অপার্থিব স্টিয়ারিং

“অবস্থাটা দেখেন একবার। ঈদের চারদিন পার হয়ে গেছে এখনও পোলাপাইনের ঈদ শেষ হয়না। তাগো ফুর্তি দেখে আমি বাঁচিনা।”

কথাটা যাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হল সেই খোলা ট্রাকটা বাজারের সামনে এসে খানিকটা গতি কমিয়ে দিয়েছে। ট্রাক ভর্তি ছেলে মেয়ে হইচই করছে। লাউডস্পীকারে বাজছে হিন্দি গান।

পাশ থেকে আসাদ বলে উঠল, “আরে চাচা ঈদের সময় পোলাপাইনে তো একটু আনন্দ ফুর্তি করবেই। এই দেশের মানুষ তো সারা বছরই থাকে নানান যন্ত্রণায়। খালি ঐ ঈদের সময়টাতেই যা একটু আনন্দ করার সুযোগ পায়।”

গোলাম মুন্সীর এই জবাব পছন্দ হল না। তিনি গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “নামাজ কালামের নাম নাই পোলাপাইনে আছে খালি রঙ্গ ফুর্তি নিয়া। অতো বেশি ফুর্তি ভালনা।” বলেই তিনি ব্যাগ হাতে আলাউদ্দিনের দোকানের দিকে হাঁটা দিলেন। ট্রাকটা ততক্ষণে কালিতলা ব্রিজ পেরিয়ে গেছে। এতদূর থেকেও ভেসে আসছে লাউড স্পিকারে হিন্দি গানের আওয়াজ। আসাদও আর কথা বাড়ালোনা। সোজা ঢুকে পড়ল বাদল মিয়াঁর চায়ের দোকানে।

“বাদল ভাই এক কাপ চা দাও, কড়া লিকারের।” বলেই দোকানের সামনে ঝুলানো লাইটারটা টেনে নিল আসাদ। বাদল মিয়াঁ নিরাসক্ত গলায় বললেন,

“চা দেরি হইব মামা”

“তাইলে কোক দাও একটা। সেভেন আপ আছে না?”

“হো মামা। এই লন।”

আসাদ সেভেন আপের বোতলটা নিয়ে দোকানের বাইরে বের হয়। বোতলের ঢাকনাটা খুলে এক ঢোক চালান দেয় ভিতরে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে। অনেকক্ষণ ধরে ভাইব্রেট করছে ওটা,

“হ্যালো কে সায়েম? …..শুন তুই বাদল মামার দোকানের সামনে আয়। এইখানে আছি আমি… বিড়ি খাচ্ছি… আচ্ছা… তুই আয়…ঠিক আছে আমি হাইওয়ের সামনে আসতেছি।”

ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আসাদ বড় রাস্তাটার দিকে এগোয়। ওখানেই থাকতে বলেছে সায়েম। ঘড়িতে সময় দেখে নেয় একবার। সকাল এগারোটার মত বাজছে। সায়েমের আসতে কতক্ষণ লাগবে কে জানে। সেভেন আপটা পুরোটাই পেটে চালান দিয়ে সায়েমের প্রতিক্ষায় দূরে ব্রিজটার দিকে তাকাল আসাদ। ঠিক তখনই চোখে পড়ল ভয়ংকর দৃশ্যটা। বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা একটা বেপরোয়া গতির বাস ব্রিজের ঠিক গোড়াতেই দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাটাকে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে দিলো। চোখের পলকেই রিকশাটা উড়ে গিয়ে পড়ল ব্রিজের নিচে নদীর স্রোতের মধ্যে। আচমকা এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠল আসাদ। মুহূর্তেই আশেপাশের লোকজন হইহই করে উঠল,, “ঐ থামারে…বাসটারে থামা। মানুষ মাইরা যাইতাছেগা। থামা ঐটারে।”

বাসটার গতিবিধি দেখে আসাদ বিচলিত হয়ে উঠল । রিকশাটাকে ধাক্কা দিয়েই পর মুহূর্তে আবারও গতি .বাড়িয়ে দিয়েছে বাসটা। এদিকেই এগিয়ে আসছে বেপরোয়া ভাবে।

