মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে অফিসের বসের মাথায় কতোগুলো বোতল ভাঙ্গি । এক – দুইটা বোতলে হবে না , কমপক্ষে এক কেস বোতল না ভাঙলে এই মুহূর্তের রাগ কমবে না । নতুন এমপ্লয়ি হিসেবে আমার মাথায় প্রতিনিয়ত কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে এই বদমাশ । ওভারটাইম এর পর ওভারটাইম করিয়ে স্ট্রেস লেভেল এর শেষ চূড়ায় পৌঁছে যাচ্ছি দিনকে দিন । রাত ১২ টা নাগাদ দাঁড়িয়ে আছি এলাকার ফার্মেসীর দোকানে । উদ্দেশ্য সিডাকসিন আর পারাসিটামল কেনা । দোকানী ওষুধ প্যাকেটে ভরতে ভরতে আমি একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম । হঠাৎ আমার সামনে মোটরসাইকেলে করে আফজাল ভাই এসে নামলেন । উনার বিখ্যাত ভটভটির আওয়াজ অন্ততপক্ষে আধ্মাইল দূর থেকে শোনা যায় বলে আমার বিশ্বাস । আমার দিকে একটা ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে উনি দোকানীকে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখ টিপ দিলেন । দোকানী চালু হাতে পাশে ঝোলানো বক্স থেকে একটা চারকোণা জন্ম নিরোধক প্যাকেটে গুঁজে দিলেন । আফজাল ভাই সেটা খপ করে পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে আরেকদফা ভ্যাবলা হাসি দিয়ে বললেন , ‘ এতো রাইতে কি ? রাত বিরেতে ফার্মেসীতে? ‘ আমি ক্লান্ত স্বরে উত্তর দিলাম , ‘ না ভাই টুকটাক ওষুধ কিনতে আসছি । ‘ এক চোখ সরু করে আবার বললেন , ‘ ওষুধ কিনতে আসছ নাকি আমি যেটা নিসি ওইটা নিলা? হাহাহাহা ! ‘ আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার শুরু , ‘ ভালো ভালো , বিয়ের আগে আমরাও এমন প্রেমিকার লগে কইরা বেরাইসি । ‘ এই কথা বলে ভটভটি নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন আফজাল ভাই । এই শালা যেদিন থেকে লাবনীরে দেখসে সেদিন থেকে আমাকে খোঁচায় । এখন এক সেট বোতল ভাঙলে হবে না , দুই সেট লাগবে । নতুন সেট বোতল ভাংতে হবে আফজাল ভাই এর মাথায় ।
পুরানা পল্টনের এক বাড়ির চিলেকোঠায় থাকি । মোটামুটি মানের ২ রুমের চিলেকোঠা । ভাড়াও খুব বেশি না । যথেষ্ট ভালো ভাবেই মাস চলে যায় । তিনতলা বাড়ির সিঁড়ি ভেঙে যখন ছাদে পৌঁছালাম , দেখি দরজায় তালা দেয়া নেই, দরজা খোলা এবং দরজা ভেজানো । আমার আত্মা শুকিয়ে গেলো । বাসায় অফিসের ল্যাপটপ রেখে গিয়েছিলাম । বুক ধুকপুক করতে শুরু করে দিল । চোর এসেছিল ভেবে দরজা আলতো করে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখি বিছানার পাশের টিভি চলছে , সামনে কেউ নেই । পাশের ঘরের বাথরুমের থেকে অঝোরে পানি পড়ার শব্দ আসছে । কেউ সম্ভবত গোছল করছে । এই অবস্থায় সব মিলিয়ে যে কেউ ভড়কে যাবে কিন্তু আমার মুখ ফুটে একটা কথাই বের হল – ছোটমামা !
