স্কুলের দপ্তরি হামজার কথা বলসিলো) 

শাক-সবজি?এখন বুঝি আসোলে ছোট বেলায় এইটা ক্যান বলসে…।

তারপর থেকেই হামজা নাম শুনলেই দানব একটা ব্যাপার মাথায় আসে প্রথমে…।

এই হামজা মামারেও এই ঘটনাটা বললাম,

সে একটুও মজা পায় নাই ,সবশুনার পরে তার উওর হামজা নামে লঞ্চ আসে এইটা মাত্র জানলাম।তার মাথায় সেই প্রথম লাইন আটকায় আছে তাই সে পরের কথায় মনযোগ দেয় নাই।

আমার যেমন হামজা শুনলেই দানব মনে হয় তেমনী পুরা কথা না শুনে ভাবতে শুরু করলে পরের কথা কানে ঢুকে কিন্তু এটা ব্রেন পর্যন্ত যায় না..

সিএনজি হার্ড ব্রেক শ্যামলীর সামনে।

মামা -চলো হামজারে দেইক্ষা আসি

আমি-এখন সদরঘাট যাইবা?এই জ্যাম ঠেইলা?

-হ গ্যাস গেলে আমার যাইবো কোন সমস্যা?

-না চলো আমিও সামনা সামনি দেখি নাই আমারও শখ পুরন হইলো হামজাম্যান দেখার।দাড়াও ভাই সাব কই আছে একটা ফোন দিয়া শুনি পরে না পাইলে?

-১ বছরে কোন লঞ্চ ডুবে নাই কই আর সদরঘাটেই রোদ পুহায় হয়তো।

আমি দিলাম প্রোডাকশন ম্যানেজার আতিকরে ফোন তার বাসা সদরঘাট সে একটা খবর জানাইতে পারবে অবশ্যই।

তার বাড়ি যদি শ্রীমঙ্গল ও হইতো তাও সে একটা সঠিক খবর দিতে পারবে এই প্রডাকশন ম্যানেজাররা জানে না আর পারে না কোন কাজ নাই। সাড়া দিন শুটিং এ অমানুষিক পরিশ্রম করে তারা তাও তাদের মুখে হাসি লেগে থাকে কারন এই হাসি দেখায়ই তার পরের কাজ নিশ্চিত করতে হয় পেট বাঁচাতে।

আতিক- নিলয় ভাই কেমনে এই গরীবরে মনে পড়লো?(এটা বলা বংগালীর অভ্যাস কটিপতি হইলেও কেও ফোন দিলে সেই ব্যক্তি এটাই বলে প্রথমে,এটা আমার বিশ্বাস তবে একদিন সালমান এফ কে ফোন দিয়ে পরিক্ষা করা দরকার সেও কিহ ফোন ধরে বলবে বাবা নিলয় গরিব রে কেমনে মনে পড়লো)

আমি-ট্রাষ্টি বোর্ড খুলছি তাই গরীবের লিষ্ট করতেসি প্রথমেই তোমার নাম মাথায় আইলো।

-হেহে ভাই যে কি কন,

-আচ্ছা শুন একটা খবর দেও,তা হইলো হামজাম্যান এখন কই আছে তারে দেখতে আসবো।

-প্রডাকশন বয় হামজা যে?ওরে তোহ বাইর কইরা দিসি হালায় একটা চুর ভাই।

ভুলটা আমারই লঞ্চ এর কথা বলি নাই।

-আরে লঞ্চ আছে না? হামজা-রুস্তম??

-ও ভাই তা কন,আমিও তোহ কই ভাই আমারে না ডাইকা চোর হামজারে খুজে ক্যান?? 

-আসোল কথা কও

-ভাই ওইগুলা তোহ নারায়ণগঞ্জ বন্দরে থাকে।

-সিওর তুমি?? 

-জি ভাই তবে শুটিং করলে আনান যাইবো আমি কি কথা কমু??

কবে লাহবো কন?

এই হইলো ঢেঁকীর অবস্থা, আপনে যদি মরার জন্য শুটিং এর কোন লোকের কাছে বিষও চান সে বলিবে কোন সিনের জন্য বিষ?৫ মিনিটের মধ্যে আনতেসি।

-ভাই কইলেন না কবে লাগবো?

-হামজা-রুস্তম দুইটারেই লাগবে বিশাল বড় কাজ সাকিব খানরে নিয়া কাজ ধরতেসি… সিনেমার নাম “এটাই সাইন্স”

-মাশআল্লাহ ভাই এত্ত দিনে লাইনে আইসেন।আপনারা কিহ সব ঠান্ডা সিনামা বানান। 

যাইহোক হামজা মামার আর হামজা ভাইরে দেখা হইলো না।

আফসোস কমাইতে আমরা মোঘলাই খাওয়ার ডিসিশন নিলাম।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। 

রাস্তায় বের হতেই এক ২৬-২৭ বছরের যুবক ঘামতে ঘামতে হামজা মামার কাছে এসে- মামা যাবেন?