আসাদের থেকে যখন মাত্র দুইশ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে বাসটা ঠিক তখনি আরও একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো । চমকে উঠল আসাদ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা সাইকেলকে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দিলো ওটা। সাইকেল সহ অল্পবয়সী আরোহী আছড়ে পড়ল পাশের ধানক্ষেতে গিয়ে। জনগনের চিৎকার আরও বেড়ে গেলো, “ঐ থামারে…হারামজাদাটারে থামা…সবাইরে মাইরা যাইতাছেগা।” বাসটার থামার কোনও লক্ষণ নেই। একই গতিতে এগিয়ে আসছে। রাস্তা থেকে ছিটকে সরে এলো আসাদ। তাঁর প্রায় একশো মিটারের মধ্যে চলে এসেছে বাসটা।

রাগে আসাদের গা জ্বলে যাচ্ছে। হারামজাদা পেয়েছেটা কি? চোখের সামনে এতগুলো মানুষকে চাপা দিয়ে যাচ্ছে অথচ সে কিনা চেয়ে চেয়ে দেখবে? আজ হয় একটা এসপার নাহয় ওসপার সে করেই ছাড়বে।

বাসটা ততক্ষণে আরও কাছে চলে এসেছে । রাস্তা থেকে খানিকটা সরে এলো আসাদ। প্রচণ্ড ক্রোধে সে নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা। ডান হাতে শক্ত করে ধরা সেভেন আপের বোতলটা সজোরে ছুঁড়ে মারল ড্রাইভারের জানালা বরাবর।

বোতলটা প্রায় নির্ভুল ভাবে ভেদ করল তাঁর লক্ষে। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আসাদের সামনে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেলো। আসাদ অবাক হয়ে দেখল, বাসটা আচমকাই যেন তাঁর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিচঢালা হাইওয়ে ছেড়ে সোজা নেমে এলো রাস্তার ধারে ঘাসের উপরে। উচু নিচু গর্ত আর ঘাসের উপর দিয়ে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে লাগলো ওটা। যাত্রীদের আর্তনাদ আর হট্টগোল শুনতে পেলো আসাদ। “এ ভাই কেউ ঐটারে থামাইতাছেন না কেন। বাসের ড্রাইভার মইরা গেছে নাকি?” চেঁচিয়ে বলল বাদল মিয়াঁ।

ওদিক থেকে এক মুরুব্বিও চেঁচিয়ে যাচ্ছে, “রাস্তার মধ্যে গাছের গুড়ি ফালান আপনেরা। গাছের গুড়ি ফালায় থামান বাসটারে।”

বাসটা বেপরোয়া ভাবে আবারও উঠে রাস্তার উপরে। তবে পরমুহূর্তেই আবার উল্টোদিকের শুঁকনো মাটির উপরে নেমে এলো। ওপাশের নদীটার একেবারে ধার ঘেঁষে চলতে লাগলো বিপদজনক ভাবে। আসাদের ভয় হতে লাগলো, বাসটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের বিপদজনক বাঁকটার দিকে তাতে যেকোনো মুহূর্তে ওটা আছড়ে পড়তে পারে নদীর খাঁদের মধ্যে ।

উপস্থিত জনতা তখনও চেঁচিয়ে যাচ্ছে। তাদের চিৎকার আর বাসের যাত্রীদের আর্তনাদ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

মিজানের বাপও গলা ফাটিয়ে বলছে, “আল্লাগো রক্ষা করো…ইয়া নাফসি… আল্লাগো লোকগুলারে রক্ষা করো।” তাঁর সাথে গলা মিলাচ্ছে আরও অনেকেই।

লোকগুলো যখন অসহায়ের মত চিৎকার চেঁচামেচি করে চারপাশ উত্তপ্ত করে তুলছে ঠিক তখনি ঘটে গেলো ভয়ংকর ঘটনাটা। সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই বাসের মুখটা আচমকা ঘুরে গেলো নদীটার দিকে। মুহূর্তেই জনতার তীব্র আর্তনাদে ছেয়ে গেলো চারপাশ।

আসাদও অন্য সবার সাথে অসহায়ের মত দূর থেকে তাকিয়ে দেখল দৃশ্যটা। তবে একই সাথে আরও একটা নতুন দৃশ্য তাঁকে কৌতূহলী করে তুলল । আসাদ অবাক হয়ে দেখল বাসটা নদীতে আছড়ে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কে যেন বাসের দরজা দিয়ে লাফ দিয়ে নেমে এলো পাশের ধানক্ষেতের উপরে।

কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো আসাদ।

উপস্থিত জনতা হুড়মুড় করে ছুটতে লাগল নদীটার দিকে। সবার লক্ষ এখন বাসের যাত্রীদের উদ্ধারের দিকে। আসাদও ছুটতে শুরু করলো সেদিকে। তবে কি মনে করে যেন আচমকাই সে থেমে গেলো ধানক্ষেতটার সামনে। এদিকেই লাফিয়ে পড়েছে লোকটা। রাস্তা থেকে আসাদ নেমে এলো ধানক্ষেতের উপরে। এদিকটা এখন অনেকটাই ফাঁকা। সব মানুষ গিয়ে ভিড় জমিয়েছে রাস্তার উল্টো দিকে নদীটার সামনে।

ধানক্ষেতে নেমে খানিকটা এদিক ওদিক খুঁজতেই চোখে পড়ল লোকটাকে। কয়েকটা ধানগাছের আড়ালে পড়ে আছে দেহটা। আসাদের মনে ক্ষীণ আশা জাগল, লোকটা বেঁচে থাকলে হয়ত তাঁর কাছ থেকেই দুর্ঘটনার বিস্তারিত কারণ জানতে পারবে সে ।

আরও খানিকটা সামনে এগিয়ে গেলো আসাদ। দেহটার সামনে আসতেই টের পেল, শ্বাস নিচ্ছে লোকটা। প্রাণ আছে এখনও। দেহটাকে দুহাতে ধরে চিত করে শুইয়ে দিলো সে। আসাদেরই সমবয়সী এক যুবক। নাকে মুখে আঘাতের অজস্র চিহ্ন। দেখে মনে হচ্ছে যেন এই মাত্র কেউ ঘুষি মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে।

নদীর ওদিক থেকে তখন মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে, “একটা লোকও বাইচা নাই রে…সবটি যাত্রী মরে সাড়া…”

পাশের ক্ষেত থেকে এক আজলা পানি তুলে লোকটার মুখে ছিটিয়ে দিলো আসাদ। লোকটা চোখ মেলল ।

“আপনি ঠিক আছেন তো ভাই?” জিজ্ঞেস করলো আসাদ। কোনও জবাব এলনা। আসাদ আবারও জিজ্ঞেস করল, “এই যে ভাই,ঠিক আছেন তো আপনি?”

আসাদকে চমকে চিয়ে আচমকা তাঁর একটা হাত খপ করে ধরে ফেললো যুবক। যেন এই মাত্র জ্যন্ত হয়ে উঠল। আসাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল, “ভাই সাহেব, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?”

এরকম অতর্কিতে কথা বলে উঠায় খানিকটা ভড়কে গেলো আসাদ। তবে পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিল, “অনুরোধ? কি অনুরোধ ভাই?”

লোকটা আরও শক্ত করে আসাদের হাত চেপে ধরল, “আগে কথা দেন অনুরোধটা রাখবেন।”

“আচ্ছা কথা দিলাম, বলুন কি করতে হবে?” ভরসা দিয়ে বলল আসাদ। তবে যুবকের হাবভাব দেখে মনে হলনা সে কোনও ভরসা পেলো। আগের মত ভঙ্গিতেই সে বলে চলল, “ভাই বিশ্বাস করেন আমার হাতে সময় খুবই অল্প। তাই বিস্তারিত আপনাকে কিছুই বলতে পারবোনা। শুধু যেটুকু বলছি মন দিয়ে শুনুন।” বলেই আসাদের কাঁধে হাত রাখল লোকটা। “ আমি এই মুহূর্তে আপনাকে যা যা বলব তাঁর পুরোটাই কিন্তু সত্য । আপনার বিশ্বাস হবে কিনা আমি জানিনা কিন্তু আমি নিজে জানি আমার কথাগুলো কতটুকু সত্য।”