ভেবেছিলাম দুটা সিডাকসিন আর একটা প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুম দেবো । আগামীকাল শুক্রবার , দেরি করে উঠলেও অফিসে যাওয়ার সমস্যা নেই । তবে এখন আর বোধহয় লাগবে না কিছুই । হঠাৎ করে মাথা ধরা চলে গেছে । আমার সামনে ছোট মামা বসে আছে । ভেজা মাথা গামছা দিয়ে মুছছে । রোদে পোড়া শরীরে কোন মেদ নেই । বুঝাই গেলো অনেকদিন ডুব মেরে থেকে অনেক জায়গা চষে বেড়িয়েছে । মাথা মুছতে মুছতে ছোটমামা বলল , ‘কিরে মুখ ভোঁতা করে আছিস ক্যান? ‘ আমি বালিশের নিচ থেকে গোল্ডলিফের প্যাকেট বের করে দেখালাম ,’ এখানের অর্ধেক সিগারেট কই গেলো? নতুন কিনেছি সকালে । ‘ ছোটমামা চোখ ছোট করে বলল , ‘ আমিই খাইসি । ‘ ‘ তো এতগুলা একবারে শেষ করে দিলা? ‘ আমি কপট রাগ দেখালাম । ‘ শুকরিয়া কর সব নেই নাই , আমার প্যাকেটের সব শেষ হয়ে গেছে । তাই কয়েকটা ধার নিসি । ‘
‘তুমি আসছই জ্বালাইতে । তাড়াতাড়ি বিদায় হউ , ‘ এই বলে আমি গোসলে ঢুকলাম । জানি এসব কথায় ছোটমামার কিছু যায় আসে না । পুরো পরিবারে আমার থেকে কেউ তাকে বেশি ভালবাসেনি । আমাদের মাঝে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না । ছোটবেলা থেকেই বন্ধুর থেকেও বেশি সম্পর্ক ছিল আমাদের । এক কালে নিজ পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে নিরুদ্দেশের মতন ঘুরে বেড়িয়েছে সে । শুধু আমার সাথেই তার যোগাযোগ । তার নিজের বাসা বলতে আমার এই বাসাই । আমি আব্বাকে জন্মের পর জীবিত পাইনি , আম্মার সাথে নানাবাড়িতে বড় হয়েছি । আম্মা মারা যাওয়ার পর আমি সব ছেড়ে চলে আসি । একা থাকি , জীবন একলাই শুরু করি । আমার পরিবার এখন আমি , আমার এই ছোটমামা আর আমার প্রেমিকা লাবনী ।
গোসল শেষ করে এসে দেখি ছোটমামা যোগাসনের ভঙ্গিতে বসে টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । একটা হিন্দি ছবি চলছে, স্ক্রিনে নায়ক- নায়িকার গা ঘেঁষাঘেঁষি রোমান্স । ছোটমামা বেহায়ার মতন স্ক্রিনের থেকে চোখ না সরিয়ে বলল , ‘ আজকাল তো দেখি হিন্দি ছবিতে ভালই রোমান্স সিন চলে । ‘ আমি বাকা স্বরে উত্তর দিলাম , কোন সময় চলে নাই বলো তো । তোমার তো এগুলা সবসময় পছন্দ । ‘ ‘ সে কথাও ঠিক , ‘ এই বলে খাটের তল থেকে দুইটা তেহারির প্যাকেট বের করলো । নিজেই উঠে গিয়ে দুটো প্লেট এনে খাবার ঢালতে লাগলো । আমার দিকে একটা প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল , ‘ এখনো গরম আছে খেয়ে নে , ভদ্রতা দেখিয়ে খাই নাই এখনো । ‘ আমি নাক দিয়ে ঘ্রাৎ করে একটা আওয়াজ করলাম শুধু । পেটে খুদা নেই , মাথা ধরায় খুদা মরে গেছে । অর্ধেক খেয়ে রেখে দিলাম । ছোটমামা কিছু না বলেই বাকি প্লেটের তেহারি নিয়ে খাওয়া শুরু । খাওয়া শেষ করে দুজনে ছাদের রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে বসলাম । ঠোঁটে সিগারেট গুঁজে আমি শুরু করলাম আগে
– এতদিন কই ছিলা ? একবছর ধরে কোন খোঁজ নাই কিছু না । তোমার সাথে যোগাযোগ করবো সেই উপায় রাখোনি ।
– ঘুরে বেড়াইসি খালি । ইউরোপ চষে বেড়ালাম এই এক বছর ।
– কই কই গেলা শুনি
– ইতালি , স্পেন , নরওয়ে , দক্ষিণ ফ্রান্স । শেষে জার্মানি ঘুরে দেশে ফিরলাম । এসেই তো তোর এখানে উঠলাম । দেখি তুই নাই , কিছু সময় টিভি দেখে গোসলে ঢুকতেই তুই এসে গেলি ।
– তোমার মতন যদি ঘুরে বেড়াতে পারতাম এভাবে নিশ্চিন্তে । চাকরীতে ধাতানি খেয়েই দিন কাটে আমার ।
– চাইলেই সব করতে পারবি । কয়েক বছর টাকা জমা , এরপর বেরিয়ে পর । আমার সাথেই নিবোনে তোকে ।
– নাহ হবে না , এতো জলদি সম্ভব না । লাবণীকে বিয়ে করা লাগবে ।
– লাবনী কে? তোর সেই প্রেমিকা না?