আচ্ছা ২৬-২৭ বছরদের কি যুবক বলে না?ঠিক সিওর না।

মামা-না যামু না

পিছনে তাকায় দেখি এক প্রেগন্যান্ট মহিলা ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন।

আমি ধমকের সুরে বললাম এই অবস্থায় রাস্তায় বের হইসেন ক্যান??

যুবক -ভাই হাসপাতালের দিকেই যাচ্ছিলাম সিনজিতেই ছিলাম হঠ্যাত নষ্ট হয়ে গেসে।

-ও আচ্ছা উঠান ওনারে সিএনজিতে।

-যুবক হামজা মামার দিকে তাকায় আছে হ্যা সূচক ইশারার জন্য।

আমি এবার সামনে একদম হামজা মামার কোলে । 

পিছনে মহিলা যুবক আর অল্প বয়সী এক মেয়ে এটাকে কিশোরী বলে এবার আমি সিওর।

হাসপাতাল যাচ্ছি আমরা…। 

হামজা মামা আস্তে করে দেখসেন আমাগো কপাল না পাইলাম হামজার দেখা না মোঘলাই এর।

আরে বাচ্চাটা হইতে দেও পিজা দাবি করুম টেনশন করো ক্যা??

-ভাই আপনি ওনার কি হন?

-জি ভাই আমি বাবা হবো উনি আমার স্ত্রী।

-আপনাদের বাবা-মা কেও নাই??

-থেকেও নাই ভাই বাড়ির অমতে বিয়ে করসি তার পর আর যোগাযোগ নাই।

এগুলো বলতে বলতে ছেলেটারও মন খারাপ হয়ে গেল আজ কি আনন্দের দিন অথচ তার পাশে আপনজন কেও নাই।

-ভাই যা আছে কপালে মা রে একটা ফোন দেন আপনার

-কয়েকবার দিসি ধরে নাই।

-ছোট ভাই বোন কেও আছে??

-হুম বোন

-তারে একটা টেক্সট দেন হাসপাতালের নাম সহ। আর কেও না আসলেও বেট লাহাইতে পারেন সে কারোরে না বলে হলেও আসবে।

আর ভাই মন খারাপ কইরেন না আমি আপনার স্ত্রীর আপন খালাতো ভাই আর হামজা হইলো আপন খালু।

আমরা আছি পাশে। হামজা আবার মানতে নারাজ এহ আমার এত্ত বয়স হয় নাই যে খালু হমু আমিও মামা,খালু হইলে তুমি হও গিয়ে..। 

ইচ্ছা করেই মজা করতেসিলাম তাদের টেনশন কমাতে..। 

আমরা ৪ জন বসে আছি বাইরে ভিতরে অপারেশন হচ্ছে।ডাক্তার বলেছে O+ রক্ত রেডী রাখতে যদি লাগে।

শান্তভাই সমস্যা নাই আমার O+ আগে বলছি আমি বাচ্চার আপন মামা।ওহ বলা হয় নাই একটু পরে যে বাবা হবে তার নাম শান্ত। 

আগা মাথা না যাইনাও নার্স আমাদের থেকে উচ্চস্বর এ হাসতেসে।

আমার রক্তে এত্ত পরিমান খারাপ জিনিস যে আমার নীজেই দিতে লজ্জা লাগে।

তাও রিস্ক নেই নাই আমাদের একটা

গ্রুপ আছে ব্লাড ফ্রেন্ড নামে এখানে পোষ্ট করা মাত্রই রক্ত পাওয়া যায় খুব বেশী মেম্বার নাই কিন্তু যারা আছি খুব সক্রিয়।

পোষ্ট করার কিছুক্ষনের মধ্যেই ২৩ জন কমেন্ট আছি আছি লিখে এবং তার মধ্যে হাসপাতালের পাশেই আছে ৪ জন তাদের নক দিয়ে রাখলাম..।

বাংলা সিনেমায় দেখসি অপারেশন চলাকালীন দরজার বাইরে একটা লাল লাইট জলে কিন্তু এখানে সেটা নাই। ধুর এত্ত বড় হাসপাতাল অথচ একটা লাল রঙ এর ডিম লাইট লাইলো না তাইলে আমরাও বাইরে থেকে বুঝতাম..।

আমি সেই আনন্দঘন মূহুর্তের জন্য বসে আছি যে ওয়া ওয়া  করে বাচ্চা কানবে ডাক্তার এসে বলবে কনগ্রেচুলেশন আপনার এই হয়েছে আর শান্ত ভাই দৌড়ায়