“আচ্ছা বলেই দেখুন না বিশ্বাস করি কিনা।” লোকটাকে উৎসাহ দিয়ে বলল আসাদ।

“আমি জানি ভাই এই কথাগুলো আপনি বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু তবুও নিজের দায়িত্ব বোধ থেকে বলছি।” বলেই দম নিবার জন্য খানিকটা থামল লোকটা। পর মুহূর্তেই আসাদের চোখের দিকে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, “বিশ্বাস করেন ভাই, এই মুহূর্তে আপনি যা কিছু দেখছেন, যা কিছু এতক্ষণে ঘটে গেলো এর কোনটাই বাস্তবে ঘটেনি ভাই। পুরোটাই আপনার একটা স্বপ্ন মাত্র।এই মুহূর্তে আপনি ঘুমের মধ্যে শুধুই একটা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। একটু পরেই আপনার ঘুম ভেঙে যাবে।” এটুকু বলে আবারও আসাদের দিকে তাকাল লোকটা। “ ভাই আপনি কি আমার কথা মনযোগ দিয়ে শুনছেন? দেখুন আমি কিন্তু আপনার সাথে একদমই নাটক করছিনা। প্লিজ আমার কথা একটু মন দিয়ে শুনুন। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার ঘুম ভেঙে যাবে । ঘুম থেকে উঠেই একটা জরুরী কাজে আপনাকে বাইরে বের হতে হবে। ভাই আপনি কি আমার কথা শুনছেন?”

“আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলামনা ভাই।” লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে বলল আসাদ। “কি বলতে চাচ্ছেন আপনি একটু ক্লিয়ারলি বলবেন?”

শোয়া থেকে উঠে বসলো যুবক। আসাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

“বললামই তো ভাই আপনাকে বুঝিয়ে বলার মত সময় এই মুহূর্তে আমার হাতে একদমই নেই। আমি যা যা বলতেছি শুধু একটু ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। মনে রাখুন আর একটু পরেই কিন্তু আপনার ঘুম ভেঙে যাবে। ঘুম থেকে উঠেই আপনাকে একটা জরুরী কাজে বাসার বাইরে বের হতে হবে। আর সেখানেই ভাই আপনার জন্য একটা ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে।” বলেই লোকটা দম নিবার জন্য থামল। পরক্ষনেই আবার বলতে শুরু করলো, “এই জন্য ভাই আমি আপনাকে অনুরোধ করতেছি, একটু পরে ঘুম ভাঙ্গার পর আজকে সারাদিনে আপনি দয়া করে একবারের জন্যেও বাসা থেকে বের হবেন না।” আসাদের কাধে হাত রেখে বলল লোকটা। আসাদ ততক্ষণে যথেষ্ট বিরক্ত। বোঝাই যাচ্ছে তীব্র শক আর আতংক থেকে লোকটা এসব উল্টাপাল্টা বলে যাচ্ছে।

“আপনি শান্ত হয়ে বসুন তো। চুপচাপ শান্ত হয়ে বসুন। কোথায় লেগেছে আপনার দেখি। মাথায় লেগেছে? দেখি দেখি।”

নিজেকে সরিয়ে নেয় লোকটা। চোখ বড় বড় করে বলে, “আপনি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছেন।”

আসাদ হাসে, “আপনি চুপ করুন তো। মানসিক শক থেকে আপনি এসব আজেবাজে বকছেন।”

“আমি মোটেও বাজে বকছি না।” গর্জে উঠে যুবক। “আপনি বোঝার চেষ্টা করুন………” পুরো বাক্যটা শোনা হয়না আসাদের। তাঁর আগেই পকেটের স্মার্টফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠে। সায়েম ফোন করেছে মনে হয়। আসাদ ফোনটা বের করার জন্য প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠে সে, ফোনটা পকেটে নেই। শার্টের পকেটেও হাত দেয় সে। ওখানেও নেই ফোনটা। রিংটোনের আওয়াজটা তখন তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে। নিজের পকেটগুলো আরও একবার হাতড়ে নেয় আসাদ। নেই, কোথাও নেই। অথচ কি দিব্যি বেজে যাচ্ছে কর্কশ রিংটোনটা। লোকটা ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠল।

“আপনার এলার্ম বেজে উঠেছে ভাই সাহেব। আমাদের হাতে আর সময় নাই। শেষ বারের মত অনুরোধ করতেছি ভাই, প্লিজ আপনি আজকে সারাদিন কোথাও বের হবেন না।”

সব কিছু কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো । নিজেকে অন্য কোনও ভুবনে আবিষ্কার করলো আসাদ। এলার্মের তীব্র কর্কশ আওয়াজে তাঁর ঘুম ভেঙে গেলো।

বিছানা থেকে ধড়মড় করে উঠে বসল আসাদ। মোবাইলের এলার্মটা তখনও বিকট শব্দে বেজে যাচ্ছে। বন্ধ করলো ওটা। সময়টা দেখে নিল একবার। সকাল আটটার মত বাজছে। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে এলো সে। টেবিলের ড্রয়ার থেকে টিকিটটা বের করে আরও একবার দেখে নিল। বাস ছাড়ার সময় দেওয়া আছে সকাল দশটায়। গন্তব্য চট্টগ্রাম।

তাড়াতাড়ি বাথরুম সেরে নিজের ব্যাগটা গুছিয়ে নিল আসাদ। হাতে খুব বেশি সময় নেই। ব্রেকফাস্টটা নিচের রেস্টুরেন্ট থেকে সেরে নিল সে। তারপর একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল । বাসের কাউন্টারে পৌঁছাতে সময় লাগলো আরও একঘণ্টা।

.