– হ্যাঁ । ওকে তো দেখনি আজো । মেয়েটা অনেক ভালো । পরিবারে কেউ নাই , একাই থাকে আমার মত । এই বছরের শেষে বিয়ে করবো দেখি । তুমি আবার নিরুদ্দেশ হওয়ার আগেই করতে হবে ।
আরো টুকটাক কথা বলতে বলতে রাত ৩ টার দিকে ঘুমিয়ে গেলাম । পরের দিন দুপুর ১ টার দিকে ঘুম ভাঙ্গে । তাও ভাঙতো কিনা সন্দেহ যদিনা লাবনী এসে ঘুম না ভাঙাতো । লাবণীর কাছে আমার বাসার চাবি আছে । মেয়েটা ঘরে ঢুকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে । ঘুমের ঘোরে এমনিতেও আমার লুঙ্গি ঠিক থাকেনা , ওদিকে ছোটমামারও থাকেনা । উঠে দেখি লাবনী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । ছোটমামা চোখ কচলে উঠে একবার লাবণীর দিকে তাকিয়ে লুঙ্গির গিঁট ঠিক করতে করতে বাথরুম এর দিকে হাঁটা দিল । এবার লাবনী আমার দিকে চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো , ‘ এটা কে? মনে হয় যেন দিনমজুরি করে । চামড়া পুড়ে কি হইসে ! ‘ আমি ঘুম ঘুম স্বরে উত্তর দিলাম ,’ ছোট মামা । ‘ ‘ এইটা তোমার ছোটমামা ! ‘ ‘ হু ।‘ ‘ আমি তো বুঝতেই পারিনি । তোমরা একেকজন আজিব জিনিস । ‘
লাবণীর ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে এলাম । দুপুরের খাবার সামনের হোটেল থেকে আনিয়েছে মামা । ৩ জন একসাথে খাওয়ার মধ্যে লাবনী আর ছোটমামার ভালো জমে গেছে । লাবনী তার স্বভাবমতন পক পক করেই যাচ্ছে । খাওয়া শেষ করে লাবনী বাইরে যেতে চেয়েছিল , কিন্তু ছোটমামা বাইরে যাবেনা । পড়ে ঠিক হল একটা মুভি দেখা যেতে পারে । আমার অফিসের ল্যাপটপ দিয়ে এখন মুভি দেখবে ওরা । ঘেঁটেঘুঁটে একটা হরর মুভি বের করলো লাবনী । দিব্যি আমার গায়ে পা তুলে দিয়ে ছোটমামা মুভি দেখতে বসল । আমার মুভি দেখতে ভালো লাগে না । আমি কিছুক্ষণ উশখুশ করলাম , বার কয়েক বাথরুম এ গেলাম , কিছু সময় মনোযোগ দেয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম । এরপর আরেকদফা লাবণীর ঝাড়ি খেয়ে বসে রইলাম । আমার ঝাড়ি খাওয়া দিকে ছোটমামা মুখ চেপে হাসে বারবার । মুভি শেষ হল সন্ধ্যা নাগাদ । আমি নিচ থেকে মোগলাই আর আলুর চপ আনলাম । খাটে বসে আছি তিনজনে । আমি ছোটমামার দিকে তাকিয়ে বললাম , ‘ কাল রাতে তো তেমন কিছু বলনি কোথায় কি করলা , এখন বলো আমরা শুনি । ‘ লাবনী উৎসাহী হয়ে বলল , ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ শুরু করেন , আপনার কথা অনেক শুনসি । অনেক অনেক জায়গায় ঘুরেছেন নাকি । অনেক অভিজ্ঞতা আপনার তো কিছু অভিজ্ঞতা আমাকেও বলেন । আইডিয়া চুরি করে লিখে দিব ভাবছি । ‘ আমি সায় দিয়ে বললাম, ‘ হ্যাঁ , লাবনী আবার লেখালেখি করে অল্পসল্প । কলামে নিয়মিত লেখে আজকাল । একদিন হুট করে বড় লেখিকা হয়ে যাবে ‘ আমার কথা শুনে ছোটমামা একবার প্রশংসার দৃষ্টিতে লাবণীর দিকে তাকাল । প্লেট থেকে ২ টা আলুর চপ একসাথে মুখে পুড়ে হেলান দিয়ে বসল বিছানায় ।