বউএর কাছে যাবে(বাংলা সিনেমার অভিজ্ঞতা)

অনেকক্ষন হয়ে গেল তাও কোন খবর আসছে না।

হামজা মামা সাহস দেয় আরে ভাই আমার বাচ্চা হওয়াইতে আমার বউ এর লাগছে  ২ঘন্টার উপরে সো টেনশন নাই আল্লাহ আছে।

এটা বলতে বলতেই একটা মহিলা ও ২টা মেয়ে পিছন দিয়ে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

শান্ত ছেলেটার সাথে চোখ পড়তেই সেখানে কেমন যেন একটা সিচুয়েশন তৈরী হলো।

আবেগী কান্না কাটি বুঝলাম মা ও বোন আসছে।

খুব ক্রেডিট নিয়া বললাম কি ভাই বলছিম না?

হামজা মামাও একটা চিজ সে মহিলাকে বলতে লাগলো- শান্ত ভাই কইসে আপনেরা আইবেন না কিন্তু আমি আর নিলয় ভাই বাজি লাগছিলাম এমন কোন মা নাই পৃথিবীতে যে ছেলের বিপদে আইবো না।

ব্যাই দ্যা ওয়ে শান্ত ভাই এর ছোট বোনটা সুন্দর।

এখন লোক সংখ্যা বেড়ে ৭ জন।

ছেলে ও মা জড়াজড়ি করে এক কোনায় বসে আছে

বোনের নাম অন্রিলা আমি উচ্চারণ করেছি অগ্নিলা।

-না না অন্রিলা।

-ও আচ্ছা এত্ত সুন্দর নাম আগে শুনি নাই তাই উচ্চারণ এ সমস্যা হচ্ছে। 

হাসি দিলো একটা ,মেয়েদের এই হাসি মানে আমি পটতেসি তুমি আরো বলো । 

হামজা মামা বুঝসে আমি অন্য ধান্দায় গেসি গিয়া সেও সুন্দর করে বিড়ির উছিলায় উঠে আমাদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়..। 

-কোথায় পড়?

-ইস্টার্ন এ। 

-আমার কাজিন ফারিনও পরে।তুমি কোন সাবজেক্ট এ?

ইংলিশ এ..। 

আরে হ্যা এই ভার্সিটি তে নাকি এইটাই সবচেয়ে ভালো সাবজেক্ট ..(পটানো দিয়ে কথা) 

যাই হোক ভালোই আড্ডা জমাইসি শান্ত ভাই এর চোখে আমি ভালো মানুষ সো তার বোন ভালো মানুষের সাথেই আড্ডা দিচ্ছে সেও তাকায় একটা হাসি দিলো।

৭.৫৪ মিনিট সেই মূহুর্ত আসলো।

কিন্তু কোন বাত্তিও নিভলো না ডাক্তার এসেও কনগ্রেস করলো না। ডাক্তার আছে দৌড়ে তার চেম্বারে বসার টাইম যাচ্ছে গিয়া..।

নার্স এসে খবর দিলো মা ছেলে দুজনেই ভালো আছে,পরিষ্কার করা হচ্ছে একটু পরে দেখতে পারবেন।

না পুষাইল না আমার বাস্তব থেকে বাংলা সিনেমা অনেক সুন্দর ও ইমোশনাল । 

শান্ত ভাই খুশিতে কি করবে বুঝতেসে না একবার এর কাছে তোহ আরেকবার ওর কাছে..

এদিক এ হামজা মামা যে গেসে বিড়ি খাইতে তার আর হদিস নাই..সে সব সিন মিস করতেসে এবং আমি সিওর আইসা সে আমারে এর জন্য দোষ দিবে..।

সে কি বলতে পারে এটাও ভাবতেসি হু তোমার আলগা পিরিতের লাইজ্ঞা আমি চ্যেয়ার রাইক্ষা উইঠা গেসি।

-শান্ত ভাই যান নীচে থেকে হামজা মামারে নিয়া আসেন খবর টাও দিয়া আসেন..।শান্ত ভাইও দৌড়ায় যাচ্ছে । 

চারিদিকে ছুটার চেয়ে একদিকে ছুটতে পাঠালাম।

শান্ত ভাই এর মা প্রথম আমার সাথে কথা বললো- তুমি কে?

-জি আমি বাচ্চার মামা,

-ওহ ! কপাল কুঁচকায়

যে পুত্র বধুকেই মানতে পারে নাই তার ভাইরে মানার কোন প্রশ্ন আসে না।

এদিক এ অন্রিলা হাসছে সে আসোল ঘটনা জানে। আমি যে আসোলে কেওই না তাদের।

আমার এক উওরেই মহিলা দূরে চলে গেসে আগের জায়গায়।

মহিলা- এই ছেলে এই.. আবার ডাক দিলো,

আমি – জি খালাম্মা বলেন.. 