কাউন্টারের ঘড়িতে দশটার কাছাকাছি বাজছে। হয়ত আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই এসে পড়বে বাসটা। এরই ফাঁকে পাশের দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে ফেললো আসাদ। রাস্তায় কাজে লাগবে ওটা। কাউন্টার থেকে কে যেন চেঁচিয়ে বলল, “চট্টগ্রামের যাত্রী যারা আছেন?…উঠে আসেন। লকারে মাল থাকলে দিয়ে দেন।”

দোকানদারের কাছ থেকে ভাংতি টাকাটা ফেরত নিয়েই দ্রুত বাসের দিকে এগোলো আসাদ। হলুদ রঙের বাসটা থেমে আছে কাউন্টারের সামনের ফাঁকা জায়গাটায়। নিজের ব্যাগটা লকারে দিয়ে বাসে উঠে পড়ল সে।

“দেখি ভাই আপনার টিকিটটা। এই যে ভাই, টিকিটটা দেখি আপনার?”

সুপারভাইজারের ডাকে তন্দ্রা কেটে গেলো আসাদের। পকেট থেকে টিকিটটা বের করে এগিয়ে দিলো।

“নামবেন কোথায়?”

“চট্টগ্রাম।”

টিকিটটা ফিরিয়ে নিল আসাদ। বাস তখন বেশ দ্রুত গতিতেই চলছে। রাস্তাটাও ঈদের ছুটিতে প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। মাঝে মধ্যে যদিও দুই একটা ট্রাকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এই তো দূরে একটা খোলা ট্রাক ছুটে আসছে এদিকে। ট্রাক ভর্তি ছেলে মেয়ের হৈচৈ শোনা যাচ্ছে।

“দেখছেন ভাই পোলাপাইনের অবস্থা? ঈদের চাইরদিন পার হয়ে গেলো এখনো তাগো ঈদ নাকি শেষ হয়না। পোলাপাইনের এইসব আলগা ফুর্তি দেইখা আমি বাঁচিনা ভাই।” সামনের ট্রাকটাকে দেখিয়ে বলল পাশের সিটের যাত্রী।

ভদ্রলোকের কথায় আসাদও তাকাল ট্রাকটার দিকে। প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে ওটা।ট্রাক ভর্তি ছেলে মেয়ে হইচই করছে। লাউডস্পিকারে বাজছে হিন্দি গান।

একটা খটকার মত লাগে আসাদের। এই গানটা কি এর আগেও কোথাও শুনেছে সে? অন্য কোথাও? শুনেছে হয়ত। কিন্তু কোথায় শুনেছে?

কি যেন একটা মনে পড়ে যায় আসাদের। খুব ভয়ংকর কিছু একটা। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটার দিকে আবারও তাকায় সে। ততক্ষণে দূরের ব্রিজটা পেরিয়ে গেছে ওটা। এতদূর থেকেও ভেসে আসছে হিন্দি গানের আওয়াজ। হ্যাঁ, এই গানটাই। এটাই শুনেছে সে। মনে পড়ে গেছে। ভয়ংকর কিছু একটা মনে পড়ে গেছে আসাদের।

পাশের সিটে বসা লোকটা তখনও আপন মনে বলে যাচ্ছে, “বুঝলেন ভাই, এই যুগের ছেলে মেয়ের মধ্যে ধর্ম কর্মের কোন বালাই নাই। এদের না আছে অন্যের প্রতি রিস্পেক্ট না আছে…”

লোকটাকে আচমকা থামিয়ে দেয় আসাদ, “ভাই কিছু মনে করবেন না আপনাকে একটা কথা বলি?”

তাকায় লোকটা। চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। “আমাকে বলছেন?”