‘ জার্মানিতে সব থেকে আনন্দের সময় কেটেছে আমার । মোসেল ভ্যালি , লাহন , ব্ল্যাক ফরেস্ট , হার্জ মাউনটেন , সাক্সোনি ঘুরেছি । শেষে দক্ষিণ বাভারিয়াতে ছিলাম অনেকদিন । মিউনিখ হল জার্মানির চতুর্থ বৃহত্তম শহর । এখানের Fraun-kirthe , সেন্ট পিটারের আমলের চতুর্দশ শতকের প্রাচীন গির্জা Rathaus , Regina Palast , ন্যাশনাল থিয়েটার সব ঘুরে দেখা উচিত কেউ ওখানে গেলে । আমার পরিকল্পনা ছিল মিউনিখ থেকে ট্রেনে করে রোজেন হেইম এ যাবো , সেখান থেকে হাঁটা পথে ট্রাউনস্টেইন , এক রাত সেখানে থেকে এরপর যাবো মুহলডাফ , ওখান থেকে ফারকিনচেন হয়ে ভিলশোফেন । সকালবেলা যখন ট্রেনে করে রোজেনহেইম এ যাবো তখন শুরু হয় প্রচণ্ড তুষারঝড় । পৌছাতে তিন ঘণ্টা লেগে যায় । আমি আবার যাত্রাপথে কথা না বলে থাকতে পারিনা । ভাগ্য ভালো কথা বলার মতন একজন পেয়ে যাই । ট্রেনে বসে পরিচয় হয় পিটার এর সাথে । ছেলেটা ইংলিশ জানতো । মিউনিখ এ এসেছিল কিছু বই কিনতে আর বাগানের চারাগাছের বীজ নিতে । যথেষ্ট চটপটে আর বাচাল পিটার তরুণ হিসেবে বেশ সুদর্শন । কথায় কথায় আমার যাত্রা উদ্দেশ্য জেনে খুব খুশি হল , এক সময় তার ও ইচ্ছে ছিল দিগ্বিদিক ঘুরে বেড়ানোর । আপাতত নিজের গ্রামে একটা ছোট সরাইখানা চালিয়ে টাকা যোগাড় করছে ।জানতে পারলাম আমার সাথে মুহলডাফ পর্যন্ত গিয়ে ওর গ্রাম গ্যাংকোফেন এ চলে যাবে পিটার । কি মনে করে হঠাৎ আমাকে জোরাজোরি করতে শুরু করলো ওর গ্রামে আতিথেয়তা গ্রহণ করার জন্য । আমি প্রথমে অনেক ভাবে মানা করলেও মানতেই চাইল না । বলল এক রাত থেকে পরের দিন বিকালে চলে যেতে । শেষে রাজি হয়েই হলাম যাত্রা বিরতি দিয়ে পিটার এর সাথে যাবো । বহুত কাঠখড় পুড়িয়ে পিটার এর এলাকার কাছে পৌছালাম । শেষ বিকেল নাগাদ নিচু একসার পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ঘণ্টাখানেক হেঁটে উঁচু পাহাড়ের ছায়ায় ওদের এলাকায় পৌছালাম । প্রথমে ওর বাড়িতে আমার ব্যাগ আর পিটার এর বই, সরঞ্জাম রেখে আমরা গেলাম পিটার এর সরাইখানায় । বাড়ি থেকে বেশি দূরে না সরাইখানা । দেখতে অনেক পুরনো হলেও সরাইখানাটি বেশ আরামদায়ক । সরাইখানার ভিতরের একপাশে ফায়ারপ্লেস এ দাউ দাউ করে কয়লা পুড়ছে । বাহিরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকলেও সরাইখানার ভিতরে গরম । আমি গায়ের ওভারকোট খুলে এক পাশে বসে গেলাম । ভিতরে ৮-১০ টা টেবিল । কয়েকটা টেবিলে শ্রমিক শ্রেণীর কিছু লোক মদ খাচ্ছে । পিটার আমার জন্য ছাগলের দুধের পনির , সালাদ , শুকনো রুটি আর পাতলা লাল মদ নিয়ে আসলো । অনেক সময় ধরে না খাওয়া থাকায় পিটার আর আমি দুজনেই পেট ভরে খেয়েছি শুধু । খাওয়ার সময় কোন কথা হয়নি । খাওয়া শেষ করে পিটার হিসাবের কিছু কাজ দেখতে গেলো । আমি ততক্ষণে পাশের লোকগুলোর দিকে নজর দিলাম । দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কোট আর মাফলার পড়া একেকজন । গলা পর্যন্ত মদ গিলেই যাচ্ছে , তবে কোনরকম হল্লা করছে না। একটু পড়ে পিটার ফিরে এলো । নিজে একটা মাফলার পেচিয়ে আমাকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে বের হল ।