-আমি তোমার খালা হই না, যাই হোক আযান দিতে পারো??

-জি না

-তা পারবা ক্যান?মোবাইল তোহ ঠিকই ২-৩ টা চালাইতে পারো।

বুঝলাম তার মেয়ের সাথে what’s app নাম্বার আদান প্রদান তিনি দেখেছেন।

-আন্টি শান্ত ভাই পারে না?

-না ও তোহ আরেক গাধা। ছোট বেলা হুজুর রাখা হইসিলো 

সে কায়দাটাও শেষ করে নাই।

আমি মনে মনে শান্ত ভাইও ২টা ফোন চালায়, থাক মজা করতে গেলে বেয়াদবি হয়ে যাবে।

হামজা আর শান্ত ভাই দেখি কাধে কাধ মিলায় হাটতে হাটতে আসতেসে।

তার মা কটু দৃষ্টিতে তা দেখতেসে যে তার ছেলে একটা সিএনজি ওয়ালার কাধে হাত রেখে ঘুড়তেসে,না তার ষ্ট্যাটাস এর সাথে ঠিক যাচ্ছে না। আমার মা দেখলেও একই দৃষ্টি দিতেন আসোলে মা মানুষের কাজ প্রায় সবই একই রকম। ছেলে বড় হলে ছেলেকে দেখে রাখা ষ্ট্যাটাস অনুযায়ী চলানো এটা তাদের একান্ত দায়িত্ব মনে করে। 

 আরে আজকাল তোহ মা রা দেখি তাদের ছোট ছেলে মেয়েদের বন্ধু বান্ধব ও ঠিক করে দেয়..।

উহু ওর সাথে চলবা না ও bad word বলে, ওর সাথে চলবা ও দেখসো কত্ত ভালো ম্যাথ পারে এই হচ্ছে আমাদের আজকাল কার মা।

-হামজা মামা একটা কাজ করা লাগে যে,

-কি?

-আযান দেওয়া লাগবে

-আমিও আসতে আসতে এটাই ভাবতেসিলাম।

-তাইলে দিয়া ফেলাও। 

-আমি তোহ পারি না।ছুডু বেলা হুজুর এ বাইড়াই শিখাইসিলো বাট এত্ত দিন পরে রিষ্ক নেয়া ঠিক হইবো না। 

হইসে ৩টা মাত্র পুরুষ আমরা কেওই পারি না।

হঠ্যাত মনে পড়সে মার কাছে শুনছিলাম আমি যখন হইসি হাসপাতালের দারওয়ান আযান দিয়া দিসিলো আমার বাপও পারতো না।

দাড়ান একটা বুদ্ধি পাইসি, আমি গেলাম আযান পারে এমন একটা ওয়ার্ড বয় বা দারোয়ান খুজতে।

যারেই জিজ্ঞেস করি ভাই আজান দিতে পারেন?

এমন একটা দৃষ্টি দেয় যেন আমি ISIS এ ভর্তি হবেন নাকি এটা জিজ্ঞেস করতেসি।

অবশেষে এক কাকারে পাইলাম তারে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো ছেলে হইসে না মেয়ে?

-ছেলে

কাকারে নিয়া হাজির আযান দিতে আগের জায়গায়,

এবার একটু ইমপ্রেস হইসে মনে হয় খালাম্মা,

বলে বসলো এটা ভালো বুদ্ধি একজন দিলেই হয়।

আমি নীজেরে বাপের  যোগ্য উত্তরসূরি মনে করলাম।

মনে মনে আন্রিলা তুমি ইমপ্রেস হইসো তোহ?

হামজা মামার কথা মত খালু না হইতে পারি ফুপা তোহ হওয়াই যায়? 

ফুপা হতে পেরেছি কিনা সেটা অন্যকোন দিন বলবো নে আপাদত আমি আর হামজা মামা হাসপাতাল এর ক্যান্টিন এ বইসা পিজ্যা খাচ্ছি… অকা বাই – Imtiaz neloy

Send private message to author
What’s your Reaction?
1
12
1
0
0
0
0
Share:FacebookX
Avatar photo
Written by
Imtiaz Neloy
4.5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Ishmam Nur
Member
4 years ago

কিছু কিছু দিন অনেক ঘটনাবহুল। মনে হয় অনেকটা সময় জুড়ে বেঁচে ছিলাম। সেরকমই একটা দিনের স্বাদ, সেরকমই একটা গল্প – হামজা ম্যান। জীবনকে বোধহয় সুন্দর করে অনুভব করতে জানলেই, জীবন সুন্দর।

Last edited 4 years ago by Ishmam Nur

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!