“ আপনি ভাই বাস থেকে নেমে যান।” সাবলীল ভঙ্গিতে বলে আসাদ। “এই বাস আর অল্প কিছুক্ষণ পরেই এক্সিডেন্ট করবে। আমি ছাড়া বাসের সব যাত্রী মারা যাবে।”

লোকটা সরু চোখে তাকায়, “আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না ভাই।”

আসাদ বলে চলে,“আপনাকে বুঝিয়ে বলার মত সময় আমার হাতে একদমই নাই ভাই। সামনে আমাদের ভয়ংকর বিপদ ।আর একটু পরেই আমাদের এই বাসটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। সবগুলো যাত্রীকে নিয়ে নদীর মধ্যে আছড়ে পড়বে। একজন লোকও বাঁচতে পারবেনা। বিশ্বাস করেন ভাই আজকে রাতেই আমি এগুলা স্বপ্নে দেখছি ।”

লোকটা আর কোন কথা বলল না। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎ করেই আসাদের থেকে খানিকটা সরে গিয়ে একেবারে জানালার সাথে চেপে বসলো। যেন কিছুই হয়নি এরকম ভঙ্গিতে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে আবারও আগের মত ফেসবুক স্ক্রল করতে লাগলো।

তবে হাল ছাড়লনা আসাদ। আচমকা সে সিট ছেড়ে উঠে পড়ল। বাসের ঠিক মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল। নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য ক্যারিয়ারের হাতলে শক্ত করে ধরে বক্তৃতা দিবার ভঙ্গিতে বলল, “সম্মানিত যাত্রী ভাইয়েরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা সবাই প্লিজ আমার কথা একটু মনযোগ দিয়ে শুনুন। আপনাদেরকে এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব।”

বাসের সুপারভাইজার চেঁচিয়ে বলল, “এই যে বড়ভাই কি লাগবে আপনার? কিছু লাগলে আমাকে বলেন।”

সুপারভাইজারের দিকে তাকাল আসাদ। প্রায় একই ভঙ্গিতে বলল,

“ অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে ভাই। এই বাসটা এখুনি থামাইতে হবে।”

“কি সমস্যা বড়ভাই? টয়লেট করবেন?”

“টয়লেট না ভাই। আমার কথাটা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনারাও শুনুন।” যাত্রীদের দিকে ফিরে বলল আসাদ। “আমাদের এই বাসটা আর কিছুক্ষণ পরেই ভয়ংকর একটা এক্সিডেন্ট করতে যাচ্ছে ।আজকে রাতেই আমি স্বপ্নে দেখছি। আর অল্প কিছুদুর গিয়েই আমাদের বাসটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে পড়ে যাবে। বাসের সব যাত্রী মারা যাবে।” বলেই যাত্রীদের দিকে তাকায় আসাদ। তাদের মনোযোগ এখন সম্পূর্ণ আসাদের দিকে। আবারও বলতে শুরু করে সে, “আমি বাসে উঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটছে তাঁর পুরোটাই আমার দেখা স্বপ্নের সাথে মিলে যাচ্ছে। আর একারণেই আমার মনে ঘোর সন্দেহ হচ্ছে আমার দেখা স্বপ্নটা হয়ত পুরোটাই সত্যি হতে যাচ্ছে। এইজন্য আমি নিজের দায়িত্ববোধ থেকে আপনাদেরকে সতর্ক করে বলছি, আপনারা সবাই বাস থেকে নেমে যান। প্রয়োজনে অন্য বাসে যাবেন। তবুও এই বাস থেকে নেমে যান।”

আসাদের কথা শেষ হতেই সামনের সিট থেকে এক যাত্রী বলে উঠল,

“কি সমস্যা ভাই আপনার? পাগল নাকি আপনি? বাসের মধ্যে হুদাই প্যাঁচাল শুরু করছেন কেন?”

“দেখেন ভাই আমি কিন্তু…” বাক্যটা শেষ করতে পারেনা আসাদ। তার আগেই পেছন থেকে আরও একজন চেঁচিয়ে বলল,

“ঐ সুপারভাইজার, বাসের মধ্যে এই লোক পাগলামি শুরু করছে কেন? গাঞ্জা খায়া লোকজন বাসে উঠে নাকি? আমি ঘুমাইতাছি আর হালায় আইসা মাথার উপর ফাজলামি লাগাইছে। সিটে বহাও তো এইটারে।”