পরিষ্কার আকাশে বড় চাঁদ উঠেছে । চাঁদের আলোয় দেখা যায় গ্রামটা বেশ বড় । আশেপাশে কিছু দূর পর পর একেকটা বাড়ি । সরু ঢাল বেয়ে আমরা হাঁটতে লাগলাম । মিনিট পাঁচেক হেঁটে একটা ছোট চার্চ চোখে পড়লো । অনেক আগের দেখেই বুঝা যাচ্ছে । রোমান আদলে তৈরি , খুব বেশি ভালো অবস্থায় নেই । লম্বা সিঁড়ি বেয়ে পিটার আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো । ভিতরের অবস্থা ভালই বাহিরের থেকে । বেদির কাছে পঞ্চদশ শতকের একটা গ্লাস চকচক করছে এখনো । চার্চ এর ম্যাডোনার মূর্তি টাও অনেক সুন্দর আর ওটাই আমার নজর কাড়লো । চার্চ থেকে বেরিয়ে আমি আর পিটার সিগারেট ধরালাম । কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করলাম ও চার্চ এ ঢুকে কোনরকম প্রার্থনা করেনি কেন জিসাস ক্রিস্ট এর সামনে। পিটার জানাল সে কোন এক নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী না । একেকসময় একেক রকমের নীতি মেনে চলে । যে সময় যেটা ওর ভাল্লাগে ওইটাই মানে ।হাঁটতে হাঁটতে পিটার এর বাড়ি চলে এলাম । আমাকে পিটার শুয়ে পড়তে বলল । কিন্তু আমি মানতে পারলাম না । আমার এতো দ্রুত শুয়ে পড়ার অভ্যাস নেই । রাত তখন ৯ টা বাজে প্রায় । সুনসান নীরবতা আশেপাশে । পিটার একাই থাকে বাড়িতে । মাঝারি রকমের ছিমছাম বাড়ি । দোতলা , নিচে বড় একটা বসার রুম । বসার রুমে ফায়ারপ্লেস , আগুনের তাপে পুরো ঘর গরম হয়ে আছে । আমি ঘুমাতে যেতে চাইলাম না । পিটার ঘুমাতে যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করায় ও উত্তর দিল , ও এখন বই পড়বে কিছু সময় । আমি প্রস্তাব দিলাম কিছু সময় গল্প করা যেতে পারে , না হয় শুয়ে শুয়ে আমার সময় কাটবে না । পিটার সায় দিয়ে দুই মগ কফি বানিয়ে আনল । সোফায় বসে দুজনে আলাপ জুড়ে দিলাম । পিটার এর ঘর ভর্তি বই । এর মধ্যে অর্ধেক বই বিভিন্ন ধর্মের বই , উপজাতিদের ধর্ম আর আধিভৌতিক আর অলৌকিক রীতি নীতির উল্লেখ । বুঝা গেলো ও এগুলো নিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে । মিউনিখ থেকে যে বইগুলো কিনেছে সেগুলো দেখাল । মৃত্যু নিয়ে অনেক রকমের বই দেখছি ওর কাছে । মৃত্যু জিনিসটা নাকি ওর কাছে অনেক রহস্যময় লাগে । ও মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চায় । গত কয়েকদিন ধরে ও বিভিন্ন উপজাতিদের আর প্রাচিন সভ্যতার মৃত্যু দেবতাদের নিয়ে পড়ছে । চিন্তা করছে ওদের কিছু রীতিনীতি মেনে চলবে কিছুদিন । দরকার পড়লে পূজাও করবে । আমাকে ওইখান থেকে কিছু শুনানোর অনুরোধ করলাম । নিজের জ্ঞান জাহির করার সুযোগ পেয়ে পিটার খুশি হয়ে গেলো । ততক্ষণে কফি শেষ । আমার জন্য আর এক মগ কফি বানিয়ে এনে পিটার শুরু করলো –
