আমার আজকের লেখা ফেসবুকের ‘কেয়ার রিয়েক্ট’ এর গুণাবলী নিয়ে..!
যদিও আমি এখনো এই রিয়েক্ট পাইনি, পাওয়ার ইচ্ছেও নেই।
লাভ রিয়েক্ট যাকে দেই তাকেই তো হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা দেই।
দুই হাতে আবার অন্যের হৃদয়কে ধরে রেখে কেয়ার দেখানোর কি দরকার..!
‘এইচএসসি’ পরীক্ষার্থী ভাগ্নে বাবলু ঢাকা মেসে থেকে পড়াশোনা করে।
‘এইচএসসি’ পরীক্ষা হবে হবে করেই ‘লকডাউন’ হয়ে গেলো, বাবলু আর গ্রামের বাড়িতে যায় নি।
ভাবলো হয়তো কিছুদিন পর সব স্বাভাবিক হলে পরীক্ষাটা হয়ে যাবে, এত এত বই-খাতা নিয়ে বাড়িতে যাওয়া আসাও সমস্যা।
মেসের অন্যান্য’রা ‘লকডাউন’এ যার যার বাড়ি চলে গেছে, মেসে বাবলু একাই থাকে।
প্রথম মাস পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত থেকেই চলে গেলো, রমজান আসায় একজনের রান্নার জন্য মেসের রান্না করার নানীও আসে না।
বাবলু যখন যা পারে সহজ দেখে রান্না করে, কখনো চাল-ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি, কখনো নুডুলস।
ইদানীং খুব ডিপ্রেশনে আছে, পরীক্ষা পেছানোর চাপ, বাড়িতে না যাওয়ার কষ্ট, রমজানে খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট, তার উপর অবসরের সঙ্গী মোবাইল’টাও ডিস্টার্ব করছে..!
সব মিলিয়ে খাওয়ার আলসেমিতে ঘুম কাতুরে বাবলু, প্রায়ই না খেয়েই রোজা রাখে..।
“আগে ছিলো তালপাতার সেপাই, এখন হয়েছে বাঁশপাতার সেপাই..!”
প্রায়ই বাড়ি থেকে ওর মা ফোন করে সেহরি খেতে বলেন, মাঝে মাঝে আমিও ফোন দেই।
গতকাল সেহরির সময় আমিও ফোন দিলাম, মনে হলো খুব মন খারাপ কাঁদো কাঁদো গলায় কথা বললো।
ইফতার করে ফোন দিলাম, বাবলুর ফোন বন্ধ পেলাম, হয়তো ঘুমাচ্ছে।
রাত বারোটায় ফোন দিয়ে দেখি তাও ফোন বন্ধ..!
এবার ওর আইডিতে ঢুকলাম, অনলাইনে আছে কিনা।
ও আবার খুব সুন্দর ছবি আঁকে, লাষ্ট পোষ্টে দেখি একটা ঝুলন্ত কিছুর ছবি আঁকা, ক্যাপশানে লেখা, “একদিন না বলে চলে যাবো, স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাবো।তোমরা আমাকে স্মৃতিতে রেখো, হাবিজাবি আরও অনেক লেখা..!”
এতটুকুন বাচ্চা ছেলেদের কি আধ্যাত্মিক ছবি আর ক্যাপশানরে বাবা..!
ম্যসেঞ্জারে ঢুকে দেখি সকাল সাতটা পর্যন্ত এক্টিভ ছিলো, প্রায় পনেরো ষোল ঘন্টা হলো তারপরে অনলাইনেও নেই..!
বুকটা ধক করে উঠলো, এত লম্বা সময় ফেসবুকে না থাকা, সেলফোন বন্ধ থাকা, আবার ঝুলন্ত ছবি হাবিজাবি ক্যাপশান।
সব মিলিয়ে ভয়ের ব্যাপার, ডিপ্রেশনে উল্টোপাল্টা কিছু করে নি তো..?
কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না, বাড়িতে গেলে তো আমাকে জানিয়ে যেতো..!
এই ঘটনা বাবলুর মা জানতে পারলে, ছিঁচকাঁদুনে শাবানার মতো আঁচল লুটিয়ে বাবলু রে রে ডাকতে ডাকতে খাল-বিল, নদী-নালা ডিঙ্গিয়ে, লক্ষী পুর থেকে দৌড়ে ঢাকা চলে আসবে..!
