আষাঢ়_শ্রাবণ মাসটা নিশীর খুব পছন্দের।
আহা “বৃষ্টিস্নাত বর্ষাকাল..!”
স্কুলে পড়ার সময় মেঘলা আকাশ দেখলেই নিশী বৃষ্টির অপেক্ষা করতো, বৃষ্টি শুরু হলেই কয়েকজন বান্ধবী মিলে মাঠে নেমে যেতো, জমানো পানিতে লাফানো, কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসানো..!
পরে এসবের খেসারত দিতে হতো বেঞ্চের উপরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকে, অন্য ছেলে-মেয়েরা ওকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করতো।
বর্ষার কদমফুল নিশীর খুব প্রিয়, স্কুলের পাশেই একটা কদম গাছ।
একবার ডানপিটে মেয়ে সেই কদম গাছে চড়ে কদম ফুল পাড়তে গিয়ে, পড়ে হাত ভেংগে ফেলেছিলো..!
নিশী স্কুল কামাই করতো না, প্লাস্টার করা হাত নিয়েই স্কুলে যেতো।
স্কুলে গিয়ে দুষ্ট ছেলেদের কাছে হাসির পাত্রী হতে হতো, কিছু দুষ্ট ছেলে নিশীর প্লাস্টার করা হাত দেখে, ঠাট্টা করে পয়সা দিতে যেতো আর বলতো,” মাগো, আল্লার ওয়াস্তে ভিক্ষা দেন না..!”
আজ এত বছর পরে আমেরিকায় বসে, নিশী তার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতির পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে..!
প্রায় বিশ বছর ধরে নিশী আমেরিকায় থাকে, কখন বর্ষাকাল আসে নিশীর মনেই পড়ে না।
এখানে তো প্রায় সারা বছরই বরফের বৃষ্টি পরে। কোথায় বর্ষাকাল, কোথায় বৃষ্টি, কোথায় কদমফুল…!
নিশী নিজের দেশকে খুব মিস করে, দেশের বর্ষাকালের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেনো চোখ ভিজে যায়, বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে..!
নিশী প্রতি বার সামার ভেকেশনে বাচ্চাদের নিয়ে দেশে আসে, ওদের কখনো দেশের বর্ষাকাল, দেশের বৃষ্টি দেখাতে পারে না..!
চারিদিকে গ্রীষ্মকালের কাঠফাটা রোদের কষ্টে, বাচ্চারা আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার জন্য মাকে বিরক্ত করে।
নিশীর বাবা অসুস্থ, বাবাকে দেখতে নিশি দেশে আসছে।
এবার ছেলেমেয়েরা আসতে পারছে না স্কুল খোলা বাবার সাথে থাকবে।
ওরা না আসাটাই ভালো, আসলেই চলে যাওয়ার জন্য বিরক্ত করে।
নিশী জানেই না এখন আষাঢ় মাস, তার প্রিয় বর্ষাকাল চলছে..!
নিশী প্লেন থেকে নেমেই দেখে ঝুম বৃষ্টি, হঠাৎ করে সেই স্কুল পড়ুয়া কিশোরী হয়ে গেলো..!
ইচ্ছা করে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বৃষ্টিতে ইচ্ছা করে ভিজছে, ভাইয়া নিতে এসে বলছে,” নিশী” কি শুরু করলি বাচ্চার মতো বৃষ্টিতে ভিজছিস ঠাণ্ডা লাগবে, গাড়িতে উঠ..!”
জ্যামে আটকা পড়ে গাড়িতে বসে আছে, তখনো বৃষ্টি পড়ছে।
ভাইয়ার সাথে বাবার অসুস্থতা ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা হচ্ছে।
ভাইয়া কদমফুল, “নিশী রীতিমতো চিৎকার করে উঠে..!”
একটা ছোট মেয়ে হাত ভর্তি কদমফুল নিয়ে, গাড়ির জানালায় উঁকি দিয়ে আছে।
নিশী গাড়ির জানালার গ্লাস খুলে মেয়েটার হাত থেকে সবগুলো কদমফুল নিয়ে নিলো।
চোখ বুজে ফুলগুলোর গন্ধ শুকে বাচ্চার মতো বলে, ভাইয়া, “দেশের সেই বর্ষা, সেই বৃষ্টি, সেই কদমফুল, সেই গন্ধ, কিছুই তো বদলায় নি..!”
ভাইয়া হেসে বলে, ” সেই দেশ, সেই ভাইয়া, সেই বোন, সেই ভালবাসা, কিছুই তো বদলায়নি..!”
ভাইয়ার কথা শুনে নিশী ছলছলে চোখে বলে, “ভাইয়া, ভালবাসা তো কখনো বদলায়ও না..!”
Anjum Ruhi
Send private message to author