মেক্সিকোতে “সান্টা মুয়েরতে” নামের দেবতার পূজা করে কিছু লোক । বিশেষ করে বিভিন্ন বন্দিদের মধ্যে এই দেবতার ভক্ত আছে প্রচুর । “সান্টা মুয়েরতে”র পূজারীরা বিশ্বাস করে মৃত্যুর পড়ে তাদের আত্মা কিংবা দেহ অক্ষতভাবে এবং নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাতালে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব তাদের দেবতার । মায়ান মাইথোলজিতে “কামাজটজ” এক অপদেবতা । রাতের সময়ে মৃত্যু আর কারো উৎসর্গিত মৃত্যু সে নিয়ন্ত্রন করে থাকে । জাপানিজ দেবী “ইজানামি” ; একই সাথে সূর্য দেবতা , ঝড়ের দেবতার মা হিসেবে উল্লিখিত । জাপানের শিন্টো মন্দিরে “ইজানামি”র পূজা করা হয় । “ইজানামি” সৃষ্টি এবং মৃত্যুর দেবী । গ্রিক পুরাণে “থ্যানাটোস” দেবী “অট্রোপস” এর সাথে মিলে অনুসারীদের মৃত্যুকে শান্তিপূর্ণ করার চেষ্টা করে । আবার নর্স মাইথোলজিতে “হেল” নামক দেবী কাজ করেন মৃত্যু নিয়ে যিনি কিনা হেলহেইম এর রানী । হেলহেইম হল এমন এক জগত যেখানে মৃত শরীরের আত্মা প্রবেশ করে , আর সেখানে যুদ্ধে নিহত আর পানিতে ডোবা মানুষ প্রবেশ করতে পারে না । “হেল” দেবীকে হিন্দু ধর্মের সম্ভাবনাময় কালি কিংবা মহাকালি মনে করা হয় । গ্রিকে “হ্যাডেস” হল আন্ডারওয়ার্ল্ড এর রাজা এবং মৃতদের দেবতা ।
পিটার এরপর আমাকে বলল একটা জিনিস আমাকে দেখাবে যা দেখে আমি বড়ই চমকে যাবো । খুবই গোপনীয় জিনিস , আমি যেন কাউকে না জানাই সেই আশ্বাস আমার থেকে আদায় করে নিল । আমি কিছুই বুঝলাম না ওর কথা । পিটার আমাকে নিয়ে স্টোররুমে গেলো । স্টোর রুমটা নিচ তলাতেই । পিটার স্টোর রুমে ঢুকল , আমিও পিছু পিছু গেলাম । ভিতরটা অন্ধকার । ধুলাবালির একটা গুমোট গন্ধ । টর্চ জ্বালিয়ে স্টোর রুমের এক প্রান্তে গিয়ে থামলাম আমরা । আশে পাশে ভাঙা অনেক কিছু পড়ে আছে । টর্চ আলোয় দেখলাম যেখানে থেমেছি তার সামনেই একটা ছোট দরজা । কোন গোপন কামরা বোধহয় । পিটার দরজার হাতলে টান দিয়ে দরজা খুলে ফেলল । একটা সিঁড়ি সামনে । গুনে গুনে ৯ পা নামার পর একটা ঘরে পা দিলাম । রুমের লাইট জ্বালালো পিটার । আমি বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম । মানে আমি কোনোভাবে নিজেকে ধাতস্ত করতে পারলাম না দেখে । মাঝারি একটা ঘরের মাঝে একটা বড় টেবিল , তার উপরে একটা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশ । পিটার কাপড়টা সরালো । একটা সুন্দরী তরুণীর মৃতদেহ ! সুন্দর সুগঠিত শরীর । আমার সন্দেহ হল পিটার এই মেয়েকে মেরে এখানে লুকিয়ে রেখেছে কিনা । এটা শুনে পিটার হেসে দিল । আমাকে অভয় দিয়ে জানালো মেয়েটা বেওয়ারিশ , আর এই লাশ ও কিনে আনিয়েছে পাশের শহরের মর্গ থেকে গোপনে । কিন্তু পিটার তো মিউনিখ গিয়েছিল আর লাশ টা এখনও পচেনি । পিটার জানালো লাশ টা ফরমালিন দেয়া আর ও বাহিরে থাকতেই ওর পরিচিত লোক এখানে রেখে যায় । এই লাশ পিটার এনেছে নিজে কাটাকুটি করার জন্য , মৃত দেহ কেটে ও নিজে নতুন ভাবে মৃত্যু কে অনুভব করতে চায় । আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইরে বের করে নিয়ে আসে । পানির সাথে খানিকটা ব্রাণ্ডি মিশিয়ে আমাকে দেয় এরপর । খাওয়ার পড়ে আমাকে শুয়ে পড়তে বলে পিটার । দুপুর নাগাদ আমি রউনা হয়ে যাবো । সকালে একসাথে হাঁটতে বের হওয়ার কথা বলে পিঠ চাপ্রে দেয় । আমি বোকার মতন মাথা দুলিয়ে উপরতলায় চলে আসি । একটা সিঙ্গেল বেড , পাশেই জানালা , আকাশ দেখা যায় । আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম । মাথা ধরে গেছে আমার , কি দেখলাম কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । ঘুমানোর চেষ্টা করলাম , কিছু সময় এপিঠ ওপিঠ করে উঠে গেলাম । ঘুম আসছে না । মাথায় খালি ওই মেয়েটার মৃত দেহ ভাসছে । একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে কিছু সময় ভাবলাম । সিগারেট শেষ করে সিদ্ধান্ত নিলাম এখন গিয়ে পিটারকে বলবো আমি কাল সকালেই চলে যাবো , আমার জরুরী কাজ আছে । আর ভাবলাম সকালে ওর এখানে নাস্তাও করব না । সিঁড়ি মারিয়ে নিচে নামলাম । বসার ঘরে পিটার নেই , কিন্তু সেখানেই থাকার কথা ছিল ওর । বই পড়বে বলেছিল ।
আশেপাশে খুঁজে পিটারকে দেখলাম না । হঠাৎ মনে হল , ওকে সেই গোপন ঘরে পাওয়া যেতে পারে । অনেক বছর রাতে জঙ্গল ক্যাম্পিং করতে করতে অন্ধকারে চলা শিখে গিয়েছিলাম , তাই অন্ধকারে স্টোর রুমে ঢুকতে সমস্যা হয়নি । আস্তে করে দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম আমি , পিটার নিচেই আছে , লাশের কাছে । নিঃশব্দে নামায় ও আমাকে দেখেনি , টের ও পায়নি । তবে আমার এখন আসা বোধহয় ঠিক হয়নি কোনভাবেই । আমি ১০ সেকেন্ড ওখানে থেকে যা দেখলাম সেটা অবিশ্বাস্য লাগছিল । পিটার নগ্ন হয়ে মৃতদেহের সাথে মিলনে ব্য়স্ত ! মধ্যযুগে ইউরোপে এক বিশেষ শ্রেণীর অনুসারীদের আবির্ভাব ঘটে যারা মৃতদেহের সাথে মিলন করতো । আমি বিশ্বাস করিনি সেই কথা , কিন্তু আজ সেটা নিজের চোখে দেখে নিলাম । পিটার আমাকে দেখার আগেই আমি বের হয়ে গেলাম । উপরে এসে তাড়াতাড়ি করে জামা বদলিয়ে ব্যাগ সহ পগারপার । পিটার দেখার আগেই আমি পালাই , ওখানে আমার ওই রাতে থাকা সম্ভব না । এক বদ্ধ উন্মাদের পাল্লায় পড়েছিলাম । পায়ে হেঁটে সেরাতেই আমি পাশের শহরে চলে যাই । ‘
ছোটমামা এতক্ষণে থামল । আমাদের প্লেটের খাবার ততক্ষণে খালি । লাবনী তন্ময় হয়ে গিলছিল মামার কাহিনী । ও বলল , ‘ এই কাহিনী গোঁজামিল দিয়ে আমি অন্য কিছু বানিয়ে ছেড়ে দিব । ভালো একটা গল্প হবে নির্ঘাত । ‘ ছোটমামা লাবণীকে থেকে যেতে বলল । কিন্তু লাবনী থাকবে না । বাসায় গিয়েই লিখতে হবে নাকি ওকে । আমিও জোরাজুরি করলাম না । ওকে নিচ থেকে রিকশা করে দিয়ে এলাম । আমি আর ছোটমামা নিচ থেকে কিছু সময় হেঁটে এলাম এর মাঝে । ঘণ্টা খানেক হেঁটে এসেছি , সাথে কিছু চিপস , চানাচুর আর নতুন প্যাকেট সিগারেট । রাতে খাবো না কিছু । এসব ছাইপাশ খাবো দুজনে । ঘুমানোর আগে আরেকদফা ছাদের রেলিঙ্গে দুজনে বসলাম । ছোটমামা আকাশ দেখছিল আনমনে । হালকা হালকা ঠাণ্ডা বাতাস হঠাৎ করে এসে শরীরে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে বারবার । অনেক্ষন ধরেই একটা কথা বারবার মাথায় ঘুরছিল , কিন্তু বলার মতন সাহস হচ্ছে না । কিছুক্ষণ ভেবে আমি আস্তে করে ডাকলাম – ‘ ছোটমামা । ‘
– হু
– একটা কথা বলার ছিল ।
– বল শুনি ।
– নানার ব্যাপারে ।
ছোটমামার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো , গলাখাকারি দিয়ে উত্তর দিল
– কি হয়েছে আব্বার?
– নানা কয়েকদিন আগে ……
– কি?