বাবলুর সাথে যোগাযোগের অন্য কোন কন্ট্রাক্ট নাম্বারও নেই। ওর লাষ্ট পোষ্টের রিয়েক্ট গুলো দেখলাম, খুব কাছের যারা তারাই তো কেয়ার রিয়েক্ট দিবে।
পাঁচটা কেয়ার রিয়েক্ট এর মালিককে নক দিলাম, দুইটা রিপ্লাই দেয় নি, তিনজনের মধ্যে একজন পেলাম ওর রুমমেট। তবে সে এখন বাড়িতে, সেলফোন আর ম্যাসেঞ্জারেই ওদের যোগাযোগ।
ঐ ছেলে মেসের বাড়িওয়ালাকে ফোন দিলো, বাড়িওয়ালার ফোন নাম্বারও বন্ধ।
“ত্রিপল নাইনে কি ফোন দিবো..?” বাবলুর রুমমেটকে জিজ্ঞেস করলাম।
ছেলেটা বললো, “আন্টি, এটা হয়তো ত্রিপল নাইনের কাজ না, আর ত্রিপল নাইন পুরো এলাকা জাগিয়ে ফেলবে। বাবলু যদি ঘুমিয়ে থাকে লজ্জিত হবে।
যদিও আমরা চাই সে খারাপ কিছু না করে ঘুমিয়েই থাকুক।
ছেলেটা ওদের মেসে রান্নার নানীর নাম্বার দিলো।
সে বললো, “মেসের পাশেই নানী থাকেন, উনি কানে কম শুনেন, আপনি যদি বুঝিয়ে বলতে পারেন তাহলে হয়তো বাবলুর কাছে যাবে।”
রাত এক’টায় নানীকে ফোন দিলাম, নানী ফোন ধরে এমন জোরে হ্যালো বললেন, “যেন উনি চাঁদের দেশে আর আমি মঙ্গলগ্রহে, ফোন ছাড়াই কথা হচ্ছে..!”
নানীকে বুঝাতে প্রায় আধঘন্টা লেগে গেলো, এবার তিনি ফোনে বিলাপ করতে করতে যেতে রাজী হলেন।
আমি দিব্য চোখে দেখছি, নানী মুখে একটা পান গুজে, শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রানা’রের মতো ছুটে চলেছেন বাবলুর খোঁজে..!
আহা, কি সুন্দর একটা দৃশ্য, কল্পনার চোখে দেখেও তৃপ্তি পাচ্ছি..!
একটু পরেই নানীর মোবাইল থেকে ফোন আসলো, ওপাশ থেকে বাবলুর কন্ঠ..!
এতক্ষণ আটকে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়লাম, “বাবা, তুই বেঁচে আছিস..?”
বাবলু অবাক হয়ে বলছে, “আন্টি কি হয়েছে, নানী আমাকে জড়িয়ে কাঁদছে কেন..?”
আমার কথা শুনে বাবলু বললো, “আন্টি, সকাল সাতটায় ফেসবুকে পোষ্ট দিতে গিয়ে মোবাইল হ্যাং মেরেছে, রাগ করে দিলাম আছাড়। মোবাইল হলো টুকরো টুকরো,লক ডাউনে সার্ভিসিং এর দোকান খোলা পেলাম না..!”
বাবলুর মুখে নানীর তৈরি ইতিহাস শুনলাম।
আমি ত্রিপল নাইনে ফোন দিলাম না এলাকা জেগে যাবে।
অথচ, আমাদের নানীর বদৌলতে সেহরির আগেই পুরো এলাকা জেগে গেছে..!
বাবলুর মেসের গেইটে গিয়ে নানী জোরে জোরে বাবলুর নাম নিয়ে বিলাপ শুরু করেন।
আকাশ-পাতাল কাঁপানো সেই বিলাপে, মেসের মালিক থেকে ধরে আশে পাশের বাড়ির মানুষ এসে জমে গেছে..!
ভালো থাকুক মমতাময়ী চাঁদের বুড়ি নানী, ভালো থাকুক মেসে একা থাকা বাবলু, ভালো থাকুক কেয়ার রিয়েক্ট এর মালিকেরা..।
আঞ্জুম রুহী (Anjum Ruhi)
Send private message to author