“আমি ফাজলামি করতেছিনা ভাই।” প্রতিবাদ করে বলে আসাদ। “ সিরিয়াসলি বলতেছি ।আজকে রাতে আমার দেখা স্বপ্নের সাথে বাস্তবের সব কিছুই মিলে যাচ্ছে। ঐ যে দেখেন ভাই সামনে যেই বাজারটা দেখতেছেন, ঐটাও আমি স্বপ্নে দেখছি। ঐ বাজারটা পার হলেই আমাদের বাসটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে।তখন আর থামানোর কোন উপায় থাকবেনা। ”

“ভাই সত্যি কইরা কন তো আপনে কি নেশা করছেন?” আসাদের পিঠে হাত রেখে বলল সুপারভাইজার। তাঁকে সমর্থন যোগাল পাশের সিটের যাত্রী, “আরে ভাই এই লোক তো আসলেই নেশা করছে । আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। বাসে উঠার পর থেকেই আমারে কি সব উল্টা পাল্টা বলে যাচ্ছে। স্বপ্নে কি না কি বাল দেখছে তা আইসা আমারে সারা রাস্তা ধইরা শুনাইতেছে।”

“আমি কোনও নেশা করিনি ভাই।” লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে আসাদ। “আপনাদের বাঁচানোর জন্যই বলতেছি আমি।”

আসাদের কথা শেষ না হতেই বাসের ড্রাইভার চেঁচিয়ে সুপারভাইজারকে বলল, “ঐ খালেক লোকটারে সিটে বহা তো, সিটে বহা ঐটারে। বাসের উইঠাই কি সব পাগলামি শুরু করছে। আমার মাথামুথা গরম করে দিছে হালায়।”

“ভাই আপনি বহেন তো। ঝামেলা কইরেন না, সিটের মধ্যে বহেন।” এগিয়ে আসে সুপারভাইজার।”

“দেখেন আপনারা বুঝতে পারছেন না আপনাদের সামনে কত বড় বিপদ। আপনারা…” বাক্যটা শেষ করতে পারেনা আসাদ। তাঁর আগেই দূরে একটা ব্রিজ চোখে পড়ল তার। ব্রিজের গোরায় দাঁড়িয়ে আছে অবিকল স্বপ্নে দেখা সেই রিকশাটা । আসাদ চেঁচিয়ে বলল,

“ঐ ড্রাইভার, গাড়ি থামাও। এক্ষুনি থামাও বলতেছি।”

“খালেক তোরে কইলাম না পাগলাটারে সিটে বহাইতে। কি বাল করোস তুই। একটা কামও ঠিক মতন পারোস না।” খেঁকিয়ে উঠল ড্রাইভার।

আসাদ বুঝে ফেলল তাঁর মুখের কথায় কোনও কাজ হবেনা। কেউ গুরুত্ব দিবেনা তাঁকে। এই মুহূর্তে যা করার তাকে একাই করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে। যাত্রীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আসাদ দৌড়ে গেলো ড্রাইভারের সিটের দিকে। ব্রিজটার একেবারে কাছে চলে এসেছে বাসটা। সময় নেই একেবারেই। ড্রাইভারের হাতটা খপ করে ধরে ফেলল আসাদ।

“তুই থামাবিনা মানে? এক্ষনি বাস থামাবি তুই।” বলেই ড্রাইভারকে সজোরে ধাক্কা দিলো সে।

“আরে আরে করেন কি? এক্সিডেন্ট করাইবেন তো।” আচমকা আক্রমনে চেঁচিয়ে উঠে ড্রাইভার। “শুয়ারের বাচ্চা তুই বাস না থামা নাইলে কইলাম এক্ষুনি তোরে খুন করে ফেলব।” বলেই ড্রাইভারের নাক বরাবর প্রকাণ্ড একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো আসাদ। আচমকা ঘুষি খেয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো ড্রাইভার। বাসটা নিজের লেন ছেড়ে উল্টো সাইডে চলে এলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দিয়ে দিলো ব্রিজের গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাটাকে। মুহূর্তেই উড়ে গেলো রিকশাটা। আছড়ে পড়ল নদীর তীব্র স্রোতে।

সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল আসাদ। “মাদারচোদ তুই বাস থামা কইলাম।” বলেই সর্বশক্তিতে ড্রাইভারের গলা চেপে ধরল সে। পেছন থেকে কয়েকজন যাত্রী দৌড়ে এসে জাপটে ধরল আসাদকে। টেনে সরিয়ে আনতে লাগলো ড্রাইভারের কাছ থেকে। এই অবস্থাতেও ড্রাইভার আপ্রাণ চেষ্টা করল বাসের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে। এর মধ্যেই একটা বাইসাইকেলকে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দিলো বাসটা। ছিটকে গিয়ে পাশের ধানক্ষেতে আছড়ে পড়ল ওটা। বাইরে থেকে জনতার চিৎকার ভেসে এলো, “ঐ থামারে, বাসটারে থামা। মানুষ মাইরা যাইতাছেগা। থামা বাসটারে।”

যাত্রীরা সর্বশক্তিতে টেনে আসাদকে সরিয়ে আনল ড্রাইভারের কাছ থেকে। একের পর এক কিল ঘুষি পড়তে লাগলো তার নাকে মুখে। ড্রাইভার আবারও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেললো স্টিয়ারিংটা। জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে বাসের গতি বাড়িয়ে দিলো। তীব্র বেগে পেরিয়ে গেলো সামনের বাজারটা । আর ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন একটা সেভেন আপের কাঁচের বোতল উড়ে এসে সোজা আঘাত করলো ড্রাইভারের মাথা বরাবর। কিছু বুঝে উঠারও সময় পেলো না ড্রাইভার। জ্ঞান হারিয়ে মাথাটা এলিয়ে পড়ল স্টিয়ারিংয়ের উপরে।

মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটা রাস্তার পাশে ঘাসের উপরে নেমে এলো। বিপদজনক ভাবে চলতে লাগলো নদীটার ধার বরাবর।

ঘটনার আকস্মিকতায় সচেতন হয়ে উঠল সুপারভাইজার। আসাদকে ছেড়ে প্রায় লাফিয়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিল স্টিয়ারিংটা। তবে পর মুহূর্তেই বুঝতে পারলো যা সর্বনাশ ঘটার তা অনেক আগেই ঘটে গেছে। নদীর বিপদজনক বাকটা থেকে তখন আর মাত্র কুড়ি মিটার দূরে অবস্থান করছে বাসটা। তবুও শেষবারের মত আপ্রাণ চেষ্টা করলো স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নিবার। শেষ রক্ষা হলনা।

আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিল আসাদ। যাত্রীরা যখন চিৎকার চেঁচামেচিতে ব্যস্ত সেই সুযোগেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে সে। বাসটা নদীতে আছড়ে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দরজা দিয়ে লাফ দিলো আসাদ। সোজা গিয়ে পড়ল পাশের ধানক্ষেতের উপরে।

টানা কয়েক মিনিট ধানক্ষেতে পড়ে থাকলো সে। এক সময় টের পেলো কে যেন তাঁকে দুই হাতে ধরে সোজা করে শুইয়ে দিচ্ছে। চোখ মেলে তাকাল আসাদ। দেখতে দেখতে পেলো তার সামনে ঝুঁকে আছে এক অল্প বয়সী যুবক । এমনটাই আশা করেছিল আসাদ। খানিকটা ঝুঁকে এসে জিজ্ঞেস করলো যুবক, “আপনি ঠিক আছেন তো ভাই? এই যে ভাই, আপনি ঠিক আছেন তো? কোথাও লাগেনি তো আপনার?”

আসাদ জানে আর একটু পরেই এই যুবকের ঘুম ভেঙে যাবে। ঘুম থেকে উঠেই সে বেরিয়ে পড়বে বাসা থেকে। সকাল দশটার বাস ধরতে হবে তাঁকে। সেই বাসেই ভয়ংকর একটা অভিজ্ঞতা হবে তার।

“এই যে ভাই ঠিক আছেন তো আপনি?” আবারও জিজ্ঞেস করলো যুবক।

আসাদ খপ করে ধরে ফেললো যুবকের হাতটা। বিড়বিড় করে বলল, “ভাই আপনাকে একটা অনুরোধ করবো…………”

পরিশিষ্টঃ

প্রচণ্ড এক দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলো যুবকের। ধড়মড় করে বিছানা থেকে উঠে বসলো সে। এলার্মটা বন্ধ করে দিলো। ড্রয়ার থেকে টিকিটটা বের করে দেখে নিল একবার। বাস ছাড়ার সময় দেওয়া আছে সকাল দশটায়। গন্তব্য চট্টগ্রাম।

অনীক রশিদ (Aneek Rashid)

Send private message to author
What’s your Reaction?
0
1
0
0
0
0
0
Share:FacebookX
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!