– নানা কয়েকদিন আগে মারা গেছেন ! তুমি বাইরে ছিলে , জানাতে পারিনি ।
ছোটমামা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল , ‘ ওরা আমাকে জানাত না আমি জানি । বলে লাভ নেই । এখানে থাকলেও আমি দেখতে যেতে পারতাম না । ‘ ছোটমামার চোখ ছলছল করছে । কিছু জিজ্ঞাসা করলো না । নানার অনেক বয়স হয়েছিল , যেকোনো সময় মারা যাওয়ার কথা । ছোটমামা কিছু সময় ঝিম মেরে থাকলো । মামার খুব কষ্ট হচ্ছে জানি , হঠাৎ উঠে ভিতরে চলে গেলো আমাকে রেখেই । আমি পিছু নিলাম না , কিছু সময় একা থাকুক ।
আমি আকাশের দিকে রিং পাকিয়ে ধোঁয়া ছুড়তে লাগলাম । ছোটমামার মতন অভাগা দেখিনি আমি । অল্প বয়সে নানাজান ছোটমামাকে পরিত্যাগ করে পরিবার থেকে । ছোটমামা একটা খুন করে ।খুনিকে কেউ পরিচয় দিতে চায়না সমাজে । সেই খুনের পরিণামে সবাই তাকে ছেড়ে দেয় । ছোটমামার ৩ বোন ছিল । আমার আম্মা সবার বড় , এরপর মেজজন ;তার বিয়ে হয়ে যায় , আর ছোটজনের বিয়ে হয়নি – সবেমাত্র ক্লাস ১০ এ পড়ত । মামা তার মেজবোনের স্বামীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে এক সন্ধায় , আর খুন করে সেই লাশ টুকরো টুকরো করে বাড়ির পিছনের কবরস্থানে পুঁতে ফেলে । কেউ জানতেই পারত না আমার মেজখালু অর্থাৎ মামার মেজবোনের স্বামী কোথায় গায়েব হয়ে গেছে । আর ছোটমামা ধরা পড়ত না যদি না
গন্ধ শুঁকে শুঁকে শিয়াল এসে সেই মাটি সরিয়ে লাশের টুকরো বের না করতো । পুলিশ এসে যখন সবাইকে জেরা করে ছোটমামা সব স্বীকার করে নিজে নিজেই । কোনরকম বিবাদ ছাড়াই কেন নিজের বোনের স্বামীকে মেরে ফেলে ছোটমামা সেটাই কেউ বুঝল না , এমনকি কেউ তার মুখ দিয়ে বের করতেই পারল না কেন সে এই খুন করে । নিজের বোনকে বিধবা করায় পরিবার তাকে সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ করে দেয় ,সবার ঘৃণা তাকে সবার পর বানিয়ে ফেলে । আর ওদিকে মামার জেল হয় । কেউ তার পক্ষ নেয়নি পরিবার থেকে । মামার খুনের রায় হয় । যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও বিশেষ ভাবে ক্ষমতা খাটিয়ে ছোটমামা পাঁচ বছরের মাথায় বের হয়ে আসে ।এরপর বাড়িতে ফিরলেও কেউ তাকে মেনে নেয়নি । দূর দূর করে তারিয়ে দেয় । কেইবা মানত তাকে । সবাই জানতে চেয়েছিল খুন করেছিল কেন সে । কিন্তু ছোটমামা ওদের কারো কাছে মুখ খুলেনি । মুখ খুলেছিল শুধু আমার কাছে , আমি শুধু জানতাম । ছোটমামা আর কাউকে বলতে পারেনি একটা ভয়ে , একজনের সম্মানের ভয়ে । তার ছোটবোনের জন্য সেই ভয় । ছোটমামার সবথেকে প্রিয় ছোটবোন একদিন কাঁদতে কাঁদতে একটা নালিশ করেছিল মামার কাছে , সেই নালিশের জন্য শান্তশিষ্ট আমার মামা একটা তরতাজা মানুষকে মেরে ফেলে; কুপিয়ে শরীর ছিন্নভিন্ন করে ফেলে । এক দুপুরে মামার ছোটবোন অর্থাৎ আমার ছোটখালার রুমে গোপনে ঢুকে তার মেজদুলাভাই । পিছন থেকে হঠাৎ করে ছোটখালার মুখ চেপে ধরে শুইয়ে ফেলে সেই জানোয়ার । ছোটখালার সেই চাপাকান্না সে’ দুপুরে কেউ শুনেনি । নিজের অসহায় নির্যাতনের কথা শুধু আমার ছোটমামাকেই বলতে পেরেছিল । আচ্ছা এই কথা ছোটমামা সবার কাছে বলবে কি করে? এর থেকে তো চিরজীবন পরিবার থেকে দূরে থাকাই ভালো । সব সয় , প্রিয় মানুষের যন্ত্রণা সয় না ।
ওমর ফারুক – Omore Faruk
Send private message to author






